ছোটবেলায় যখন ক্লাসে বসে স্যারের মুখে জিবনের প্রথম শুনেছিলাম যে, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়, তখন সবার মত আমিও রীতিমতো অনেকটা অবাক হয়েছিলাম। আমার এখনো মনে আছে, এই ব্যাপারে স্যার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন, যেটি কওমি মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও এখন আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হয়। তিনি বলেছিলেন, সৌরবিদ্যুৎ যেমন দিনের বেলা সূর্যের আলোর মাধ্যমে চার্জ হয়ে রাতের বেলা আমাদের আলো দেয়, চাঁদও ঠিক তেমনি দিনের বেলা সূর্যের আলোর মাধ্যমে চার্জ হয়ে রাতের বেলা আমাদেরকে আলো প্রদান করে। এই বিষয়ে তখন এতো বেশি জ্ঞান না থাকার কারণে স্যারের কথাটিকেই আমি নির্ধিদায় সত্য বলে মেনে নিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে অবশ্য আরো বেশি জোরদারের সাথে বিশ্বাসীও হয়েছিলাম। তার কারণ হলো, প্লাস্টিকের তৈরি ছোট্ট একটি খেলনা তলোয়ার ছিলো আমার। যেই তলোয়ারটির চমৎকার একটি বৈশিষ্ট্য ছিলো এই রকম যে, অল্পক্ষণের জন্য তলোয়ারটা রৌদ্রের আলোতে রাখার পর অন্ধকারে নিয়ে গেলে কিছু সময়ের জন্য এটা আপনা-আপনিই জ্বলতে থাকতো। অর্থাৎ, সূর্যের আলোর মাধ্যমে একপ্রকার চার্জ হয়ে থাকতো এবং ব্যাটারি ছাড়াই অন্ধকারে আলোকিত হতো। এরকম আকর্ষণীয় জিনিস বর্তমানেও অনেক পাওয়া যায়। যেমন, গ্লো-স্টোন নামক একপ্রকার জ্বলজ্বলে পাথর রয়েছে, যেগুলো বাসাবাড়ি ও বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এরকম এক ধরণের তসবিহও রয়েছে, যার পুতি বা দানাগুলো সম্ভবত থোরিয়াম নামক রাসায়নিক পদার্থের সাথে জিংক অক্সাইড মিশ্রণ করার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কেননা, এই দুইটা পদার্থকে যদি একসাথে মেশানোর পর তাতে আলো ফেলা হয়, তাহলে সে আলোকে শোষণ করে নিজের মধ্যে জমা রাখে এবং অন্ধকারে তা বিকিরণ করে। যেরকমটা হয় আমার খেলনা তলোয়ারে। তলোয়ার ছাড়াও এমন বস্তু আমি আরো অনেক দেখেছিলাম। এসব দেখার ফলেই আমি একসময় ধারণা করতাম যে হ্যা, স্যার যেই কথাটি বলেছিলেন সেটাই ঠিক। অর্থাৎ, চাঁদের উপর যখন সূর্যের আলো পতিত হয়, তখন এই আলো চাঁদের মধ্যে জমা থাকে এবং রাতে যখন সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়, তখন সেই আলো দ্বারা চাঁদকে আমরা আলোকিত হতে দেখে থাকি। এই ধারণার উপর আমি একসময় দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বাসী ছিলাম, যা ছিলো সম্পূর্ণই আমার ভূল ধারণা। কারণ, বিজ্ঞান এই ব্যাপারে অন্য কথা বলে।
বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায় যে, রাতের অন্ধকারে চকচকে যে চাঁদকে আমরা দেখে থাকি, এই চাঁদ দেখতে অনেকটা সুন্দর মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে চাঁদ এতোটা সুন্দর নয়। চাঁদের মাটি হলো অনেকটা কালচে বর্ণের, যাকে বলা হয় গাঢ় ধূসর। এই ধূসর বর্ণের মাটি গুণগত মানের দিক দিয়ে পৃথিবীর মাটির তুলনায় বেশ খানিকটা আলাদা হলেও এটি পৃথিবীর মাটির মতো একই খনিজ দিয়ে গঠিত। অর্থাৎ, পৃথিবীর মাটি যেমন সাধারণ, চাঁদের মাটিও সাধারণ। এর মধ্যে এমন কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই, যার ফলে সে সূর্যের আলোকে নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখতে পারে। এর মানে হলো, রাতের আকাশে যেই চাঁদকে আমরা আলোকিত অবস্থায় দেখে থাকি, যদিও এই আলো সূর্য হতে প্রাপ্ত, তবে এটা চাঁদের মধ্যে জমিয়ে রাখা আলো নয়। এতে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যেহেতু সূর্যের আলোকে চাঁদ নিজের মধ্যে জমিয়েও রাখে না, আবার তার নিজস্ব কোনো আলোও নেই, তাহলে রাত্রিবেলা চাঁদ আলো কিভাবে প্রদান করে? এর সঠিক উত্তর হলো, চাঁদ মূলত কোনো আলোই প্রদান করে না, বরং সে নিজেই সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। আর সেই আলোকেই আমরা পৃথিবীতে বসে দেখে থাকি। অর্থাৎ, চাঁদের মধ্য হতে যে আলোটা রাতে পৃথিবীতে পৌছে, এটা হচ্ছে চাঁদের মাধ্যমে সূর্যের প্রতিফলিত আলো। চাঁদ কেবল এখানে মাধ্যম মাত্র। বিষয়টি সহজভাবে বুঝার জন্য চলুন এটির ব্যাখ্যার প্রতি অগ্রসর হওয়া যাক।
আমরা জানি, রাত্রিবেলা যদিও আকাশে সূর্যকে দেখা যায় না তবে সূর্য ঠিকই তার নিজ অবস্থানেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি এই সূর্য দিনের বেলা যেমন আলোকোজ্জ্বল থাকে, রাত্রিবেলাও ঠিক একই ভাবে আলোকোজ্জ্বল থাকে। আমাদের ঘূর্ণায়মান গোলাকার পৃথিবীর একপাশ যখন সূর্যের বিপরীত দিকে থাকে, তখন সেই বিপরীত পাশে সূর্যের আলো পৌছতে পারেনা বিধায় সেখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত থাকে। অথছ, পৃথিবীর অন্যপাশে তখন ঠিকই দিন থাকে এবং সূর্য সেখানে আলো প্রদান করে। যার মানে হলো, বর্তমানে আমি বা আপনি পৃথিবীর যে অংশে বাস করছি, সেই অংশে দিন থাকুক বা রাত থাকুক, সূর্যের আলোকে আমরা দেখতে পাই বা না পাই, সূর্য সর্বদা তার নিজ তেজদীপ্ততায় প্রজ্বলিত অবস্থায় ঠিকই আলোকোজ্জ্বল রয়েছে। আর এই তেজদীপ্ত সূর্যের আলো যখন রাতের বেলা চাঁদের উপর পতিত হয়, তখন সেই চাঁদকে আমরা আলোকিত অবস্থায় দেখে থাকি। আর এই রকম দৃশ্য শুধু চাঁদে নয়, চাঁদ ছাড়া আরো অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা অবলোকন করি। উদাহরণস্বরূপ, ধরে নিন মহারাণীতুল্য পরীর মত সুন্দরী টুকটুকে একটা আদুরে বউ আছে আপনার। আর এই মহারাণীতুল্য বউটা একদিন অন্ধকার রাতে আলোকিত রুমে খাটের উপর শুয়ে ফোন ব্যবহারে মগ্ন আছে এবং একই রুমে আপনি কম্পিউটার টেবিলে বসে অফিশিয়াল কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো এবং পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো। যার ফলে আপনার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আপনি লক্ষ্য করলেন যে, আপনার টুকটুকে বউয়ের ফুটফুটে চেহারাটা অন্ধকারেও যেন আলোকিত অবস্থায় ঝলঝল করছে। এখন আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কী কারণে আপনার বউয়ের চেহারাটা এভাবে ঝলঝল করছে? এই ব্যাপারে নিশ্চয় আপনি উত্তর দিবেন যে, মোবাইলের স্কিন যেহেতু তার চেহারার দিকে ফেরানো রয়েছে, তাই স্কিনের আলোটা চেহারার উপর পড়ার কারণে মনে হচ্ছে তার চেহারাটা বুঝি অন্ধকারে জ্বলে উঠছে। এখানে মূল রহস্যটা হল মোবাইলের আলো। চাঁদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক এমনই হয়। অন্ধকার রাতে চতুর্দিকে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় সূর্যের আলো চাঁদের উপর পতিত হয় এবং চাঁদকে তখন ঝলঝল করতে দেখা যায়। একারণেই বলা হয়, চাঁদের কোনো নিজস্ব আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়। আর সেই আলোই চাঁদে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে যায়। এটাই হল তার আসল রহস্য।
চাঁদের আলোর এই রহস্যের সাথে চাঁদের আকার কমে যাওয়া ও বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও সম্পৃক্ত রয়েছে। কেননা, পৃথিবীতে সূর্যের আলো পড়ার ফলে যেমন পৃথিবীর অর্ধেক অংশ আলোকিত হয় এবং বাকি অর্ধেক অংশ অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনি চাঁদের উপরও সূর্যের আলো পড়ার ফলে চাঁদের অর্ধেক অংশ আলোকিত হয় এবং বাকি অর্ধেক অংশ অন্ধকার থাকে। আর পৃথিবী ও চাঁদ যেহেতু সর্বদা তাদের কক্ষপথে গতিশীল থাকার কারণে একেক সময় এরা একেক অবস্থানে থাকে, তাই চাঁদকে আমরা একেক সময় একেক আকৃতিতে দেখি। চাঁদের আলোকিত অংশটা যখন পৃথিবীর দিকে সোজাসুজি মুখ করে থাকে, তখন আমরা চাঁদকে পরিপূর্ণরূপে দেখি। যাকে বলা হয় পূর্ণিমা। আর যখন চাঁদের আলোকিত অংশটা পৃথিবীর দিকে সোজাসুজি না হয়ে কিছুটা আড় হয়ে অন্য দিকে মুখ করে থাকে, তখন চাঁদের আলোকিত অংশটিকে পুরোপুরি ভাবে আমরা দেখতে পারি না বিধায় চাঁদের আকার কিছুটা কমে গেছে বলে মনে হয়। এভাবে চাঁদের আলোকিত অংশটা পৃথিবী থেকে যত বেশি অন্য দিকে ঘুরে যায়, চাঁদের আকার ঠিক ততো বেশি কমে যেতে দেখা যায়। এমনকি এক পর্যায়ে যখন চাঁদের আলোকিত অংশ পুরোপুরি পৃথিবীর বিপরীত দিকে ঘুরে যায়, তখন আমরা চাঁদকে আর দেখতেই পারি না। এ সময় চাঁদের আলোকিত অংশটা থাকে পৃথিবীর বিপরীত দিকে এবং অন্ধকার অংশটা থাকে পৃথিবীর দিকে মুখ করে। ফলে তখন আমরা চাঁদকে আকাশে দেখতে পাই না। চাঁদের এই অবস্থাকে বলা হয় অমাবস্যা। অমাবস্যার পরের দিন থেকে চাঁদ ও পৃথিবীর গতির কারণে পৃথিবী থেকে চাঁদের সামান্য আলোকিত অংশ নজরে পড়ে এবং দিন দিন এই আলোকিত অংশ বৃদ্ধি পেয়ে পেয়ে পুনরায় আমাদের মাঝে পূর্ণিমা চলে আসে। এভাবেই প্রতিনিয়ত চাঁদের পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে।
এখন কথা হলো, এইযে এই চাঁদ কখনো কমে যাচ্ছে, কখনো বেড়ে যাচ্ছে, কখনো পূর্ণিমা হচ্ছে, কখনো অমাবস্যা হচ্ছে, এর কারণটা মূলত কী? অনেকেই হয়তো বলবে, চাঁদের দিক পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে। কিন্তু আমি বলবো যে না; এর মৌলিক কারণটা হলো চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো না থাকা। চাঁদের যদি কোনো নিজস্ব আলো থাকতো, তাহলে সূর্যের মত চাঁদও তার সব দিকেই আলোকোজ্জ্বল থাকতো এবং সবসময় আমরা চাঁদকে পরিপূর্ণরূপেই দেখতে পেতাম। ফলে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা বলতে কোনো শব্দই হয়তো বাকি থাকতো না এই পৃথিবীর বুকে। ঠিক যেরকম অন্ধকার না থাকলে আলোর কোনো সংজ্ঞা থাকতো না এবং অসুন্দর না থাকলে সুন্দরের কোনো পরিচয় থাকতো না।
যাইহোক, এই সুন্দরতম চাঁদের সৌন্দর্যের পেছনে মূল অবদান হিসেবে রয়েছে সূর্যের আলো। সূর্য থেকেই চাঁদ আলো পায়, চাঁদের কোনো নিজস্ব আলো নেই। এটাই আমরা আধুনিক বিজ্ঞান থেকে জানতে পারি। অথছ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে তথ্যটি আমাদের আধুনিক বিজ্ঞান জানাচ্ছে, কোরআন সেটা চৌদ্দ’শ বছর আগে থেকেই জানিয়ে আসছে।
এটা তো আমরা সবাই জেনে গেলাম যে, চাঁদ যদিও সূর্য থেকে আলো পায়, তবে সূর্যের আলো ও চাঁদের আলোর মাঝে অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। কেননা, চাঁদ আলো প্রদান করে অন্যের পক্ষ থেকে, আর সূর্য আলো প্রদান করে নিজের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ, সূর্যের আলোটা নিজের, আর চাঁদের আলোটা অন্যের। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, চাঁদের আলো প্রতিফলিত, কিন্তু সূর্যের আলো প্রতিফলিত নয়। এই হিসেবে চাঁদ ও সূর্য উভয়টার আলো এক প্রকার নয়। বরং, উভয়টার মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় চন্দ্র-সূর্য নিয়ে অনেক আলোচনা এসেছে ঠিক, তবে সেখানে একটা জায়গাও এমন নেই যেখানে চাঁদের আলো ও সূর্যের আলোর ক্ষেত্রে একই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। বরং, চাঁদের আলো বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে এক শব্দ এবং সূর্যের আলো বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে আরেক শব্দ। যেমন, পবিত্র কোরআনে সূরা ইউনুস-এর ৫ নাম্বার আয়াতে সূর্যের আলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে “ضياء” শব্দ এবং চাঁদের আলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে “نور” শব্দ। আর এই “نور” (নূর) শব্দটি হলো একটি ব্যাপক শব্দ। এটি সাধারণ ভাবে যেমন সকল আলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, ঠিক তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই “نور” (নূর) শব্দ উজ্জ্বল বস্তু হতে অন্য কোনো বস্তুর উপর প্রতিফলিত আলোর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে উক্ত আয়াতে সূর্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত “ضياء” শব্দটি এমন নয়। বরং, যেন তা নিজেই প্রদীপ্ত আলো। বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য চলুন এবার আরেকটি আয়াতে যাওয়া যাক।
কোরআনের ২৫ নাম্বার সূরা আল-ফুরকানের ৬১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে “কতই না মহান সেই সত্তা, যিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র।” লক্ষ্য করুন সূর্যকে এখানে সরাসরি প্রদীপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ‘সিরাজ’। এর অর্থ হলো এমন প্রদীপ, যাতে রয়েছে নিজস্ব আলো। অর্থাৎ, সূর্যের আলো যে নিজস্ব, এটা এখানে স্পষ্টভাবে উল্লিখিত। আর চাঁদের আলোর জন্য এই আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে আরবি শব্দ ‘মুনীর’ যা মূলধাতু ‘নূর’ হতে নির্গত। অর্থাৎ সেই নূর, যা কখনো কখনো অন্যের কাছ থেকে গৃহীত প্রতিফলিত আলোকে বুঝানো হয়। এখানে অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন হতে পারে, চাঁদের ক্ষেত্রে যে ‘নূর’ শব্দটি অন্যের কাছ থেকে গৃহীত আলোকেই বুঝানো হয়েছে সেটা কিভাবে মেনে নিবো? আর মেনে নিলেও এই আলো যে সূর্য হতেই প্রাপ্ত হয়েছে এটারই বা কী প্রমাণ রয়েছে? চলুন তাহলে এই বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য আমরা অন্য আরেকটি আয়াতে চলে যাই।
সূরা নূহ-এর ১৬ নাম্বার আয়াতে একই ভাবে চাঁদের জন্য ‘নূর’ ও সূর্যের জন্য ‘সিরাজ’ শব্দ ব্যবহার করে বলা হয়েছে “আর সেখানে চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোকরূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে”। খেয়াল করুন এখানে সূর্যকে উপমা দেয়া হয়েছে প্রদীপের সাথে, আর চন্দ্রকে উপমা দেয়া হয়েছে আলোর সাথে। অর্থাৎ, সূর্য হল প্রদীপস্বরুপ এবং চন্দ্র হল আলোস্বরুপ। আর এটা তো কারো অজানা নয় যে, আলো সর্বদা প্রদীপ বা প্রদীপ জাতীয় বস্তু হতেই নির্গত। অতএব, উল্লিখিত এই আয়াত দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সূর্য হতেই চাঁদ আলো প্রাপ্ত হয়। যদিও এই বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য শেষের এই একটি আয়াতই যথেষ্ট ছিলো, তবুও আমি অতিরিক্ত দুটি আয়াত উল্লেখ করেছি যেন বিষয়টি আরো দৃঢ়তার সাথে সুদৃঢ় হয়।
সবশেষে এখানে ভাববার বিষয়টা হলো, এতো সুন্দরভাবে চাঁদের আলোর এই রহস্যটা পবিত্র কোরআনে কিভাবে এলো? মুহাম্মদ (সাঃ) কি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন? নাকি তিনি নিজেই মহাকাশ বিষয়ক কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন? ইসলাম এবং ইতিহাস তো বলে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কোনো শিক্ষাই অর্জন করেননি। তিনি ছিলেন উম্মি। কোনো বিষয়ের জ্ঞান তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত জানতেন না, যতক্ষণ না তাকে আল্লাহ তা‘আলা জানাতেন। তাছাড়া, চাঁদের আলো সূর্য হতে প্রাপ্ত এই বিষয়ের জ্ঞান তৎকালীন সময়ের আরববাসীদের মধ্যে কেউই তা জানতো না। এমন কোনো সম্ভাবনাও ছিলো না যে, চাঁদের এই রহস্যময় তথ্যটি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তিনি তা কোরআনে যুক্ত করে দিয়েছেন। অতএব, এই পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআন যদি কোনো ঐশী গ্রন্থ না হয়ে থাকে, এই কোরআন যদি আসমান হতে প্রেরিত না হয়ে থাকে, এই কোরআন যদি আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত না হয়ে থাকে, তবে মনগড়া বাণী বানিয়ে ইচ্ছামত তথ্য দিয়ে বিজ্ঞানপূর্ণ এই নির্ভুল কোরআনকে নিজের পক্ষ থেকেই রচনা করে ফেলা কোনো মানুষের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হতে পারে? বিজ্ঞানময়ী এই কোরআন যে একমাত্র চন্দ্র-সূর্যের সৃষ্টিকর্তা মহাবিশ্বের পালনকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকেই প্রেরিত হয়েছে, এতে না আছে কোনো সন্দেহ এবং না আছে তার অবকাশ।
এমন পুষ্ট আরও চাই ভাই
পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত অনুকল্প বা hypothesis কে থিওরি বলে।