রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান | সম্পাদক : চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
ভূমিকা :
অনেক সময় এমন হয়, একটা নেক আমল বা সৎকর্ম করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অবশেষে এক সময় তা ছেড়ে দিই। আবার অনেক সময় করবো করবো বলে নেক আমল শুরু করা হয় না।একজন ঈমানদার, মুহসিন মানুষ কখনো এমন করে না, করতে পারে না, করা তার জন্য শোভনীয় নয়। বক্ষমান আলোচনায় এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আল কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসের আলোকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, অতঃপর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে গেল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক। [সূরা আল হাদীদ, আয়াত ১৬]
আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. সাহাবায়ে কেরামের একটি দল যখন হাসি তামাশা বেশী করেছেন তখন তাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। অতএব ঈমানদারদের বেশী রঙ -তামাশা, হাসি-বিনোদন পরিহার করা কর্তব্য।
তিন. যাদের ইত:পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা হল ইহুদী ও খৃষ্টান। তাদের অন্তর এতটা কঠিন হয়ে গেছে যে তারা সৃষ্টিকর্তার নাযিলকৃত বিধি-বিধান সম্পর্কে কোন কিছু ভাবতে চায় না। তাঁর হক বা পাওনা সস্পর্কে একেবারে উদাসীন। ফলে তারা পাপাচারীর খাতায় নাম লেখাল। শেষ পর্যন্ত নিজেদের ধর্মটার মূল চরিত্র পাল্টে দিল। ধর্ম আর ধর্ম থাকল না। বিকৃত করে ফেলল। কিছু পর্ব আর অনুষ্ঠানে আটকে দিল ধর্মটাকে। আদর্শ আর নৈতিকতা বোধে উজ্জীবিত হওয়া ও জীবনাচার শুদ্ধ করার সব আবেদন গেল হারিয়ে। মুসলিমদের এ রকম হওয়া কখনো উচিত নয় বলে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিলেন তাঁর এ আয়াতে।আল্লাহ তাআলা বলেন: তারপর তাদের পিছনে আমি আমার রাসূলদেরকে অনুগামী করেছিলাম এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকেও অনুগামী করেছিলাম। আর তাকে ইনজীল কিতাব দিয়েছিলাম এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে করুণা ও দয়া-মায়া দিয়েছিলাম। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের ওপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। [সূরা আল হাদীদ, আয়াত ২৭]
আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. মানুষের অন্তরের বিনয় ও ভালো কাজ করার প্রেরণা ও একাগ্রতা আল্লাহ তাআলার একটি দান।
দুই. যদি কোন ব্যক্তি নিজের উপর কোন নেক আমল আরোপ করে নেয় তাহলে তার উপর অটল থাকা কর্তব্য।
তিন. রুহবানিয়্যাহ অর্থ হল বৈরাগ্যবাদ। কোন মানুষ যখন বিয়ে শাদী সংসার-কর্ম ও যৌনাচার থেকে বিমুখ হয় তখন আমরা বলি সে বৈরাগ্যবাদ অবলম্বন করেছে বা বৈরাগী হয়ে গেছে। খৃষ্টান ধর্মযাজক বা পাদ্রী-পুরোহিতদের জন্য -তাদের বিশ্বাস মতে- বৈরাগ্যবাদ অবলম্বন জরুরী। এ জন্য খৃষ্টান পাদ্রী ও নান তথা যে সকল নারী ও পুরুষ ধর্মের সেবায় নিয়োজিত তারা কখনো বিয়ে – শাদী, ঘর-সংসার করে না।
চার. আল্লাহ তাআলা বৈরাগ্যবাদ অবলম্বনের নির্দেশ দেননি। এটা খৃষ্টানেরা ধর্মের নামে ধর্মের মধ্যে একটি বিদআত চালু করেছে। এবং তারা এটাকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের বড় মাধ্যম বলে মনে করে নিয়েছে।
পাঁচ. তারা বৈরাগবাদকে অবলম্বন করেও তার উপর অটল থাকেনি। আমরা প্রায়ই খবরে শুনে থাকি অমুক পাদ্রী, অমুক ধর্মযাজকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। খৃষ্টান চার্চ ও গৃর্জাগুলোতে যৌন নিপীড়ণ যেন একটি নিয়মিত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সেখানে শিশুরা পর্যন্ত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আল্লাহ তাআলা বলতে চান, হে খৃষ্টান সম্প্রদায়! ধর্মের প্রতি তোমাদের কেন যত্ন নেই? আমার সত্যিকার আদেশ নিষেধ তো পরের কথা, তোমরা যে বিষয়টিকে ধর্ম বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করো সেটাই তো লংঘন করে থাকো।
পাঁচ. তারা বৈরাগবাদকে অবলম্বন করেও তার উপর অটল থাকেনি। আমরা প্রায়ই খবরে শুনে থাকি অমুক পাদ্রী, অমুক ধর্মযাজকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। খৃষ্টান চার্চ ও গৃর্জাগুলোতে যৌন নিপীড়ণ যেন একটি নিয়মিত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সেখানে শিশুরা পর্যন্ত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আল্লাহ তাআলা বলতে চান, হে খৃষ্টান সম্প্রদায়! ধর্মের প্রতি তোমাদের কেন যত্ন নেই? আমার সত্যিকার আদেশ নিষেধ তো পরের কথা, তোমরা যে বিষয়টিকে ধর্ম বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করো সেটাই তো লংঘন করে থাকো।
ছয়. খৃষ্টানদের এ স্বভাবটি উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের মেসেজ দিচ্ছেন, তোমরা মুসলিমরা ধর্মের ব্যাপারে খৃষ্টানদের মত উদাসীন হবে না, বরং যত্নবান হতে চেষ্টা করো।
আল্লাহ তাআলা বলেন: আর তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার পাকানো সূতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে। [সূরা আন নাহল, আয়াত ৯২]
আল্লাহ তাআলা বলেন: আর তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার পাকানো সূতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে। [সূরা আন নাহল, আয়াত ৯২]
আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. কোন একটি কাজ করে তা বিনষ্ট করে দেয়া ঠিক নয়। এমনিভাবে কোন নেক আমল শুরু করে তা পরিহার করা অনুচিত
দুই. প্রতিটি নেক আমল বা সৎকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে অটলতা ও অবিচলতা অবলম্বন জরুরী। এমনিভাবে গোটা ইসলামী অনুশাসন মানার ক্ষেত্রে ঈমানদারদের অবিচল হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর ইয়াকীন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত কর। [সূর আল হিজর, আয়াত ৯৯]
আয়াত থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. মৃত্যু আসা পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। বিরামহীনভাবে, অবিচল ও অটলতার সাথে।
দুই. কোন নেক আমল বা সৎকর্ম শুরু করলে তা ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং সে কাজটির উপর অটল থাকা সে কাজের প্রতি ভালবাসা ও আন্তরিকতারই প্রমাণ। যদি কাজটি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে বুঝে আসবে এ কাজটি তার কাছে আর ভাল লাগে না।
তিন. মানুষ স্বভাবগত ভাবেই প্রতিদিন নতুন নতুন দৃষ্টিভংগি গ্রহণ, নতুন বিষয় ভাবতে ও নতুন পরিকল্পনা করতে পছন্দ করে। কিন্তু এটাকে যদি জীবনের একটি অভ্যাস বানিয়ে নেয়া হয়, আর এ অভ্যাস যদি সংশোধন করা না হয় তাহলে জীবনে বড় কোন কিছু করা সম্ভব হবে না তার পক্ষে।
তিন. মানুষ স্বভাবগত ভাবেই প্রতিদিন নতুন নতুন দৃষ্টিভংগি গ্রহণ, নতুন বিষয় ভাবতে ও নতুন পরিকল্পনা করতে পছন্দ করে। কিন্তু এটাকে যদি জীবনের একটি অভ্যাস বানিয়ে নেয়া হয়, আর এ অভ্যাস যদি সংশোধন করা না হয় তাহলে জীবনে বড় কোন কিছু করা সম্ভব হবে না তার পক্ষে।
উমার ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতে তার জিকির-পাঠ আদায় না করে ঘুমিয়েছে, অথবা আদায় করেছে তবে কিছু বাকী রয়ে গেছে অত:পর তা ফজর ও জোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তার জন্য রাতে পাঠের সওয়াব দেয়া হয়। (মুসলিম- ১)
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. হিযব শব্দের আভিআনিক অর্থ হল অংশ। পরিভাষায় এর অর্থ বুঝাতে আমরা বলে থাকি অজীফা। অর্থাৎ কোন মানুষ যখন কোন জিকির আজকার বা তেলাওয়াত নিয়মিত করে থাকে, তাকে আমরা অজীফা বলে থাকি। যেমন কোন ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর প্রতি দিন এক পারা কুরআন তেলাওয়াত করে থাকে। এটি তার একটি অজীফা। আবার কেহ আছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু মাসনূন দুআ-জিকির আদায় করে বা কুরআন থেকে পাঠ করে। এটি তার অজীফা। শুরু করলে এগুলো নিয়মিত আদায় করা কর্তব্য।
দুই. যদি কখনো নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো আদায় করা না যায় তাহলে পরে আদায় করে নিলে সওয়াব পাওয়া যায়।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। কিন্তু কখনো কোন কারণে তা ছুটে গেলে তিনি পরে আদায় করে নিতেন।
চার. নিয়মিত নেক আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হতে উৎসাহিত করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন: হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, যে রাতে নামাজ পড়ত, কিন্তু পরে রাতে নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারী :২৫২)
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. কোন নেক আমল কয়েকদিন নিয়মিত কয়েকদিন করে তা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। এটা নেক আমলের প্রতি যত্নবান না হওয়ার শামিল।
দুই. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ফজিলত জানা গেল। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন তখন তিনি পরদিন বারো রাকাত নামাজ আদায় করে নিতেন। (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন ১১৮১)
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. নিয়মিত নেক আমলগুলো কোন কারণে ছুটে গেলে তা কাজা করা যেতে পারে।
দুই. এটা নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার একটি দৃষ্টান্ত।
আবু হুরায়রা(রা) রাসূল (সা) থেকে বর্ণণা করেছেন, “শ্রেষ্ঠ নেক আমল সেটাই যা নিয়মিত করা হয় যদিও তা সংখ্যায় অল্প হয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৪২৪০)
দুই. এটা নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার একটি দৃষ্টান্ত।
আবু হুরায়রা(রা) রাসূল (সা) থেকে বর্ণণা করেছেন, “শ্রেষ্ঠ নেক আমল সেটাই যা নিয়মিত করা হয় যদিও তা সংখ্যায় অল্প হয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৪২৪০)
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
এক. নেক আমল পরিমানে অল্প হলেও তা নিয়মিত করতে হবে।
দুই আল্লাহর কাছে ইবাদত ও ভালোকাজের বাহ্যিক ‘পরিমান’ ও ‘সংখ্যার’ চেয়েও কাজটির ‘মান’, ইখলাস ও নিয়মতান্ত্রিকতাই বেশী গুরূত্বপূর্ণ।
দুই আল্লাহর কাছে ইবাদত ও ভালোকাজের বাহ্যিক ‘পরিমান’ ও ‘সংখ্যার’ চেয়েও কাজটির ‘মান’, ইখলাস ও নিয়মতান্ত্রিকতাই বেশী গুরূত্বপূর্ণ।
সমাপ্ত
ইসলামিক পোস্ট পেতে বিজিট করুন ইসলামিক সাইট www.OurislamBD.Com
সবাই ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন আর Trickbd সাথেই থাকবেন।
পারি ধন্যবাদ
ইসলামিক পোষ্টতো.. তাই একটু ছোট করে পোষ্ট করলে ভালো হয়… জাজাকাল্লাহ