রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-


দিনেদিনে আমাদের সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে পরকীয়া। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পারিবারিক কলহ। এই পরকীয়ার করণে প্রতিদিনই স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, সন্তানের হাতে পিতা-মাতা এবং পিতা-মাতার হাতে সন্তানের প্রাণ হরণের মত ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি, ভেঙে যাচ্ছে সংসার। এর শেষ পরিণতি হচ্ছে নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে।
আমাদের সমাজে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ, বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা।
ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি।
বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরণের সর্ম্পক কিংবা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?
এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।
এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।
শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।
পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর- ২)
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, 
১. তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, 
২. তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং 
৩. তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। 
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, 
১. সে আল্লাহর অসন্তোষ, 
২. কঠিন হিসাব ও 
৩. জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি:
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি বর্ণনায় হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে। অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’ (বুখারী)
কখনো দেখা যায় দেবরের সাথে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ যেন এধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।

ইসলামিক পোস্ট পেতে বিজিট করুন ইসলামিক সাইট www.OurislamBD.Com

সবাই ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন আর Trickbd সাথেই থাকবেন।

14 thoughts on "পরকীয়ার শাস্তি দুনিয়াতে ও আখিরাতে ৬টি"

    1. M.Rubel Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
    1. M.Rubel Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
  1. nrzam111098 Contributor says:
    হে আল্লাহ আমাদের কে সঠিক পথে চলার ও সঠিক পথ সম্পর্কে জানার সুমতি দান করুন।আমিন।
  2. NS Sabur Legend Author says:
    আমিন
  3. Uzzal Mahamud Pro Author says:
    ভালো বিষয়
  4. sm alam Contributor says:
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন
    1. M.Rubel Author Post Creator says:
      আমিন
  5. sm alam Contributor says:
    খুব সুন্দর হস্তমৈথুনের উপর একটা পোস্ট করুন
    1. M.Rubel Author Post Creator says:
      দোয়া করবেন আগামীতে এরকম পোস্ট আরও করবো

Leave a Reply