হযরত মুআয বিন জাবাল রা. বলেন, রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে সকল মাখলুকের দিকে বিশেষ দয়ার দৃষ্টিতে দেখেন। আর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন। (মু’জামে কাবীর লিত তাবারানী: ১৬৩৩৯, ইবনে হিব্বন: ৫৬৬৩)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। আল্লামা হাইসামী বলেন: হাদীসটি তাবারানী তাঁর মু’জামে কাবীর ও আওসাতে বর্ণনা করেছেন এবং এ হানীসের রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য (মাজমাউয যাওয়ায়েদ। ১২৯৬০) শায়খ আলবানী বলেন,এ হাদীসটি সহীহ। একদল সাহাবায়ে কিরাম থেকে এমন অনেক সনদে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। অতঃপর শায়খ আলবানী সে সকল সাহাবায়ে কিরামের নামের তালিকা পেশ করে বলেন, তারা হলেন, হযরত মুআয বিন জাবাল, আবু ছা’লাবা আল্ খুশানী, আব্দুল্লাহ বিন আমর, আবু মুসা আশআরী, আবু হুরায়রা, আবু বকর সিদ্দীক, আওফ বিন মালেক ও আয়েশা। রা.। (সিলসিলাতু আহাদীসিস সহীহা ১১৪৪)
সারসংক্ষেপ : বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাতের ফযীলত প্রমাণিত হয়। তন্মধ্যে হযরত আয়েশা; (তিরমিযী-৭৩৭, মুসনাদে আহমাদ-২৬০১৮) হযরত মুআয ইবনে জাবাল; (ইবনে হিব্বান-
৫৬৬৫), আবু মুসা আশআরী; (ইবনে মাযাহ-১৩৯০, কিতাবুস ছুন্নাহ লিইবনে আবি আসেম-৫১০, শুআবুল ঈমান-৩৮৩৩) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক; (মুসনাদে বায্ যার-২০৪৫, কিতাবুত তাওহীদ লিইবনে খুযায়মা-১৩৬, শুআবুল ঈমান-৩৮২৮ ও ৩৮২৯, কিতাবুস সুন্নাহ লিইবনে আবি আসেম-৫০৯), হযরত আবু ছা’লাবা আল খুশানী; (কিতাবুস ছুন্নাহ লিইবনে আবি আসেম-৫১১,শুআবুল ঈমান-৩৮৩১ ও ৩৮৩২) হযরত আবু হুরায়রা; (মুসনাদে বাযযার-
২০৪৬) এবং হযরত আওফ বিন মালেক রা. অন্যতম। (মুসনাদে বায্ যার-২০৪৮) এ সকল বর্ণনার পরে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, ‘প্রত্যেকটি হাদীসের উপর যদিও আপত্তি আছে কিন্তু সম্মিলিতভাবে হাদীসটি সহীহ ও শক্তিশালী’ । (মুসনাদে আহমাদ-৬৬৪২ নং হাদীসের আলাচোনায়)। উপরোক্ত সাতজন প্রসিদ্ধ সাহাবায়ে কিরাম থেকে বিভিন্ন হাদীসের কিতাবের
বরাতে ফযীলত সম্পর্কীত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীস সহীহ-জঈফ হওয়ার নীতিমালা সম্পর্কে যাদের সামান্যতমও ধারণা আছে তারা কোনক্রমে এ হাদীসকে জাল, জঈফ বা ভিত্তিহীন বলতে পারে না। আর কোন মুহাদ্দিস তা বলেনওনি। সহীহ হাদীসের বাইরে কিছু না মানার দাবীদার শায়খ আলবানীও এ হাদীসটিকে সহীহ বলতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ ইলমে হাদীসে অজ্ঞ কিছু মানুষ; যারা নিজেদেরকে তাকলীদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত এবং সহীহ হাদীসের অনুসারী বলে দাবী করে থাকে তারা ডানে-বামে না তাকিয়েই কারও শিখানো বুলি আওড়াতে আরম্ভ করেছে। হাদীসের বিভিন্ন সনদ ও তার সহীহ-জঈফের
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চক্ষু বন্ধ করে এ হানীসকে বানোয়াট বলে মুসলিম সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছে। জানিনা; এরা কি সহীহ হাদীস মানতে গিয়ে ভুল করছে? না কি মুসলিম সমাজের ঐক্য বিনষ্ট করতে কারও এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে?
উল্লেখ্য, যেহেতু আরবী ভাষায়, ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্তি, নিষ্কৃতি,দায়মুক্তি ইত্যাদি। সেহেতু ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘শবে বারাআত’ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘মুক্তি –রজনী’। তবে আমাদের সমাজে শব্দটির অর্থ ‘ভাগ্য-রজনী’ হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে এটা সঠিক নয়। কারণ ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য নয়। তাই এ রাতকে ‘ভাগ্য-রজনী’ না হলে ‘মুক্তি রাজনী’ বলা সঠিক হবে।
ইমাম বাইহাকী রহ.কর্তৃক লিখিত শুআবুল ঈমান কিতাবের: ৩৮৫৪ নং হাদীসে বর্ণিত আছে যে, অর্ধ শা’বানের রাতে রসূলুল্লাহ স. অতি দীর্ঘ রাকাতে নামায় আদায় করেছেন। সুতরাং এ রাতে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার।
আমার সাইট ঃ
টিউনরাউন্ড
6 thoughts on "শবে বারাআতের ফযীলত"