মিথ্যা বলা অশোভনীয় ও অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। চারিত্রিক স্খলনের কারণে অনেকে মিথ্যায় জড়িয়ে যায়। মনুষ্যত্ববোধ ও রুচিশীলতা লোপ পেলেও অনেকে মিথ্যার বেসাতি তৈরি করে। কিন্তু সুস্থ ও সঠিক মন-মস্তিষ্ক কোনোক্রমেই মিথ্যা সমর্থন দিতে পারে না।

মিথ্যা ভয়াবহ গুনাহ। মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকতে ইসলাম দৃঢ়ভাবে সতর্ক করেছে। ইসলামে মিথ্যার সামান্যতম আশ্রয় বা সুযোগ নেই। কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, এটা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ও গর্হিত। মিথ্যাবাদীর পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতে খুবই নিন্দনীয়। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ও মৌলিক স্বার্থে মিথ্যা বলার অবকাশ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক।’ (সুরাহ নাহাল, আয়াত : ১০৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুনাফেকদের নিদর্শন তিনটি : কথা বলার সময় মিথ্যা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি, হাদিস নং ৩৩, মুসলিম, হাদিস নং ৫৯)

মুসলিম মনীষীরা বলেছেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর ওপর মিথ্যারোপ করা। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। কেউ কেউ এ জাতীয় মিথ্যুককে কাফের পর্যন্ত বলেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।’ (সুরাহ নাহাল, আয়াত : ১১৬)

আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার ওপর মিথ্যা বলবে না, যে আমার ওপর মিথ্যা বলবে, সে যেন জাহান্নামে প্রবেশ করে।’ (বুখারি, হাদিস নং : ১০৬)

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে যে রাসূল (সা.)-এর ওপর মিথ্যা বলবে সে যেন নিজ স্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়।’ (তারিকুল হিজরাতাইন, ১৬৯)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর।’ (সুরাহ মায়েদা, আয়াত : ৮)

হাফস ইবন আসেম থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেনে, ‘ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলবে।’ (মুসলিম : ৫)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘এ সব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যা যা শোনা যায় তার সব কিছু বলা নিষেধ। কারণ, প্রতিনিয়ত সত্য-মিথ্যা অনেক কিছুই শোনা যায়, অতএব যে ব্যক্তি সব কিছু বলে বেড়াবে—তার দ্বারা মিথ্যা প্রচারিত হওয়াই স্বাভাবিক, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আর এটাই হচ্ছে মিথ্যা, মিথ্যার জন্য ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দখল নেই। হ্যাঁ, গোনাহগার হওয়ার ইচ্ছা শর্ত। আল্লাই ভাল জানেন।’ (শরহু মুসলিম : ১/৭৫)

মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে যেসব কারণে,

• যুদ্ধে মিথ্যা বলা বৈধ।
• দু’পক্ষের মাঝে সমঝোতা করার জন্য মিথ্যা বলা বৈধ।
• স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও মিল তৈরির করার জন্যও মিথ্যা বলা বৈধ।

উম্মে কুলসুম (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি দুই জনের মাঝে সমঝোতা করার জন্য ভালো কথার আদান-প্রদানকালে মিথ্যা বলে — সে মিথ্যুক নয়।’ (বুখারি, হাদিস নং : ২৫৪৬; মুসলিম, হাদিস নং : ২৬০৫)

আসমা বিনতে ইয়াজিদ বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন জায়গা ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মিথ্যা বলা, যুদ্ধে মিথ্যা বলা এবং দু’জনের মাঝে সমঝোতা করার জন্য মিথ্যা বলা বৈধ। (তিরমিজি, হাদিস নং ১৯৩৯; সহিহ আল-জামে ৭৭২৩)

সমাপ্ত

6 thoughts on "মিথ্যা ভয়াবহ গুনাহ"

    1. Sabbir Rahman Author Post Creator says:
      Tnx
  1. Taskin Islam Contributor says:
    ধন্যবাদ জানানোর জন্য
    1. Sabbir Rahman Author Post Creator says:
      Tnx
  2. A M Contributor says:
    admin theke notice na asha porjonto post cholbei cholbe – kar kothay laglo sedike kheyal na korai better – sotto ta ektu tita e hoy 🙂

    good luck bro.

    1. Sabbir Rahman Author Post Creator says:
      Ok Tnx 🙂

Leave a Reply