আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন
আল্লাহর নেক বান্দা ও বান্দিগন
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)
.
হযরত নূহ (আঃ)-এর ঘটনা
.
আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনের ২৯টি
সূরায় নূহ (আঃ)-এর ঘটনা তুলে ধরেছেন।
কোন কোন সূরায় একাধিকবারও বর্ণিত
হয়েছে। একটি সূরা তো পূর্ণাঙ্গভাবে
তাঁর ও তাঁর জাতি প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ
হয়েছে। সূরাটির নাম ‘নূহ’।

স্বীয় জাতির সঙ্গে নূহ (আঃ)-এর যে
ঘটনা ঘটেছিল তা এক বিরাট কাহিনী,
যা বহুবিধ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায়
পরিপূর্ণ। সেকারণ উক্ত কাহিনী বিশেষ
গুরুত্ব লাভে সক্ষম হয়েছে। এটি নানা
বৈশিষ্ট্যমন্ডিতও বটে। কারণ:

(১) নূহ (আঃ) ছিলেন মানব জাতির জন্য
প্রথম রাসূল। আর যিনি প্রথম হন তার কিছু
বৈশিষ্ট্যও থাকে।

(২) নিজ জাতির মধ্যে সুদীর্ঘকাল তাঁর
অবস্থান ছিল। তিনি এক নাগাড়ে ৯৫০
বছর স্বীয় জাতির মধ্যে দ্বীন প্রচার
করেছেন।

(৩) তিনি ‘উলুল আযম’ বা দৃঢ়মনা রাসূল
ছিলেন।

(৪) কুরআনে বেশী মাত্রায় তাঁর প্রসঙ্গ
আলোচিত হয়েছে। ২৯টি সূরার ৪৩ স্থানে
তাঁর কথা এসেছে। বলা চলে কুরআনের
এক চতুর্থাংশ সূরায় প্রসঙ্গটি স্থান
পেয়েছে। এক্ষণে আমরা এমন কিছু
আয়াত তুলে ধরব, যাতে নূহ (আঃ) ও তাঁর
জাতির মধ্যেকার ঘটনা বিধৃত আছে।

ﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻧُﻮْﺣﺎً ﺇِﻟَﻰ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭْﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢ
ﻣِّﻦْ ﺇِﻟَـﻪٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ ﺇِﻧِّﻲْ ﺃَﺧَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻋَﻈِﻴْﻢٍ-

‘নিশ্চয়ই আমি নূহকে তাঁর জাতির নিকট
প্রেরণ করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন,
হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর
ইবাদত কর, যিনি ছাড়া তোমাদের আর
কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্য
এক কঠিন দিবসের শাস্তির ভয় করি’
(আ‘রাফ ৭/৫৯) ।

এই হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর দাওয়াতের
সারকথা। তিনি তাদেরকে আল্লাহর
ইবাদত ও তাওহীদের দিকে আহবান
জানিয়েছিলেন এবং তাঁর বিরোধিতার
কঠিন পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক
করেছিলেন। পরবর্তী স্তরে এসে যখন
তাঁর জাতি তাঁর আহবানে সাড়া দিল না,
উপরন্তু অহংকার প্রকাশ করল তখন তিনি
যে দাওয়াত নিয়ে তাদের মুখোমুখি
হয়েছিলেন তা সূরা ইউনুসে বর্ণিত
হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

ﻭَﺍﺗْﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻧَﺒَﺄَ ﻧُﻮْﺡٍ ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻘَﻮْﻣِﻪِ ﻳَﺎ ﻗَﻮْﻡِ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻛَﺒُﺮَ
ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﻣَّﻘَﺎﻣِﻲْ ﻭَﺗَﺬْﻛِﻴْﺮِﻱْ ﺑِﺂﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻌَﻠَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺗَﻮَﻛَّﻠْﺖُ
ﻓَﺄَﺟْﻤِﻌُﻮﺍْ ﺃَﻣْﺮَﻛُﻢْ ﻭَﺷُﺮَﻛَﺎﺀَﻛُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻜُﻦْ ﺃَﻣْﺮُﻛُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻏُﻤَّﺔً ﺛُﻢَّ
ﺍﻗْﻀُﻮﺍْ ﺇِﻟَﻲَّ ﻭَﻻَ ﺗُﻨْﻈِﺮُﻭْﻥِ-

‘আপনি তাদেরকে নূহের ঘটনা পড়ে শুনান।
যখন তিনি তাঁর জাতিকে বললেন, হে
আমার জাতি! যদি তোমাদের নিকট
আমার অবস্থান ও আল্লাহর আয়াতের
মাধ্যমে আমার উপদেশ দান বড় কষ্টকর
মনে হয় তাহ’লে আমি আল্লাহর উপর
ভরসা করছি। সুতরাং তোমরা তোমাদের
কাজ ও উপাস্যদেরকে গুছিয়ে নাও।
তারপর তোমাদের কাজ যেন তোমাদের
বিরুদ্ধেই দুঃখের আকর না হয় (সেদিকে
লক্ষ্য রেখ)। অতঃপর তোমরা আমার
বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নাও এবং আমাকে
কোন ছাড় দিও না’ (ইউনুস ১০/৭১) ।

সূরা ‘হূদ’-এ নূহ (আঃ)-এর ঘটনা আরও
বিস্তারিত আকারে এসেছে। তিনি যে
তাদের সাথে বিতর্ক করেছেন,
বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়েছেন, তাদের
নিকট সৎপথের বিবরণ তুলে ধরেছেন সে
সব কথা ঐ সূরায় তুলে ধরা হয়েছে। শেষ
পর্যন্ত তাঁর কওমের লোকেরা বলে বসল,

ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﻗَﺪْ ﺟَﺎﺩَﻟْﺘَﻨَﺎ ﻓَﺄَﻛْﺜَﺮْﺕَ ﺟِﺪَﺍﻟَﻨَﺎ ﻓَﺄْﺗِﻨﺎَ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌِﺪُﻧَﺎ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ
ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﺩِﻗِﻴْﻦَ-

‘হে নূহ! তুমি আমাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা
করছ এবং বিতন্ডায় অনেক বাড়াবাড়ি
করছ। অতএব তুমি আমাদের যে (শাস্তির)
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ, তাই আমাদের জন্য
নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদীদের
একজন হও’ (হূদ ১১/৩২) ।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের
সম্বন্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা
বলেছেন,

ﻭَﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻰ ﻧُﻮْﺡٍ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻦْ ﻳُﺆْﻣِﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﻮْﻣِﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣَﻦْ ﻗَﺪْ ﺁﻣَﻦَ ﻓَﻼَ
ﺗَﺒْﺘَﺌِﺲْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮْﻥَ، ﻭَﺍﺻْﻨَﻊِ ﺍﻟْﻔُﻠْﻚَ ﺑِﺄَﻋْﻴُﻨِﻨَﺎ ﻭَﻭَﺣْﻴِﻨَﺎ ﻭَﻻَ
ﺗُﺨَﺎﻃِﺒْﻨِﻲْ ﻓِﻲ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻬُﻢ ﻣُّﻐْﺮَﻗُﻮْﻥَ –

‘আর নূহের নিকট অহি প্রেরণ করা হ’ল যে,
আপনার জাতির মধ্যে যারা ঈমান
এনেছে তারা ব্যতীত আর কেউ কখনও
ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করছে
সেজন্য আপনি দুঃখবোধ করবেন না।
আপনি আমাদের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধান
মত একটি জাহাজ তৈরী করুন। আর
যালিমদের সম্বন্ধে আমাকে সম্বোধন
করবেন না। ওরা ডুবে মরবে’ (হূদ ১১/৩৬,
৩৭) ।

নূহ (আঃ)-এর ঘটনার সাথে জড়িত কিছু
সংলাপ এখানে উপস্থাপন করা হ’ল-

(১) নূহ (আঃ) তাঁর জাতির মধ্যে কতদিন
অবস্থান করেছিলেন?

জবাব : আল্লাহ বলেন,

ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻧُﻮْﺣﺎً ﺇِﻟَﻰ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﻓَﻠَﺒِﺚَ ﻓِﻴْﻬِﻢْ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ ﺇِﻻَّ
ﺧَﻤْﺴِﻴْﻦَ ﻋَﺎﻣﺎً-

‘আমি নূহকে তাঁর জাতির মাঝে প্রেরণ
করেছিলাম। তিনি তাদের মাঝে ৫০ কম
১০০০ বছর অবস্থান করেছিলেন’
(আন‘কাবূত ২৯/১৪) ।

(২) নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের
রিসালাত বা বার্তা প্রচারে যে
পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তা কী
ছিল?

জবাব: তিনি তাদের সৎ পথে আনয়ন ও
আল্লাহর দাসে পরিণত করতে সকল
প্রকার বৈধ পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন।

আল্লাহ বলেন,

ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲْ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻗَﻮْﻣِﻲْ ﻟَﻴْﻼً ﻭَﻧَﻬَﺎﺭﺍً، ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺰِﺩْﻫُﻢْ ﺩُﻋَﺎﺋِﻲْ
ﺇِﻻَّ ﻓِﺮَﺍﺭﺍً، ﻭَﺇِﻧِّﻲْ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺩَﻋَﻮْﺗُﻬُﻢْ ﻟِﺘَﻐْﻔِﺮَ ﻟَﻬُﻢْ ﺟَﻌَﻠُﻮْﺍ ﺃَﺻَﺎﺑِﻌَﻬُﻢْ ﻓِﻲْ
ﺁﺫَﺍﻧِﻬِﻢْ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﺸَﻮْﺍ ﺛِﻴَﺎﺑَﻬُﻢْ ﻭَﺃَﺻَﺮُّﻭْﺍ ﻭَﺍﺳْﺘَﻜْﺒَﺮُﻭْﺍ ﺍﺳْﺘِﻜْﺒَﺎﺭﺍً، ﺛُﻢَّ
ﺇِﻧِّﻲْ ﺩَﻋَﻮْﺗُﻬُﻢْ ﺟِﻬَﺎﺭﺍً، ﺛُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲْ ﺃَﻋْﻠَﻨﺖُ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺃَﺳْﺮَﺭْﺕُ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺭﺍً-

‘তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক!
আমি আমার জাতিকে রাত-দিন দাওয়াত
দিয়েছি। কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের
পলায়নী মনোবৃত্তিই কেবল বৃদ্ধি
করেছে। আপনি যাতে তাদের ক্ষমা
করে দেন সে লক্ষ্যে যখনই আমি তাদের
দাওয়াত দিয়েছি তখনই তারা তাদের
কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে,
বস্ত্র দ্বারা নিজেদেরকে আচ্ছাদিত
করেছে, হঠকারিতা দেখিয়েছে এবং
চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। তারপরও
আমি তাদেরকে উচ্চঃস্বরে দাওয়াত
দিয়েছি। তাদের সামনে প্রকাশ্যে
বলেছি এবং সঙ্গোপনেও খুব বলেছি’ (নূহ
৭১/৫-৯) ।

(৩) তাঁর কওমের প্রতিক্রিয়া কী
হয়েছিল?

জবাব : আল্লাহ বলেন, ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﻧُﺆْﻣِﻦُ ﻟَﻚَ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌَﻚَ
ﺍﻟْﺄَﺭْﺫَﻟُﻮْﻥَ ‘তারা বলল, যেখানে হীন-তুচ্ছ
লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে
সেখানে আমরা কি করে তোমার উপর
ঈমান আনতে পারি? (শু‘আরা ২৬/১১১) ।

নূহ (আঃ) এভাবে দাওয়াতী কার্যক্রম
চালিয়ে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে
তাঁর জাতির লোকেরা মারমুখী হয়ে
উঠল এবং বলতে লাগল-

ﻟَﺌِﻦ ﻟَّﻢْ ﺗَﻨﺘَﻪِ ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﻟَﺘَﻜُﻮْﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺟُﻮْﻣِﻴْﻦَ ‘হে নূহ!
যদি তুমি প্রচারে বিরত না হও, তাহ’লে
তুমি পাথরের আঘাতে ধরাশায়ীদের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (শু‘আরা ২৬/১১৬) ।

(৪) নূহ (আঃ)-এর প্রতি কতজন ঈমান
এনেছিল?

জবাব : স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তাঁর
প্রতি কেউ ঈমান আনেনি। এমনকি তাঁর
এক স্ত্রী ও এক পুত্রও তাঁর উপর ঈমান
আনেনি। আল্লাহ বলেন,

ﻗُﻠْﻨَﺎ ﺍﺣْﻤِﻞْ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﻛُﻞٍّ ﺯَﻭْﺟَﻴْﻦِ ﺍﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻭَﺃَﻫْﻠَﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣَﻦْ ﺳَﺒَﻖَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻘَﻮْﻝُ ﻭَﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﻭَﻣَﺎ ﺁﻣَﻦَ ﻣَﻌَﻪُ ﺇِﻻَّ ﻗَﻠِﻴْﻞٌ-

‘আমি বললাম, আপনি উহাতে (জাহাজে)
প্রত্যেক যুগল হ’তে দু’টি করে তুলে নিন।
(তুলে নিন) যাদের প্রতি আগে ভাগেই
শাস্তির কথা নিশ্চিত হয়ে গেছে
তাদের বাদে আপনার পরিবারের
সদস্যদেরকে এবং (তুলে নিন) তাদের,
যারা ঈমান এনেছে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে
মাত্র স্বল্প সংখ্যক লোক ঈমান
এনেছিল’ (হূদ ১১/৪০) ।

যখন প্লাবন শুরু হয়ে গেল, আর নূহ (আঃ)-এর
সেই কাফের পুত্র ডুবে যাওয়ার উপক্রম
হ’ল, তখন তিনি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ
করেন-

ﻭَﻧَﺎﺩَﻯ ﻧُﻮْﺡٌ ﺭَّﺑَّﻪُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﺍﺑْﻨِﻲْ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻲْ ﻭَﺇِﻥَّ ﻭَﻋْﺪَﻙَ
ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﺃَﺣْﻜَﻢُ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻤِﻴْﻦَ، ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻚَ
ﺇِﻧَّﻪُ ﻋَﻤَﻞٌ ﻏَﻴْﺮُ ﺻَﺎﻟِﺢٍ-

‘নূহ তাঁর প্রতিপালককে ডেকে বললেন,
হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র তো
আমার পরিবারভুক্ত। আর আপনার
প্রতিশ্রুতিও নিশ্চয়ই সত্য। আপনি
শ্রেষ্ঠতম বিচারকও। তিনি বললেন, ‘হে
নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়, সে অসৎ
কর্মপরায়ণ’ (হূদ ১১/৪৫, ৪৬) ।

ﺿَﺮَﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﺜَﻼً ﻟِّﻠَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭْﺍ ﺍِﻣْﺮَﺃَﺓَ ﻧُﻮْﺡٍ ﻭَﺍِﻣْﺮَﺃَﺓَ ﻟُﻮْﻁٍ ﻛَﺎﻧَﺘَﺎ
ﺗَﺤْﺖَ ﻋَﺒْﺪَﻳْﻦِ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻧَﺎ ﺻَﺎﻟِﺤَﻴْﻦِ ﻓَﺨَﺎﻧَﺘَﺎﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻐْﻨِﻴَﺎ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ
ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺷَﻴْﺌﺎً ﻭَﻗِﻴْﻞَ ﺍﺩْﺧُﻠَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺪَّﺍﺧِﻠِﻴْﻦ-

‘আল্লাহ কাফেরদের জন্য দৃষ্টান্ত
হিসাবে তুলে ধরছেন নূহের স্ত্রী ও
লূতের স্ত্রীকে। তারা দু’জন ছিল আমার
দু’জন অন্যতম সৎবান্দার বিবাহধীন।
কিন্তু তারা তাঁদের সঙ্গে
বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে আল্লাহর
কোপ হ’তে তাঁরা তাদের কিছুমাত্র
রক্ষা করতে পারেননি। বরং বলা হ’ল,
‘তোমরা দু’জন অপরাপর প্রবেশকারীদের
সাথে আগুনে প্রবেশ কর’ (তাহরীম
৬৬/১০) ।

(৫) শেষ পর্যন্ত নূহ (আঃ) কী
বলেছিলেন?

জবাব : আল্লাহ বলেন,

َﻝﺎﻗَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮْﻣِﻲْ ﻛَﺬَّﺑُﻮْﻥِ، ﻓَﺎﻓْﺘَﺢْ ﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻓَﺘْﺤﺎً ﻭَﻧَﺠِّﻨِﻲْ
ﻭَﻣَﻦْ ﻣَّﻌِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ-

‘তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! আমার
জাতি আমাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে।
সুতরাং আপনি আমার ও তাদের মাঝে
চূড়ান্ত ফায়ছালা করে দিন। আর
আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনদেরকে
মুক্তি দিন’ (শু‘আরা ২৬/১১৭-১১৮) ।

ﻓَﺪَﻋَﺎ ﺭَﺑَّﻪُ ﺃَﻧِّﻲ ﻣَﻐْﻠُﻮْﺏٌ ﻓَﺎﻧْﺘَﺼِﺮْ ‘অনন্তর তিনি তাঁর
প্রতিপালককে আহবান করলেন যে, আমি
পরাস্ত; সুতরাং আপনি সাহায্য করুন’
(ক্বামার ৫৪/১০) ।

ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻧُﻮْﺡٌ ﺭَّﺏِّ ﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳْﻦَ ﺩَﻳَّﺎﺭﺍً، ﺇِﻧَّﻚَ
ﺇِﻥْ ﺗَﺬَﺭْﻫُﻢْ ﻳُﻀِﻠُّﻮْﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَﻙَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻠِﺪُﻭْﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻓَﺎﺟِﺮًﺍ ﻛَﻔَّﺎﺭًﺍ-

‘নূহ বললেন, হে আমার প্রভু, ধরিত্রীর
বুকে আপনি কোন কাফের গৃহবাসীকে
রেহাই দিবেন না। আপনি যদি ওদের
রেহাই দেন তাহ’লে ওরা আপনার
বান্দাদেরকে পথহারা করবে, আর
নিজেরা পাপাচারী কাফের ব্যতীত আর
কিছু জন্ম দিবে না’ (নূহ ৭১/২৬, ২৭) ।

(৬) এই কঠিন দুস্তর পারাবার পাড়ি
দেওয়ার পর নূহ (আঃ)-এর জন্য বিজয়
নিশ্চিত হয়েছিল :

আল্লাহ বলেন,

ﻭَﺩَﻋَﺎ ﺭَﺑَّﻪُ ﺃَﻧِّﻲْ ﻣَﻐْﻠُﻮْﺏٌ ﻓَﺎﻧْﺘَﺼِﺮْ، ﻓَﻔَﺘَﺤْﻨَﺎ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺑِﻤَﺎﺀ
ﻣُّﻨْﻬَﻤِﺮٍ، ﻭَﻓَﺠَّﺮْﻧَﺎ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻋُﻴُﻮﻧﺎً ﻓَﺎﻟْﺘَﻘَﻰ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻣْﺮٍ ﻗَﺪْ ﻗُﺪِﺭَ،
ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﺍﺕِ ﺃَﻟْﻮَﺍﺡٍ ﻭَﺩُﺳُﺮٍ، ﺗَﺠْﺮِﻱ ﺑِﺄَﻋْﻴُﻨِﻨَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀ ﻟِّﻤَﻦ
ﻛَﺎﻥَ ﻛُﻔِﺮَ، ﻭَﻟَﻘَﺪ ﺗَّﺮَﻛْﻨَﺎﻫَﺎ ﺁﻳَﺔً ﻓَﻬَﻞْ ﻣِﻦ ﻣُّﺪَّﻛِﺮٍ-

‘তিনি তাঁর রবকে ডেকে বললেন, আমি
পরাস্ত, সুতরাং আমাকে সাহায্য করুন।
ফলে আমি মুষলধারে বারিপাত দ্বারা
আকাশের দ্বার খুলে দিলাম এবং
ভূমন্ডলে অনেক ঝর্ণা প্রবাহিত করলাম।
ফলে একটি নির্ধারিত পর্যায়ে পানির
প্রবাহ সম্মিলিত হ’ল। আমি তখন তাকে
কাষ্ঠফলক ও পেরেক নির্মিত জলযানে
আরোহণ করালাম, যা আমার গোচরে
চলছিল। ইহা ছিল তার জন্য প্রতিদান,
যাকে অমান্য করা হয়েছিল। আর আমি
উহাকে নিদর্শন স্বরূপ রেখে দিয়েছি।
সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে
কি’? (ক্বামার ৫৪/১০-১৫) ।

এই হ’ল নূহ (আঃ)-এর ঘটনা। তিনি প্রায় দশ
দশটি শতাব্দী তাঁর কওমের মধ্যে
কাটিয়েছেন। এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে
যাওয়ার পরও কি ফল দাঁড়িয়েছে? আমরা
দেখছি-

(ক) স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তাঁর কওম
তাঁর উপর ঈমান আনেনি। কথিত আছে,
তাদের সংখ্যা নূহ (আঃ) সহ তেরজন। ইবনু
ইসহাক্ব বলেছেন, তারা হ’লেন নূহ, তাঁর
তিন পুত্র সাম, হাম, ইয়াফিছ, তাদের তিন
স্ত্রী এবং অন্য দু’জন লোক।

(খ) তাঁর স্ত্রী ও এক পুত্র তাঁর উপর ঈমান
আনেনি। ইতিপূর্বে সে কথা বলা হয়েছে।
অথচ তারা ছিল তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠজন।

(গ) এতদসত্ত্বেও তাঁকে বিজয়ী ও
সাহায্যপ্রাপ্ত বলে গণ্য করা হয়েছে।
তাঁর জীবনে খুবই বড় মাপের বিজয়
অর্জিত হয়েছিল। নিম্নের কথা ক’টিতে
তা বুঝা যায়।

(১) দশ দশটি শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও
তিনি ধৈর্যশীল ও স্থিতিশীল
থেকেছেন। তাঁর জাতির ষড়যন্ত্রের
ফাঁদে তিনি পা দেননি এবং তাদের
ব্যঙ্গ-বিদ্রূপেও প্রভাবিত হননি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ﻭَﻳَﺼْﻨَﻊُ ﺍﻟْﻔُﻠْﻚَ ﻭَﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻣَﺮَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﻠَﺄٌ ﻣِّﻦ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﺳَﺨِﺮُﻭﺍْ ﻣِﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ
ﺇِﻥ ﺗَﺴْﺨَﺮُﻭﺍْ ﻣِﻨَّﺎ ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﻧَﺴْﺨَﺮُ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺴْﺨَﺮُﻭْﻥَ-

‘তিনি জাহায তৈরী করছিলেন আর যখনই
তাঁর জাতির নেতৃবর্গ তাঁর পাশ দিয়ে
যাচ্ছিল তখনই তারা তাকে বিদ্রূপ
করছিল। তিনি বলছিলেন, ‘যদি তোমরা
আমাদের নিয়ে বিদ্রূপ কর তবে আমরাও
তোমাদের নিয়ে বিদ্রূপ করব- যেমন
তোমরা করছ’ (হূদ ১১/৩৮) ।

(২) তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হ’তে
আল্লাহ কর্তৃক তিনি হেফাযতে ছিলেন।
তারা যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র
করেছিল তা তাদের কথাতেই প্রকট হয়ে
ধরা পড়েছে। আল্লাহ বলেন, ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻟَﺌِﻦْ ﻟَّﻢْ ﺗَﻨْﺘَﻪِ
ﻳَﺎ ﻧُﻮْﺡُ ﻟَﺘَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺟُﻮْﻣِﻴْﻦَ ‘তারা বলল, হে নূহ!
যদি তুমি বিরত না হও তাহ’লে তুমি
প্রস্তরাঘাতের সম্মুখীন হবে’ (শু‘আরা
২৬/১১৬) ।

(৩) তাঁর জাতির যারা ঈমান আনেনি
সলিল-সমাধির মাধ্যমে তারা
ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ বলেন,
ﻭَﺃَﻏْﺮَﻗْﻨَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻛَﺬَّﺑُﻮﺍْ ﺑِﺂﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﻮْﻣﺎً ﻋَﻤِﻴﻦَ ‘যারা
আমার বিধানাবলীকে অস্বীকার
করেছিল আমি তাদের পানিতে
নিমজ্জিত করেছিলাম। তারা ছিল
একটি জ্ঞানান্ধ জাতি’ (আ‘রাফ ৭/৬৪) ।

(৪) নূহ (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী মুমিনগণ ডুবে
মরা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। আল্লাহ
বলেন, ﻓَﺄَﻧْﺠَﻴْﻨَﺎﻩُ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻣَﻌَﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔُﻠْﻚِ ‘অনন্তর
আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা জাহাযে
ছিলেন সবাইকে মুক্তি দিয়েছিলাম’
(আ‘রাফ ৭/৬৪) । ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﺍﺕِ ﺃَﻟْﻮَﺍﺡِ ﻭَﺩُﺳُﺮٍ،
ﺗَﺠْﺮِﻱ ﺑِﺄَﻋْﻴُﻨِﻨَﺎ. ‘আমি তাকে তক্তা ও কীলক
নির্মিত জলযানে আরোহণ
করিয়েছিলাম, যা আমার দৃষ্টিপথে
চলছিল’ (ক্বামার ৫৪/১৩, ১৪) ।

(৫) নূহ (আঃ)-এর সফলতা ও তাঁর জাতির
ধ্বংসপ্রাপ্তি পরবর্তীকালে একটি
শিক্ষণীয় আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী
যুগের লোকদের মুখে মুখে আল্লাহ নূহ
(আঃ)-এর খ্যাতি ছড়িয়ে দেন। তিনি
বলেন, ﻭَﻟَﻘَﺪ ﺗَّﺮَﻛْﻨَﺎﻫَﺎ ﺁﻳَﺔً ﻓَﻬَﻞْ ﻣِﻦ ﻣُّﺪَّﻛِﺮٍ ‘এই
ঘটনাকে আমি নিদর্শন হিসাবে বাকী
রেখেছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী
কেউ আছে কি’? (ক্বামার ৫৪/১৫) । ﺫُﺭِّﻳَّﺔَ ﻣَﻦْ
ﺣَﻤَﻠْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﻧُﻮْﺡٍ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪﺍً ﺷَﻜُﻮْﺭﺍً ‘(তোমরা)
তাদের সন্তান যাদেরকে আমি নূহের
সঙ্গে তুলে নিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন
একজন কৃতজ্ঞ বান্দা’ (ইসরা ১৭/৩) । ﺳَﻼَﻡٌ
ﻋَﻠَﻰ ﻧُﻮْﺡٍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ ‘সমগ্র জগৎ ব্যাপী নূহের
প্রতি শান্তি হোক’ (ছাফফাত ৩৭/৭৯) । ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠّﻪَ ﺍﺻْﻄَﻔَﻰ ﺁﺩَﻡَ ﻭَﻧُﻮْﺣﺎً ﻭَﺁﻝَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﺁﻝَ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﻋَﻠَﻰ
ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴْﻦَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীম
পরিবার ও ইমরান পরিবারকে সকল সৃষ্টি
থেকে নির্বাচন করেছেন’ (আলে ইমরান
৩/৩৩) ।

নূহ ও তাঁর কওমের ঘটনা থেকে এভাবেই
আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্য ও বিজয় ফুটে
উঠেছে।

নূহ (আঃ)-এর ঘটনা শেষ করার আগে
আমরা সূরা ‘নূহ’-এ বর্ণিত একটি আয়াত
পর্যালোচনা করতে চাই। সেখানে
এরশাদ হয়েছে,

ﺇِﻧَّﻚَ ﺇِﻥْ ﺗَﺬَﺭْﻫُﻢْ ﻳُﻀِﻠُّﻮْﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَﻙَ ﻭَﻻَ ﻳَﻠِﺪُﻭْﺍ ﺇِﻻَّ ﻓَﺎﺟِﺮﺍً ﻛَﻔَّﺎﺭﺍً –

‘আপনি যদি তাদের (কাফেরদের) রেহাই
দেন তবে নিশ্চয়ই তারা আপনার
বান্দাদেরকে পথহারা করবে এবং
পাপাচারী অকৃতজ্ঞ মানুষ ছাড়া
কাউকে তারা জন্ম দিবে না’ (নূহ ৭১/২৭) ।

যেহেতু ঐ সময়ে নূহ (আঃ)-এর জাতি
ব্যতীত আর কোন মানবগোষ্ঠীর বসতি
ধরাবক্ষে ছিল না এবং তাদের মধ্যে
কতিপয় লোক যারা নূহ (আঃ)-এর উপর
ঈমান এনেছিলেন তারা ব্যতীত গোটা
জাতি আল্লাহকে অস্বীকার করেছিল
আর রাসূলের প্রতি হঠকারিতা
দেখিয়েছিল, সেহেতু আল্লাহ নূহ ও সেই
ক’জন মুমিনকে রেখে সেদিনের পৃথিবীর
গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করে
দিয়েছিলেন। ফলে সত্যের পথে আপতিত
বাধাবিঘ্ন প্রতিরোধকারী স্বল্প
সংখ্যক হকের ঝাঞ্জাবাহকদের
খাতিরে আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের
ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। যদিও তারা
ছিল সংখ্যাগুরু। সে সময়ে রিসালাতের
পতাকা বাহকরা ছাড়া যে আর কেউ
বেঁচে ছিলেন না তার প্রমাণ আল্লাহর
বাণী- ﺫُﺭِّﻳَّﺔَ ﻣَﻦْ ﺣَﻤَﻠْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﻧُﻮْﺡٍ ‘তোমরা তাদের
সন্তান, যাদের আমি নূহের সাথে
কিশতীতে তুলে ছিলাম’ (ইসরা ১৭/৩) ।

ইমাম ত্বাবারী এ আয়াতের তাফসীরে
বলেছেন, ‘আদম সন্তানের যারাই এখন
পৃথিবীর বুকে আছে তারা প্রত্যেকেই
তাদের বংশধর, যাদেরকে আল্লাহপাক
নূহ (আঃ)-এর সাথে জাহাযে তুলেছিলেন।

ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, সকল মানুষ
তাদের বংশধর যাদেরকে আল্লাহ
তা‘আলা নূহ (আঃ)-এর জাহাযে চড়িয়ে
মুক্তি দিয়েছিলেন। মুজাহিদ বলেন,
বেঁচে যাওয়া লোকগুলি ছিলেন নূহ (আঃ),
তাঁর পুত্রদ্বয় ও তাদের স্ত্রীগণ। কেউ
কেউ বলেছেন, তাঁরা সংখ্যায় নারী-পুরুষ
মিলে ছিলেন ১৩ জন।[1] আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,

ﺃُﻭﻟَﺌﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻢَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻣِّﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴِّﻦَ ﻣِﻦْ ﺫُﺭَّﻳَّﺔِ ﺁﺩَﻡَ ﻭَ ﻣِﻤِّﻦْ
ﺣَﻤَﻠْﻨَﺎ ﻣَﻊَ ﻧُﻮْﺡٍ –

‘ওরাই সেই নবীগণ যাদের প্রতি আল্লাহ
অনুগ্রহ করেছেন- যারা ছিলেন আদমের
বংশধর ও নূহের সাথে আমি যাদের
(জাহাযে) চড়িয়েছিলাম তাদের
বংশধরদের অন্তর্গত’ (মারইয়াম ১৯/৫৮) ।

এখানে বিজয় দ্বারা কর্মনীতির
বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। ব্যক্তির
বিজয়কে নয়। আসল মূল্যায়ন ঈমান ও
সত্যের প্রতি সাড়া দানকারীদের
সংখ্যাধিক্যের সাথে জড়িত নয়; বরং ঐ
কর্মনীতির সাথে জড়িত, যা তারা বয়ে
বেড়ায়- চাই তাদের সংখ্যা কম হোক
কিংবা বেশী হোক। এ জন্যই মাত্র
কয়েকজন লোক যাদের সংখ্যা ১৩-এর
বেশী নয় তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন
এবং আল্লাহর দাসত্বের অর্থ বলতে যা
বুঝায় তা নিশ্চিত করেছিলেন। বিধায়
তাদের রক্ষার্থে এবং যে কর্মনীতির
প্রতিনিধিত্ব তারা করছিলেন ও ধারণ
করছিলেন তা রক্ষার্থে তৎকালীন
বিশ্বের তাবৎ মানবকে ধ্বংস করা
হয়েছিল। অবশ্য সেখানে এমন ঝুঁকিও
ছিল যে, ওদের ধ্বংস না করলে
ঈমানদারদের ধ্বংসের ভয় ছিল। আর
তাহ’লে তাদের বাহিত কর্মনীতি বা
আদর্শও ধ্বংস হয়ে যেত। সে আশঙ্কাই
তো ফুটে উঠেছে নূহ (আঃ)-এর এ
প্রার্থনায়,

ﺇِﻧَّﻚَ ﺇِﻥْ ﺗَﺬَﺭْﻫُﻢْ ﻳُﻀِﻠُّﻮْﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَﻙَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻠِﺪُﻭْﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻓَﺎﺟِﺮﺍً ﻛَﻔَّﺎﺭﺍً-

‘যদি আপনি তাদের রেহাই দেন তাহ’লে
ওরা আপনার বান্দাদেরকে পথহারা
করবে এবং পাপাচারী অকৃতজ্ঞ
নাস্তিক ব্যতীত জন্ম দিবে না’ (নূহ
৭১/২৭) ।

এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বদর যুদ্ধে
আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেছিলেন
এইভাবে যে,

ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻥْ ﺗُﻬْﻠِﻚْ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻌِﺼَﺎﺑَﺔَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺈﺳْﻼَﻡِ ﻻَ ﺗُﻌْﺒَﺪْ ﻓِﻰْ
ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ –

‘হে আল্লাহ! যদি আপনি মুসলমানদের এই
ক্ষুদ্র দলটিকে ধ্বংস করে দেন, তাহ’লে
এই ধূলির ধরায় আর আপনার ইবাদত হবে
না’।[2]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের কথায়
সাড়া দিয়েছিলেন। তাঁকে বদর ও
পরবর্তী যুদ্ধগুলিতে সাহায্য করেছিলেন
যেমন করে সাহায্য করেছিলেন নূহ
(আঃ)-কে।

দ্বীন ইসলাম বিজয়ী হওয়ার এটিও একটি
চিহ্ন যে, পৃথিবীতে কোন শক্তিই সকল
মুমিনকে কখনই একবারে ধ্বংস করতে
পারবে না। যেমনটা ভয় ছিল নূহ (আঃ)-এর
যুগে ও আমাদের নবীর রিসালাত লাভের
প্রথম যুগে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই
অভয়বাণী শুনিয়ে গেছেন। যেমন
হাদীছে এসেছে,

ﻻَﺗَﺰَﺍﻝُ ﻃَﺎﺋُِﻔَﺔٌ ﻣِّﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻰْ ﻗَﺎﺋِﻤَﺔٌ ﺑِﺄَﻣْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻻَﻳَﻀُﺮُّﻫُﻢْ ﻣَّﻦْ ﺧَﺬَﻟَﻬُﻢْ
ﺃَﻭْﺧَﺎﻟَﻔَﻬُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄُْﺗِﻰَ ﺃَﻣْﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻚَ –

‘আমার উম্মতের একটি অংশ সর্বদা
আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল থাকবে।
তাদের অপদস্থ করতে প্রয়াসী কিংবা
বিরোধিতাকারী কেউই তাদের কোন
ক্ষতি করতে পারবে না। এমনিভাবে
আল্লাহর আদেশ তথা ক্বিয়ামত এসে
যাবে কিন্তু তারা ঐ অবস্থায়ই থেকে
যাবে’।[3]

[1] . তাফসীরে ত্বাবারী, ১৫/১৯ পৃঃ ও
৮/২১৫ পৃঃ।

[2] . মুসলিম, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়।

[3] . বুখারী হা/৩৬৪১ ‘মানকিব’ অধ্যায়,
অনুচ্ছে- ২৪; মুসলিম হা/১০৩৭; মিশকাত
হা/৬২৭৬।

প্রথম প্রকাশিতঃFuturebd24.Com

সুস্থ সংস্কৃতির, সচ্ছ ব্যবহার।
প্রকাশিত ও প্রচারেঃFuturebd24.Com
Plz Visit Vai…

3 thoughts on "নবী হযরত নূহ (আঃ)-এর ঘটনা।"

  1. AMBITIOUS Contributor says:
    better cm
  2. md sohel Contributor says:
    ভাল
  3. phenomenal Contributor says:
    vi..onek boro tai short time e porte parlam nah…but raate ghumanor agee porbo..thanks a lot for sharing..Keep it up??

Leave a Reply