সমুদ্রের অপার সৌন্দর্যের মধ্যে একটি হলো তীরে উপচে পড়া ঢেউগুলো। এই ঢেউগুলো নিয়ে অসংখ্য কবিতা লেখা হয়েছে। এই ঢেউয়ের কথা এসেছে গল্প, উপন্যাস আর নাটকেও; কিন্তু যে-ঢেউ সাধারণত আমরা দেখে থাকি সেই ঢেউ ছাড়া আরও এক প্রকার ঢেউ আছে সমুদ্রে। যে ঢেউ নিয়ে কোনোদিন কোনো কবিতা লেখা হয়নি। এই ঢেউয়ের কথা কোনোদিন কোনো গল্প, উপন্যাস কিংবা নাটকেও আসেনি। এমনকি, গত শতাব্দীতেও বিজ্ঞানীরা এই ঢেউয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত না। তবে এই ঢেউয়ের অস্তিত্ব ওপরে নয়, সমুদ্রের গভীরে। অর্থাৎ সমুদ্রের গভীরেও এক ধরনের ঢেউ তৈরি হয় এবং তা অদৃশ্য থাকে। কেউ দেখতে পায় না এই ঢেউ!

সমুদ্রের রয়েছে কয়েকটি স্তর। সব স্তরে পানির ঘনত্ব সমান থাকে না। কোনো স্তরে পানির ঘনত্ব কম আবার কোনো স্তরে বেশি। সমুদ্রের গভীরতা যত বেশি, পানির ঘনত্বও তত বেশি। আবার গভীরতা যত কম, পানির ঘনত্বও তত কম হয়। সমুদ্রের এসব স্তরের মধ্যে রয়েছে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ। বেশি ঘনত্বের পানি যখন কম ঘনত্বের পানির সাথে এসে মেশে, তখন সেখানে একটি ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। যে ঢেউ চোখে দেখা যায় না। কেবল পানির লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করেই এই ঢেউয়ের অস্তিত্ব নিরূপণ করা সম্ভব। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে, খুব অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি না হলে এই ঢেউয়ের ব্যাপারে জানা কোনোভাবেই সম্ভব না এবং আরও মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা মাত্র কয়েক বছর আগেই এ ব্যাপারে জানতে পেরেছে।

মজার বিষয় কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সমুদ্রের গভীরে রয়েছে এক অদ্ভুত রকমের অন্ধকার। সূর্য থেকে সাতটি রং সমুদ্রের পানিতে এসে পড়ে। এই সাতটি রং হলো লাল, নীল, বেগুনি, সবুজ, কমলা, আসমানী আর হলুদ। যার মানে রংধনু!

রংধনুর এই রংগুলো যখন সূর্য থেকে সমুদ্রে এসে পড়ে, তখন সেগুলো সমুদ্রের পানি ভেদ করে গভীরে ঢুকতে থাকে। গভীরে যেতে যেতে এই রংগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে শুরু করে।

সমুদ্রের প্রথম বিশ মিটার পর্যন্ত পানিতে কেবল লাল রঙেরই আধিক্য থাকে। এরপর বিশ মিটার পার হয়ে যখনই পঁচিশ মিটারে পৌঁছায়, তখন কিন্তু পানিতে আর লাল রং থাকে না। লাল রং এর আগেই মিলিয়ে গেছে। বলা চলে প্রতি বিশ থেকে ত্রিশ মিটারের পরেই একেকটি রং হারিয়ে ফিকে হয়ে যায়। একারণেই, সমুদ্রের প্রথম বিশ মিটারে যেকোনো কিছুকে লাল দেখায়, পরের বিশ মিটারে হলুদ, এরপরে নীল, তারপরে সবুজ।

তবে রঙের এই আধিপত্য দুইশো মিটার পর্যন্তই। দুইশো মিটারের ঘরে পৌঁছেই সব রং ফিকে হয়ে হারিয়ে যায়। ফলে সমুদ্রের নিচে দুইশো মিটারের পরে আর কোনো রঙের উপস্থিতি না থাকায় সেই অঞ্চল হয় একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে যদি কেউ হাত বের করে চোখের সামনে আনে তারপরেও সে তার হাত দেখতে পাবে না।

দুইশো মিটার নিচে কোনো মানুষের পক্ষে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে সাবমেরিন আবিষ্কারের পরে বিজ্ঞানীরা এমন অনেক অসম্ভব ব্যাপারকে জানার ব্যাপারে আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে; কিন্তু আজ থেকে মাত্র কয়েক বছর আগেও সমুদ্রের নিচের এই নিকষ কালো অন্ধকার সম্পর্কে কেউ জানত না। এমনকি এটাও জানত না যে, সমুদ্রের গভীরেও একটি ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। যদি জানত তাহলে সেগুলোও নিয়েও হয়তো কবিতা লেখা হতো। সেগুলোও হয়তো স্থান পেত কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যে। প্রকৃতিজুড়ে এরকম কত রহস্য যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আল্লাহ মালুম।

তবে, আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে এই ব্যাপারটি সম্পর্কে একজন কিন্তু ঠিকই জানে। বলতে পারেন, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগেও একজন এই বিষয়টা জানত। তিনি হলেন মহান আল্লাহ তাআলা। শুধু তা-ই নয়, কুরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই ব্যাপারে আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগেই মানবজাতিকে জানিয়ে রেখেছেন।

কুরআনের সূরা নূরের চল্লিশ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা কাফিরদের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে এমন কিছু উপমা টেনেছেন, যা আজকের আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, “তাদের (কাফিরদের আমলের) অবস্থা হচ্ছে গভীর সমুদ্রে ঘনীভূত অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ঢেউয়ের ওপর ঢেউ। তার উপরিভাগে রয়েছে ঘন মেঘমালা। অন্ধকারের ওপর আরেক অন্ধকার। কেউ যদি তাতে নিজের হাত বের করে তখন সে নিজের হাতটাও আর দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না তার জন্যে আর কোনো আলো থাকে না।”

এই আয়াতে উপমার মূল বিষয়বস্তু হিশেবে ধরা হয়েছে সমুদ্র। প্রথমে বলা হলো তাদের অবস্থা হচ্ছে গভীর সমুদ্রে ঘনীভূত অন্ধকারের মতো। সমুদ্রের গভীরে যে অন্ধকার থাকে, সেটি সাবমেরিন আবিষ্কারের আগে মানুষ জানতই না। কারণ, সমুদ্রের নিচে যতটুকু পর্যন্ত মানুষ পৌঁছাতে পারত, তাতে কোনো অন্ধকারের লেশমাত্র ছিল না। আগেই বলেছি সমুদ্রের দুইশো মিটার গভীর পর্যন্ত আলো পৌঁছাতে পারে। এর নিচে আর আলো যেতে পারে না। ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি সাবমেরিন আবিষ্কারের আগে বিজ্ঞানীরাই জানত না, সেটি আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে মুহাম্মদ (সাঃ) কীভাবে জানলেন?

এরপরের অংশে বলা হচ্ছে, সেই অন্ধকারকে আচ্ছন্ন করে আছে ঢেউ এবং তার ওপরে আরও ঢেউ। তার উপরিভাগে রয়েছে ঘন মেঘমালা।

এই অংশটুকু খুবই ইন্টারেস্টিং। আল্লাহ বলছেন, সেই অন্ধকারকে আচ্ছন্ন করে আছে ঢেউ এবং তার ওপর আরও ঢেউ। এখানে খুবই স্পষ্টভাবে দুইটি ঢেউয়ের কথা আল্লাহ তাআলা বলেছেন। ঢেউ এবং তার ওপরে আরও ঢেউ এবং তার ওপরে মেঘমালা। তাহলে, এখানে প্রথম যে-ঢেউয়ের কথা বলা হচ্ছে সেটি হলো সমুদ্রের গভীরে যে ঢেউ রয়েছে, সেটাই। এই ঢেউয়ের ওপরে রয়েছে আরেকটি ঢেউ। সেটি হলো সমুদ্রের উপরিভাগের ঢেউ। যা আমরা চোখে দেখি, উপভোগ করি। এর ওপরে রয়েছে মেঘমালা। একদম ক্লিয়ার। সমুদ্রের উপরিভাগেই তো মেঘ থাকে।

একটি আয়াতে উপমা টানতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা দুই দুইটি সমুদ্রবিজ্ঞানের কথা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এটি আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে এত নিখুত সামুদ্রিক অবস্থা বর্ণনা করা তো কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে কোনোদিনও সম্ভব নয়। এটি একমাত্র সমুদ্রের সৃষ্টিকর্তা, যার নির্দেশে সমুদ্র প্রবাহিত, তার পক্ষ থেকে আসা বলেই সম্ভব।

10 thoughts on "[কোরআন ও বিজ্ঞান] সমুদ্রের নিচে নানা রঙের আলো ও গোপনীয় ঢেউ সম্পর্কে অবিশ্বাস্য মজার তথ্য"

  1. Unlimited Fun Contributor says:
    অসাধারন তথ্য গুলো জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      Welcome
    2. Unlimited Fun Contributor says:
      আপনাকেউ ওয়েলকাম
  2. Aubdulla Al Muhit Contributor says:
    আপনার উল্লিখিত আয়াতগুলো দ্বারা আলো ও অন্ধকার সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় ।
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      হুম অবশ্যই
  3. MD Musabbir Kabir Ovi Author says:
    মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি জগৎ বড়ই রহস্যময়। মানব জাতির কল্যাণের জন্য তিনি সব সৃষ্টি করেছে
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      Right
  4. MD Ashraful Islam Author says:
    Mashallah , valo laglo poree. Onek gurottopurno bishoi
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      Hmmm

Leave a Reply