Be a Trainer! Share your knowledge.
Home » Hadith & Quran » প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০৬] বিষয়ঃ ত্রিত্ববাদ

প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০৬] বিষয়ঃ ত্রিত্ববাদ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ্। আশা করি সবাই মহান আল্লহ রব্বুল ইজ্জাতের অশেষ রহমতে ভালো আছেন।

আজ আমি এক অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। সেটা হচ্ছে “ত্রিত্ববাদ” আপনারা অনেকেই হয়তো এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত। আবার কেউ একেবারেই এর নাম শুনেননি।

ত্রিত্ববাদ হচ্ছে খ্রীষ্টানদের এক মতবাদ। যদিও এটাকে বিজ্ঞানের বিষয় বলে মনে হয় না, তবুও এটা নাকি বিজ্ঞানেরই অংশ। বিষয়টা দেখে আমিও বেশ অবাক হয়েছি। ইন্টারনেটে এটাকে “কুরআনের বৈজ্ঞানিক ত্রুটি” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যাই হোক, আসল কথা হচ্ছে কুরআন সহিহ। চলুন সেই বিষয় আলোচনা করি।

 

“ত্রিত্ববাদ” কী?

আগেই বলেছি ত্রিত্ববাদ হচ্ছে কিছুসংখ্যক খ্রীষ্টানদের একটি বিশেষ এবং বলতে গেলে প্রধান মতবাদ (যদিও সব গোত্রের খ্রীস্টান এই মতবাদে বিশ্বাসী না)। এই মতবাদে বিশ্বাসী খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করে মোট তিনজন ঈশ্বর রয়েছে। যথা: পিতা ,[আল্লাহ, যাকে তারা যীশুর (ঈসা (আঃ))-এর পিতা মনে করে (নাউযুবিল্লাহ!)] , পুত্র (যীশু) এবং পবিত্র আত্মা (লম্বা ডানাবিশিষ্ট পাখির মতো এক বস্তু (যাকে জীবন দানকারী ও রক্ষাকারী আত্মাও বলা হয়)।

 

 

বিরোধ কোথায়?

অধিকাংশ খ্রীষ্টান তৃতীয় ঈশ্বর-এর প্রসঙ্গ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে (যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের এই বিষয় নিয়ে তারা কেনো কুরআনকে টানছে? এর কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

 

মহান আল্লহ তায়ালা পবিত্র আল-কুরআনের সূরা মায়িদার ৭৩-৭৫ নম্বর আয়াতে বলেনঃ

” যারা বলে, ‘আল্লহ তিনজনের একজন’, তারা নিঃসন্দেহে সত্য অস্বীকারকারী। সত্য হচ্ছে, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ভ্রান্ত ধারণার প্রচার থেকে নিবৃত্ত না হলে সত্য অস্বীকারকারীদের উপর কঠিন আযাব নেমে আসতে বাধ্য।

এরপরও কি তারা তওবা করবে না? আল্লহ অবশ্যই অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

মরিয়মপুত্র মসিহ (ঈসা) একজন রসূল মাত্র। তার আগেও অনেক রসূল পাঠিয়েছি। তার মা পবিত্র ও সত্যনিষ্ঠা মহিলা ছিলো। তারা দুজনেই (অন্যান্য মানুষের মতো) পানাহার করতো।”

 

এছাড়াও আল্লহ তায়ালা সূরা নিসার ১৭১ নম্বর আয়াতে বলেনঃ

” হে কিতাবিগণ! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। নিশ্চয়ই মরিয়মপুত্র মসিহ আল্লহর রসূল। ঈসা হচ্ছে মরিয়মের কাছে প্রেরিত আল্লহর প্রতিশ্রুতির বাস্তবতাস্বরূপ এবং তাঁর সৃষ্ট রুহ। সুতরাং, আল্লহ ও তাঁর রসূলের উপর তোমরা পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করো আর “তারা তিনজন” বলা থেকে বিরত থাকো। ত্রিত্ববাদ থেকে দূরে থাকাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আল্লহ এক। তিনিই একমাত্র উপাস্য। সন্তান হওয়া থেকে তিনি মহাপবিত্র। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই আল্লহর। আর e সবকিছু পরিচালনার জন্য এক আল্লহই যথেষ্ট”।

 

অর্থাৎ, উভয় স্থানেই আল্লহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে ইহুদীরা আল্লহ ব্যতীত আরও দুইজনকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা হচ্ছেন ঈসা (আঃ) ও মারইয়াম (আঃ)। তাহলে আল্লহ বলছেন তৃতীয় জন হিসেবে তারা মারইয়াম (আঃ)-কে ঈশ্বর মনে করে। কিন্তু খ্রীষ্টানদের ত্রিত্ববাদ অনুযায়ী তৃতীয় ঈশ্বর হচ্ছে পবিত্র আত্মা। তো এক্ষেত্রে খ্রীষ্টানদের বিরোধ হচ্ছে আল্লহ তায়ালা তাদের উপাস্য সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন। মহান আল্লহ সমগ্র মহাবিশ্বের পরিচালনাকারী। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথোপকথন সম্পর্কেও যিনি অবগত, তিনি কি খ্রীষ্টানদের এই শিরক সম্পর্কে অবগত থাকবেন না?

 

তৃতীয় ঈশ্বর আসলে কে?

খ্রীষ্টানরা তৃতীয় ঈশ্বর হিসেবে যে মেরি [মারইয়াম (আঃ)]-কেই পূজা করতো (এমনকি এখনও করে) তার বেশ জোরদার প্রমাণ রয়েছে।

 

ক্যাথলিক এবং প্রাচীন অর্থোডক্স গির্জাগুলো যীশু এবং মেরির অক্ষত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হাতে আঁকা ছবি ও মূর্তিতে ভর্তি পাওয়া যায়। আবার এগুলোর অধিকাংশ ছবি ও মূর্তিই পূজার স্থানে রাখা থাকে তাদের পূজা করার জন্য। আর এই সম্মান দেখানো, পূজা-অর্চনা করাকে তাদের আবহমানকাল ধরে চলে আসা প্রাচীন প্রথা হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেক খ্রীষ্টানরা তাদের বাসায় পূজার আগে এগুলোর সামনে মোমবাতিও জ্বালিয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে সকল ক্যাথলিক খ্রীষ্টানই যীশুকে তাদের “ঈশ্বর” এবং মেরিকে “ঈশ্বরের মাতা” মনে করে। এই রীতি প্রাচীন রোমান ক্যাথলিক চার্চের পত্তনের সময় থেকে বলবৎ আছে। কিন্তু যারা রোমান ক্যাথলিকদের বিরোধী ছিলো তারা ১০ শতকের কাছাকাছি সময়ে  তাদের মূর্তি থেকে মেরিকে সরিয়ে নেয়। তাহলে মেরি যদি কোনো বিশেষ কেউ না-ই হয়ে থাকে, তাহলে কেনো তারা এমন কাজ করলো? তাও আবার ইসলাম আগমনের পর। এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কুরআন সত্য। কেননা কুরআন আসার আগে মেরির মূর্তি ও ছবি দেখা যেত। সবথেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে যাকে তৃতীয় ঈশ্বর বা পবিত্র আত্মা বলা হচ্ছে তার সম্মানে চার্চগুলোতে কোনো মূর্তি, ছবি এবং এমনকি কোনো চিহ্নও নেই। কাজেই তৃতীয় ঈশ্বর যদি পবিত্র আত্মাকেউ ধরে, তবুও কুরআন ভুল না। কেননা, এটা বর্তমানের না, সুদূর ১৪০০ বছর আগের কথা (যেসময় পবিত্র আত্মার বিষয় কেউ জানতোই না, এমনকি এখনও অনেকে জানে না)। সে সময় মানুষ ঈশ্বর হিসেবে মেরিকে যীশুর সাথে পূজা করতো। তাহলে তৃতীয় ঈশ্বর অবশ্যই মেরি হতেই পারে। এবার আসুন আরও বিস্তারিততে। ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসীদের ভাষ্যমতে পবিত্র আত্মা হচ্ছে লম্বা ডানাবিশিষ্ট কিছু যাকে যীশু খ্রীষ্টের পবিত্র বারি দ্বারা অভিসিঁচনের (Baptism) সময় ও তাঁর শেষ বিদায়ের সময় দেখা গিয়েছিল। তাছাড়া তিনি তাঁর শিষ্যদের পবিত্র আত্মা উপহার দেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি অনেক খ্রীষ্টানই মনে করে যে যীশু খ্রীষ্ট কখনো মরেননি। এর অর্থ পবিত্র আত্মার কথা অনেকেই বিশ্বাস করে না। তাছাড়া পবিত্র আত্মাতে বিশ্বাসের এই রীতিটি মাত্র ১ হাজার বছর আগে এসেছে। তাই অন্যান্য বিশ্বাস ও মতবাদের সামনে এটি টিকতে পারেনি। সুতরাং এটি খুবই দূর্বল একটি বিশ্বাস। তাই এই নিয়ে তর্ক করাও বৃথা। যাই হোক, এই বিষয়টা সম্পর্কে এখানেই ইতি টানছি।

 

[কিছু কথাঃ  এখানে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে তার সবই খ্রীষ্টান ও ইহুদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী লিখা, এমনকি “যীশু ঈসা (আঃ)”-এই কথাও। প্রকৃতপক্ষে যীশু হচ্ছে তাইতালানুস। যাই হোক, মুসলিমরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করবেন না। এতে বিশ্বাস করলে মানুষ মুশরিক হয়ে যায়। আর এই পোস্ট কোনো ধর্মকে ছোট করার জন্য লিখা হয়নি। এটা শুধু যুক্তি খণ্ডনের জন্য লিখা। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম। ]

 

তথ্যসূত্রঃ বিসমিকাল্লাহুম্মা

4 years ago (Dec 30, 2019)

About Author (94)

Anwarul Azim
author

মানুষ কখনো হারে না। হয়তো সে জিতবে, নয়তো সে শিখবে।

Trickbd Official Telegram

6 responses to “প্রামাণ্যচিত্রঃ কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের কিছু ভিত্তিহীন সাংঘর্ষিকতা [পর্বঃ০৬] বিষয়ঃ ত্রিত্ববাদ”

  1. Mim Akter Author says:

    hm. Valo.
    Allah amadar sobai k bujar tawfiq dan koruk. Amin!

Leave a Reply

Switch To Desktop Version