ভালো মানুষ কখনো গালি দেয় না।
দিতেই পারে না। কারো প্রতি
রাগান্বিত হলেও সে খারাপ ভাষা
ব্যবহার করে না। ভালো মানুষের রাগ
প্রকাশের ভঙ্গিটাও হয় সুন্দর ও সংযত।
পক্ষান্তরে মন্দ মানুষ যখন রাগান্বিত হয়
তখন সে ভুলে যায় ভদ্রতা এবং তার
আসল রূপ বের হয়ে পড়ে। সে তখন গালি
দিতে থাকে। সে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত
করতে চায়, কিন্তু নিজেই পরাস্ত হয়ে
যায়। কেননা, সবাই তাকে অভদ্র বলে
চিনে ফেলে। গালি আমাদের
সমাজের এক মারাত্মক ব্যাধি। গালি
দেয়া পাপের কাজ। গালিগালাজ
করা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয়
নয়। মুদ্রাদোষ বা অভ্যাসবশত অনেকেই
কথায় কথায় গালি দেন, অনেকেই
হাসি-তামাশা ও ঠাট্টাচ্ছলেও
অন্যকে গালি দিয়ে বসেন এসবের
কোনোটিই ঠিক নয়।
গালি সম্বন্ধে রাসুলুল্লাহ [সা.]
বলেছেন, এমন দুই ব্যক্তি, যারা একে
অপরকে গালমন্দ করল, তখন ওই গালির পাপ
সে ব্যক্তির ওপরই পতিত হবে, যে প্রথমে
গালি দিয়েছে যে পর্যন্ত না
নির্যাতিত ব্যক্তি সীমা অতিক্রম
করে। এই হাদিসের আলোকে বোঝা
যায় যে, গালির সূচনাকারী ব্যক্তি
অত্যাচারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি
অত্যাচারিত। আর অত্যাচারিত ব্যক্তি
ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করতে
পারে যে পরিমাণ সে নির্যাতিত
হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গালি দ্বারা
গালির প্রতিশোধ গ্রহণ না করাই উত্তম।
অন্যথায় উত্তম ও অধমের প্রভেদ থাকবে
না। এতে বোঝা যায় যে, কোনো মন্দ
কাজের জবাব ভালো দ্বারা দেয়াই
উত্তম।
রাসুলুল্লাহ [সা.] মুমিন ও মনাফিকের
পরিচয় দিয়ে বলেছেন-চারটি
বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে
প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে কোনো
একটা পাওয়া যাবে তার মধ্যে

মুনাফিকের একটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া
গেল, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ
করে। সেই বিষয়গুলো এই যে, যখন তাকে
বিশ্বাস করা হয় সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে।
যখন কথা বলে তো মিথ্যা বলে। যখন
অঙ্গিকার করে তো অঙ্গিকার ভঙ্গ
করে এবং যখন বিবাদ-বিসম্বাদে
উপনীত হয় তখন অন্যায় পথ অবলম্বন করে।
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪; সহিহ মুসলিম,
হাদিস : ১০৬] অন্য হাদীসে আছে, মুমিন
কখনো দোষারোপকারী,
অভিশাপকারী, অশ্লীল ও
গালিগালাজকারী হয় না। [জামে
তিরমিজি হাদীস : ২০৪৩] এমনকি
ইসলামের মাহাত্ম দেখ। মক্কার
কাফিরেরা নবিজীকে কত কষ্ট দিল,
সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল কিন্তু যখন
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বিজয় দান
করলেন তখন কাফিরদের প্রতি
বিন্দুমাত্রও জুলুম করা হয়নি। তাদের
জান-মাল, ইযযত-আব্রু সম্পূর্ণ নিরাপদ
ছিল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য সাধারণ
ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন এবং মুমিনগণ
আল্লাহর আদেশের অনুগত ছিলেন।
ইসলামের সৌন্দর্য হলো এমন কথা, কাজ
ও বিষয় পরিহার করা যা নিরর্থক।
অর্থাৎ যেসব কথা, কাজ ও বিষয়ে
দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা
নেই তা পরিহার করা। গালি দেয়ার
ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো
উপকার হয় না বরং ক্ষতিই সাধিত হয়
তাই আমাদের উচিত গালির অভ্যাস
পরিত্যাগ করার। কেননা রাসুলুল্লাহ
[সা.] বলেছেন, কোনো মুসলমানকে
গালি দেয়া ফাসেকি। বোখারি ও
মুসলিম জিহ্বার সংযত ও পরিমিত
ব্যবহার সমাজ, পরিবারে ও রাষ্ট্রে
শান্তি আসে। জিহ্বার ব্যবহার প্রসঙ্গে
রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন, যখন আদম
সন্তান ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন তার
অঙ্গসমূহ জিহ্বাকে বিনয়ের সঙ্গে বলে
আমাদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় কর।
কেননা আমরা তোমার সঙ্গে জড়িত।
ইসলাম এসেছে মানুষকে ভালো
বানানোর জন্য। তাই যারা ইসলামের
শিক্ষা গ্রহণ করে তারা হয় ভদ্র ও
শালীন। কুরআন মজীদে আল্লাহ
তাআলা মুমিনদেরকে বলেছেন,
(তরজমা) যারা পবিত্র মসজিদ থেকে
তোমাদেরকে বাধা প্রদান করেছিল,
সেই সমপ্রদায়ের শত্রুতা যেন
তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত
না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে
একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমা
লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের
সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কঠোর
শাস্তিদাতা। [সূরা মাইদা : ২]
এটাই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। এই
শিক্ষাই আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
কেননা, এর চেয়ে উত্তম শিক্ষা আর
হতে পারে না। আজকের আধুনিক
শিক্ষা আজ পর্যন্ত এই পর্যায়ে উন্নীত
হতে পারেনি। এজন্য কোনো শিক্ষিত
মানুষকেও যদি দেখি তিনি তার
প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ
করছেন এবং বিভিন্ন মন্দ উপাধী
ব্যবহার করে তাকে হেয় করার চেষ্টা
করছেন তবে তার ওই কাজটা আমরা বর্জন
করব। তিনি শিক্ষিত বা ভদ্র বলেই তার
অভদ্র আচরণকে আমরা অনুসরণ করব না।
সুতরাং তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক
থাকব। আর তুমি বাঁকা হলে আমরা ও
বাঁকা হয়ে পড়ব। কিন্তু জিহ্বা যেহেতু
মনের মুখপাত্র তাই সব অঙ্গের
কার্যকলাপ জিহ্বা দ্বারা প্রকাশ পায়।
সে জন্য অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, মন্দ
কথা, খারাপ উক্তি ও গালি থেকে
বিরত থাকা কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ [সা.]
বলেছেন, যে নীরব থেকেছে সে
মুক্তি পেয়েছে। [তিরমিজি]

4 thoughts on "জেনে নিন কারা গালাগালি করে?"

    1. Mamun Al abdullah Contributor Post Creator says:
      ধন্যবাদ
  1. Shahriar_naim Contributor says:
    Viya, Hope you are well. Thanks for the post. But many people use so bad comments or abuse to post author.
    1. Mamun Al abdullah Contributor Post Creator says:
      ok thank you for the comment

Leave a Reply