আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

আল্লাহ কখন হাসেন…? বান্দার উপর খুশি হয়ে কখন হাসেন।


আমাদের জীবনে এমন অসংখ্য দ্বীনি বিষয় আছে যেগুলো আমরা জানতে চাই। তবে তার মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি আমাদের জানা দরকার তা হলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের গুণাবলী ও তাঁর কর্মসমূহ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শ্রেষ্ঠত্ব, পরিপূর্ণতা ও সৌন্দর্যের গুণে গুণান্বিত। তবে এই গুণাবলীতে তিনি মানুষের মত নন, তা সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন – অর্থাৎ “বিশ্বের কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন ” (সূরা শূরাঃ১১)

তাই বলা যায় যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যেসকল গুণাবলী রয়েছে তা কেবল মাত্র তাঁর জন্যই নির্ধারিত। সৃষ্টির কোনো গুণাবলীর সাথে তাঁর ওই গুণাবলীর তুলনা করা যাবে না। আজ আমরা এই আলোচনায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য গুণাবলী হতে তাঁর একটি গুণের কথা আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আর তা হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কখন হাসেন…?

আল্লাহ তায়ালা হাসার গুণ তাঁর অসংখ্য গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ হাসার এই ধরন কোনো সৃষ্টির হাসার ধরনের মত নয়। আল্লাহ কখন হাসেন…? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হেসেছিলেন, আসমা বিনতে ইয়াজিদ বিন সাকান নামক একজন আনসারী নারীর ঘটনায়। ঘটনাটি হলো এমন – যখন সাদ বিন মুয়াজ রা. ইন্তেকাল করলেন, তখন তার মা চিৎকার করে কান্না শুরু করলেন।

মহানবী (সাঃ) বললেন, “আমি আপনাকে এমন জিনিস শুনাবো যাতে আপনার চোখের পানি বিদূরিত হবে ও আপনার দুঃখ চলে যাবে। আপনার ছেলে প্রথম ব্যক্তি যার কারণে আল্লাহ তায়ালা হেসেছেন ও তার কারণে আল্লাহ আরশ প্রকম্পিত হয়েছে “। ( মুসনাদে আহমাদঃ ২৬২৯৯)

আল্লাহ হাসেন যখন তাঁর বান্দা তাহাজ্জুদ সালাতে দাঁড়ায়। কারণ তাহাজ্জুদের সালাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেন, এমন তিন জন লোক রয়েছে যাদের কারণে আল্লাহ তায়ালা হাসেনঃ (১) কেউ যখন কিয়ামুল্লাইলে বা তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ায়, (২) মানুষ যখন সালাত আদায় করার জন্য কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়, (৩) কিছু লোক যখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। (মুসনাদে আহমাদ)

হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেন, এমন তিনজন লোক রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন, তাদেরকে দেখে তিনি হাসেন ও খুশী হন। প্রথমতঃ এমন এক লোক যে লোক কোনো একটি দলের লড়াই করে, তারপর হয়তো সে শহীদ হয় অথবা আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন এবং তিনি তার জন্য যথেষ্ট হন। তখন আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও কিভাবে সে আমার পথে ধৈর্য ধারণ করেছে।

দ্বিতীয়তঃ সে ব্যক্তি যার ঘরে সুন্দরী স্ত্রী ও নরম আরামদায়ক বিছানা থাকা সত্ত্বেও সে তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়ায়। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন দেখো, এই লোকটি তার প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করে আমার জিকিরে মশগুল হয়ে আছে। অথচ সে চাইলেও শুয়ে আরাম করতে পারত।

তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে সফরে আছে, তার সাথে রয়েছে একটি কাফেলা। তারা সফরে পথে চলতে রাত্রী জাগরণ করে, অতঃপর ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু সেই ব্যক্তিটি না ঘুমিয়ে সব সময়ই সুখে দুঃখে তাহাজ্জুদের সালাতে সময় কাটায়। ( আল মুসতাদরিক লিল হাকিমঃ ৬৮)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে একটি ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায় যে, এমন দু,জন লোক রয়েছে, যারা পরস্পর পরস্পরের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়। তাদের একজন মুমিন অপরজন কাফের। তিনি বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা দুই জন লোকের দিকে তাকিয়ে হাসেন, যারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়। তাদের দুজনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিভাবে সম্ভব হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তখন তিনি বললেনঃ একজন আল্লাহ রাস্তায় যুদ্ধে শহীদ হবে, এরপর হত্যাকারী ব্যক্তি মুসলিম হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এরপর সে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে শহীদ হয়ে যাবে। এভাবে পরস্পর লড়াই করা একজন মুসলিম ও একজন কাফিরের দুজনেই জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করবে। ( বুখারীঃ ২৮২৬; মুসলিমঃ ১৮৯০)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে এক লোক মহানবী (সাঃ) এর নিকট মেহমান হয়ে আসলো। অতঃপর তাকে মেহমানদারীর জন্য রাসূল (সাঃ) তার স্ত্রীদের কাছে কিছু খাবার দাবারের জন্য কাউকে পাঠালেন। তখন খবর আসলো যে, ঘরে পানি ছাড়া খাবার মত কিছুই নেই। তখন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, এমন কে আছ যে, এই লোককে মেহমানদারী করাতে পারবে..?

তখন আবু তালহা নামে একজন আনসারী সাহাবী বললেন, আমি তাকে মেহমানদারী করাবো হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। তখন তিনি লোকটিকে নিয়ে তার ঘরে গেলেন। তার স্ত্রীকে বললেন মহানবী (সাঃ) এর মেহমানকে সম্মানজনক মেহমানদারীর ব্যবস্থা কর। তখন তার স্ত্রী বললেন – বাচ্চাদের খাবার দাবার ছাড়া ঘরে আর কিছু নেই। তখন সাহাবী তার স্ত্রীকে বললেন – এক কাজ কর, খাবার দাবার প্রস্তুত কর, বাচ্চাদের খাবার দাবারের জন্য কান্নাকাটি করলে বাতি নিভিয়ে তাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। তার স্ত্রী তাই করলেন।

মেহমানকে মেহমানদারী করালেন। আর তারা দুজন এমন একটা ভাব করলেন যেন তারা খাবার খেয়েছেন, অথচ তারা অভুক্ত থেকেই রাত কাটালেন। এরপর যখন সকাল হল, উভয়ে মহানবী (সাঃ) এর কাছে গেলেন। মহানবী (সাঃ) বললেনঃ গতকাল রাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কর্মকান্ডে আশ্চর্য হয়ে হেসেছেন এবং এই প্রসঙ্গে সূরা হাশরের ৯ নং আয়াতটি নাযিল করেনঃ অর্থাৎ “তারা নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলেও অন্যদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম ” ( সূরা হাশরঃ৯) ( বুখারীঃ ৩৪৯৮; মুসলিমঃ ২০৫৪)

“যে ক্ষেত্রে আল্লাহ হাসবেন সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে যখন জান্নাতের দিকে রওয়ানা করবে, পথে সে একটু হেঁটেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে, তার পাশে তখন প্রজ্বলিত আগুন জ্বলছে। সে পথিমধ্যে জাহান্নামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণে বলবে। মহমান্বিত সেই সত্তা যিনি আমাকে তার জাহান্নাম থেকে পানাহ দিয়েছেন। এরপর আল্লাহ তাকে একটি গাছ দিবেন ও তারপর তা তার থেকে উঠিয়ে নেবেন। তখন লোকটি বলবে, হে আল্লাহ আমাকে গাছটি দিন তার ছায়ায় বসবো ও তার পানি পান করবো। তখন আল্লাহ বলবেন, হে মানুষ! আমি তোমাকে যদি এই গাছটি প্রদান করি তবে তুমি কি আমার আরেকটি গাছ চাইবে..? তখন লোকটি আল্লাহকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলবে, না আর কোনো গাছ চাইব না, হে আল্লাহ! তখন আল্লাহ তাকে গাছটি দিবেন।

সে এই গাছের ছায়ায় বসবে, তার থেকে পানি পান করবে। এরপর আল্লাহ তার থেকে গাছটিকে উঠিয়ে নেবেন। এরপর সে আগেরটির চেয়ে আরো বড় একটি গাছ দেখতে পাবে। সে আবার আল্লাহর কাছে বায়না ধরবে, তাকে গাছটি দেয়ার জন্য। তখন আল্লাহ বলবেন, এই গাছটি তোমাকে দিলে তুমি আবার আরো বড় একটি গাছের জন্য বায়না ধরবে। তখন সে আল্লাহর কাছে প্রতিশ্রুতি দিবে যে, সে আর কোনো গাছের জন্য বায়না ধরবে না।

তখন আল্লাহ তাকে সেই গাছটি দিবেন। তখন সে সেটির ছায়া গ্রহন করবেও তার পানি পান করবে। এরপর জান্নাতের দরজার সামনে লোকটি আগের দুটির চেয়ে আরো বড় আরো সুন্দর একটি গাছ দেখতে পাবে। তখন সে লোকটি বলবে হে আল্লাহ! আমাকে এই গাছটি দিন, আমি এর ছায়া গ্রহন করবো ও এর পানি পান করবো। তখন আল্লাহ বলবেন – তুমি কি আমাকে প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমার কাছে আর কোনও গাছ চাইবে না! সে বলবে, হ্যাঁ অবশ্যই, হে আল্লাহ! এরপর আর চাইবো না, এটি আমাকে দিন, আমি এর ছায়া গ্রহন করবো ও এর পানি পান করবো। তখন আল্লাহ তাকে সেটি দিবেন।

ঠিক তখন সে জান্নাতের দরজার ভেতর থেকে জান্নাতবাসীরা শব্দ শুনতে পাবে। তখন সে গাছটির কথা ভুলে গিয়ে বলবে – হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। তখন আল্লাহ বলবেন – হে বনী আদম! আমি যদি তোমাকে দুই পৃথিবীর সমান জান্নাত দেই তাহলে তুমি কি খুশি হবে..? তখন লোকটি বলবে – হে বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা আল্লাহ! আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন…? এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) হেসে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম তখন রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি হাসছেন কেন..?


তখন রাসূল (সাঃ) বলবেন – আল্লাহর হাসির কারণে হাসছি। যখন লোকটি বলবে, হে আল্লাহ! আপনি বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা হয়েও কিভাবে আমার সাথে মজা করছেন..? তখন আল্লাহ হেসে দিবেনও বলবেন, না আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না। তবে আমি যা চাই তাই আমি করতে সক্ষম “। (বুখারীঃ ৭৪৩৭; মুসলিমঃ ১৮২) আজকে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবে আল্লাহ হাফেজ।

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে আমি

5 thoughts on "আল্লাহ কখন হাসেন…? বান্দার উপর খুশি হয়ে কখন হাসেন।"

  1. faysalhossen Contributor says:
    জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাই।।।।।।
    1. MD Shakib Hasan Author Post Creator says:
      ?
  2. Asif Contributor says:
    অসাধারণ পোস্ট
    1. MD Shakib Hasan Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
    2. Asif Contributor says:
      Welcome

Leave a Reply