প্রথমেই বলে নেই শবেকদর বা লাইলাতুল ক্বাদর দুটিই একই জিনিস, রমজানের শেষের বিজোড় এক রাতে পবিত্র কোরআন সম্পুর্ণরূপে নাজিল হয়েছিলো তাই এই রাতের অনেক অনেক মর্জাদা। এ নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে, এই এক রাতের ইবাদতে হাজার রাতের সওয়াব পাওয়া যায় এমনই আমি শুনেছিলাম।
শবে কদর মুলত রমজান মাসের শেষের দশদিনের বেজোড় যেকোনো রাতে সংঘটিত হতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত ২৭ রমজানকেই শবে কদর বা লায়লাতুল কদরের রাত হিসেব করেই এ রাতে ইবাদত করা হয়। মুমিনগন এ রাতকে সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য শেষের ১০ দিন ইতেকাফ এ বসে থাকে।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা বর্ননা করেন একদিন আমি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে জিঙ্গেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল আপনি আমাকে বলে দিন আমি শবে কদরের রাতে কোন দোয়া পড়বো?
জবাবে তিনি এই দোয়াটি পড়তে বললেনঃ
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
বাংলায় উচ্চারণঃ –আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।–
অর্থ হলোঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (“মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত”)
এরফলে আমরা বুঝতে পারলাম, এই দোয়াটি প্রত্যেক মুসলিম ভাই ও বোনের শেষের দশকের রাতে বেশী বেশী পড়া উচিত। (বিশেষ করে ২৭ রমজান রাতে)।
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা কোরআনে অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন যেগুলো সেজদা- তাশাহুদের সময় পড়া যায়, বা চাইলে আপনি সবসময় ও পড়তে পারেন সমস্যা নেই আরো ভালো। দোয়াগুলো হলোঃ
১। আরবিতেঃ ? رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণঃ “রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি”।
অর্থ হলোঃ (“হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন”। (সুরা কাসাস: আয়াত-১৬)
২। বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন”।
আরবিতেঃ ? رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
অর্থ হলোঃ “হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপর রহম করুন, আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।” (সুরা মুমিনুন: আয়াত-১১৮)
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
বাংলায় অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন”। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত-১৯৩)
৪। বাংলায় উচ্চারণঃ “রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার”।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলায় অর্থঃ “”হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর””। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত-১৬)
৫। বাংলায় উচ্চারণঃ “”রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি””।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
বাংলায় অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন”। (সুরা হাশর: আয়াত-১০)
৬। বাংলায় উচ্চারণঃ “”সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির””।
আরবিতেঃ ? سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
বাংলায় অর্থঃ “আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে”। (সুরা আল-বাকারাহ: আয়াত-২৮৫)
৭।বাংলায় উচ্চারণঃ “”রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব””।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
বাংলা অর্থঃ “”হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর””। (সুরা ইবরাহিম: আয়াত-৪১)
৮। বাংলায় উচ্চারণঃ “”ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন””।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
বাংলায় অর্থঃ “হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু”। (সুরা বাকারাহ: আয়াত-২৮৬)
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
বাংলা অর্থঃ “”হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো””। (সুরা আরাফ: আয়াত-২৩)
১০। বাংলায় উচ্চারণঃ “”রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন””।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
বাংলায় অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন”। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত-১৪৭)
১১। বাংলায় উচ্চারণঃ “রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন”।
আরবিতেঃ ? رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
বাংলায় অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু”। (সুরা মুমিনুন: আয়াত-১০৯)
One thought on "শবে কদরের দোয়া- রাসুল (সা.) যে দোয়া করতে বলেছেন (+ বাছাই করা ২০০+ ঈদ মোবারক Pictures এন্ড স্টাটাস বা SMS)"