পাবলিক পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র
ফাঁস হলেও চক্রটির উৎস বের করতে পারছে
না সরকার। এতে বন্ধ হচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁস।
অভিযোগ উঠেছে, চলমান উচ্চমাধ্যমিক
সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায়
ভিন্নমাত্রায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে পরীক্ষার দিন সকালে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের
কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, পরীক্ষা শুরু
হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে প্রশ্নপত্রের
প্যাকেট খুলে কিছু অসাধু শিক্ষক
মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। তারপর
পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ছবিগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভাইভার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি
অ্যাপসের মাধ্যমে। সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের নির্ধারিত
কিছু আইডির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র মুহূর্তে
ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু কোত্থেকে ফাঁস
হচ্ছে, তা বের করতে পারছেন না তাঁরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২ মে বাংলাদেশ
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন
(বিটিআরসি) এবং তথ্য যোগাযোগ ও
প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি
দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে
ফেসবুকের একটি বিশেষ আইডি বন্ধসহ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে এ ব্যাপারে
প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ
করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা
বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও
সহায়তা চাওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ
হচ্ছে না। জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব সোহরাব
হোসেইন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো
কোনো জায়গায় পরীক্ষার আগে আগে এমন
ঘটনা ঘটছে বলে তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে বলা
হয়েছে। ধরতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের
কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর
ধরেই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ঘটনারও উৎস
বের করা সম্ভব হয়নি। শুরুর দিকে বিষয়টিকে গুরুত্বও দেওয়া হতো না। কিন্তু ২০১৪ সালের
এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের
ঘটনায় সারা দেশে আলোচনার ঝড় উঠলে
তদন্ত শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে
প্রমাণ হয়, ঢাকা বোর্ডের অধীন এইচএসসি
পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়। ফাঁস
হওয়া প্রশ্নপত্রের নমুনা ফরিদপুর থেকে
পাওয়া গেলেও ফাঁসের সুনির্দিষ্ট উৎস বের
করতে পারেনি প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি।
তখন কমিটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে
তদন্ত করে উৎস বের করার সুপারিশ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৩
সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী
পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগও
সরকারি তদন্তে প্রমাণিত হয়। কিন্তু তখনো
উৎস বের করা যায়নি। একই বছরের এসএসসি
পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁসের অভিযোগ
ওঠে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী,
আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন
ধরনের অন্তত ৮০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র
ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উৎসও কখনো বের হয়নি, তদন্ত কমিটির সুপারিশও কখনো
পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন,
এখন তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে। এর
সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষ হয়ে উঠতে
পারেনি। তা ছাড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এই বাজে সংস্কৃতি গ্রাস করছে। আর
শিক্ষার্থী বা অভিভাবকেরাই বা কেন
প্রশ্নের পেছনে ছুটবেন? তার মানে নৈতিক
শিক্ষারও অভাব রয়েছে। আগে পরীক্ষার এক বা দুদিন আগে প্রশ্নপত্র
ফাঁস হলেও এবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর
আগে আগে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। বিজ্ঞানের
পরীক্ষাগুলোতে এই ঘটনা বেশি ঘটছে। গত
১৯ এপ্রিল জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) প্রথম
পত্রের পরীক্ষার দিন থেকে মাত্রাটা বাড়তে থাকে। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা
বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে
বলেন, জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) প্রথম পত্রের
পরীক্ষার দিন তাঁরা জানতে পারেন,
পরীক্ষার ঘণ্টা খানেক আগে কেউ একজন ফেসবুকে জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রের
এমসিকিউ অংশের প্রশ্নপত্র তুলে
দিয়েছেন। পরে মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ওই
প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। এরপর
জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র, পদার্থবিজ্ঞান
প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার দিনেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ৩ এপ্রিল শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের
পরীক্ষা। শেষ হবে আগামী ৯ জুন। এ বছর
আটটি সাধারণ ও মাদ্রাসা, কারিগরিসহ
মোট ১০টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর
সংখ্যা ১২ লাখের বেশি।

→নতুন নতুন টিপস পেতে আমার সাইটে ঘুরে আসবেন AmarRound.Com←

←_←←_←←_←←_←←_←←_←

ফেছবুকে আমি

Leave a Reply