বিসমিল্লাহির রাহ মানির রাহীম

আসসলামুয়ালাইম

কেমন আছেন সবাই?আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। প্রথমে সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল আযহার শুভেচ্ছা”ঈদ মোবারক”
আজকে আমি আলোচনা করবো পবিত্র ঈদুল আযহা কি,এই দিনের কিছু মাসআলা ও মাসায়েল,কুরবানীর ইতিহাস, যাকাত ও কুরবানি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। তো চলুন শুরু করা যাক

সর্বপ্রথম ঈদুল আযহা শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে জেনে নিই,ঈদ উল আযহা বা ঈদ উল আজহা বা ঈদ উল আধহা (আরবি: عيد الأضحى‎, প্রতিবর্ণী. ʿīd al-ʾaḍḥā, অনুবাদ ‘ত্যাগের উৎসব’‎,
আরবি ছাড়া অন্য ভাষায়, এই নামটি প্রায়ই স্থানীয় ভাষায় বলা হয়ে থাকে, যেমন বাংলায় কোরবানী ঈদ, জার্মান ভাষায় Opferfest, ওলন্দাজ ভাষায় Offerfeest, রোমানীয় ভাষায় Sărbătoarea Sacrificiului, ও হাঙ্গেরীয় ভাষায় Áldozati ünnep। স্পেনীয় ভাষায় এটি Fiesta del Cordero বা Fiesta del Borrego (দুটিরই অর্থ “মেষশাবকের উৎসব”) নামে পরিচিত। এছাড়া মিশর, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে এটি عید البقرة ʿĪd al-Baqarah নামে, ইরানে عید قربان ঈদে কোরবান নামে, তুরস্কে Kurban Bayramı (“ত্যাগের দিন”) নামে, ত্রিনিদাদে Bakara Eid নামে, মাগরেবে عید الكبير ʿĪd el-Kebīr নামে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনIduladha, Hari Raya Aiduladha, Hari Raya Hajiবা কুরবান নামে, ভারত ও পাকিস্তানে بکرا عید বক্রা ঈদ বা بڑی عید বরি ঈদ নামে পরিচিত।
আরবী عيد ঈদ শব্দটির অর্থ “উৎসব,” “উদযাপন,” “ভোজের দিন,” বা “ছুটির দিন”। ًأضحى আদহাশব্দটির অর্থ “বলিদান”, ‘”ত্যাগ”।

ঈদ-উল আযহা কি?

 ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি।চলতি কথনে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদনামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আযহা’র নামাজ আদায় করে ও অব্যবহিত পরে স্ব স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী উট ছাগল, ভেড়া ও মহিষ আল্লাহর নামে কোরবানি করে।ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।

কুরবানির ইতিহাসঃ

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেনঃ “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর”। ইব্রাহীম স্বপ্নে এবম্বিধ আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম এবার ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিসহ আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত করার জন্য ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। শয়তানকে তার প্রত্যাখ্যানের কথা স্মরণে হজ্জের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্ন স্বরূপ নির্মিত ৩টি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।[৩]

যখন ইব্রাহীম (আঃ) আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ’র আদেশ পালন করার দ্বারা কঠিন পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হন। এটি ছিল ছয় সঙ্গিখ্যক পরীক্ষা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ) কে তার খলিল(বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন
১০০। অবশেষে আমি তাহাকে প্রশাশু বালকের (এসমায়িলনামক পুত্রের) সুসংবাদ দান করিলাম।
১০১। পরে যখন সে তাহার সঙ্গে দৌড়িবার বয়ঃপ্রাপ্ত হইল, তখন সে বলিল, “হে আমার নন্দন, নিশ্চয় আমি স্বপ্নে দেখিয়াছি যে, সত্যই আমি তোমাকে বলিদান করিতেছি ; অতএব তুমি কি দেখিতেছ, দেখ। সে বুলিল “হে আমার পিতা, যে বিষয়ে আদিষ্ট হইয়াছ, তাহা কর ; ঈশ্বরেচ্ছায় তুমি আমাকে অবশ্য সহিষ্ণুদিগের অন্তর্গত পাইবে”।
১০২। পরে যখন তাহারা দুই জনে (ঈশ্বরাজ্ঞার) অনুগত হইল, এবং সে তাহাকে (ছেদন করিতে) ললাটের অভিমুখে ফেলিল।
১০৩। এবং আমি তাহাকে ডাকিলাম যে, ‘হে এব্রাহিম, ।
১০৪। সত্যই তুমি স্বপ্নকে সপ্রমাণ করিয়াচ; নিশ্চয় আমি এইরূপে হিতকারী লোকদিগকে বিনিময় দান করিয়া থাকি’ । 
১০৫। নিশ্চয় ইহা সেই স্পষ্ট পরীক্ষা। 
১০৬। আমি তাহাকে বৃহৎবলি (শৃঙ্গযুক্ত পুং মেষ) বিনিময় দান করিলাম। 
১০৭। এবং তাহার সম্বন্ধে (সৎপ্রশংসা) ভবিষ্যদ্বংশীয়দিগের প্রতি রাখিলাম। 
১০৮। এব্রাহিমের প্রতি সেলাম । হৌক। 
১০৯। এই রূপে আমি হিতকারীদিগকে বিনিময় দান করি। 
১১০। নিশ্চয়ই সে আমার বিশ্বাসী দাসদিগের অন্তর্গত ছিল। 
১১১। আমি তাহাকে সাধুদিগের অন্তর্গত এক প্রেরিত পুরুষ এসহাক (পুত্রের) সম্বন্ধে সুসংবাদ দান করিয়াছিলাম।
১১২। এবং তাহার প্রতি ও এসহাকের প্রতি আশীৰ্ব্বাদ করিয়াছিলাম, এবং তাহাদের সস্তানগণের মধ্যে কতক হিতকারী ও কতক আপন জীবনসম্বন্ধে স্পষ্ট অত্যাচারী হয়।

— কোরআন, সূরা ৩৭ (আস-ছাফফাত), আয়াত ১০০-১১২[৪]

এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি উদযাপন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহার কুরবানী চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।

ঈদের নামাজ

মুসলিমগণ ঈদুল আযহার নামাজ মসজিদে বা খোলা মাঠে আদায় করে থাকেন। ঈদের নামাজ জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে, সূর্য উদয়ের পর থেকে যোহর নামাজেরসময় হবার আগ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে যে কোন সময় আদায় করা হয়ে থাকে। কোন কারণ বশত (উদা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ) নামাজ আদায় করা না গেলে ঈদুল আজহার নামাজ ১২ই যিলহজ্ব পর্যন্ত ঐ সময়ের মধ্যে আদায় করা যাবে। ঈদের নামাজ দুই রাক্বাত। এটি ওয়াজিব নামাজ। তা জামায়াতের সঙ্গে ছয় অতিরিক্ত তাক্ববিরের সঙ্গে পড়তে হয়। ঈদের নামাজ শেষে ইমামের জন্য খুৎবা পড়া সুন্নত ও মুছুুল্লিদের জন্য খুৎবা শোনা ওয়াজিব।ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের নামাজের জন্য গোছল করে এবং নতুন কাপড় পরিধান করে।মহিলাদের জন্য এই নামাজ সুন্নৎ।

যাকাত ও কুরবানির নিয়ম কানুন

ইসলাম মতে ঈদুল আযহার দিনে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে অর্থাৎ যার কাছে ঈদের দিন প্রত্যূষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদ (যেমন জমানো টাকাা) আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করা ওয়াজীব। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত। মুসাফির বা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়| ঈদুল আযহার নামাজ শেষে কুরবানী করতে হবে। ঈদুল আযহার নামাজের আগে কুরবানি করা সঠিক নয়।

বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু বা খাসী কুরবানি দিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ বা খাসি কুরবানি করতে পারেন। তবে গরুর বা মহিষ এর ক্ষেত্রে সর্বোচচ্চ ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ ২, ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরিক হতে পারেন। কুরবানির খাসীর বয়স কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। নিজ হাতে কুরবানি করা ভাল। কুরবানি প্রাণির দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হয়।

সাধারণত আমাদের দেশে কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এবং ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা হয়। তবে মাংস বিতরণের কোন সুস্পষ্ট হুকুম নেই কারন কুরবানির হুকুম পশু জবেহ্‌ হওয়ার দ্বারা পালন হয়ে যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।
আশা করি সম্পুর্ন ধারনা পেয়ে গেছেন। যদি বলেন এখনো আমি আরো জানতে চাই তাহলে আমি বলবো ভাই আপনার জন্য প্লে-স্টর এ “ঈদ-উল আযহা ও কুরবানির মাসয়ালা” নামক একটি এপস রয়েছে আপনি এপসটি ইনষ্টল করে পড়তে পারেন।

ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন

এপসটিতে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

※ কুরবানীর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
※কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
※কুরবানীর পশুর বয়স
※কুরবানীর প্রকারভেদ
※কুরবানীর উদ্দেশ্য
※কুরবানীর বিধান
※কুরবানীর ফযীলত
※কুরবানী বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি
※কুরবানীর নিয়মাবলী , ওয়াক্ত বা সময়
※জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন
※কেউ কুরবানী দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে তার করণীয় কি?
※কুরবানীর পশু জবেহ করার নিয়ম
※জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত
※ঈদ উল আযহার বিধান
※ঈদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম
※ঈদ উল আযহার দিনে করণীয় ও বিধান
※কিছু বিদ’আত ও ভুল ভ্রান্তি
※কুরবানী নিয়ে কিছু অচল হাদীস
※কোরবানির মাসায়েল ও ঈদের নামাজের নিয়ম
※কোরবানির নিয়ম ও দোয়া-Qurbani
※মাসায়েলে কুরবানি (Rules for Qurbani)
※কোরবানির দোয়া ও নিয়ম – Qurbani Guide
※জিলহজ্জ মাসের আমল-হজ্ব, ওমরাহর সহজ নিয়ম, কুরবানী
※কোরবানির নিয়ম ও মাসলা মাসায়েল ~ Qurbani apps
※কোরবানীর মাসালাহ-শরীয়ত সম্মত(Qurbani Masalah AtoZ
※কোরবানির ইতিহাস, নিয়ম ও দোয়া বা qurbani masayel
※Qurbani masala-কুরবানী এর মাসায়েল ও ইতিহাস
※কোরবানির নিয়ম Qurbani guide
※ভাগে কোরবানির নিময়কানুন
※Qurbani-কুরবানীর সঠিক নিয়ম ও মাসআলা
※মাসায়েলে কুরবানী~কুরবানি দেয়ার ইসলামিক মাসলা
※ঈদুল আযহা কোরবানির নিয়ম ও কুরবানীর মাসয়ালা

কিছু স্ক্রিনসট দেখুনঃ






আজ এই পর্যন্ত

পোষ্টটি ভালো লাগলে একটা লাইক এবং অনুপ্রেরণামুলক একটা মন্তব্য করবেন। মন চাইলে আমার সাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন

সৌজন্যেঃ TechBD25.com







2 thoughts on "[®জ্ঞানের আলো® পর্ব-2] প্রত্যেক মুসলিম ভাই-বোনেরা জেনে নিন পবিত্র ঈদুল আযহার মাসয়ালা ও কুরবানির ইতিহাস এবং কুরবানি করার সম্পুর্ন নিয়ম কানুন।"

    1. MD RACHEL UDDIN Contributor Post Creator says:
      Thanks vaia

Leave a Reply