আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ নবীর প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী৷ তিনি তার প্রশংসা করেন৷ তার কাজে বরকত দেন৷ তার নাম বুলন্দ করেন৷ তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন৷ ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে একমাত্র মাহমুদ তথা সবোর্চ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন৷ পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বর্ণনা পরস্পরায় একথা কেন বলা হয়েছ তা পরিষ্কার অনুভব করা যায়৷ তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলামের দুশমনরা এ সুস্পষ্ট জীবন ব্যবস্থার বিস্তার ও সম্প্রসারণের ফলে নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য নবী করীমের (সা) বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা একথা মনে করছিল যে, এভাবে কাঁদা ছিটিয়ে তারা তার নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে৷ অথচ এ নৈতিক প্রভাবের ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল৷ এ অবস্থায় আলোচ্য আয়াত নাযিল করে আল্লাহ দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দেন যে, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা আমার নবীর দুর্নাম রটাবার এবং তাকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা চালাক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হবে৷ কারণ আমি তার প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্ব জাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তার সহায়ক ও প্রশংসাকারী৷ আমি যেখানে তার নাম বুলন্দ করছি৷ এবং আমার ফেরেশতারা তার প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তার নিন্দাবাদ করে তারা কি লাভ করতে পারে? আমার রহমত ও বরকত তার সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে, হে রব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদের (সা) মর্যাদা আরো বেশী উঁচু করে দাও এবং তার দীনকে আরো বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করো৷ এ অবস্থায় তারা বাজে অস্ত্রের সাহায্যে তার কি ক্ষতি করতে পারে?

অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, হে লোকেরা! মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর বদৌলতে তোমরা যারা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছো তারা তার মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তার মহা অনুগ্রহের হক আদায় করো৷ তোমরা মূর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে চলছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের জ্ঞানের আলোক বর্তিকা দান করেছেন৷ তোমরা নৈতিক অধপতনের মধ্যে ডুবেছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সেখান থেকে উঠিয়েছেন এবং তোমাদের মধ্যে যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার ফলে আজ মানুষ তোমাদেরকে ঈর্ষা করে৷ তোমরা বর্বর ও পাশবিক জীবন যাপন করছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সর্বোত্তম মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাজে সুসজ্জিত করেছেন৷ তিনি তোমাদের ওপর এসব অনুগ্রহ করেছেন বলেই দুনিয়ার কাফের ও মুশরিকরা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়ছে৷ নয়তো দেখো, তিনি কারো সাথে ব্যক্তিগতভাবে কোন দুর্ব্যবহার করেননি৷ তাই এখনি তোমাদের কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবী হচ্ছে এই যে, তারা এ আপাদমস্তক কল্যান ব্রতী ব্যক্তিত্ত্বের প্রতি যে পরিমাণ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে ঠিক এই পরিমাণ বরং তার চেয়ে বেশী ভালোবাসা তোমরা তার প্রতি পোষণ করো৷ তারা তাকে যে পরিমাণ ঘৃণা করে ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশীই তোমরা তার প্রতি অনুরক্ত হবে৷ তারা তার যতটা নিন্দা করে ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশী তোমরা তার প্রশংসা করো৷ তারা তা যতটা অশুভাকাংখী হয় তোমরা তার ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশী শুভাকাংখী হয়ে যাও৷ এবং তার পক্ষে সেই একই দোয়া করো যা আল্লাহর ফেরেশতারা দিনরাত তার জন্য করে যাচ্ছে, হে দোজাহানের রব! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি বিপুল অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তার প্রতি অসীম ও অগণিত রহমত বর্ষণ করো, তাঁর মর্যাদা দুনিয়াতেও সবচেয়ে বেশী উন্নত করো এবং আখেরাতেও তাকে সকল নৈকট্যলাভকারীদের চাইতেও বেশী নৈকট্য দান করো৷

2 thoughts on "কি জন্য দুরূদ শরীফ পড়া হয়,দুরূদ শরীফ কি?মুসলিম ভাইয়েরা পোস্টটি দেখুন"

  1. Shahriar_naim Contributor says:
    Subhan-Allah. Viya a lot of thanks to u for such a nice post. Best wishes for the next post.
    1. Mamun Al abdullah Contributor Post Creator says:
      welcome

Leave a Reply