রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম পরিচয় হলো, এটি মসজিদের শহর। মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশে কেবল দিন দিন মুসলমানের সংখ্যাই
বাড়ছে না, বাড়ছে মসজিদের সংখ্যাও।
মুসলমানরা এ অঞ্চলে আগমনের পর থেকেই মসজিদ নির্মাণে মনোযোগ দেয়। একে একে শহর থেকে গ্রামে, অলিগলিতে মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে। সে ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকা ‘মসজিদের শহর’ অভিধা পেয়েছে।
‘মসজিদের শহর’ ঢাকা এক দিনে গড়ে ওঠেনি। ১৮৩২ সালে ঢাকার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ হেনরি ওয়াল্টার এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন, তৎকালীন ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা ছিল ১৫৩টি। যার সংখ্যা ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে।
ক্রমেই ঢাকা পরিণত হতে থাকে অসংখ্য মসজিদের শহররূপে। বর্তমানে ‘মসজিদের শহর’ ঢাকায় কতটি মসজিদ আছে—এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া কঠিন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের হিসাব অনুসারে ঢাকায় ১০ হাজার মসজিদ আছে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ ডিসেম্বর ’১৪)
ঢাকায় নিত্যনতুন মসজিদের পাশাপাশি প্রাচীন আমলের অনেক মসজিদ এখনো বিদ্যমান। অবশ্য পুরনো অনেক মসজিদ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। মোগল আমল থেকেই ঢাকা মসজিদের শহরে পরিণত হয়। এরই সাক্ষ্য বহন করে এখনো দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক মোগল মসজিদ। এমনকি সুলতানি আমলের একাধিক মসজিদও এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বিনত বিবির মসজিদ (স্থাপিত : ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দ), চকবাজার শাহি মসজিদ (স্থাপিত : ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দ), বেগমবাজার মসজিদ (স্থাপিত : ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ), তারা মসজিদ (স্থাপিত : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ), মুসা খাঁর
কিন্তু ঢাকার প্রাচীনতম মসজিদ কোনটি? মোগলপূর্ব যুগের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঢাকার পুরনো অংশে দুটি ও মিরপুরে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। অন্যদিকে ‘জাতীয় মসজিদখ্যাত’ ‘বায়তুল মোকাররম’ আধুনিক ঢাকার কেন্দ্রস্থলে নির্মিত হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬২।
এসব দিক বিবেচনায় ‘বিনত বিবির মসজিদ’ ঢাকার প্রাচীনতম মসজিদ। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডের সুপ্রাচীন ‘হায়াৎ বেপারীর পুলের উত্তর দিকে ‘বিনত বিবির মসজিদ’ অবস্থিত। মুনতাসীর মামুন রচিত ‘ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ (তৃতীয় সংস্করণ, জানুয়ারি, ২০০৪)
বাংলা পিডিয়ার তথ্যমতে, বিনত বিবির মসজিদই ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন ও শহরের প্রথম মসজিদ। ছয়-সাত কাঠা জায়গায় গড়ে ওঠা চার কোণবিশিষ্ট মসজিদটির আদি গঠনশৈলীতে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ থাকলেও বাংলা ১৩৩৭ (১৯৩০ খ্রি.) সনে দ্বিতীয়বার সংস্কারকালে আরো একটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়, যা মসজিদটির বিবর্তন ও সম্প্রসারণের স্পষ্ট ধারণা দেয়।
মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত একটি কালো পাথরে ফারসি ভাষায় লিখিত বর্ণনায় রয়েছে, সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহর আমলে আরকান আলী নামক এক পারস্য সওদাগর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকার নারিন্দায় বসবাস শুরু করেন এবং তিনিই ৩০-৪০ জন মুসল্লির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বিনত বিবির মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ঢাকায় বসবাসকালেই আরকান আলীর অতি আদরের কন্যা বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয় এবং তাঁকে ওই মসজিদসংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। কন্যার আকস্মিক মৃত্যুর শোকে-দুঃখে পিতা আরকান আলীও ছয় মাস পর মৃত্যুবরণ করলে তাঁকেও কন্যার পাশেই ওই মসজিদসংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। অন্য একটি বর্ণনা মতে, মাহরামাতের কন্যা মুসাম্মাৎ বখত বিনত বিবি মসজিদটি নির্মাণ করান।
যদিও ধরে নেওয়া হয় যে বিনত বিবির মসজিদ ঢাকার প্রথম মসজিদ; কিন্তু অকাট্যভাবে এ কথা বলা খুব কঠিন যে এ মসজিদ নির্মাণের আগে ঢাকায় কোনো মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। কেননা বাংলার সুলতানরা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন—এটা ইতিহাসসিদ্ধ কথা।
তাই সে আমলে অনেক প্রাচীন মসজিদ যে নির্মিত হয়েছিল, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে হ্যাঁ, হয়তো কাঠামোগতভাবে সেগুলো এখন আর টিকে নেই। এমনকি সম্প্রতি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে হিজরি প্রথম শতাব্দীতেই বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এর আলোকে এ কথাও বলা যায় যে হয়তো ঢাকার অজ্ঞাত কোনো স্থানেও হিজরি প্রথম শতাব্দীতে মসজিদ বা ইবাদতখানা নির্মাণ করা হয়েছিল।
এ যুক্তি ছাড়া আরো যুক্তি আছে যে বিনত বিবির মসজিদকে ঢাকার প্রাচীনতম মসজিদ নির্ভুলভাবে বলে দেওয়া কঠিন।
ড. আব্দুল করিমের ‘মোগল রাজধানী ঢাকা’ বই ও আরো অনেকের মতে, ঢাকার মুগদার মাণ্ডা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘মাণ্ডা মসজিদ’-এর চেয়েও প্রাচীন মসজিদ।
শিলালিপি অনুযায়ী ‘মাণ্ডা মসজিদ’ ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে নির্মিত। ঐতিহাসিক ‘মাণ্ডা মসজিদ’ বর্তমানে ‘নান্দু ব্যাপারী মসজিদ’ নামে পরিচিত।
লেখক : ইতিহাস গবেষক। সূত্র: কালের কন্ঠ।
সবাই ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন আর Trickbd সাথেই
থাকবেন।
darun lago
nice post
thx rubel vi