হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর গৌরবময় জীবন গাঁথা বিশ্বজগতের জন্য কল্যাণকর ও করুণা স্বরূপ। তিনি করুণা করে উম্মতের জন্য প্রচুর দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
এক হাদিসে সাহাবি হজরত আবু উমামা আল বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের তৃতীয় শ্রেণীতে একটি বাড়ির জিম্মাদার, যে কলহ-বিবাদ পরিত্যাগ করে। যদিও সত্য তার পক্ষেই হয়।
আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দ্বিতীয় শ্রেণীতে একটি বাড়ির জিম্মাদার, যে মিথ্যাকে পরিত্যাগ করে। যদিও তা হাসি তামাশাচ্ছলে হয়। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রথম শ্রেণীতে একটি বাড়ির জিম্মাদার, যে সৎ চরিত্র ও
আদর্শবান।’ –সুনানে আবু দাউদ
জান্নাত আল্লাহতায়ালা মোমিন বান্দার জন্য তৈরি করেছেন বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে।
জান্নাতিরা পূর্ণিমা চাঁদের মতো রূপ ধারণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ক) তাদের অন্তরে কোন্দল ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। (খ) তারা কখনও রোগাক্রান্ত হবে না। (গ) তাদের পেশাব-পায়খানা হবে না। (ঘ) তারা থুথু ফেলবে না। (ঙ) তাদের নাক দিয়ে ময়লা ঝরবে না। (চ) তাদের চিরুনি হবে সোনার চিরুনি। (ছ) তাদের ধুনীর জ্বালানি হবে আগরের। (জ) তাদের গায়ের গন্ধ হবে কস্তুরির মতো সুগন্ধি। (ঝ) তাদের স্বভাব হবে অভিন্ন ব্যক্তির ন্যায়। (ঞ) তাদের শারীরিক গঠন হবে (আদি পিতা) আদম (আ.) এর মতো। (বোখারি)।
জান্নাতিদের খাবারগুলো ঢেঁকুর এবং মেশকের ঘ্রাণযুক্ত ঘর্ম দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। (বোখারি, মুসলিম)। জান্নাতিরা সুখে-শান্তিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ডুবে থাকবে। তাদের হতাশা, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা থাকবে না। পোশাক-পরিচ্ছদ ময়লা হবে না, পুরাতন হবে না। তাদের যৌবনও নিঃশেষ হবে না। (মুসলিম)।জান্নাতের একটি গাছের নিচের ছায়ায় কোনো সওয়ারি যদি ১০০ বছরও বাহন হাঁকায় তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (বোখারি)।
জান্নাতের ১০০টি স্তর আছে, দুইস্তরের মধ্যে ব্যবধান শত বছরের। (তিরমিজি)। জান্নাতের ১০০ স্তরের যে কোনো এক স্তরে সারা বিশ্বের সব লোক একত্রিত হলেও তা যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি)। জান্নাতের উচ্চ বিছানা আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী ব্যবধানের পরিমাণ ৫০০ বছরের পথ। (তিরমিজি)।
বর্ণিত হাদিসে সেসব লোকের জন্য জান্নাতের শুভ সংবাদ দেওয়া হয়েছে, যারা তিনটি গুণের যে কোনো একটি দ্বারা অলঙ্কৃত হয়েছে।
*এক.* অনর্থক কলহ-বিবাদ থেকে দূরে থাকা। এরূপ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের তৃতীয় শ্রেণী বরাদ্দ। কেননা কলহ-বিবাদ মানুষকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য করে ও পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ফলে তাকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে অক্ষম করে দেয়। সুতরাং প্রকৃত মুসলমান সব ধরনের কলহ-বিবাদ পরিহার করে চলে।
*দুই.* মিথ্যা থেকে দূরে থাকা হোক তা উপহাসমূলক। এ গুণে অলঙ্কৃত ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দ্বিতীয় শ্রেণীর বাড়ির সুসংবাদ রয়েছে। এ ব্যক্তি এহেন সম্মানে ভূষিত হওয়ার কারণ হলো, সে কথা ও কাজে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সর্বদা সত্য ও বাস্তবের ওপর স্থির থাকে। যখন কথা বলে তখন সত্যই বলে। আর যখন কোনো সংবাদ প্রচার করে, সত্য সংবাদই প্রচার করে।
মিথ্যা একটি জঘন্য অপরাধ। তাই মিথ্যা কপটতার লক্ষণগুলোর মাঝে অন্যতম। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কপটের লক্ষণ তিনটি-
*ক. *মিথ্যা বলা,*খ.* অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও *গ.* আমানতের খেয়ানত করা বা গচ্ছিত বস্তুতে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা। -সহিহ বোখারি
*তিন.* ইসলামের দাবি হলো প্রত্যেক ঈমানদার হবে সচ্চরিত্রবান। মুসলিম সমাজের প্রতিটি মানুষের মাঝে বিরাজ করবে মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দের সুসম্পর্ক। যেখানে থাকবে না কোনো প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও কুরুচিকর
কর্মকাণ্ড।
ইসলামের মূলনীতির অন্যতম হলো- ভালো কিছু থেকে উপকৃত হওয়ার চেয়ে মন্দের অপকারিতা থেকে বাঁচার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা।
সুতরাং যে কলহ-বিবাদ মানুষকে সমস্যার সম্মুখীন করবে, তা থেকে দূরে থাকাই উচিত।
সুতরাং আখিরাতের সীমাহীন জিন্দেগিতে জান্নাতের নিয়ামাত, ভোগ-বিলাস এবং আল্লাহর দিদার লাভে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা সঠিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সুস্থ সংস্কৃতির, সচ্ছ ব্যবহার।
প্রকাশিত ও প্রচারেঃFuturebd24.Com
…..
New Ruls…(@:-Angry)