ঈদুল আযহা ও কুরবানী (কুরআন ও হাদিসের আলোকে)

আসসালামু আলাইকুম । আজ ৯ই জুলাই ২০২২,শনিবার । আগামীকাল রবিবার বাংলাদেশে ঈদুল আযহা বা কুরবানী ঈদ পালন করা হবে । এজন্য কুরবানি ও ঈদ সম্পর্কে কিছু লিখতে বসলাম । আশা করি সবাই ভালোভাবে পড়বেন ।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা পালন করা হয় । সাপ্তাহিক ঈদ হলো জুমুআর দিন এবং বাৎসরিক ঈদ দুটি । তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ।

ঈদুল আযহার দিনে কুরবানির পশুর গোশত দিয়ে দিনের প্রথম খাবার খাওয়া সুন্নাত । আমরা এটি মানার চেষ্টা করব ।

আমাদের দেশের অনেক জায়গাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সাথে মিল রেখে অনেক জায়গায় আগে আগে ঈদ পালন করা হয় । ফলে অনেক সংঘাতের সৃষ্টি হয় যা কঠিন হারাম ও অন্যায় । হাদিসের সুস্পষ্ট নিয়ম হলো পৃথিবীর একস্থানে চাঁদ দেখলেই ঈদ হবে না । রাষ্ট্রপক্ষের নিকট চাঁদ দেখা প্রমাণিত হতে হবে । এমনকি অধিকাংশ ফকিহগণ এ মত পেষণ করেছেন । রাষ্ট্রপ্রধান ও অধিকাংশ জনগণ যেদিন ঈদ করবে সেদিনই করতে হবে । এতে ভুল হলেও কোন মুমিনদের সমস্যা হবে না । সকলের কুরবানি আদায় হয়ে যাবে ।

|| সবসময় তাড়াতাড়ি কুরবানি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে । যাতে অন্যদের মাঝে খুব দ্রুতই তা পৌঁছে দেওয়া যায় ।

রাসুল (সঃ) ঈদুল আযহার নামায সূর্য উঠার ৩০ মিনিট অথবা ১ ঘন্টার ভিতরে আদায় করে ফেলতেন এবং ঈদুল ফিতরের নামায ১ থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে আদায় করে ফেলতেন । আমরাও চেষ্টা করব । তবে দেরি করলে সমস্যা নেই । খেয়াল রাখতে হবে যেন গোশত বন্টনের জন্য যথেষ্ট সময় থাকে ||

~~রাসুল (স) বলেছেন, “যার সাধ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে ।”
(হাকিম ও যাহাবী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)

তাই যাদের সামর্থ আছে তারা যেন অবশ্যই কুরবানি দেয় ।

কুরবানি দিতে হলে নির্ধারিত ৬টি পশুর যে কোন একটি দেওয়া যেতে পারে । এগুলো হলো : উট, মহিষ,গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা । এর মধ্যে উট, মহিষ ও গরুকে সাত ভাগে ভাগ করা যাবে । চাইলে সাত ভাগের মধ্যে আকিকার ভাগসমূহও রাখা যাবে । একাধিক লোকজন ভাগিদার হলে আমাদেরকে অবশ্যয় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো ৭জনের মধ্যে প্রত্যেকে যেন হালাল ইনকামি হয় । একজনও যদি হারাম পথে ইনকাম করে আর সে যদি কোন অংশের ভাগিদার হয় তবে সকলের কুরবানি বরবাদ হয়ে যেতে পারে ।

রাসুল (সঃ) সুস্থ পশুদের কুরবানি করতে বলেছেন এবং রোগা পশুদের কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন ।

** কুরবানিকারী হজ্বে না যেয়েও হজ্বের পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন । তাই কুরবানিকারীর উচিৎ কুরবানির নিয়ত গ্রহণের পর সে যেন আর চুল ও নখ না কাটে । এটি মহানবি (সঃ) এর আদেশ ।

আজ থেকে প্রায় ৪হাজার বছর আগে ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর নিজপুত্র ঈসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করেন । আর তারপর থেকেই কুরবানির প্রচলন । আমরা ঘটনাটি শুনে থাকি । তাই আর উল্লেখ করলাম না । নিজ এলাকার ইমামদের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ রইল ।

কুরবানির রক্ত ও মাংস কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না । পৌঁছায় অন্তরের তাকওয়া । আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করব । এটাই মূল নিয়ত । অন্য কোন নিয়তে কুরবানি করলে কুরবানি সহিহ হবে না ।

আমরা অনেক সময় বলে থাকি অমুকের নামে কুরবানি দিচ্ছে । এটা সম্পূর্ণ ভুল । বলতে হবে অমুকের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কুরবানি দেওয়া হচ্ছে । এরুপ নিয়ত ব্যাতীত কুরবানি করলে কুরবানি সহিহ হবে না ।

কুরবানির গোশত মহানবি (সঃ) তিনভাগে ভাগ করতেন । একভাগ নিজের জন্য, অন্যান্য দুই ভাগের একভাগ আত্মীয় স্বজন ও অন্য ভাগ গরীবদের ভিতরে যারা কুরবানি দিতে পারেনি তাদেরকে দিতেন । এটাই সহিহ পদ্ধতি ।

তবে কুরবানির গোশত সম্পূর্ণটাও রাখা যাবে একটি ক্ষেত্রে । যদি আপনার পরিবারের লোকসংখ্যা অধিক হয় এবং আপনার যতটুকু গোশত হয়েছে তা সম্পূর্ণ প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে রাখা যাবে । তবে তাকওয়া ঠিক রাখতে হবে । বাংলাদেশে যৌথ পরিবারের সংখ্যা নেই বললেই চলে । তাই এই নিয়মটি প্রযোজ্য হচ্ছে না ।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সুস্থ রাখুন । যারা কুরবানি দিতে পারছে না তাদেরকে পরবর্তীতে কুরবানি দেওয়ার তৌফিক দান করুন । এমনকি আমাদের পরিবারেরও এ বছর সামর্থ হয় নি । আল্লাহ সকলের কুরবানিকে কবুল করুন । সবাইকে ঈদ মুবারক জানিয়ে আজ এখান থেকেই বিদায় নিচ্ছি ।

Leave a Reply