আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !!!
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল !
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম সাহায্যকারী কার্যসম্পাদনকারী ।

সুপ্রিয় পাঠক ,
সূরা আল ইমরানের ১৭৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে ,
‘ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল ‘
কত সুন্দর একটি আয়াত ! যার অর্থ হলো ,
” আল্লাহ ই আমার জন্য যথেষ্ট ! তিনিই উত্তম সাহায্যকারী , কার্যসম্পাদনকারী । ”
মাশাআল্লাহ ! কত চমৎকার একটি আয়াত যা দ্বারা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করার বোঝাচ্ছে ।
তাওয়াক্কুল করা বলতে নির্ভর করা , ভরসা করা , সমর্পণ করা । আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা রেখে যে কোনো কিছুর জন্য ভরসা করা বা নির্ভর করা হচ্ছে তাওয়াক্কুল ।
আপনি বিপদে পড়েছেন ? বা দুশ্চিন্তা গ্রস্থ ? বা কোনো সমস্যা হয়েছে যার সমাধান করা আপনার পক্ষে দুরুহ ব্যাপার ! তাহলে এমন অবস্থায় যদি আল্লাহর কাছে সাহায্য চান , শুধু মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন তাহলে সাহায্য করার মালিক কে ?? নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সর্ব উত্তম সাহায্যকারী ।
আপনি যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে বলেন , ” আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট । তিনিই উত্তম সাহায্যকারী কার্যসম্পাদনকারী ।”
তাহলে লক্ষ্য করুন এর অর্থ কত সুন্দর! কতো বৃহৎ বুঝতে পেরেছেন ? এমন অবস্থায় আল্লাহ কি তাঁর রহমতের দৃষ্টিতে বান্দার দিকে তাকাবেন না ?
নিশ্চয়ই ! আসুন এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হই , এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনি , ভরসা করি , আস্থা রাখি । শিরক থেকে পরিপূর্ণ রূপে নিজেকে মুক্ত রাখি । নিশ্চয়ই তিনি সর্ব উত্তম সাহায্যকারী , কার্যসম্পাদনকারী এবং তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট ।
আর এই আয়াতটি বার বার পাঠ করি নিশ্চয়ই তিনি আমাদের জন্য সাহায্য পাঠাবেন । এ ব্যাপারে নিশ্চিত ইমান রাখি আর তাকদির এর প্রতি বিশ্বাস রাখি । নিশ্চয়ই আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন ।

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহর উপর ভরসা করা। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘মুমিনদের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত’ (ইবরাহীম ১১)।
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট’ (তালাক্ব ৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা কর, তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা প্রত্যুষে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫০৬৯)।
আল্লাহর উপর ভরসা সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছ।-

(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর ব্যক্তির নিকট এক হাযার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদের সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর ঋণদাতা বলল, তাহ’লে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যিই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাযার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাযার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান, আমি অমুকের নিকট এক হাযার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাযী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তাতে সে রাযী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম। এই বলে সে কাষ্টখন্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে ভেসে চলল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠখন্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্টখন্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাযার দীনার নিয়ে হাযির হ’ল এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহন খুঁজেছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হ’তে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাযার দীনার নিয়ে ফিরে চলে এল’ (বুখারী হা/২২৯১, ‘কিতাবুল কিফালাহ’)।

(২)একদা এক মরুভূমিতে মরু-বাবলা গাছের উপর
নিজের তরবারি লটকে রেখে তার ছায়ার নিচে
বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের
মহানবী (সাঃ)।
ইতিমধ্যে এক বেদুঈন দুশমন এসে তাঁর ঐ তরবারিটি হাতে নিয়ে তাঁর উপর তুলে ধরে বলল,
” ওহে মুহাম্মাদ! তুমি কি আমাকে ভয় পাও না?”
মহানবী (সাঃ) নির্ভয়ে বললেন, ‘না।’
বেদুঈন বলল, ” তােমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে? ”
তিনি বললেন, “আল্লাহ।”
বেদুঈন আবার বলল, “তােমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে?”
তিনি পূর্বেকার মতই বললেন, ‘আল্লাহ।
বেদুঈন পুনরায় বলল, ” তােমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে? ”
তিনি পুনরায় বললেন, ” আল্লাহ।”
এরপর বেদুঈনের দেহ-মন কেঁপে উঠল। সহসা তার হাত থেকে তলােয়ারটি পড়ে গেল। মহানবী (সাঃ) তা তুলে নিয়ে তার প্রতি তুলে ধরে বললেন, “এবার তােমাকে আমার হাত হতে কে রক্ষা করবে?”
বেদুঈন বলল, ” কেউ নয়।’
কিন্তু মহানবী

(সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

সুপ্রিয় পাঠক, কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হবেন না বরং ধৈর্য ধারণ করুন । আল্লাহর উপরই ভরসা করুন । নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আপনাকে সাহায্য করার জন্য কোনো অসিলা প্রেরণ করবেন । তবে আপনাকে হতে হবে পরিপূর্ণ ঈমানদার , থাকতে হবে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের উপর দৃঢ় আস্থা ।
কোথাও কোথাও কোন অবিশ্বাস বা সন্দেহ থাকলে হবে না ।

আল্লাহর হেদায়েত আপনার সাথেই আছে ।
ইসলামিক গল্প , ইতিহাস , পোস্ট , ইসলামের যাবতীয় সবকিছুই যদি ভালো লাগে , তবে এটাই তো আল্লাহর হেদায়েত !
। আর হেদায়েত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয় । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই হেদায়েত এর মধ্য দিয়ে নিয়ে যাক আমাদের গন্তব্যে । আর জান্নাত হলো সেই গন্তব্য ।

ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি । দোয়া করবেন । আল্লাহ ভরসা ।
যাজাকাল্লাহু খাইরান !
আলহামদুলিল্লাহ ।
সুবহানাল্লাহ ।
আল্লাহ হাফেজ !

Leave a Reply