আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
ইসলাম কি বলে…?
নামাজে দাঁড়ালে বিভিন্ন চিন্তা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে, মাথা ভারী হয়ে যায়। মনে হয় মাথার উপর কোন বোঝা চেপে আছে। যা নামাজে অমনোযোগী সৃষ্টি করে। অথচ নামাজের বাইরে অন্য সময়ে এত চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে আসেনা। তাই আজকে আমরা জানবো নামাজ শুরু করলে পৃথিবীর বিভিন্ন চিন্তা কেন মাথায় আসে এবং এই থেকে বাঁচার উপায় কি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
নামাজ জান্নাতের চাবি, নামাজ মুমিনের মেরাজ, নামাজ চোখের জ্যোতি ও কবরের বাতি। নামাজ মহানবীর সাল্লাহু সাল্লাম কে আল্লাহ তায়ালা উপহার হিসেবে দান করেছেন। প্রথম যখন আল্লাহ তা’আলা এই উপহার নবী সাল্লাহু সাল্লাম কে দান করেন তখন নামাজ ছিল 50 ওয়াক্ত। মিরাজ থেকে ফেরার পথে হযরত মুসা আলাই সালাম এর সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ হয়। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ আল্লাহ আপনার উম্মতের জন্য কি ফরজ করেছেন…?
নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তখন বলেন 50 ওয়াক্ত নামাজ। তখন হযরত মূসা আলাইহিস সাল্লাম বলেন, আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে যান, কিছু কম করানোর জন্য! কারন আপনার উম্মত এত নামাজ আদায় করতে পারবে না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং আল্লাহ তা’আলা কিছু কম করে দেন। এভাবে কয়েকবার আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং আল্লাহ প্রতি বারেই নামাজ কম করতে থাকেন। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত বিশিষ্ট রয়ে যায় যা আদায় করা 50 ওয়াত্ত সমান। ইবলিশ শয়তান ও তার দলবল কখনো চাই না যে একজন মুমিন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হাসিল করুক।
তাই নামাজে দাঁড়ালে ইবলিশ শয়তানের সঙ্গীরা ওয়াস ওয়াসা থেকে শুরু করে এবং বিভিন্ন চিন্তাভাবনা মাথার মধ্যে নিয়ে এসে নামাজের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে। যার কারণে মানুষ মাঝে মাঝে নামাজের রাকাত সংখ্যা বলা যায়, সূরা পড়তে ভুলে যায়, নামাজের বৈঠকে ভুল করে ইত্যাদি। ইবলিশ শয়তান এর নেতৃত্বে যে শয়তান নামাজের মধ্যে ওয়াস ওয়াসা সৃষ্টি করে তার নাম খিনযিব। তো চলে নামাজের মধ্যে এই অশ্লীল চিন্তা ভাবনা যেন আমাদের মনে আর শয়তান না আনতে পারে এবং এ থেকে মুক্তি পেতেই নামাজে মনোযোগী হতে কি করতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকার ছয়টি পদ্ধতি হলোঃ
এক নাম্বারঃ নিজের নফসকে( নাফসে মুতামায়িন্না ও নফসে লাওয়ামাহ কে) বেশী বেশী নেক আমলের দ্বারা শক্তিশালী করতে হবে।
দুই নাম্বারঃ ভালো ভাবে ওযু করতে হবে।
তিন নাম্বারঃ নামাজ শুরু করার পূর্বে বিশেষ করে একবার আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।
চতুর্থ নাম্বারঃ যখন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বেন তখন ইমাম যখন সুরা ফাতেহা পড়েন, তখন সূরা ফাতেহার বাংলা অর্থ আপনি মনে মনে ভাবতে থাকবেন।
পঞ্চম নাম্বারঃ যখন নামাজ পড়বেন তখন ভাববেন আল্লাহ আপনাকে দেখছেন, তাই আল্লাহর ভয় মনে রেখেই নামাজ পড়বেন।
ষষ্ঠ নাম্বারঃ নামাজের সূরা, রুকুর তাসবিহ, সেজদার তাসবিহ, আত্তাহিয়াতু দুরুদ শরীফ ইত্যাদি ধীর স্থির ভাবে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে এবং সর্বদা এই বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ স্থির রাখার চেষ্টা করতে হবে।
তাহলে নামাজের মধ্যে আজেবাজে চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং নামাজে অধিকতর মনোযোগী হওয়া যাবে। তারপর যদি নামাজের মধ্যে কোন কোন সময় আজে বাজে চিন্তা চলে আসে তাহলে যা করতে হবে তা হলো নামাজের মধ্যে খাস করে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে। আর সেটি সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত উসমান ইবনে আবুল আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসূল!
শয়তান নামাজ ও ক্বিরাআতের মধ্যেই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সে আমার মনে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তখন তাকে বললেন ওটা একটা শয়তান। যাকে খিনযাব বলা হয়। যখন তোমার মনে তার উপস্থিতি অনুভব করবে, তখন তা হতে তুমি আল্লাহ তাআলার নিকট মনে মনে চাইবে এবং বাম দিকে বামদিকে তিনবার (প্রতীকী) থুথু ফেলবে। হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম এর নির্দেশ অনুযায়ী এরূপ করলে আল্লাহ তালা আমার নিকট হতে শয়তানকে দূর করে দেন।( সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বারঃ ২২০৩)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, যে সুন্দরভাবে অজু করে। অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে এবং একাগ্রতার সাথে দু’রাকাত নামায আদায় করে, তাহলে শয়তান নামাজের স্থান পায় না। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে নামাজের ওয়াসওয়াসা স্হান পায় না এবং সে নামাজী ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (মিশকাত হাদিস নাম্বারঃ ২৮৭) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।( নাসাঈ হাদিস নাম্বারঃ ১৫১, বুখারি হাদিস নাম্বারঃ ১৯৩৪)। অর্থাৎ নামাজে মনোযোগী হওয়ার আরেকটি শর্ত হলোঃ নামাজ পড়ার আগেই উত্তমরূপে ধীরস্থিরভাবেই অজু করে নেওয়া। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছেই কল্যাণ আশা করুন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন →তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর (সূরা বাকারা আয়াত ৪৫) এই বিশ্বাসটি রাখুন যে, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায়ই সাড়া দিচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম বলেন →তোমাদের কেউ নামাযে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে( এবং কত ধীরস্থির ও নম্রভাবে) সে কথোপকথন করছে।( সহীহুল জামে হাদিস নাম্বারঃ ১৫৩৮)।
এরপর নামাজে নিজের গুনাহ এর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে “হায়া” বা লজ্জাশরম নিয়ে আসুন। দন্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় বৃষ্টি রাখতেন। (সূত্র তাফসীরে তাবারী ৯/১৯৭)।
মনোযোগ সহকারে নামাজ শুরু করার পরেও যদি নামাজের মধ্যে খুব বেশি ওয়াসওয়াসা বা পৃথিবীর আজেবাজে চিন্তা মাথায় এসে যায় এবং নামাজে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তাহলে বুঝতে হবে খিনযিব শয়তান আপনার মনের মধ্যে ওয়াসওয়াসা তৈরি করে জোর কদমে তার দায়িত্ব পালন করছে। এমন বুঝতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গেই মনে মনে “আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম” এটি একবার পাঠ করেই বাম দিকে হালকা মাথা ঘুরিয়ে তিনবার (প্রতীকী) থুথু ফেলবেন।
তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় বা ঘরে অথবা মসজিদে যদি কেউ থুতু ফেলে তাহলে সেটা কেউ পছন্দ করবে না, সকলে তাকে নোংরা মানুস ভাববে এবং এর দ্বারা বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে, তাই আপনাকে প্রতীকি থুথু ফেলতে হবে। অর্থাৎ আপনি থুথু দিবেন কিন্তু তা থেকে যেন কোন তরল পদার্থ নিঃসৃত হবে না। তারপরেও সর্তকতা স্বার্থেই যখন প্রতীকী থুথু ফেলবেন তখন নিজের বামদিকে গালের সাথে মুখ করে তারপর করবেন থুথু ফেলবেন। যাতে করে ভুলে যদি থুথুর সঙ্গে কোন তরল বের হয়ে আসে তা যেন অন্য কারো গায়ে বা মসজিদে বা ঘরে অন্য কোন স্থানে না পরে। নামাজের মধ্যে কেন আজে-বাজে ও খারাপ চিন্তা মাথার মধ্যে আসে তা আমরা এতক্ষণ জানলাম এবং নামাযের মধ্যে আমাদের মনে যেন খারাপ চিন্তা ওই চিন্তা ভাবনা যাতে আমাদের মধ্যে না আসে তার জন্য কি করতে হবে সেটাও আমরা জানলাম এবং তার পরেও যদি নামাজের মধ্যে কোন ভাবেই খিনযিম শয়তান আপনার মনে ওয়াসওয়াসা তৈরি করে এবং আপনার নামাজে গোলমাল বাঁচাতে সক্ষম হয়। তাহলে তার ওয়াসওয়াসা থেকে বাচার জন্য কি করতে হবে সেটা ও আমরা জানলাম।
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি
2 thoughts on "নামাজের মধ্যে দুনিয়ার চিন্তা আসলে কি করণীয়! ইসলাম কি বলে…?"