আসসালামু আলাইকুম।

সবাই কেমন আছেন?

আল্লাহর রহমতে আমি ভালোই আছি

বরাবরের মতো আমি আজকেই একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি । কি সম্পর্কে আজকে আমি পোস্ট করেছি তা আপনারা টাইটেল দেখেই বুঝে গিয়েছেন। তো আমি পোস্টের শুরুতে বেশি কথা বলবো না।

আজ আমি আপনাদের জন্য হাদিস সংকলনের ইতিহাসের তথ্য নিয়ে এসেছি। তো বেশি কথা না বলে চলুন সরাসরি পোস্টটা শুরু করা যাক।

বিস্তারিত পোস্টঃ

হাদীস শাস্ত্রের সমস্ত প্রয়োজনীয় । ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। এজন্য স্বতন্ত্র পুস্তক রচনার প্রয়োজন । এখানে হাদীসের সংগ্রহ ও সংকলনের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। এ থেকে অনুমান করা যাবে যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসের এই অমূল্য সম্পদ এই তের শত বছর কোন

কোন পর্যায় অতিক্রম করে আমাদের কাছে পৌছেছে। এ থেকে আরও জানা যাবে, কোন মহান ব্যক্তিগণ হিকমাত ও হেদায়াতের এই উৎসকে ভবিষ্যৎ বংশধরদের নিকট সংরক্ষিত আকারে পৌছে দেয়ার জন্য নিজেদের জীবন ওয়াফ করে দিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনবোধে এ কাজে জীবনবাজি রাখতেও পশ্চাৎপদ হননি ।

তিনটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসসমূহ আমাদের নিকট পৌছেছে।

i. লিখিত আকারে

ii. স্মৃতিতে ধরে রাখার মাধ্যমে

iii. পঠন-পাঠনের মাধ্যমে।

হাদীস সংগ্রহ, বিন্যাস ও পুস্তকাকারে সংকলনের সময়টাকে চার যুগে বিভক্ত করা যায় ।

প্রথম যুগ

নবী পাক (সা)-এর যুগ থেকে ১ম হিজরী শতকের শেষ পর্যন্ত : এই যুগের হাদীস সংগ্রাহক, সংকলক ও মুখস্তকারীগণের পরিচয় নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

হাদীসের প্রসিদ্ধ হাফ্যেগণ

(১) হযরত আবু হুরায়রা (রা) (আবদুর রহমান): ৭৮ বছর বয়সে ৫৯ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। ব্লার রিওয়ায়াতকৃত (বর্ণিত) হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪ এবং তার ছাত্র। সংখ্যা ৮০০ পর্যন্ত ।

(২) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) : ৭১ বছর বয়সে ৬৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তার রিওয়ায়াতকৃত হাদীসের সংখ্যা ২৬৬০।

(৩) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা): ৬৭ বছর বয়সে ৫৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন । তার রিওয়ায়াতকৃত হাদীসের সংখ্যা ২২১০।

(৪) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা): ৭৪ বছর বয়সে ৭৩ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ১৬৩০।

(৫ ) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) : ৯৪ বছর বয়সে ৭৮ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তার রওয়ায়াতকত হাদীসের সংখ্যা ১৫৬০ ।

(৬) হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) : ১০৩ বছর বয়সে হান্তকাল করেন । তার রিওয়ায়াতকৃত হাদীসের সংখ্যা ১২৮৬।

(৭) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) : ৮৪ বছর বয়সে ৭৪ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ১১৭০।

এই ক’জন মহান সাহাবীর প্রত্যেকেরই এক হাজারের অধিক হাদীস মুখস্ত ছিল।.তাছাড়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (মৃঃ ৬৩ হিজরী), হযরত আলী (মৃঃ ৪০ হিজরী) এবং উমার ফারুক মৃঃ ২৩ ) রাদিয়াল্লাহু আনহুম সেইসব

সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত যাদের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজারের মধ্যে।

অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর (মৃঃ ১৩ হিজরী), হযরত উসমান (মৃঃ ৩৬ হিজরী), হযরত উম্মে সালামা (মৃঃ ৫৯ হিজরী) হযরত আবু মুসা আশআরী (মৃঃ ৫২ হিজরী), হযরত আবু যার গিফারী (মৃঃ ৩২ হিজরী) হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (মৃঃ ৫১ হিজরী) রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে এক শতের অধিক এবং পাঁচ শতের কম হাদীস বর্ণিত আছে।

সাহাবীদের ছাড়া এ যুগের একদল মহান তাবিঈর কথাও স্মরণ করতে হয় যাদের নিরলস পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় হাদীস-ভান্ডার থেকে মিল্লাতে ইসলামিয়া কিয়ামত পর্যন্ত উপকৃত হতে থাকবে । তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম এখানে উল্লেখ করা হল ।

(১) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ) : উমার ফারুক (রা)-এর খিলাফতের দ্বিতীয় বর্ষে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০৫ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। তিনি হযরত উসমান (রা), হযরত আয়েশা (রা), হযরত আবু হুরায়রা (রা), হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) প্রমুখ সাহাবার নিকট হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন ।

(২) উরওয়া ইবনুয যুবাইর: মদীনার বিশিষ্ট আলেমগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি হযরত আয়েশা (রা)-এর বোনপুত্র। তিনি তার কাছ থেকেই বেশির ভাগ হাদীস বর্ণনা করেছেন। অনন্তর তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) ও যায়েদ ইবনে সাবেতের (রা) নিকটও হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। সালেহ ইবনে কাইসান ও ইমাম যুহরীর মত আলেমগণ তার ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ৯৪ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।

(৩) সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) : মদীনার প্রসিদ্ধ সাতজন ফিকহবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন । তিনি তার পিতা ও পিতামহ অপরাপর সাহাবীর নিকট হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। নাফে, ইমাম যুহরী তাবিঈগণ ও অপরাপর প্রসিদ্ধ তার ছাত্র ছিলেন। তিনি ১০৬ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।

(৪) নাফে (রা) : তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা)-এর মুক্তদাস। তিনি তার বিশিষ্ট ছাত্র এবং ইমাম মালেক (র)-এর শিক্ষক ছিলেন । তিনি ইবনে উমার (রা)-এর সূত্রেই বেশীর ভাগ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১৭ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।

এই যুগের সংকলনসমূহ

(১) ‘সহীফায়ে সাদেকা’:

এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) ইবনুল আস কর্তৃক সংকলিত হাদীসগ্রন্থ । পুস্তক রচনার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল । তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট যা কিছু শুনতেন তা লিখে রাখতেন। এজন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে অনুমতি প্রদান করেছিলেন। ৭৭ বছর বয়সে ৬৩ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।

এই সংকলনে প্রায় এক হাজার হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছিল । তা কয়েক যুগ ধরে তার পরিবারের লোকদের কাছে সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানে তা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মুসনাদ গ্রন্থে পূর্ণরূপে বিদ্যমান আছে।

(২) সহীফায়ে সহীহা:

হাম্মাম ইবনে মুনাব্বেহ (মৃ. ১০১ হিজরী) এটা সংকলন করেন। তিনি হযরত আবু হুরায়রার (রা) ছাত্র ছিলেন । তিনি তাঁর উস্তাদ মুহতারামের বর্ণিত হাদীসগুলো এই গ্রন্থে একত্রে লিপিবদ্ধ করেছিলেন । গ্রন্থটির হস্তলিখিত কপি বার্লিন ও দামিশকের

গ্রন্থাগারসমূহে সংরক্ষিত আছে। ইমাম আহমাদ (র) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে আবু হুরায়রার (রা) শিরোনামে পূর্ণ গ্রন্থটি সন্নিবেশ করেছেন। এই সংকলনটি কিছুকাল পূর্বে ডঃ হামীদুল্লাহ সাহেবের প্রচেষ্টায় হায়দরাবাদ (দাক্ষিণাত্য) থেকে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ১৩৮ টি হাদীস রয়েছে।

এই সংকলনটি হযরত আবু হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত হাদীসের একটি অংশ মাত্র। এর অধিকাংশ হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও পাওয়া যায়। মূল পাঠ প্রায় একই, বিশেষ কোন তারতম্য নাই। হযরত আবু হুরায়রার (রা) অপর ছাত্র বশীর ইবনে নাহীকও একটি সংকলন প্রস্তুত করেছিলেন। আবু হুরায়রার (রা) ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাকে এই সংকলন পড়ে শুনান এবং তিনি তা সত্যায়িত করেনসপকে জানার হামীদুল্লাহ

। এ বিস্তারিত জন্য দেখুন ডঃ কর্তৃক সম্পাদিত সহীফায়ে ইবনে হাম্মাম-এর ভূমিকা।

(৩) মুসনাদে আবু হুরায়রা (রা): সাহাবাদের যুগেই এই সংকলন প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর একটি হস্তলিখিত কপি উমর ইবনে আবদুল আযীয (র)-এর পিতা এবং মিসরের গভর্ণর আবদুল আযীয ইবনে মারওয়ান (মৃঃ ৮৬ হিজরী)-এর নিকট ছিল। তিনি কাসীর ইবনে মুররাকে লিখে পাঠিয়েছিলেন, তোমাদের কাছে সাহাবায়ে কিরামের যেসব হাদীস বর্তমান আছে তা লিপিবদ্ধ করে পাঠাও । কিন্তু হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীস লিখে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কেননা তা আমাদের কাছে লিখিত আকারে বর্তমান আছে। আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র)-এর স্বহস্তে লিখিত মুসনাদে আবি হুরায়রা (রা)-এর একটি কপি জার্মানীর গ্রন্থাগারসমূহে বৰ্তমান আছে। (তিরমিযীর শরাহ তুহফাতুল আহওয়াযী

গ্রন্থের ভূমিকা, পৃ ১৬৫)

(৪) সহীফায়ে হযরত আলী (রা):

ইমাম বুখারী (র)-এর ভাষ্য থেকে জানা যায়, এই সংকলনটি বেশ বড় ছিল । এর মধ্যে যাকাত, মদীনার হেরেম, বিদায় হজ্জের ভাষণ ও ইসলামী সংবিধানের ধারাসমূহ বিবৃত ছিল। (সহীহ বুখারী কিতাবুল ইতিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খন্ড পৃ ৪৫১)

(৫) নবী পাক (সা)-এর লিখিত ভাষণ:

মক্কা বিজয়কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু শাহ ইয়ামানী (রা)-র আবেদনক্রমে তার দীর্ঘ ভাষণ লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ভাষণ মানবাধিকারের বিস্তারিত আলোচনা সম্বলিত । (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃ.২০)

(৬) সহীফা হযরত জাবির (রা):

হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ তার ছাত্র ওয়াহব। ইবনে মুনাব্বিহ (মৃঃ১১০ হিজরী) ও সুলাইমান ইবনে কায়েস লশকোরী লিখিত আকারে সংকলন করেছিলেন। এই সংকলনে হজ্জের নিয়মাবলী ও বিদায় হজ্জের ভাষণ স্থান লাভ করে।

(৭) রেওয়ায়াতে আয়েশা সিদ্দীকা (রা):

হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ তার ছাত্র ও বোনপুত্র উরওয়া ইবনু যুবায়ের (র) লিখে নিয়েছিলেন। (তাহবীবুত তাহযীব, ৭মখভ, পৃষ্ঠা ১৮৩)

(৮) আহাদীসে ইবনে আব্বাস (রা): হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র)-এর রিওয়ায়াতসমূহের সংকলন। তাবিক হযরত সাঈদ ইবন জুবায়েরও তার হাদীসসমূহ লিখিত আকারে সংকলন করতেন।

(৯) সহীফা আনাস ইবন মালেক (রা): সাঈদ ইবনে হেলাল বলেন, আনাস (রা) তার স্বহন্ত লিখিত সংকলন বের করে আমাদের দেখাতেন এবং বলতেন, এই হাদীসগুলো আমি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট শুনেছি এবং লিপিবদ্ধ করার পর তা পাঠ করে তাকে শুনিয়ে সত্যায়িত করে নিয়েছি। (সহীফায়ে হাম্মামের ভূমিকা পৃ, ৩৪)

(১০) আমর ইবনে হাযম (রহ):

যাকে ইয়ামানের গভর্ণর নিয়োগ করে পাঠানোর সময় নবী (সা) একটি লিখিত নির্দেশনামা দিয়েছিলেন। তিনি কেবল এই নির্দেশনামাই সংরক্ষণ করেননি, বরং এর সাথে নবী (স)-এর আরও ফরমান যুক্ত করে একটি সুন্দর সংকলন তৈরি করেন। (ডঃ হামীদুল্লাহ, আল ওয়াসাইকুস সিয়াসিয়াপৃ. ১০৫)

(১১) রিসালা সামুরা ইবন জুনদুব (রা):

তার সন্তান এটা তার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন। এটা হাদীসের একটা উল্লেখযোগ্য সংকলন ছিল । (তাহবীবুত তাহযীব, ৪র্থ খন্ড, পৃ ২৩৬)

(১২) সহীফা সাদ ইবনে উবাদা (রা): এই সাহাবী জাহিলী যুগ থেকেই লেখাপড়া জানতেন।

(১৩) মাআন থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর পুত্র আন্দুর রহমান আমার সামনে একটি কিতাব এনে শপথ করে বললেন, এটা আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা) স্বহস্তে লিখিত । (জামিউল ইলম, পৃ.৩৭)

(১৪) মাকতুবাত নাফে (র):

সুলাইমান ইবনে মূসা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হাদীস বলতেন আর তাঁর ছাত্র নাফে তা লিপিবদ্ধ করতেন। (দারিমী পৃ.৬৯, সহীফা ইবনে হামামের ভূমিকা, পৃ.৪৫)

যদি গবেষণা ও অনুসন্ধানের ধারা অব্যাহত রাখা হয় তবে উল্লিখিত সংকলনগুলো । ছাড়া আরও অনেক সংকলনের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে । এই যুগে সাহাবায়ে কেরাম ও প্রবীণ তাবিঈগণ বেশীরভাগ নিজেদের ব্যক্তিগত স্মৃতিতে সংরক্ষিত হাদীসসমূহলিখে রাখার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন। কিন্তু পরবর্তী যুগে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের

কাজ আরও ব্যাপকতা লাভ করে । হাদীস সংকলকগণ নিজেদের ব্যক্তিগত ভান্ডারের সাথে নিজ নিজ শহর ও অঞ্চলের মুহাদ্দিসগণের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সংগ্রহও একত্র করেন।

দ্বিতীয় যুগ

এই যুগটি প্রায় দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথমার্ধে গিয়ে শেষ হয়। এই যুগে তাবিঈদের একটি বিরাট দল তৈরি হয়ে যায়। তারা প্রথম যুগের লিখিত ভান্ডারকে ব্যাপক সংকলনসমূহে একত্র করেন।

এই যুগের হাদীস সংকলকগণ হলেনঃ

(১) মুহাম্মাদ ইবনে শিহাব:

ইমাম যুহরী নামে সমাধিক প্রসিদ্ধ (মৃ. ১২৪ হিজরী। তিনি নিজ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা), আনাস ইবন মালেক (রা), সাহ ইবনে সা’দ (রা) এবং তাবিঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (র) ও মাহমুদ ইবন রাবী (র) প্রমুখের নিকট হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন । ইমাম আওযাঈ (র) ও ইমাম মালেক (র) এবং সুফিয়ান ইবন উয়াইনা (র)-এর মত হাদীসের প্রখ্যাত ইমামগণ তার ছাত্রদের মধ্যে গণ্য। ১০১ হিজরীতে উমার ইবনে আন্দুল আযীয (র) তাকে হাদীস সংগ্রহ করে তা একত্র করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । তাছাড়া তিনি মদীনার

গভর্ণর আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হামকে নির্দেশ দেন যেন তিনি আবদুর রহমান-কন্যা আমরাহ ও কাসিম ইবনে মুহাম্মাদের নিকট হাদীসের যে ভান্ডার রয়েছে তা লিখে নেন। এই আমরাহ (র) হযরত আয়েশা সিদ্দীকার (রা) বিশিষ্ট ছাত্রী ছিলেন এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ তার ভ্রাতুষ্পত্র। হযরত আয়েশা (রা) নিজের তত্ত্বাবধানে তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। (তাহযবুত তাহযীব, খ, ৭, পৃ. ১৭২)

কেবল এখানেই শেষ নয়, বরং হযরত উমার ইবনে আবদুল আযীয (র) ইসলামী রাষ্ট্রের সকল দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে হাদীসের এই বিরাট ভাডার সংগ্রহ ও সংকলনের জোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে হাদীসের বিরাট সম্পদ রাজধানীতে পৌছে গেল। খলীফা হাদীসের সংকলন প্ৰস্তুত করিয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ, খ, ১ পৃ. ১০৬জামিউল ইলম, পৃ. ৩৮)

ইমাম যুহরীর সংগৃহীত হাদীস সংকলন করার পর এই যুগের অপরাপর আলেমগণও হাদীসের গ্ৰন্থ সংকলনের কাজ শুরু করেন। আবদুল মালেক ইবনে জুরাইজ (. হিজরী) মক্কায়, ইমাম আওযাঈ (মৃ. ১৫৭ হিজরী) সিরিয়ায় মা’মার ইবনে রাশেদ (মৃ.১৫৩ হিজরী) ইয়ামানে, ইমাম সুফিয়ান সাওরী ( মৃ. ১৬১ হিজরী) কুফায়, ইমাম হাম্মাদ ইবনে সালামা (মৃ. ১৬৭ হিজরী ) বসরায় এবং ইমাম আবদুল্লাহ ।

ইবনুল মুবারক (মৃ. ১৮১ হিজরী) খোরাসানে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজে সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন ।

(২) ইমাম মালেক ইবন আনাস (রহ):

(জন্ম ৯৩ হিজরী, মৃত্যু ১৭৯ হিজরীইমাম যুহরীর পরে মদীনায় হাদীস সংকলন শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন । তিনি নাফে, যুহরী ও অপরাপর আলেমের ইলম দ্বারা উপকৃত হন। তার শিক্ষক সংখ্যা নয় শত পর্যন্ত পৌছেছে। তার জ্ঞানের প্রস্রবণ থেকে সরাসরি হেজায, সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তীন, মিসর, আফ্রিকা আন্দালুসিয়ার (স্পেন) হাজারো হাদীসের শিক্ষাকেন্দ্র তৃপ্ত হয়েছে । তার ছাত্রদের মধ্যে লাইস ইবনে সা’দ (মৃ. ১৭৫ হিজরী, ইবনুল মুবারক (মৃ. ১৮১ হিজরী, ইমাম শাফিক্ট (মৃ. ২০৪ হিজরী) ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আশ-শায়বানী (মৃ. ১৮৯ হিজরী এর মত মহান ইমামগণ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন । এই যুগে হাদীসের অনেকগুলো সংকলন রচিত হয়, যার মধ্যে ইমাম মালেক (র) এর মুওয়াত্তা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এই গ্ৰন্থ ১৩০ হিজরী থেকে ১৪১ হিজরীর

মধ্যে সংকলিত হয়। এতে মোট ১৭০০ রিওয়ায়াত আছে। তার মধ্যে ৬০০টি মারুফ, ২২৮ টি মুরসাল, ৬১৩টি মাওকুফ রিওয়ায়াত এবং তাবিঈদের ২৮৫টি বাণী রয়েছে।

এ যুগের আরও কয়েকটি সংকলনের নাম নিম্নে দেয়া হল । :

১। জামে সুফিয়ান সাওরী : (মৃ. ১৬১ হিজরী২। জামে ইবনুল মুবারাক, ৩। জামে ইবনে আওযাঈ (মৃ. ১৫৭ হিজরী, ৪। জামে ইবনে জুরাইজ (মৃ. ১৫০ হিজরী,) ৫। ইমাম আবু ইউসুফ (মৃ. ১৮৩ হিজরী-এর কিতাবুল খিরাজ, ৬। ইমাম মুহাম্মাদের কিতাবুল আসার। এই যুগে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস, সাহাবাদের আসার (বাণী) এবং তাবিঈদের ফতোয়াসমূহ একই সংকলনে সন্নিবিষ্ট করা হত। কিন্তু সাথে একথাও বলে দেওয়া হত যে, কোনটি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস এবং কোনটি সাহাবা অথবা তাবিঈদের বাণী ।

তৃতীয় যুগ

এই যুগে প্রায় দ্বিতীয় হিজরী শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত । এই যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ।

(১) এই যুগে নবী পাকের (স) হাদীসসমূহকে সাহাবগণের আসার ও তাবিঈদের বাণী থেকে পৃথক করে সংকলন করা হয়।

(২) নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহের পৃথক সংকলন প্রস্তুত করা হয়। এভাবে যাচাই-বাছাই এবং গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর দ্বিতীয় যুগের সংকলনসমূহ তৃতীয় যুগের বিরাট গ্রন্থে অতৰ্ভুক্ত হয়ে গেল।

(৩) এই যুগে হাদীসসমূহ কেবল জমা করাই হয়নি, বরং ইলমে হাদীসের হেফাযতের জন্য মহান মুহাদ্দিসগণ এই ইলমের এক শতাধিক শাখার ভিত্তি স্থাপন করলেন, যার উপর বর্তমান কাল পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আল্লাহ তাদের এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং তাদেরকে পুরস্কারে ভূষিত করুন।

তো আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনা নিয়ে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।

Leave a Reply