আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

যে তিনটি কাজের জন্য ঘর থেকে বরকত চলে যায়

যে তিনটি কাজের জন্য আমাদের ঘরে বরকত আসেনা। প্রিয় পাঠক আজ আমি এমন তিনটি কাজের বিষয়ে আলোচনা করবো যে তিনটি কাজ যে ঘরে হয় সে ঘরে কখনো বরকত আসবেনা। অনেকে বলে আমার ঘরে বরকত নাই। আয় রোজগার ভালোই হয় হাজার হাজার টাকা উপার্জন করি কিন্তু সারাক্ষণ কোনো না কোনো বিপদ লেগেই আছে।

হয় কোনো মাসে বাচ্চাদের রোগব্যাধি না হয়তো কোনো দুর্ঘটনা না হয় কোনো বড় ধরনের ঝণের বোঝা ইত্যাদি এইসব লেগেই আছে এমন কোনো মাস নেই যে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়না। আর এইসব কারণে আয় রোজগার ভালো হওয়া সত্বেও মাস শেষে অভাব অনটন দেখা যায়।

প্রিয় ভাই বোনেরা আমরা জানিনা কি কারণে ঘরের বরকত চলে যায় তাই আমরা সেসব কাজ করে বসি আর তার ফলে আমাদের ঘরে বরকত থাকেনা। তাই আমি আপনাদেরকে এমন তিনটি কাজের বিষয়ে বলবো যে কাজের ফলে আমাদের ঘর সমূহের বরকত দূরে হয়ে যায় আর ফেরত আসেনা। সেসব কাজ গুলো হলোঃ

১.মিথ্যা কথা বলাঃ যে ঘরের লোকজন মিথ্যা কথা বলে সে ঘরের বরকত দূর হয়ে যায়। আর মিথ্যা এমন একটি অপরাধ যে মিথ্যা বলে সে নানান রকম গুনাহে ও অপরাধে লিপ্ত হতে পারে অনায়াসে। আর এইসব গুনাহ ও অপরাধের কারণে তাঁর ঘর থেকে ও জীবন থেকে বরকত চলে যায়।

এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর নিকট এসে আরজ করলো ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমি অনেক অনেক গুনাহ ছাড়তে চাই কিন্তু পারিনা। তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন →তুমি শুধু মাত্র মিথ্যা বলা ছেড়ে দাও। তখন দেখবে আস্তে আস্তে তোমার সব অপরাধ তোমার থেকে বিদায় নিয়েছে। সে যখন মিথ্যা ছেড়ে দিলো তখন আস্তে আস্তে তাঁর সকল বদভ্যাস দূর হয়ে গেলো।

অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূল (সাঃ) থেকে অবগত হয়েছি তিনি বলেছেন → তুমি সন্দেহযুক্ত কথা ও কর্ম ছেড়ে দাও এবং যাতে সন্দেহ নেই সে দিকে ফিরে যাও।নিশ্চয়ই সত্য প্রশান্তির নাম এবং মিথ্যা সন্দেহ ও অশান্তির নাম ( তিরমিজি, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস নাম্বার ৪১৮২,আবু দাঊদ হাদিস নাম্বার ৪৮০০)

হজরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন → তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই মিথ্যা ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ( বায়হাক্বী কুবরা হাদিস নাম্বার ২০৬১৫)

এমনকি কেউ লোক হাসানোর উদ্দেশ্যেও মিথ্যা বলা জায়েজ নয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেন → সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস তার জন্য ধ্বংস ( তিরমিজি ২৩১৫,সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস নাম্বার ৪২০৯,মিশকাত ৪৮৩৪)

সুতরাং মিথ্যা হলো সকল পাপের প্রথম পদক্ষেপ। তাই মিথ্যা থেকে বাঁচতে পারলে অনায়াসে আপনি অনেক গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবেন এবং আপনার ঘরে বরকত আসবে ইনশাআল্লাহ।

হজরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন → সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুকাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুই তাকদির রদ হয়না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।( ইবনে মাজাহ হাদিস নাম্বার ৪০২২)

তাই আমরা যদি আমাদের ঘরে বরকত চাই সেজন্য আমাদের বেশি বেশি সতকর্ম করতে হবে এবং পাপ কাজের জননী তথা মিথ্যা বলা পরিহার করতে হবে।

২. রিজিকের সাথে বেয়াদবি। আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত ও রিজিকের সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। এখন আপনি ভাবতে পারেন যে আল্লাহর নেয়ামত তথা রিজিকের সাথে মানুষ কিভাবে বেয়াদবি করে…? বেয়াদবি মুলতঃ আমরা করি অপচয়ের মাধ্যমে এবং এই অপচয় যারা করেন তাঁদের ঘরে থেকে বরকত চলে যায়।

আজকাল এমন হারে অপচয় বৃদ্ধি পেয়েছে যে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। প্রয়োজন নেই তারপরও স্বামীর উপর এক প্রকার প্রেশার ক্রিয়েট করেই আমাদের অনেক মা বোনেরাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ড্রেস কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলছে।

হজরত আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিস্কার করে খেয়ে নাও তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিয়োনা। ( আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ৩৮৪৫)

যেখানে রাসূল (সাঃ) প্লেট থেকে কোনো খাবার পড়ে গেলে আমাদের তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খেতে বলেছেন! অথচ সেখানে গৃহস্হালির খাবার দাবার থেকে শুরু করে – প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার রান্না করা অতঃপর তা পচা বাসি হওয়ার পর ফেলে দেওয়া এছাড়াও অযাচিত খরচ বাড়িয়ে ফেলা ইত্যাদি এগুলো ভয়াবহ রকমের কু-অভ্যাস।

আর এই অভ্যাস গুলোর কারণে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বরকত উঠে যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকের ঘর থেকে এই অভ্যাস গুলো দূর করতে হবে। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে দেখা যায়, প্রত্যেকের প্লেটে রয়ে যায় অতিরিক্ত খাবার, যার স্হান হয় ময়লাস্তপে বা নালা নর্দমায় অথচ প্রতিদিন বিশ্বে ৮২ কোটি লোক অভুক্ত থাকে। (সূত্রঃ dw.com 02.02.20) এবং বিশ্বে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ খাদ্য। ( সূত্র DW.COM 31.01.2020)

অর্থাৎ আয়োজন হয় বেশি খাওয়া হয় কম। কিন্তু অপচয় হয় অনেক বেশি। চাইলে কিন্তু এই খাবার গুলো অপচয় না করে দরিদ্রদের মাঝে প্যাকিং করে পাঠিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু সেই উদ্যোগও আমাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। যার কারণে বরকত সমূহ আমাদের ঘর থেকে চলে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন → যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। ( সূরা বনি ইসরাইল আয়াত ২৬-২৭)

আল্লাহ আরো বলেন → তোমরা অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তোমরা এই দুই উভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো। ( সূরা ফুরকান আয়াত ৬৭)

৩. সকাল সকাল ঘুম থেকে না উঠা এবং দুনিয়ার মোহে মত্ত হয়ে যাওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন→ হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। ( সূরা মুনাফিকূন আয়াত ৯)

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্বরণ বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে বুঝানো হয়েছে জিকির আযগার এবং দোয়া দুরুদ পাঠের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ব্যবসা বাণিজ্য, খেত খামার এবং পরিবার পরিজনের প্রয়োজনে মিটানোর ব্যস্ততার দরুন যথাসময়ে নামাজ আদায় করে না সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

যারা নামাজ না পড়ে আয় রোজগারে বরকত কামনা করে, তাঁরা মূলত বোকার সম্রাজ্যে বসবাস করছে। যে ঘরে নামাজ নেই, সে ঘরে যতই আয় রোজগার হোক না কেন সে ঘরে বরকত থাকবেনা। হজরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন → যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।( মুসলিম হাদিস নাম্বার ৬৫৭)

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় থাকে অর্থাৎ আল্লাহর রহমতে ও বরকতের ছায়ায় থাকে, তাঁর ঘরে কখনোই অভাব অনটন বিপদ মুসিবত আসবে না আর আসলেও তা আল্লাহ তায়ালা সহজেই দূর করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভোরবেলা কাজে বরকতের জন্য দোয়া করেছেন। হজরত সাখার আল-গামেদি (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সাঃ) এ দোয়া করেছেন → হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুতে বরকতময় করুন। ( আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ২৬০৬)

আশা করি সবাই সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কোথাও সমস্যা হলে কমেন্ট করে জানাবেন অথবা ফেসবুকে জানাতে পারেন ফেসবুকে আমি

2 thoughts on "যে তিনটি কাজের জন্য ঘর থেকে বরকত চলে যায়। সবার জানা প্রয়োজন"

  1. MD Ashraful Islam Author says:
    Masallah, purota porlam. Valo laglo, onek kichu janlam. Thanks
    1. MD Shakib Hasan Author Post Creator says:
      ?

Leave a Reply