>> সকল বিদ‘আত কর্মই মূলত জায়েজ (পর্ব ১)

——————————————————————
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট
——————————————————————
যে কর্ম বা বিশ্বাস রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবীগণ দীন বা ইবাদত হিসেবে পালন করেননি তাকে দীন, ইবাদত বা সাওয়াবের কর্ম বলে মনে করা বিদ‘আত। এখানে সংক্ষেপে বিদআতের কিছু বৈশিষ্ট্য তথ্যসূত্র বাদে উল্লেখ করছি।

(ক) বিদআত একান্তই ধার্মিকদের পাপ। ধার্মিক ছাড়া কেউ বিদআতে লিপ্ত হয় না। বিদআতই একমাত্র পাপ যা মানুষ পুণ্য মনে করে পালন করে।

(খ) কোনো কর্ম বিদআত বলে গণ্য হওয়ার শর্ত তাকে ইবাদত মনে করা। যেমন একজন মানুষ দাঁড়িয়ে, লাফিয়ে বা নর্তনকুর্দন করে যিকর বা দরুদ-সালাম পড়ছেন। এরূপ দাঁড়ানো, লাফানো বা নর্তন-কুর্দন শরীয়তে মূলত নিষিদ্ধ নয়। কেউ যদি জাগতিক কারণে এরূপ করেন তা পাপ নয়। দাঁড়ানো বা নর্তন কুর্দনের সময় যিকর বা দরুদ-সালাম পাঠ পাপ নয়। দরুদ-সালাম বা যিকরের সময় কোনো কারণে বা অনিয়ন্ত্রিত আবেগে দাঁড়ানো বা লাফানো পাপ নয়। কিন্তু যখন কেউ ‘দাঁড়ানো’, ‘লাফানো’ বা ‘নর্তন-কুর্দন’-কে দীন, ইবাদত বা ইবাদতের অংশ হিসেবে বিশ্বাস করেন তখন তা বিদআতে পরিণত হয়।
ইবাদত মনে করার অর্থ: (১) যিকর বা দরুদ-সালাম দাঁড়ানো বা লাফানো ব্যতিরেকে পালন করার চেয়ে দাঁড়ানো বা লাফানো-সহ পালন করা উত্তম, অধিক আদব, অধিক সাওয়াব বা অধিক বরকত বলে মনে করা বা (২) দাঁড়ানো বা লাফানো ছাড়া যিকর বা দরুদ-সালাম পালন করতে অস্বস্তি অনুভব করার কারণে এপদ্ধতিতে এ সকল ইবাদত পালনকে রীতিতে পরিণত কর।

(গ) সাধারণভাবে বিদআতকে পাপ বলে বুঝা যায় না; কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মটি ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। তাকে ইবাদত বানানো বা ইবাদত বলে বিশ্বাস করাই পাপ। অনেক সময় শরীয়ত নিষিদ্ধ কর্মও বিদআতে পরিণত হয়। যেমন মদপান, ব্যভিচার, গানবাদ্য, আল্লাহ ছাড়া কাউকে সাজদা করা, কবর পাকা করা, কবরে বাতি দেওয়া ইত্যাদি। কেউ যদি সাধারণভাবে মদপান, ব্যভিচার, গানবাদ্য ইত্যাদি করে তবে তা হারাম। আর যদি কেউ এ সকল কর্মকে ইবাদত বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের কর্ম হিসেবে পালন করে তা হারাম ও বিদআত। বাস্তবেও অনেক ফকীর, মারফতী বা সূফী নামধারী ব্যক্তি ধর্ম বা ইবাদতের নামে এ সকল মহাপাপে লিপ্ত হন।

(ঘ) বিদআতের পাপ কয়েকটি পর্যায়ের: (১) তা প্রত্যাখ্যাত। অর্থাৎ এ কর্ম আল্লাহ কবুল করছেন না এবং এজন্য কোনো সাওয়াব হচ্ছে না। (২) তা বিভ্রান্তি। কারণ তিনি জেনে বা না-জেনে রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবীগণের ইবাদতকে অপূর্ণ বলে মনে করছেন। (৩) বিদআত অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক। (৪) গানবাদ্য, মদপান, কবর সাজদা ইত্যাদি মহাপাপকে ইবাদতের সাথে সংযুক্ত করলে তাতে এ সকল মহাপাপের শাস্তি এবং বিদআতের শাস্তির পাশাপাশি ঈমান বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

(ঙ) বিদআতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক তা সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা সৃষ্টি করে। বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তি নিজেকে সুন্নী বা আহলূস সুন্নাত মনে করেন। যে সুন্নাতগুলো তার বিদআতের প্রতিপক্ষ নয় সেগুলি তিনি পালন বা মহব্বত করেন। তবে তাঁর পালিত বিদআত সংশ্লিষ্ট সুন্নাতকে তিনি গ্রহণ করতে পারেন না।

>> Click to see 2nd Part

বিস্তারিত আলোচনা, তথ্য, তথ্যসূত্রের জন্য আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত, ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত ‘এহইয়াউস সুনান’ গ্রন্থটি দেখুন।

Leave a Reply