আসসালামু আলাইকুম, প্রথম অংশে জানবো হাদীস কি? মাঝের অংশে জানবো জাল হাদীস কি? আর শেষ অংশে জানবো কিছু জাল হাদিসের উদাহরণ |
* অনুগ্রহ করে কেউ না বুঝলে প্রশ্ন করবেন, কিন্তু অযথা তর্ক করতে যাবেন না, প্রশ্ন করার আগে লেখা টি কয়েকবার পড়ুন || ………..
প্রথমে আমি আমার লেখার উদ্দেশ্য বলে দিই, আর কেউ একথা বলবেন না যে আমি হাদিসকে জাল বলছি | ভাল করে বুঝতে চেষ্টা করুন, আমাদের সমাজে জাল টাকা প্রচলিত আছে, এর মানে এটা নয় যে আমি সব টাকা কে জাল বলেছি| এর মানে হলো ভাল টাকা ও আছে জাল টাকা ও আছে, জাল টাকা পরিত্যাগ করা উচিৎ | ঠিক একই ভাবে বলা যায়, আমাদের সমাজে কিছু জাল হাদিস প্রচলিত আছে | অর্থাৎ টাকার মতো আমরা তা হাদিস বলে জানলেও প্রকৃত পক্ষে তা হাদীস নয়, তা প্রবাদ বাক্য, ও জ্ঞানীদের উক্তি মাত্র, পালন করানোর উদেশ্যে একে হাদীস বলে প্রচলিত করা হয়েছে।
…………….
হাদীস এর সংগাঃ “রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কথা কাজ ও মৌন সমর্থন কে হাদীস বলে” অপর জায়গাতে আছে “রাসুল (স ) এর কথা, কাজ, মৌণ সমর্থন কে হাদীস বলে, সাহাবীদের কথা কে ও হাদীস বলে”
# অতএব যে কথা রাসুল (সঃ) বলেন নি এমন কথা “হাদিস” বলে প্রচার করাই জাল হাদীস যা পাপের কারণ | …………….
জাল হাদীস বিষয়ে রাসুল (সঃ) কি বলেছেন?: ……… “যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে এমন কথা প্রচার করলো যা আমি বলিনি, তবে সে নিজের জায়গা জাহান্নামে ঠিক করে নিলো” – (হাদীস টি আছে: মিশকাত, রিয়াদুস সালেহিন এ)
> অতএব আমাদের উচিৎ হবে জাল হাদীসকে হাদীস বলে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা| যদিও কথা গুলো শুনতে ভাল | জ্ঞানী দের উক্তি খারাপ হবে কেন? তবে তা রাসুলের উক্তি বলা টা রাসুল (সঃ) এর উপর অপবাদ দেয়ার নামান্তর হবে | …………….
* জাল হাদিস বা মিথ্যা হাদীস কিভাবে প্রচলিত হলো? জাল হাদীস আসার কারণ ৩ টি. :::
এক.. খৃষ্টান (নাম-আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা), মুসলিমদের সাথে বিদ্বেষ বসত মিথ্যা হাদীস তৈরী করে সমাজে প্রচার করতে থাকে, খৃষ্টান পাদ্রী হওয়াতে তার পোশাক তাকওয়ার ছিল, মুসলিম পরিচয় দিয়ে সে একাজ করে |
দ্বিতীয় কারণ হলো… কম জ্ঞান সম্পন্ন কিছু মুসলিম, যারা মানুষকে ধর্মের দাওয়াত দেয় কিন্তু সঠিক হাদীস জানা না থাকার কারণে একটা বানিয়ে তা মানতে অগ্রহী করানোর জন্য হাদীস বলে প্রচার করা |
তৃতীয় কারণ হলোঃ… হাদীস মানে কিন্তু কুরআন মানেনা অথবা, কুরআন মানে কিন্তু হাদীস মানেনা এমন একটি গোষ্ঠি দের বক্তব্য থেকে |
………….
প্রচলিত কিছু জাল হাদীসের উদাহরণ ::
…………….
১. দুনিয়া আখিরাতের শষ্যক্ষেত
…………….
২. দেশপ্রেম ইমানের অংগ …
……….
৩. মুর্খের ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানীর ঘুম উত্তম …
……..
৪. স্বামীর পা এর নিচে স্ত্রীর বেহেশত
৫. মুরব্বী শেখ রা উম্মতের মধ্যে নবীর মত
………….
৬. খাদ্য খাবার সময় সালাম দেয়া যাবেনা ……
……….
৭. আমি তিন কারণে আরবদের ভালবাসি , জান্নাতের ভাষা আরবী, আরবদের ভাষা আরবী, আমার ভাষাও আরবী …
………..
৮. অবিবাহিত ব্যক্তির ৪২ রাকাত নামাজের চেয়ে বিবাহিত ব্যক্তির ২ রাকাত নামাজ উত্তম …
……….
৯. যে নবীর কবর জিয়ারত করবে তার ই শাফায়াত হবে …
……….
১০. ওলিগণের কারামত সত্য … (উপর নিচে সব কথা ঠিক কিন্তু “আল হাদীস” নয়)
……….
১১. যে নিজকে চিনলো সে তার রবকে চিনলো …………..
১২. মসজিদে দুনিয়াবী কথা বললে তার চল্লিশ বছরের আমল নষ্ট হয় …
……….
১৩. মুমিনের হৃদয় আল্লাহর আরশ …
……..
* ১৪. রাসুল (সঃ) কে তৈরী না করা হলে দুনিয়ার কিছুই তৈরী করা হতোনা …
…………
১৫. নামাজ মিরাজ স্বরুপ।
…………
১৬. প্রয়োজনে চীন দেশে গিয়ে বিদ্যা অর্যন করো ………….
১৭. অন্তরে উপস্হিতি ছাড়া নামাজ হয়না।
…………..
১৮. শহিদের রক্তের চেয়ে জ্ঞানীর কলমের কালি উত্তম .
১৯. রোজার ১ম ১০ দিন রহমত, মাঝের ১০ দিন মাগফেরাত, শেষ ১০ দিন নাজাত (-লেখক).
. . . …
২০. একদিন আয়েশা (রা: ) অন্ধকারে সুচ হারিয়েছিলেন, রাসুল (স: ) এসে লাইট না জালিয়ে খুজে দিয়েছিলেন। তাই তিনি নুরের তৈরী।
(এটি ভুল কথা)
———————————————————-………..
বুঝতেই পারছেন, কেউ একজন লেখা পড়া শিখতে চাইছেনা, তাকে লেখা পড়া শিখানোর জন্য বলে দিলো ১৮ নং কথাটি |
লোকটি প্রশ্ন করলো এটা মিথ্যা কথা | তখন ছদ্মবেশি মাস্টর বললো এটা হাদীস | আর ধর্মপ্রাণ মুসলিম তা মেনে নিল ও প্রচার করতে লাগলো। ।
আর ২০ নং কথা যে আসলেই বানানো তা নিতান্ত মুর্খ ছাড়া সবাই বুঝবে| এভাবে ৫ নং টাও একই ভাবে নিজের কথা মানানোর জন্য প্রচার করে |
আমি প্রথমেই জাল হাদীস প্রচলনের ৩ টি কারণ বলেছি, তা আবার দেখুন | …..
………..
আর ২ নং জাল হাদীস এর উদ্দেশ্য কিন্তু এটা নয় যে দেশপ্রেম করা যাবেনা, দেশপ্রেম ইমানদারের বৈশিষ্ট ঠিক আছে, রাসুল (সঃ) এর কাজে কর্মে দেশপ্রেম ছিল যা মুসলিমের বৈশিষ্ঠ সব ঠিক আছে.. কিন্তু এটি রাসুল (সঃ) এর কথা নয়, তিনি উক্তিটি করেননি | .
এটি কোন মণিষির কথা | জ্ঞাণীরা তার চিন্তা থেকে এটা বলেছেন এবং কথাটি ঠিক আছে | কিন্তু একে কি হাদীস বলা ঠিক ? আপনি পারবেন আপনার একটা কথাকে হাদীস বলতে ? ভেবে দেখুন ….
.* যাতে ভুল বুঝাবুঝি না হয় তাই আরেকটি উদাহরণ দিই। ধরুন কেউ বললো – খালিদের লেখায় ভালো কমেন্ট দিবে। কেউ দেয়না। তখন সে বললো – যে ভালো লেখায় ভালো মন্তব্য করে সে জ্ঞানী দের একজন। আল হাদীস।।।।। কি করবেন? কথা ঠিক কিন্তু এটা তো হাদীসের বাণী ই না । অথচ লোকে বলবে- কথা দামী কথা ভালো ব্লা ব্লা। (-লেখক)
আশা করি বুঝতে পেরেছেন……
….. …..Ref # জাল হাদীসের উদাহরণ ১ থেকে ২০ পর্যন্ত – “বইঃ হাদীসের নামে জালিয়াতি” – ছবি দেওয়া হয়েছে। বইটি তে প্রায় ১ হাজার আছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ। এরকম আরোও বই বাজারে আছে, এই বইয়ের লেখক – মরহুম আ. ন. ম. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর | আল হাদীস ডিপার্টমেন্ট , ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া |
12 thoughts on "হাদীস হিসেবে বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু উক্তি – যা হাদীস নয়। দুর্ণীতি হয়েছে সাবধান থাকুন"