শুরু করছি অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।
আযান, আযানের জবাব ও দোয়া
সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি । পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘যখন তোমরা সালাতের দিকে আহবান কর, তখন তারা (মুশরিকরা) এ নিয়ে ঠাটা বিদ্রুপ ও কৌতুক করে। তা এ জন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা উপলব্ধি করে না’। – [সূরা মায়িদা : ৫৮]
আল্লাহ তা’আলা আরোও বলেন : ‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন জুমু’আর দিনে নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণে তাড়াতাড়ি করবে ও বেচা-কেনা বন্ধ রাখবে। এইটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে’। – [সূরা জুমু’আ : ৯]
আযানের ফযীলত সম্পর্কিত সহীহ হাদিস সমূহ:
১. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন যে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। [সহীহ বুখারী শরীফ -ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৫৮১, তাওহীদ পাবলিকেশন : ৬০৮]
২. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (র._ থেকে বর্ণিত যে, আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) তাকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বকরী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বকরী নিয়ে থাক, বা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকন্ঠে আযান দাও। কেননা, জিন, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়ায শুনবে, যে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রা.) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে শুনেছি। [বুখারী শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৫৮২, তাওহীদ পাবলিকেশন : ৬০৯]
৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৪।]
৪. মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি ছালাতে যোগ দিবে, সে ২৫ ছালাতের সমপরিমাণ নেকী পাবে। মুওয়ায্যিনও উক্ত মুছল্লীর সমপরিমাণ নেকী পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’। [নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৭।]
৫. যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী লেখা হয়’। [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৭৮।]
আযানের কালেমা সমূহ :১৫ টি
১. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — ২ বার
২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)—২ বার
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)—২ বার
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ (অর্থ : ছালাতের জন্য এসো) — ২ বার
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (অর্থ : কল্যাণের জন্য এসো) — ২ বার
৬. আল্লা-হু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) — ২ বার
৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) — ১ বার
৮. ফজরের আযানের সময় “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ” – এর পরে “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” (নিদ্রা হ’তে ছালাত উত্তম)_ _ _ ২ বার বলবে।
আযান দেওয়ার সময় কানে আঙ্গুল দেওয়া ও মুখ ডানে বামে ঘুরানোঃ
১. আওন ইবনু আবূ জুহাইফা (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেন, আমি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে দেথলাম এবং তাকে এদিক সেদিক ঘুরতে ও মুখ ঘুরাতে দেখলাম। তার (দুই হাতের) দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার রঙ্গীন তাবুর মধ্যে ছিলেন। (রাবী বলেন) আমার ধারণা, তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেছেন, এটা চামড়ার তাবু ছিল। বিলালা (রাঃ) ছোট একটা বর্শা নিয়ে সামনে আসলেন এবং তা বাতহার শিলাময় যমিনে গেড়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এটা সামনে রেখে নামায আদায় করলেন। তার সামনে দিয়ে কুকুর এবং গাধা চলে যেত। তার গায়ে লাল চাদর ছিল। আমি যেন তার পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি। সুফিয়ান বলেন, আমার মনে হয় এটা ইয়ামানের তৈরী চাদর ছিল। [সহীহ আত-তিরমিযি হাদিস/১৯৭, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭১১]
২. মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ জুহায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বিলাল (রা.) কে আযান দিতে দেখেছেন। (এরপর তিনি বলেন) তাই আমি তার (বিলালের) ন্যায় আযানের মাঝে মুখ এদিকে সেদিকে (ডানে বামে) ফিরাই। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৬০৬, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬৩৪]
৩. মুওয়াযযিন ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে আযান দিবে। দুই কানে আংগুল প্রবেশ করাবে, যাতে আযানে জোর হয়। ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ ও ফালা-হ’ বলার সময় যথাক্রমে ডাইনে ও বামে মুখ ঘুরাবে, দেহ নয়। [বুখারী, মুসলিম, ছহীহ ইবনু খুযায়মা, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ৪১ অনুচ্ছেদ; তিরমিযী প্রভৃতি, ইরওয়া, ১/২৪০, ৪৮, ৫১ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ২/১১৪-১৬] অসুস্থ হ’লে বসেও আযান দেওয়া যাবে। [বায়হাক্বী, ইরওয়া ১/২৪২ পৃঃ।]
আযানের জবাব কিভাবে দিতে হবে :
আযানের বাক্য – – – – – আযানের জবাব
১. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার—২ বার
২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ —আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ — ২ বার
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ —আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ— ২ বার
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার
৬. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — ১ বার
৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ —লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ — ১ বার
৮. ফজরের আযানের সময় “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ” – এর পরে “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — ২ বার
আযানের এর ক্ষেত্রে বিদআত/পরিহার্য্য বিষয় সমূহঃ
১. ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই। [মির‘আত ২/৩৬৩, হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য।]
২. এমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [আবুদাঊদ হা/৫২৮; ঐ, মিশকাত হা/৬৭০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ।]
৩. ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ -এর জওয়াবে ‘ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলারও কোন দলীল নেই।
আযানের জবাব দেওয়ার ব্যাপারে সহীহ দলিল সমূহঃ
১. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ সায়ীধ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৪, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১১]
২. ইসহাক ইবন রাহওয়াই (র.) _ _ _ ইয়াহইয়া (র.) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। ইয়াহইয়া (র.) বলেছেন, আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুআযযিন যখন “হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ” বলল, তখন তিনি (মু’আবিয়া (রা.)) “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ” বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী (সাঃ) কে আমরা এরুপ বলতে শুনেছি। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৬, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১৩]
৩. ইবনুস সারহ _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! মুআযযিনরা তো আমাদের উপর ফযীলত প্রাপ্ত হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান ছওয়াব পাব? তিনি বলেনঃ মুআযযিনরা যেরুপ বলে – তুমিও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর যখন আযান শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রুপ ছওয়ার প্রাপ্ত হবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৪]
৪. মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্না _ _ _ উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন মুআযযিন আযানের সময় আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন “হাইয়া আলাস সালাহ্” বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতপর মুআযযিন যখন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবে তখন তোমরা বলবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতঃপর মুআযযিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে, অতঃপর মুআযযিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। তোমরা যদি আন্তারিকভাবে এরুপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৭]
আযান ও আযানের জবাব শেষে সহীহ দোয়া সমূহঃ
১. আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে।
২. আযানের দোয়াঃ “আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ।
৩. মুয়াযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।
আযানের দোয়া সম্পর্কিত সহীহ দলিল সমূহঃ
১. মুহাম্মাদ ইবন সালামা _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ যখন তোমরা মুআযযিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যেরুপ বলে –তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আযান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর এরবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর এবং ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ তা’আলার একজন বিশিষ্ট বান্দা ঐ স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলার দু’আ করবে তার জন্য শাফাআত করা আমার উপর ওয়াজিব হবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৩]
২. কুতায়বা ইবন সাঈদ _ _ _ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা” – তার সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৫]
৩. আলী ইবন আইয়্যাশ (র.) _ _ _ জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে : “আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ”। — কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৭, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১৪] [সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১১]
৪. সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, “ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। [ সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১০, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭২১]
আযানের দো‘আয় বাড়তি/বিদআত বিষয় সমূহঃ
১. মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে।
২. বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে। যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায় না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।
৩. মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা,অতঃপর শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ,ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলার ব্যাপারে কোন হাদিস কোথায় খুজে পাওয়া যায় না।
আযানের অন্যান্য মাসায়েলঃ
১. আযানের উদ্দেশ্য হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোন মজুরী চাওয়া যাবে না। তবে বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ করা যাবে। কেননা নিয়মিত ইমাম ও মুওয়াযযিনের সম্মানজনক জীবিকার দায়িত্ব গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের উপরে অপরিহার্য কর্তব্য। [আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ]
২. আযান ওযূ অবস্থায় দেওয়া উচিত। তবে বে-ওযূ অবস্থায় দেওয়াও জায়েয আছে। আযানের জওয়াব বা অনুরূপ যেকোন তাসবীহ, তাহলীল ও দো‘আ সমূহ এমনকি নাপাক অবস্থায়ও পাঠ করা জায়েয আছে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।]
৩. এক্বামতের পরে দীর্ঘ বিরতি হ’লেও পুনরায় এক্বামত দিতে হবে না। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৯, ৯২ পৃঃ ;ছালাতুর রাসূল,তাখরীজ :আব্দুর রঊফ,১৯৮ পৃঃ।]
৪.ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের জন্য আযান আবশ্যিক নয়। কেবল এক্বামতই যথেষ্ট হবে। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৪, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬;মির‘আত ২/৩৮৭]
৫. আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে এলে কেবল এক্বামত দিয়েই জামা‘আত ও ছালাত আদায় করবে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ ‘আযান’ অধ্যায়,মাসআলা-১৮।]
৬. যিনি আযান দিবেন,তিনিই এক্বামত দিবেন। অন্যেও দিতে পারেন। অবশ্য মসজিদে নির্দিষ্ট মুওয়াযযিন থাকলে তার অনুমতি নিয়ে অন্যের আযান ও এক্বামত দেওয়া উচিত। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে যে কেউ আযান দিতে পারেন। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯০,৯২ পৃঃ;মাসআলা-১৩,২০।]
সাহারীর আযানঃ
সাহারীর আযান দেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বেলাল রাত্রি থাকতে আযান দিলে তোমরা (সাহারীর জন্য) খানাপিনা কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয় না’। [মিশকাত হা/৬৮০] তিনি আরও বলেন, ‘বেলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহারী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা সে রাত্রি থাকতে আযান দেয় এজন্য যে, যেন তোমাদের তাহাজ্জুদ গোযার মুছল্লীগণ (সাহারীর জন্য) ফিরে আসে ও তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিগণ (তাহাজ্জুদ বা সাহারীর জন্য) জেগে ওঠে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮১]এটা কেবল রামাযান মাসের জন্য ছিল না। বরং অন্য সময়ের জন্যও ছিল। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় অধিক সংখ্যক ছাহাবী নফল ছিয়াম রাখতেন। [মির‘আত ২/৩৮২, হা/৬৮৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।]
আজও রামাযান মাসে সকল মসজিদে এবং অন্য মাসে যদি কোন মসজিদের অধিকসংখ্যক প্রতিবেশী নফল ছিয়ামে যেমন আশূরার দু’টি ছিয়াম, আরাফাহর একটি ছিয়াম, শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম ও তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হন, তাহ’লে ঐ মসজিদে নিয়মিতভাবে উক্ত আযান দেওয়া যেতে পারে। যেমন মক্কা ও মদীনায় দুই হারামে সারা বছর দেওয়া হয়ে থাকে।
সুরূজী প্রমুখ কিছু সংখ্যক হানাফী বিদ্বান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানার উক্ত আযানকে সাহারীর জন্য লোকজনকে আহবান ও সরবে যিকর বলে দাবী করেছেন। ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, এই দাবী ‘মারদূদ’ বা প্রত্যাখাত। কেননা লোকেরা ঘুম জাগানোর নামে আজকাল যা করে, তা সম্পূর্ণরূপে ‘বিদ‘আত’ যা ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি। উক্ত আযান-এর অর্থ সকলেই ‘আযান’ বুঝেছেন। যদি ওটা আযান না হয়ে অন্য কিছু হ’ত, তাহ’লে লোকদের ধোঁকায় পড়ার প্রশ্নই উঠতো না। আর রাসূল (ছাঃ)-কেও সাবধান করার দরকার পড়তো না। [ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহ বুখারী ‘ফজরের পূর্বে আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১২৩-২৪]
Allah tomake uttom protidan din. ?