কোনো জিনিস আপনার ইচ্ছায় হবে না,এমনটিই নিয়ম আমরা এটাই বিশ্বাস করি। কোনো একটা জিনিস আপনি খুব করে করতে চাইছেন কিন্তু হয়েই ওঠছে না! তাহলে কি করবেন?
ক্লাস সিক্স-সেভেনে আমাদের একটা বাঙলা রচনা ছিল। রচনাটা পরীক্ষায় কমনও আসত অদ্ভুত ভাবে। রচনার নাম ‘অধ্যবসায়’ মানে বারবার চেষ্টা করা। রচনাটার অনেক প্যারা ছিল সুন্দর সুন্দর। দৃষ্টান্ত নামক প্যারাতে আলেকজান্ডারের বিজয়ের কথা এসেছিল। একটি মাকরশার বুনন কাজ দেখে অনুপ্রানিত হয়ে পরবর্তীতে রাজ্য দখল করার গল্প। পড়তাম আর কল্পনা করতাম এও কি সম্ভব? তখন বুঝ ছিলই বা কতটুকু। রচনাটা পাঠ্য বইয়ে রাখা হয়েছিল একটা কমন এইজের (১৪/১৫ বছর বয়সের) পোলাপাইন যাতে প্রচুর চেষ্টা করে। কারণ এই সময়টাতে ছোট ছোট সোনামণিগুলোর লক্ষ্য ঠিক হয়, তাদের আগ্রহের বিষয়ে তারা জানতে পারে। কারো বিজ্ঞান ভাল্লাগে তো কারো ইংরেজিতে আগ্রহ কেউবা গণিতের নানা অংক সমাধান করে। কেউ বাঙলা বই পড়ে তৃপ্ত হয় না, তাই লাইব্রেরি থেকে সাহিত্য কুড়িয়ে পড়ে।
আপনার কাজ চেষ্টা করা। কতবার চেষ্টা করবেন? যতক্ষণ না আপনি উদ্দেশ্যে পৌঁছাবেন। নিজেকে অযৌগ্য মনে করা এটাও শয়তানের চাল যার মাধ্যমে সে আপনাকে আল্লাহ’র কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে দেয়। সম্ভবত ক্লাস থ্রি-তে কবিতাটি পড়ে ছিলাম।
পারিব না একথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার;
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
একবার না পারিলে দেখ শতবার।
– কালীপ্রসন্ন ঘোষ।
[১]
ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) শেষ বয়সে সন্তান পাওয়ার সু সংবাদ পেলেন আল্লহ’র কাছ থেকে। আল্লাহ’র কাছে একজন নেককার পুত্র সন্তান চেয়ে বারবার আরজি করার পর না পেয়ে ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর মন ভেঙে খানখান। আল্লাহকে বলে আসছেন সেই কবে থেকে। বড় বিশ্ময়ের বিষয় বয়স যখন প্রায় এক শ’ তখনও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। দুয়া অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলতে লাগলেন :
হে আমার লালন পালনকারী! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন। (সূরাহ সাফফাত : ১০০)
অবশেষে স্ত্রী সাবা (আলাইহাস সালাম) কে (ওনার বয়সও তখন নব্বই) মহান রব্ব সুসংবাদ দিল যে ওনার গর্ভে সন্তান আসতে চলেছে।
তার স্ত্রী [ইব্রাহিম (আলাইসিস সালাম ) -এর স্ত্রী ‘সারা’ কাছেই] দাঁড়িয়ে ছিল। সে হেসে ফেলল। তারপর আমি তাকে ইসহাক ও ইসহাকের পরে ইয়াকুবের (জন্মের) সুখবর দিলাম। সে বলল, কী আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব, অথচ আমি বৃদ্ধা আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই ভারি আশ্চর্যের ব্যাপার। তারা [ফেরেশতারা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীকে] বলল, ‘আল্লাহর কাজে তুমি কি বিস্ময় বোধ করছ? (অথচ) হে নবীর পরিবার! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত, মহিমাময়।’ (সূরাহ হুদ : ৭১-৭৩)
এভাবেই আল্লাহ বয়োবৃদ্ধ নবী যোগলকে শেষ সময়ে সন্তান দান করে ছিলেন। এটাই আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা’র উপর তাওয়াক্কুল করার সুফল, তিনি কখনোই আপনাকে ফিরিয়ে দিবেন না।
.
[২]
যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) এক্কেবারে বৃদ্ধ অবস্থায় আল্লাহ’র কাছে সন্তান চেয়ে এই ভাবে দুয়া করেছিলেন,
‘হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, আর বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে, হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে ডেকে আমি কখনো বিফল হইনি। (সূরাহ মারইয়াম : ০৪)
খেয়াল করুন, নবী যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) যেভাবে আল্লাহ’র কাছে চেয়েছেন ঠিক সেই কথাগুলোই কুরআনে সরাসরি এসেছে। কতটা বিনয়ের দুয়া কতটা তাওয়াক্কুলপূর্ণ কথা। সুবহানাল্লাহ! যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) এর স্ত্রী ছিল বন্ধ্যা। পরবর্তী বংশের ঝান্ডাধারী সংকটের আশংকা নিয়ে নবী তাঁর রবের কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে;
আমি আশংকা করি, আমার পর আমার বংশের লোকেরা দ্বীনে ধ্বংশ করে দিবে, আমার স্ত্রী বন্ধ্যা সুতরাং আপনি আপনার তরফ থেকে আমাকে দান করুন – উত্তরাধিকারী। যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারীত্ব পাবে ইয়াকূবের বংশের এবং হে আমার রব্ব! এবং তাকে করুন সন্তোষভাজন। (সূরাহ মারইয়াম : ৫-৬)
আল্লাহ তাঁর নবীর কথাগুলো শুনলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন এই মর্মে –
হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া। (সূরাহ মারইয়াম : ৭)
যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) অবাক হলেন, আশ্চর্যান্বিত হলেন। তিনি আল্লাহকে প্রশ্নও করেছিলেন!
হে আমার রব! কেমন করে আমার পুত্র হবে আমার স্ত্রী বান্ধ্যা এবং আমি বার্ধ্যকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। (সূরাহ মারইয়াম : ৮)
আল্লাহ উত্তর দিলেন, আল্লাহর জন্য সব সহজ। ( সূরাহ মারইয়াম : ৯)
উপরের দুটো ঘটনা একটাও আমার বানানো নয়, দুটো ঘটনা কুরআনে এসেছে। দুইজন নবীর জীবনের সন্ধিক্ষণে সন্তান পাওয়ার গল্প। লেখার শুরুতে একটা কথা বলে শুরু করেছিলাম যে, কোনকিছু আপনার ইচ্ছায় হয় না যদিও আপনি সেটি করতে চান। তারজন্য দরকার চেষ্টা আর আন্তরিকতা। ইব্রাহিম (আলাইহিস সাল্লাম) আর যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) আমাদের জন্য উদাহরণ আমাদের অনুপ্রেরণা। যে বয়সে মানুষ মৃত্যুর অপেক্ষা করে, মেডিকেল সাইন্স যেখানে বলে এই বয়সে সন্তান জন্ম দেয়া অসম্ভব সেই বয়সে দুই নবীই পিতা হয়ে ছিলেন।
যে আল্লাহ বৃদ্ধ ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) কে বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দিতে পারেন, যে আল্লাহ যাকারিয়া (আলাইলাইহিস সালাম) এর বন্ধ্যা স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দান করতে পারেন – ওনাদের ডাক কবুল করতে পারেন, সে আল্লাহ আপনাকেও ঠেকাবেন না। দরকার শুধু তাওয়াক্কালের। দেখবেন তখন আপনারও যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) এর মতো বলতে মনে চাইবে;
হে আমার রব্ব! তোমাকে ডেকে আমি কোনদিন ব্যর্থ হয়নি। (সূরাহ মারইয়াম : ০৪)
সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ, আমাদের এই পথ চলা সব সময় ইসলামিক পোস্ট পেতে বিজিট করুন ইসলামিক সাইট www.OurislamBD.Com
লেখাগুলো বোল্ড করলে ভালো হতো ।