মহাবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত ও শক্তিশালী জিনিসটি হচ্ছে ‘ব্ল্যাক হোল’। যাকে মহাকাশের দানব নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এটা মহাজগতের এমন একটি গোলক আকৃতির শূন্যস্থান যেখানে কোনো কিছুই নেই। এখানে একবার কোনো কিছু পতিত হলে সেটা আর কখনোই ফিরে আসতে পারে না। এমনকি আলোও সেখান থেকে ফিরে আসতে অক্ষম।

ধরুন আপনি রাতের অন্ধকারে হাটার সময় হঠাৎ একটি গর্তের ভিতর পড়ে গেলেন। আর সেই গর্তটা এতোই গভীর যে সেখান থেকে আপনি কোনভাবেই উপরে ফিরে আসতে পারছেন না। এখন কথা হলো, যদিও আপনি সেই গর্ত থেকে উপরে ফিরে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তবে আপনি যদি সেই গর্তে বসে একটি টর্চ-লাইটের আলো উপর দিকে নিক্ষেপ করেন তাহলে তো অবশ্যই সেই আলো গর্ত থেকে উপর দিকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। ব্ল্যাক হোল নামক এই দানব এতোটাই রাক্ষুসে হয় যে, সেখান থেকে আলো পর্যন্ত ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়। আলোকেও সে নিজের দিকে টেনে রেখে দেয়।

ব্ল্যাক হোলের এই রহস্যময় ভয়ংকর শক্তির মূল উৎসটা হলো তার অভিকর্ষ বল। আমরা জানি মহাজাগতিক প্রতিটি বস্তুরই একটি নিজস্ব অভিকর্ষ বল রয়েছে। আপনি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে উপর দিকে একটা লাফ দিবেন তখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বল পুনরায় আপনাকে পৃথিবীর পৃষ্ঠেই ফিরিয়ে আনবে। তবে আপনি প্রায় দেড় ফুট-এর মত উপরে উঠতে পারবেন। আর যদি আপনি চাঁদে গিয়ে লাফ দেন তাহলে প্রায় ৯ ফুট উপরে উঠতে পারবেন। কারণ, পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের অভিকর্ষ অনেক কম। এজন্যই পৃথিবী থেকে মানুষ চাঁদে গেলে সাধারণভাবে তাদের হাটতে কিছুটা অসুবিধা অনুভব হয়। এভাবে আপনি প্লুটন নামক বামন গ্রহ থেকে লাফ দিলে ২৫ ফুট ও সিরিস নামক বামন গ্রহ থেকে লাফ দিলে ৫২ ফুট-এর মত উপরে উঠতে পারবেন। অথছ একই গতিতে পৃথিবী থেকে লাফ দিলে আপনি উপরে উঠতে পারবেন মাত্র ১.৫ ফুট। আর যদি কেউ বৃহস্পতি গ্রহে গিয়ে লাফ দেয় তাহলে সে এক ফুটের কাছাকাছি উচ্চতায়ও উঠতে পারবে না। সবই হচ্ছে অভিকর্ষের খেলা।

ব্ল্যাক হোলের মাঝে এই অভিকর্ষ বল এতোটাই বেশি শক্তিশালী যে, সেখান থেকে কেউ লাফ দিবে তো দূরের কথা, এর ভিতরে কেউ পতিত হওয়া মানে তার অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন। এমনকি আশেপাশের গ্রহ-নক্ষত্রগুলোও এর থেকে পরিত্রাণ পায় না। মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ঘুরতে ঘুরতে যখন কোনো একটি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি নির্দিষ্ট একটি সীমারেখার আওতায় চলে যায় তখন সেই ব্ল্যাক হোল উক্ত গ্রহ বা নক্ষত্রকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে চিরতরে তাকে গ্রাস করে ফেলে।

মহাকাশে এরকম অসংখ্য অগণিত কোটি কোটি ভয়ংকর ব্ল্যাক হোল রয়েছে এবং বিশাল থেকে বিশালতম নক্ষত্রসমুহ এসব ব্ল্যাক হোলে পতিত হয়ে অজানা এক স্থানে আমাদের অজান্তেই যুগ যুগ ধরে হারিয়ে চলেছে। আর বিস্ময়কর বিষয় হলো, মানুষ ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়ার আগে থেকেই আমাদের সবার পরিচিত বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রকাশিত সাধারণ আপেক্ষিকতার থিউরি মতে ব্ল্যাক হোলের মত কিছু একটা বাস্তবে থাকার ইঙ্গিত বহন করছিলো। অথছ যার থিউরি মতে ব্ল্যাক হোলের মত কিছু একটা বাস্তবতার ইঙ্গিত বহন করছিলো, সে আলবার্ট আইনস্টাইন নিজে এটা বিশ্বাস করতে পারেননি যে, ব্ল্যাক হোলের মত ভয়ানক কিছু আধও বাস্তবে থাকতে পারে।

ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে ছিল মতপার্থক্যের গোলক ধাঁধা। কারণ, ব্ল্যাক হোল ছিল বিজ্ঞানের বাস্তব বিরোধী একটা ধারণা মাত্র। কেউ ছিল এর উপর বিশ্বাসী আবার কেউ ছিল অবিশ্বাসী। কেননা, এর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ কারো কাছেই তখনও ছিল না। বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে তখন, যখন ‘সিগনাস এক্স-১’ নামক একটি ব্ল্যাক হোল ১৯৭১ সালে সর্প্রবথম চিহ্নিত করা হয় এবং ১৯৯০ সালে তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকেই সবার মতবিরোধের অবসান ঘটিয়ে বিজ্ঞানীরা এতে একমত হয় যে প্রকৃতপক্ষেই ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব বাস্তবতায় রয়েছে।

এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ব্ল্যাক হোল বলতে যে আসলেই কিছু বাস্তবে রয়েছে, বিজ্ঞানীরা সেটা ১৯৭১ সালে, তথা আজ থেকে মাত্র ৫২ বছর আগে জানতে পারলেও আমাদের কোরআন তা আরো হাজার বছর আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বে নাযিলকৃত কোরআনে সূরা ওয়াকিয়া-এর ৭৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আমি শপথ করছি নক্ষত্ররাজি পতিত হওয়ার স্থানের”। খেয়াল করুন আল্লাহ এখানে এমন একটি স্থানের শপথ গ্রহণ করছেন যেখানে নক্ষত্র পতিত হয়। অর্থাৎ, প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে কোরআন আমাদের জানান দিচ্ছে যে, মহাবিশ্বে এমনও স্থান রয়েছে যেখানে কিনা নক্ষত্ররাজি পতিত হয়। তার পরের আয়াতে আবার আল্লাহ বলেন, “আর অবশ্যই এটা এক মহাশপথ, যদি তোমরা জানতে”। অর্থাৎ, আল্লাহ এখানে আমাদেরকে বলতে চাচ্ছেন, যদি তোমরা জানতে তাহলে বুঝতে আমার এই শপথটা যে কতখানি বিশাল। আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা সত্যিকার অর্থেই জানতে পারছি যে, আল্লাহ তা‘আলার এই শপথ আসলেই খুব বিশাল একটি বিষয়, যা কিনা ভয়ানক ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দিচ্ছে।

এখন ভাববার বিষয় হলো, কোরআনে এতো এতো বছর পূর্বে শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে এমন এক স্থানের কথা কিভাবে উল্লেখ করা হতে পারে, যা কিনা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ বহন করে। তখনকার সময়ে তো মানুষ এটার কল্পনাও করতে পারেনি যে, ব্ল্যাক হোলের মত এতো ভয়ানক কিছু মহাবিশ্বে আধও থাকতে পারে। বিজ্ঞান ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানতে পেরেছে মাত্র কিছু বছর আগে, আর কোরআন তা জানান দিচ্ছে হাজার বছর আগে। অতএব এই কোরআন যদি কোনো মানুষ দ্বারা রচিত গ্রন্থ হতো তাহলে তো কোনোভাবেই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত কোনো তথ্য কোরআনের ভিতর থাকা সম্ভব ছিল না। সুতরাং, এই কোরআন একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে বলেই তা সম্ভব।

কোরআন কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয় যে এতে বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এটা হলো একটি ধর্মীয় গ্রন্থ। তাই ধর্মীয় আলোচনাই এর মূল লক্ষ্য। তবে ধর্মীয় আলোচনার ফাঁকেফুঁকে খুব কৌশলের সাথে আল্লাহ এমন কিছু কথা বলে রেখেছেন যেগুলো সত্যিই আজকের আধুনিক বিজ্ঞানকেও অনেক বেশি ভাবায়।

10 thoughts on "[কোরআন ও বিজ্ঞান] মহাকাশের দানব গ্রহ-নক্ষত্র গ্রাসকারী ‘ব্ল্যাক হোল’ সম্পর্কিত তথ্য!!"

  1. Dotbot Contributor says:
    Alhamdulillah
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      Zajakallah
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      thanks
  2. DeAuthor Contributor says:
    মা-শা-ল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      জাযাকাল্লাহ
  3. প্রথম কথা হইতেছে আমি আপনার পোষ্ট পড়িনি। জানেন কেন? কারন আপনি টাইটেল দিয়েছেন (কোরআন ও বিজ্ঞান) শুনেন ভাই ধর্ম ধর্মের জায়গায় বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়। বিজ্ঞানের সব তথ্য আজ আছে কাল নেই। আজকে সঠিক অথবা কালকেই প্রমাণিত হচ্ছে ভুল। কেন আপনি বিজ্ঞানের সঙ্গে তুলনা করবেন?
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      প্রথমেই জানিয়ে রাখি ভাই, বিজ্ঞানের তথ্যগুলো আসলে দুইভাগে বিভক্ত। তারমধ্যে কিছু তথ্য ধারণা ভিত্তিক, যাকে ‘হাইপোথিসিস’ বলা হয়। আর কিছু তথ্য প্রমাণ ভিত্তিক, যাকে ‘থিওরি’ বলা হয়। এগুলোতে প্রথম প্রকারের তথ্যগুলোই অনেক সময় ভুল বলে প্রমাণিত হয়। আর আমি এখানে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি, সেটি হলো দ্বিতীয় প্রকারের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের প্রমাণ ভিত্তিক তথ্য। আমি আমার আলোচনায় বুঝাতে চেয়েছি, বিজ্ঞান যে তথ্যটির প্রমাণ মাত্র কিছু বছর আগে পেয়েছে, আমাদের কোরআনে সেটা আরো হাজার বছর আগে থেকেই রয়েছে। এখানে আমি কোরআনকে বিজ্ঞানের উপর অগ্রগণ্য করেছি। তুলনা করিনি। তাই আমি মনে করি ভালো হোক বা খারাপ হোক কোনো পোষ্টে মন্তব্য করার আগে অন্তত সেই পোষ্টটি একবার হলেও পড়ে নেয়া উচিৎ।
  4. TanvarCrow Contributor says:
    ধন্যবাদ, আপনি ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে খুবই চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন! মহাজাগতিক এই অদ্ভুত বস্তুটি সত্যিই খুবই রহস্যময় এবং ভয়ংকর। ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বল এবং তার শক্তি সত্যিই বিস্ময়কর। আপনি যদি মহাবিশ্বের আরো অদ্ভুত এবং রহস্যময় বিষয় সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনি এই সাইটটি https://aviatorgamez.in/ দেখতে পারেন। এখানে আপনি মহাকাশ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।
  5. AnitaLos Contributor says:
    Interested in cryptocurrency investments? Explore https://paybis.com/blog/glossary/finality/ for all the tools and insights you need to start investing in Bitcoin, Ethereum, and other digital assets. They offer comprehensive guides, market analysis, and real-time updates to help you make informed decisions. Whether you’re a beginner or an experienced investor, you’ll find valuable resources to navigate the world of crypto. The platform ensures top-notch security and provides 24/7 customer support. Join now and take the first step towards successful crypto investments!

Leave a Reply