রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর
কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই
শিরক৷
অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা
ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক
করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য
কারো নিকট দোয়া করা কিংবা
বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ,
মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির
কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে
নিবেদন করা৷
আল্লাহকে ডাকার মত অন্যকে ডাকা,
আল্লাহকে ভয় করার মত অন্যকে ভয় করা,
তাঁর কাছে কামনা করা হয়, অন্যের
কাছে তা কামনা করা। তাঁকে
ভালোবাসার মত অন্যকেও
ভালোবাসা।“মানুষের মধ্যে এমন একদল
লোক আছে যারা আল্লাহ ছাড়া
অন্যদেরকে শরীক বানিয়েছে এবং
তাদেরকে এমনভাবে ভালবাসে যেমন
আল্লাহকে ভালোবাসা উচিত, আর
যারা ঈমান এনেছে তারা
আল্লাহকেই সর্বাধিক ভালবাসে”।
(সূরা আল বাকারা: ১৬৫) আল্লাহর জন্যে
সম্পাদনযোগ্য ইবাদতসমূহের যে কোন
একটি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদন
করা।
শিরকের ভয়াবহ পরিণাম :
শিরকের মাধ্যমে সৃষ্টিকে স্রষ্টার
আসনে বসানো হয়, যা মহা অপরাধ এবং
রীতি মত অবিচার।
আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই শিরক একটি মস্ত বড়
অন্যায়” (সুরা লোকমান: ১৩)
আল্লাহ তা’আলা শিরকের গুনাহ তওবা
ছাড়া ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ বলেন-
• “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তার সাথে
শিরক করার অপরাধ ক্ষমা
করবেন না। এ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ
যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে
দিবেন” (সুরা নিসা: ৪৮)
আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদের জন্যে
জান্নাত হারাম বলে ঘোষণা
করেছেন:
• “নিশ্চয় যে আল্লাহ’র সাথে শিরক
করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত
হারাম করে দেবেন এবং তার
ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
জালিমদের কোন সাহায্যকারী
নেই।” (সূরা মায়িদাহ: ৭২)
শিরক সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়।
আল্লাহ বলেন,
• “আর যদি তারা শিরক করে তাহলে
তাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে
যাবে।” (সুরা আনআম: ৮৮)
• আপনার প্রতি এবং আপনার
পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে,
যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে
আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। (সূরা যুমার:
৬৫)
আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায়
বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে
ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা,
তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্লাহ
বলেন:
• নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা
করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক
করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন
পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা
করেন। আর যে লোক অংশীদার
সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন
অপবাদ আরোপ করল। (সূরা নিসা ৪৮)
শিরকই হল সবচেয়ে বড় গুনাহ। নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন,
# “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড়
গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? আর তা
হল, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক
করা।” (বুখারি-মুসলিম)
শিরকের প্রকারভেদ:
শিরক দুই প্রকার।
ক ) শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
খ) শিরকে আসগর বা ছোট শিরক।
১. শিরকে আকবার(বড় শিরক) :
যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী
থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের শিরকে
লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃতু্যবরণ
করে, এবং তা থেকে তওবা না করে
থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে
দোজখে অবস্থান করবে৷
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা
আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি,
প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত
আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে
কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত
কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা
কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয়
পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা
এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব
ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ
ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে
আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা
করা৷
আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের
কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের
প্রচুর চর্চা হচ্ছে৷ এদিকে ইশারা করে
আল্লাহ বলেন:
• ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর
ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি
সাধন করতে পারে, না করতে পারে,
কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো
আল্লাহর কাছে আমাদের
সুপারিশকারী৷’ (সূরা ইউনুস ১৮)
২.শিরকে আসগার (ছোট শিরক)
শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম
মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে
দেয়না, তবে তার একত্ববাদের
আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে৷
এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার
অসীলা ও কারণ৷
এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের
ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ
করা৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন:
# রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে,
সে কুফরী করে অথবা শিরক
করে।”[তিরমিযী]
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ”আল্লাহ
এবং তুমি যেমন চেয়েছ”
কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ”আল্লাহ
এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি
বললে তিনি বললেন, ”তুমি কি
আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির
করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা
চেয়েছেন৷”
আর একথাও বলা যে, ”যদি আল্লাহ ও অমুক
ব্যক্তি না থাকত” ৷ উপরোক্ত
ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা –
”আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন
চেয়েছে” ”যদি আল্লাহ না থাকতেন,
অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত” । তাই
”এবং ” শব্দের বদলে “তারপর” কিংবা
“অতঃপর শব্দের ব্যবহার বান্দার
ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে
দেয়৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
•‘তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর
ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে
পারনা৷’ ( সূরা তাক’ওয়ীর : ২৯)
কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি
কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে
বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো৷
এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে
যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম
ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে
আসগার৷ কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে
উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি৷
পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয়
যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা- মুসীবত দূর
করে, তবে তা হবে শিরক আকবর৷ কেননা
এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা
অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর
জন্য নির্দিষ্ট৷
দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা,
সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে৷ যেমন লোক
দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি
অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ অথর্াত্
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন
কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের
প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা৷ যেমন সুন্দর
ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা
সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার
প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির-
আযকার পড়া ও সুকন্ঠে তেলাওয়াত করা
যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান
করে৷ যদি কোন আমলে রিয়া তথা
লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত
থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল
করে দেন৷ আল্লাহ বলেন:
• ‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার
সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম
সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার
ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ ( সূরা
কাহফ: ১১০)
# রাসূল (সাঃ) বলেন, “যে বিষয়ে আমি
তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয়
করি, তা হল ছোট শিরক”। সাহাবায়ে
কেরাম (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা
কি? তিনি বলিলেন, “ছোট শিরক হচ্ছে
রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত।)”[মুসলিম
]
পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করাও
এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত৷ যেমন কোন
ব্যক্তি শুধু মাল- সম্পদ অর্জনের জন্যেই
হজ্জ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের
ইমামতি করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান
অর্জন করে বা জিহাদ করে৷
ইমাম ইবনুল কাইয়েম র. বলেন সংকল্প ও
নিয়্যাতের শিরক হলো এমন এক সাগর
সদৃশ যার কোন কূল- কিনারা নেই৷ খুব কম
লোকই তা থেকে বাঁচতে পারে৷ অতএব
যে ব্যক্তি তার আমল দ্বারা আল্লাহর
সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু ও গায়রুল্লার
কাছে ঐ আমলের প্রতিদান প্রত্যাশা
করে, সে মূলতঃ উক্ত আমল দ্বারা তার
নিয়ত ও সংকল্প নিয়্যত খালেছ ভাবে
আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্যে করা৷ এটাই
হলো সত্যপন্থা তথা ইব্রাহীমের
মিল্লাত, যা অনুসরণ করার জন্য আল্লাহ
তাঁর সকল বান্দাদের নির্দেশ
দিয়েছেন এবং এতদ্ব্যতীত তিনি
কারো কাছ থেকে অন্য কিছু কবুল
করবেন না৷ আর এ সত্য পন্থাই হলো
ইসলামের হাকীকত৷
উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা
যাচ্ছে যে, শিরকে আকবার ও শিরকে
আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে৷
সেগুলো হল:
১. কোন ব্যক্তি শিরকে আকবারে লিপ্ত
হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের
হয়ে যায়৷ পক্ষান্তরে শিরকে
আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত
থেকে বের হয় না৷
২. শিরকে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি
চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে৷
পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত
ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল
সেখানে অবস্থান করবেনা৷
৩. শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল
নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব
আমল নষ্ট করেনা৷ বরং রিয়া ও দুনিয়া
অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু
তত্সংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে৷
৪. শিরকে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির
জান-মাল মুসলমানদের জন্য হালাল৷
পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত
ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল
নয়।
প্রচলিত কিছু শিরকী কথা:
মানুষের মাঝে একটা স্বভাব রয়েছে
আর তাহলো তার চেয়ে ভাল অবস্থায়
কেউ থাকলে বা তার নিজস্ব
অবস্থানের চেয়ে কাউকে বড় দেখলে
সে তাকে তার মনের মাঝে এমন একটা
জায়গায় স্থান দিতে শুরু করে যে
ধীরে ধীরে সে নিজের অজান্তে
শিরকে জড়িয়ে পরে। আমাদের
অনেকেই প্রায়ই এই ধরণের কথা বলে
থাকিঃ
***আপনি ছিলেন বলেই আজকে রক্ষা
পেলাম!
***আমি আপনার উপরই ভরসা করছি!
***আপনি ছাড়া আর কে সাহায্য করবে!
***আপনি যদি থাকতেন তাহলে
কাজটা এরকম হতো না!
***ভাই সাহায্য করেন, আপনিই একমাত্র
পারেন আমাকে সাহায্য করতে!
***হ্যালো, ভাই কেমন আছেন! কঠিন
বিপদে আছি উদ্ধার করেন ভাই!
(মোবাইল কথোপকথন)
***হে দয়ার নবী রক্ষা কর মোরে!
***হে দয়ার নবী রক্ষা যদি না কর
বেহেশতে যেতে পারব না!
***হে অমুক মাজারবাসী আমার অমুক
আশাটা পূরণ করে দেন!
***কেবলাবাবাই ভরসা!
***দয়ালবাবা, বাবা ভান্ডারী রক্ষা
কর মোরে!
আমি মোটামুটি কিছু প্রচলিত কথা
তুলে ধরলাম, যার চর্চা করার মাধ্যমে
আমরা প্রতিনিয়ত শিরক করে চলছি! যা
মোটেই উচিত নয়, একজন মুসলিম
হিসেবে এই বিষয়ে স্পষ্ট একটা ধারণা
থাকা প্রয়োজন। কারণ, আল্লাহ
তাআলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন
না।
বি:দ্র: পোস্টটি সংগৃহীত
2 thoughts on "আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম শিরক কি কত প্রকার ও কি কি? সকল মুসলিম ভাইয়েরা এই পোস্টটি দেখুন"