আসসালামু আলাইকুম
সবাই কেমন আছেন?
আজ আমি আপনাদের জন্য ইসলামিক একটা হাদিস নিয়ে হাজির হয়েছি। হাদিসটি হলো→ নিয়তের বিশুদ্ধতাঃ উদ্দেশ্য সততা ও একানিষ্ঠতা ” সম্পর্কে।
তো চলুন শুরু করা যাক।

হাদীস 1. “হযরত ওমন বিন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন: নিয়ত বা উদ্দেশ্যর উপরই সব কাজ নির্ভরশীল। মানুষ যা নিয়ত করে, তাই পায়। যেমন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরতই হবে প্রকৃত হিজরত। আর যে ব্যাক্তি দুনিয়ার কোন স্বার্থ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে, তার হিজরত পরিগণিত হবে দুনিয়ার জন্য কিংবা সংশ্লিষ্ট নারীর জন্য কৃত হিজরত হিসাবে।” [বোখারী, মুসলিম]

মানুষের চিন্তা ও কর্মের পরিশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। রাসূল (সা)-এর এ হাদিসের মর্ম এই যে, যে কোন সৎ কাজই করা হোক না কেন, তা কী উদ্দেশ্যে ও কোন নিয়তে করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই তার পরিণাম ও প্রতিদান নির্ণিত হবে। যদি উদ্দেশ্য সৎ থেকে থাকে, তবে তার সওয়াব পাওয়া যাবে, নচেত সওয়াব পাওয়া যাবে না। কোন কাজ দেখতে যতই পুণ্যের কাজ মনে হোক, আখেরাতে তার প্রতিদান কেবল তখনই পাওয়া যাবে, যখন তা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হবে। এই কাজের পেছনে যদি কোন দুনিয়াবী স্বার্থসিদ্ধির ইচ্ছা কার্যকর থেকে থাকে, যদি তা কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে করা হয়ে থাকে, তবে পরকালের বাজারে তার কোন দাম থাকবে না। সেখানে ঐ কাজ অচল মুদ্রা হিসাবে গণ্য হবে। এ কথাটাকে তিনি হিজরতের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন। হিজরত কত বড় ত্যাগ ও পুণ্যের কাজ, মানুষে নিজের ঘড়বাড়ী, সহায়-সম্পদ ও জন্মভূমি চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু এত বড় ত্যাগ ও পুণ্যের এই কাজটি আদৌ পুণ্যের কাজ হিসাবেই গৃহীত হবে না এবং এ কাজের কোন সওয়ারই পাওয়া যাবে না যদি মানুষ তা আল্লাহ ও রাসূলের জন্য না করে। বরং নিছক নিজের দুনিয়াবী স্বার্থ ও সুবিধা লাভের জন্য করে। এতে বরঞ্চ সে প্রতারণা ও ধোকাবাজির দায়ে অভিযুক্ত হবে। কারণ সে নিজেেক আল্লাহর জন্য হিজরতকারী হিসাবে চিহ্নিত করে মুসলমানদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধোকা দিয়ে পার্থিব সুযোগ সুবিধা যথা খাদ্য ও আশ্রয় ইত্যাদি লাভ করছে। অথচ আসলে সে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করেনি।

হাদীস 2. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন: আল্লাহ তোমাদের আকৃতি, চেহারা ও ধনসম্পদ দেখবেন সা। তিনি দেখবেন তোমাদের মন ও আমলকে। [মুসলিম]


হাদীস 3. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে আরো বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন: কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে, যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আল্লাহর আদালতে হাজির করা হবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেয়া নেয়ামত গুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। যাবতীয় নেয়ামতের কথা তার মনে পড়বে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি আমার নেয়ামত গুলো পেয়ে কি কাজ করছ? সে বলবে: আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য (তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধে লড়াইতে লিপ্তদের সাথে) যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি যে বললে আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি-এ কথা ভুল বলেছ। তুমি যুদ্ধ করেছ শুধু এ জন্য যে, লোকেরা তোমাকে বীর ও সাহসী বলবে। সেটা বলাও হয়েছে এবং দুনিয়াতেই তুমি তার প্রতিদান পেয়ে গেছো। অতঃপর হুকুম দেয়া হবে যে, এই ‘স্বকথিত শহীদ’ কে মুখ নীচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তৎক্ষণাত তাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর দ্বিতীয় আরেক জন ব্যক্তি আসবে আল্লাহর আদালতে। সে ছিল ইসলামের বিশিষ্ট পন্ডিত তথা আলেম, শিক্ষক ও কোরআন অধ্যায়নকারী। তাকে আল্লাহ তাঁর দেয়া নেয়ামতগুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। লোকটির যাবতীয় নেয়ামতের কথা মনে পড়বে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন: এতসব নেয়ামত পেয়ে তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ, আমি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তোমার দ্বীন শিখেছি। তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা অন্যকেও শিখিয়েছি এবং তোমারই জন্য কোরআন পড়েছি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন: ‘তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি তো কেবল এ জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন করেছ যেন লোকেরা তোমাকে একজন আলেম বলে। আর কোরআন তুমি এজন্য শিখেছ, যেন জনগণ তোমাকে কোরআনের জ্ঞানী বলে। তোমার এ আশা দুনিয়াতেই মিটে গেছে এবং লোকে তোমাকে আলেম ও ক্বারী বলেছে। এরপর হুকুম দেওয়া হবে যে ওকে মুখ নিচের দিকে দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাও এবং জাহান্নামে ফেলে দাও। তৎক্ষণাত তাকে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি হবে দুনিয়ার সেই ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ বিপুল প্রাচুর্য ও রকমারি অঢেল সম্পদ দান করেছেন। তাকে হাজির করার পর আল্লাহ তাকে দেয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করাবেন। সকল নেয়ামতের কথা তার মনে পড়বে এবং সে স্বীকার করবে যে, এসকল নেয়ামত তাকে দেয়া হয়েছিল। এরপর তার প্রতিপালক তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার নিয়ামত গুলো পেয়ে তুমি কি করেছ? সে বলবে, যে সব খাতের খরচ তুমি পছন্দ কর, সেই সব খাতে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খরচ করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি সমস্ত সম্পদ এজন্য দান করেছিলে যেন লোকে তোমাকে দানশীল বলে। এ উপাধি তুমি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছ। এরপর আদেশ দেওয়া হবে যে, ওকে মুখ নিচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে আগুনে ছুড়ে মারো। তাকে তৎক্ষণাত আগুনে ফেলে দেয়া হবে। [মুসলিম]

এবার আসুন উপরের হাদীস তিনটির ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাখ্যাঃ এই তিনটি হাদীস যে বিষয়টি তুলে ধরেছে, তা হলো: আখেরাতে কোনো সৎ কাজের বাহ্যিক রুপ ও আকৃতি দেখে পুরষ্কার বা প্রতিদান দেওয়া হবে না। সেখানে শুধু সেই কাজই সওয়াবের যোগ্য বিবেচিত হবে, যা কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে। যত বড় নেক কাজই হোক, তা যদি এ উদ্দেশ্যে করা হয় যে, সমাজের লোকেরা তাতে খুশী হবে কিংবা জনগণের চোখে তার মর্যদা বাড়বে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার চোখে তার কোন মর্যদা থাকবে না। আখেরাতের বাজারে এ ধরনের পণ্যের কোন মূল্য জবে না। আল্লাহর দাঁড়িপাল্লায় এ ধরনের নেক আমল অচল ও নকল পণ্য বিবেচিত হবে। এ ধরনের লোক দেখানো ঈমানও সেখােন কাজে আসবে না।
সুতরাং, আমাদেরকে এই লোক দেখানো ও খ্যাতি অর্জনের সর্বনাশা মানসিকতা থেকে সতর্ক ও হুশিয়ার থাকতে হবে। নচেত আমাদের অজান্তেই আমাদের যাবতীয় চেষ্টা সাধনা ও শ্রম বরবাদ হয়ে যাবে। শুধু যে বরবাদ হবে তাই নয়। আখেরাতের ময়দানে হাজির হবার আগে এই বরবাদ হওয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও জানা যাবে না। সেই ময়দানে মানুষ প্রতিটি আমলের প্রয়োজন অত্যান্ত তীব্রভাবে অনুভব করবে, তাই তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন।

তো আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা নিয়ে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।
★যদি কোনো সমস্যা বা দরকার হয় তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করুন নিম্নউক্ত মাধ্যমেঃ

★Email: [email protected]
.
★Facebook
আল্লাহ হাফেজ

ধন্যবাদ সবাইকে

5 thoughts on "দেখে নিন, নিয়তের বিশুদ্ধতা, উদ্দেশ্যের সততা ও একনিষ্ঠতা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস। বিস্তারিত পোস্টে।"

  1. Rumon Ahammed Contributor says:
    সুন্দর পোস্ট
  2. Jemes Faruk khan Contributor says:
    5000 হাজার হাদিস পড়েছি কিন্তু কোন টাই ঠিক ভাবে ধরি না। তাই ধরার চেষ্টা করতেছি
  3. Hossain ahmed numan Author says:
    এই হাদিসগুলো দশম শ্রেণীতে পড়ে ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ আবার পড়লাম

Leave a Reply