আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
আজকে আমি আপনাদের মাঝে কোরআনে আলো এ পর্বে সমাজ সংস্কারে সঠিক আকীদার গুরুত্ব জানতে চলে আসলাম ।
সমাজ সংস্কারে সঠিক আকীদার গুরুত্ব
লেখক: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
ভূমিকা:
আকীদা মানব প্রকৃতির স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তার দেহ-মন ও অস্তিত্বের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বিষয়টি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। কেননা মানুষ যখন থেকে বুঝতে শেখে, তখন থেকেই সে কোনো না কোনো বিশ্বাসের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। জীবনের অনেক কিছুই তার কাছে এমনভাবে প্রতিভাত হয় যে, তা থেকে সে নিজেকে কোনোক্রমেই বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। এসব কিছুর যথার্থতা যাই থাকুক না কেন, প্রথমে তা ব্যক্তি মানসে এবং পরে তার প্রাত্যহিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, বরং তার পুরো জীবনটাই বিন্যস্ত হয় আকীদা-বিশ্বাসের আলোকে।।
মানুষ স্বভাবতই সামাজিক জীব হওয়ায় তার ব্যক্তি জীবনের প্রভাব সমাজ জীবনে পুরোপুরি প্রতিবিম্বিত হয়ে যায়। এভাবে ব্যক্তির আকীদা এক সময় সমাজের আকীদায় পরিণত হয়। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন আকীদার সমাহার ঘটলে সমাজকেও এসকল আকীদায় বিভক্ত হতে দেখা যায়। একটি মুসলিম প্রধান সমাজে সহীহ ইসলামী আকীদাই হল সমাজের বৃহত্তর শ্রেণীর আকীদা। সহীহ আকীদা থেকে বিচ্যুতি, নৈতিক অবক্ষয়, নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বার্থপরতা ও লুটে পুটে খাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি আরো বহুবিধ কারণে একটি উত্তম সমাজ অশান্ত, অস্থির, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে পরিণত হয়। সে সমাজকে আবার সুন্দর ও সুশীল সমাজে উন্নীত করার জন্য প্রয়োজন হয় সংস্কার কাজের। এ আলোচনায় সঠিক আকীদার পরিচয় তুলে ধরে কিভাবে তা সমাজ সংস্কারে ফলপ্রসু অবদান রাখতে পারে আমরা সেদিকে আলোকপাত করব।।
আকীদার পরিচয়:
আকীদা একটি আরবী শব্দ, যা عقد থেকে গৃহীত। এর অর্থ হচ্ছে দৃঢ়ভাবে বাঁধা। মানুষ দৃঢ়তার সাথে যা কিছু তার অন্তরে গেঁথে নেয় তাই হলো আকীদা। ড: নাসের আব্দুল করীম আল-আকল আকীদার পারিভাষিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, অর্থাৎ সাধারণ পরিভাষায় আকীদা হচ্ছে এমন দৃঢ় বিশ্বাস ও অকাট্য বিধানের নাম যাতে আকীদা পোষণকারীর হৃদয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।।
এর আরেকটু ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুহাম্মদ ইবরাহীম আল-হামাদ বলেন, অর্থাৎ আকীদা শব্দটি সাধারণ পরিভাষায় মনের সুদৃঢ় বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, চাই এ বিশ্বাস সত্য হোক বা বাতিল হোক। যদি অন্তরের এ সুদৃঢ় বিশ্বাস সহীহ ও সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আকীদা হবে শুদ্ধ, যেমন আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি সকল মুসলিমের বিশ্বাস। আর যদি অন্তরের এ সুদৃঢ় বিশ্বাস বাতিল ও ভ্রান্ত হয় তাহলে আকীদাও হবে বাতিল ও ভ্রান্ত, যেমন ‘আল্লাহ তিনজনের একজন বলে খৃষ্টানগণ যে আকীদা পোষণ করে থাকে।।
ইসলামী আকীদার পরিচয়:
ইসলামী আকীদার সংজ্ঞায় (ড.) নাসের আবদুল করীম আল-আকল বলেন, ‘‘ইসলামী আকীদা হচ্ছে আল্লাহ ও তার উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়াত এবং নাম ও গুণাবলীর প্রতি সুদৃঢ় ঈমান আনয়ন। আর তার ফেরেশতাগণ, গ্রন্থসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস, তাকদীরের ভাল-মন্দ এবং ধর্মতত্ত্ব ও গায়েবী সে সব বিষয় ও সংবাদের প্রতিও ঈমান আনয়ন করা, ইসলামী আকীদার অন্তর্ভুক্ত যে সব বিষয় সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহর সহীহ বক্তব্য রয়েছে। ইসলামী আকীদার মধ্যে আরো রয়েছে সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখা, শাসন-নির্দেশ-তাকদীর ও আইন প্রণয়নে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতাকে স্বীকার করে নেয়া এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুকরণ, অনুসরণ, বিচার ও শাসনের একমাত্র আদর্শ হিসাবে মেনে নেয়া।’’।
ইসলামী আকীদার বিষয়বস্তু:
একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসাবে ইসলামী আকীদার আলোচ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে তাওহীদ, ঈমান, ইসলাম, গায়েবী বিষয়সমূহ, নবুওয়াত, তাকদীর, মৌলিক অকাট্য বিধানসমূহ, দ্বীনের সকল মৌল-নীতি, তত্ত্ব ও আকীদা এবং প্রবৃত্তির অনুসারী বিভিন্ন দল, মত ও বিভ্রান্ত ফিরকাসমূহের বিভ্রান্তি খণ্ডন করে সঠিক জবাব প্রদান।।
আকীদা শাস্ত্রের বিভিন্ন নাম:
ইসলামী জ্ঞান তাপসগণ আকীদার আরো বেশ কটি সমার্থক শব্দ উল্লেখ করেছেন। যেমন:
তাওহীদ: আকীদা বিষয়ক গ্রন্থকে অনেক আলেম ‘তাওহীদগ্রন্থ’ নামে অভিহিত করেছেন। যেমন: ইমাম বুখারীর ‘‘কিতাবুত তাওহীদ’’, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে খাফীফের ‘‘ই‘তিকাদুত তাওহীদ’’, ইবনে মান্দার এর ‘‘আত-তাওহীদ ওয়া মা’রিফাতু আসমাইল্লাহ’’, ইবনে খুযায়মাহ এর ‘‘কিতাবুত তাওহীদ’’।।
আস সুন্নাহ: আকীদাকে ‘সুন্নাহ’ নামেও এজন্যই অভিহিত করা হয় যে, এর অনুসারীরা দৃঢ়ভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী ছিলেন। আকীদা বিষয়ক বহু গ্রন্থকে অনেক আলিম ‘‘সুন্নাহ গ্রন্থ’’ নামে উল্লেখ করেছেন। যেমন:
ইমাম আহমাদের ‘‘কিতাবুস সুন্নাহ গ্রন্থ’’, আসরামের ‘‘আস-সুন্নাহ গ্রন্থ’’, ইমাম আবু দাউদের ‘‘আস সুন্নাহ গ্রন্থ’’, ইবনে আবি আসিম এর ‘‘আস সুন্নাহ গ্রন্থ’’ ইত্যাদি।।
আশ-শারীয়াহ: এটি যদিও একটি ব্যাপক শব্দ এবং এটি দ্বারা পূর্ণ ইসলামকেই বুঝানো হয় তা সত্ত্বে আলেমদের কেউ কেউ আকীদা শাস্ত্র বুঝাতে ‘শারীয়াহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন: ইমাম আজুররীর ‘‘আশ-শারীয়াহ গ্রন্থ’’, ইমাম ইবনে বাততাহ এর ‘‘আল ইবানাহ ‘আন শারীয়াতিল ফিরকাহ আন-নাজিয়াহ…’’ ইত্যাদি।।
আল-ঈমান: আলেমদের মধ্যে অনেকেই তাদের আকীদার উপর লিখিত গ্রন্থের শিরোনামে ‘‘আল-ঈমান’’ ব্যবহার করেছেন। যেমন: আবু উবাইদ কাসিম ইবন সাল্লাম এর ‘‘আল ঈমান গ্রন্থ’’, ইবনে মান্দাহ এর ‘‘কিতাবুল ঈমান’’ ইত্যাদি।।
উসূলুদ্দীন: কেউ কেউ এশব্দটি আকীদা বুঝাতে ব্যবহার করেছেন। যেমন: আবু মানুসর আল-বাগদাদীর ‘‘উসূলুদ্দীন গ্রন্থ’’, ইবনে বাততাহ এর ‘‘আশ-শারহু ওয়াল ইবানাহ ‘আলা উসূলিস সুন্নাহ ওয়াদ্দিয়ানাহ’’, আবুল হাসান আল-আশ‘আরীর ‘‘আল-ইবানাহ ‘আন উসূলিদ্দিয়ানাহ’’ ইত্যাদি।।
আল-ফিকহুল আকবার: ইমাম আবু হানিফা কর্তৃক লিখিত গ্রন্থের নাম ছিল ‘‘আল ফিকহুল আকবার’’ যা তিনি আকীদা বিষয়ে লিখেছিলেন। এছাড়া মুতাকাল্লিমীনগণ আকীদা শাস্ত্রকে ‘‘ইলমুল কালাম’’ এবং দার্শনিকগণ ‘‘আল-ফালসাফা আল-ইসলামিয়্যাহ’’ বা ইসলামী দর্শন, ‘‘আল-ইলাহিয়্যাত’’ ও ‘‘ম্যাটাফিজিক্স’’ নামে অভিহিত করেছেন। শেষোক্ত এ নামগুলো সম্পর্কে ড. নাসের আল-আকলসহ আরো অনেকে বলেন যে, ইসলামী আকীদাকে এসকল নামে অভিহিত করা মোটেই শুদ্ধ নয়। এর কারণ বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবরাহীম আল হামাদ বলেন, “কেননা ইলমুল কালামের উৎস হল মানব বুদ্ধি-বিবেক, যা হিন্দু ও গ্রিক দর্শন নির্ভর। পক্ষান্তরে তাওহীদের মূল উৎস হল ওহী। তাছাড়া ইলমুল কালামের মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা, ভারসাম্যহীনতা, অজ্ঞতা ও সংশয়-সন্দেহ। এজন্যই সালাফে সালেহীন ইলমুল কালামের নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। আর তাওহীদ হল জ্ঞান, দৃঢ় বিশ্বাস ও ঈমান নির্ভর,….. আরেকটি কারণ এও বলা যেতে পারে যে, দর্শনের ভিত্তি অনুমান, বাতিল আকীদা, কাল্পনিক চিন্তা ও কুসংস্কারচ্ছন্ন ধারণার উপর স্থাপিত”।।
ইমাম হারাওয়ী ذم الكلام وأهله নামে ৫ খন্ডের একটি বই এবং ইমাম গাযযালী تهافت الفلاسفةনামে একটি বই রচনা করেছেন। এছাড়া ‘ইলমুল কালাম’ ও ‘ফালসাফা’ যে সঠিক ইসলামী আকীদার প্রতিনিধিত্ব করে না, সে বিষয়ে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়েমসহ আরো বহু মুসলিম স্কলার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।।
সহীহ ও সঠিক ইসলামী আকীদার বৈশিষ্ট্য:
সহীহ ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিম্নরূপ:
(১) এ আকীদা বিশুদ্ধ উৎস থেকে গৃহীত। কেননা আল কুরআন, সহীহ সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ এর উপর এর ভিত্তি স্থাপিত। এ তিনটির প্রত্যেকটিই হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের প্রামান্য দলীল, যা অকাট্য। কিন্তু অন্যান্য ফিরকা, মতবাদ ও ধর্মে এ বৈশিষ্ট্য নেই। কেননা শিয়াদের আকীদার উৎস হচ্ছে তাদের ইমামগণের বাণী, মুতাকাল্লিমীনের কাছে ‘আকল বা বিবেকই হচ্ছে সবচেয়ে বড় উৎস। সুফীদের কাছে কাশফ, ইলহাম ও স্বপ্ন অন্যতম উৎস। সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের মত মতাবাদসমূহে মানব মস্তিষ্ক নিঃসৃত বিভ্রান্ত চিন্তা-চেতনাই হচ্ছে প্রধান উৎস। আর ইয়াহুদী ও নাসারাদের ধর্মগুরু ও পাদ্রীরাই দ্বীন ও আকীদার জ্ঞানের উৎস, যাদেরকে তারা রব বানিয়ে নিয়েছে।।
(২) আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া তথ্যের প্রতি পরিপূর্ণ-স্বীকৃতি জ্ঞাপন এ আকীদার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা আকীদা হচ্ছে ঈমান বিল গায়ব এর অন্তর্গত, যার জ্ঞান অন্য কোনো পন্থায় অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্যই শারহে আকীদাতুত ত্বহাওয়িয়্যাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে – অর্থাৎ মেনে নেয়া ও আত্মসমর্পণ ছাড়া ইসলামের ভিত মজবুত হয় না। ইসলামী আকীদা ভিন্ন অন্যত্র আমরা দেখি- সেখানে আছে মানব রচিত মতের আধিপত্য, অহী নির্ভর জ্ঞানের পরিবর্তে শুধুমাত্র আকল ও রায়ের প্রাধান্য এবং হেদায়াতের পরিবর্তে প্রবৃত্তি অনুসরণের প্রাধান্য।।
(৩) সহীহ ইসলামী আকীদা মানুষের সুস্থ বিবেক এবং তার প্রকৃতি, ফিতরাত ও স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এদিক ইঙ্গিত করেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন- কুপ্রবৃত্তি, সংশয় ও প্ররোচনা মুক্ত সুস্থ বিবেক ক্রটিমুক্ত, বিশুদ্ধ ও অহি-নির্ভর দলীলের বিরোধী হয় না।।
(৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীবৃন্দ এবং তাদের অনুসারী ইমামগণ ও পরবর্তীকালের সকল মুসলিমদের কাছে এ আকীদার স্বরূপ একই ছিল। সুতরাং কুরআন-সুন্নায় যার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই কিংবা সালাফে সালেহীন যে বিষয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি আকীদার এমন কোনো মৌলিক বিষয় নেই।।
(৫) সহীহ ইসলামী আকীদার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, বোধগম্য ও জটিলতামুক্ত, যা বুঝা আলেম কিংবা সাধারণ শ্রেণীর মানুষ কারো পক্ষেই কষ্টকর নয়। কুরআন ও সুন্নায় আকীদা বিষয়ক এমন অনেক দলীল রয়েছে যা সহজেই শ্রোতাকে আশ্বস্ত ও মুগ্ধ করে। কুরআন বিশেষভাবে এক্ষেত্রে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। যেমন আল্লাহ বলেন: “আর তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর তিনিই এর পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তো তার জন্য অধিকতর সহজ। আসমান ও যমীনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” [আর-রূম: ২৭]
তিনি আরো বলেন: “যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান।” [আল-আম্বিয়া: ২২]।
(৬) এ আকীদা অসামঞ্জস্যতা ও পরস্পর বিরোধিতা থেকে মুক্ত। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন: “তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।” [আন-নিসা: ৮২] পক্ষান্তরে বাতিল আকীদাসমূহে অসামঞ্জস্যতা খুব সহজেই চোখে পড়ে। কেননা এগুলোর মধ্যে রয়েছে পরস্পর বিরোধিতা ও নানা বৈপরীত্য।।
(৭) এ আকীদা পৃথিবীর সকল সময়ে, স্থানে ও অবস্থায় সকল জাতির উপযোগী। ফলে যে কোনো দিক থেকেই এ আকীদা বৈষম্যের কালিমা থেকে মুক্ত।।
(৮)এ আকীদা চিরন্তন ও স্থায়ী। কেননা আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন ও শরীয়াহ চিরন্তন ও স্থায়ী। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী।” [আল-হিজর: ৯]।
(৯) সহীহ ইসলামী আকীদার অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করে। আকীদার সুদৃঢ় বন্দন টুটে গিয়ে বহুবিধ বিভ্রান্ত আকীদার অনুসারী হওয়ার কারণেই আজ মুসলিম বিশ্বে চরম অনৈক্য, বিভেদ ও হতাশা বিরাজ করছে।।
(১০) দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোনো কল্যাণকর জ্ঞান ও বিদ্যার সাথে এ আকীদার কোনো বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই। সেজন্যই তাওহীদ ও শারয়ী জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সকল উপকারী জ্ঞান চর্চার প্রতিও ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে।।
(১১) এ আকীদা হৃদয়, আত্মা ও দেহের সকল প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে একটা চমৎকার সমতা রক্ষা করেছে। এমনটি ঘটেনি যে, শুধু একদিকের দাবী পূরণ করতে গিয়ে জীবনের অন্য সকল দিককে উপেক্ষা করা হয়েছে।।
(১২) সহীহ ইসলামী আকীদা সুস্থ বিবেক ও আকলকে স্বীকৃতি প্রদান করে, এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তা যাতে কোনক্রমেই অক্ষম ও অকার্যকর হয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখে। এজন্যেই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বারবার সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য মানব বিবেককে কার্যকর করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি মানুষকে আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতত্ত্বের বিষয়ে চিন্তা ও গবেষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্ব চরাচরে আল্লাহর মহান নিদর্শনাবলী নিয়ে গবেষণা করে উপদেশ লাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। যারা চিন্তা-ভাবনা না করে পূর্ব-পুরুষদের অন্ধ অনুকরণ করে, তাদের নিন্দা করেছেন। তবে এর পাশাপাশি তিনি আকল ও বিবেকের কাজের পরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে মানুষ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়সমূহে আকলকে কাজে লাগায় এবং অতীন্দ্রিয় বিষয়ে অহীর জ্ঞানের উপর নির্ভর করে।।
সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও সে ক্ষেত্রে সঠিক ইসলামী আকীদার ভূমিকা ও গুরুত্ব:
মানুষ তার ব্যক্তি জীবনের সকল চাহিদা মেটানোর জন্যই সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করে। যে কোনো সমাজ গঠনের প্রধান লক্ষ্যই হল সে সমাজের সকল সভ্যের সার্বিক কল্যাণ সাধন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ। কিন্তু ব্যক্তি জীবনের অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও স্বার্থপরতা সমাজ জীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সমাজকে দুর্নীতি, বৈষম্য, বিভক্তি, হানাহানি প্রভৃতি ব্যাধিতে কলুষিত ও বিষাক্ত করে তোলে। তখনই দেখা দেয় সমাজ সংস্কারের বিরাট প্রয়োজনীয়তা, যেমনটি আমরা অনুভব করছি আমাদের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে।।
সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি সমস্যা জর্জরিত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুণে ধরা এ সমাজের মানুষের মধ্যে সঠিক আকীদার জ্ঞান নেই বললেই চলে। এরই অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে আকীদায় অনৈক্য এবং প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী যার যেমন ইচ্ছা তেমন আকীদা পোষণ, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক এর যথার্থতা থাকুক বা নাই থাকুক। অন্যদিকে মানুষের ঈমান হয়ে পড়েছে অত্যন্ত দুর্বল, অন্তর থেকে তাকওয়ার বিদায় ঘটেছে, পরকালীন শাস্তির কথা সে বিস্মৃত হয়েছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা, লুটে-পুটে খাওয়ার প্রবণতা, নানা প্রকার সন্ত্রাস ও অপসংস্কৃতির বিস্তার ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা।।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতে আমরা দেখি তিনি তৎকালীন জাহেলী সমাজকে বদলে দিয়ে একে পরিণত করেছিলেন তখনকার সর্বোৎকৃষ্ট সমাজে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনের যে আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে, তার প্রাথমিক প্রক্রিয়াই ছিল আকীদাগত সংস্কার। এ সম্পর্কে সাইয়েদ কুতুব তার مقومات التصور الإسلامي গ্রন্থে বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন এমন এক সময়ে যখন জাযিরাতুল আরব উত্তরে রোমান ও দক্ষিণে পারস্যের মধ্যে লুটেরা সম্পদ হিসাবে বন্টিত ছিল। এরা তাদের হাত প্রসারিত করেছিল জাযিরাতুল আরবের উর্বর ভূমি, সমুদ্রোপকুল, সম্পদ ও বাণিজ্যের সকল উৎসের প্রতি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই এক সময়ে প্রেরিত হয়েছেন যখন বিরাজমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা দাসত্ব যুগের প্রতিনিধিত্ব করত বিপুল সমারোহে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই এক সময়ে প্রেরিত হয়েছেন যখন মদ, যেনা, জুয়া, খেল-তামাশা, মন্দ ও বিপর্যয় সৃষ্টিতে মানব চরিত্র জাহেলিয়াতের ধারায় বহমান ছিল। এ সবের কোনোটি দিয়েই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংস্কার কাজ শুরু করেননি। জাযিরাতুল আরবের উর্বর ভূমি থেকে রোমান ও পারসীদের তাড়ানোর জন্য তিনি জাতীয়বাদী ঐক্যের দিকে আরবদেরকে আহ্বান করতে সক্ষম ছিলেন। যুদ্ধের সকল শক্তি তিনি তাদের ব্যাপারে নিয়োগ করতে পারতেন এবং জাতীয় শত্রুদের প্রতি তিনি আরবদের ক্ষেপিয়ে তুলতে পারতেন। ফলত তারা তার নেতৃত্বের প্রতি অনুগত হত এবং তাদের সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যেত।……কিন্তু আল্লাহ জানতেন, তিনি তাঁর নবীকে জানিয়েছিলেন এবং নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, এটা সঠিক পথ নয় এবং এটা মূল কাজ নয়। মূলকাজ হচ্ছে মানুষ তার সত্যিকার রবকে জানা এবং শুধু তাঁরই দাসত্ব মেনে নেওয়া, আর তাঁর বান্দাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া এবং পরিশেষে আল্লাহর কাছ থেকে যা-ই তাদের কাছে আসে তার সব কিছু গ্রহণ করা….”।।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সফলভাবে সমাজ পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ অহিদুদ্দীন খান বলেন: Islam was able to establish an evil-free society for the first time in the history only because it employed this natural method of gradual change. We cannot find an example of such comprehensive success in transforming society on the part of any reform movement in the history of social reform.।
লক্ষ্যণীয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের পর মাক্কী জীবনের ১৩ বৎসরে আকীদা বিষয়ক জ্ঞান প্রচারের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। নবী সা. ই শুধু নয়, বরং সকল নবী ও রাসূলগণের প্রথম কাজই ছিল সঠিক আকীদার প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহবান। আল-কুরআনের ভাষায় তাদের সেই আহবান ছিল: “হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই।” [আল-আ‘রাফ: ৫৮]।
এর কারণ ছিল একটিই, আকীদা শুদ্ধ না হলে ব্যক্তি জীবন শুদ্ধ হয় না, আর ব্যক্তি শুদ্ধ না হলে সমাজও শুদ্ধ হয় না। সঠিক ও বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদা কিভাবে সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে নিচে সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হচ্ছে।।
(১) বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য স্থাপনে সঠিক আকীদার ভূমিকা: সঠিক আকীদার উপর একমত হওয়া ছাড়া বৃহত্তর ঐক্য স্থাপন করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর পক্ষেও ঐক্যবদ্ধ হওয়া সুদূর পরাহত। এ প্রসঙ্গে (ড.) উমার সুলায়মান আল-আশকার বলেন: “একই আকীদা যতক্ষণ মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম ঐক্য বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব না।”।
প্রকৃতপক্ষে আকীদাগত বিভ্রান্তিই সমাজে অনৈক্যের বীজ বপন করে। সমাজ হয়ে পড়ে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। যদি প্রশ্ন উঠে যে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আকীদা ও বিশ্বাসকে সঠিক বলে মনে করে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো আকীদাকে সঠিক ধরে নিয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। কারণ প্রত্যেক দল নিজ মতের প্রতি আস্থাশীল। এ প্রশ্নের উত্তরে (ড.) উমার সুলাইমান আল-আশকার বলেন: “বিশুদ্ধ ইসলামী আকীদা বিষয়ে কুরআন ও সুন্নায় স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এ আকীদার প্রতিটি মৌলিক ও খুটিঁনাটি বিষয়ে দলীল পেশ করা সম্ভব। আর সালাফে সালেহীন সত্য ইসলামী আকীদার উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তারা এ আকীদা এতটাই ভালোভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, তা ফেরকাবাজী ও বিভ্রান্ত লোকদের আকীদা থেকে পুরোপুরি পৃথক। এ মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা ত্বহাবী, যিনি একটি আকীদা গ্রন্থ লিখেন যা তার নিজের নামেই বিখ্যাত। এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা লিখেছেন মুহাম্মাদ ইবন আবিল ইয্ আল-হানাফী। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি, বরং সহীহ আকীদার উপর বহু আলেম এর আগে ও পরে লিখেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আহমাদ, ইবনু তাইমিয়াহ, শওকানী ও সাফারীনী প্রমুখ।”।
(২) দুর্নীতি, রাহাজানি, যুলুম-নির্যাতনমুক্ত সুশীল সমাজ গঠনে সঠিক আকীদা এমন একটি মজবুত ভিত তৈরী করে।যার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সমাজের সকল কাজ-কর্ম, পারস্পরিক লেন-দেন। অতএব আকীদা যদি হয় বিকৃত বিভ্রান্ত ও মিথ্যার উপর স্থাপিত, তাহলে সামাজিক জীবন হয়ে পড়বে বিপন্ন, বিপর্যস্ত ও ধ্বংসের মুখোমুখী। আজ আমাদের সমাজ যে অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার কারণ মূলত এটাই। সুতরাং সমাজকে বিকৃতি, বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সঠিক আকীদার দিকেই ফিরে আসতে হবে।।
(৩) সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সঠিক আকীদায় গুরুত্ব: একজন মুসলিম ব্যক্তির আকীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ এই যে, সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাকে অপরিহার্য মনে করে এবং তাদের হুকুমের নাফরমানী করা অবৈধ বলে বিশ্বাস করে। আল্লাহ বলেন: “আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না।” [আল-আহযাব: ৩৬]।
সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা যখন মুসলিমদেরকে পরস্পরের ভাই বলে অভিহিত করেন, কোনো ব্যক্তির জান ও মালের উপর চড়াও হওয়াকে গুরুতর অপরাধ বলে সনাক্ত করেন, চুক্তিবদ্ধ সকল অমুসলিমের সাথে কৃত চুক্তি পালনের নির্দেশ প্রদান করেন, সে তখন দ্বিধাহীন চিত্তে সে নির্দেশ মেনে নেয়, কেননা এভাবে মেনে নেয়াটা তার আকীদারই অংশ। আল্লাহ বলেন: “অতএব তোমাদের রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [আন-নিসা: ৬৫]।
(৪) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে সঠিক আকীদার গুরুত্ব: ইসলামী আকীদার অপরিহার্য একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে এ বিষয়ে দৃঢ় ঈমান রাখা যে, আল্লাহ যেমন এ বিশ্ব জগতের সৃষ্টি কর্তা, তেমনি তিনিই এর শাসন-কর্তৃত্ব ও নির্দেশের মালিক। আল্লাহ বলেন: “জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই।” [আল-আরাফ: ৫৪]
“বল, নিশ্চয় সব বিষয় আল্লাহর।” [আলে ইমরান: ১৫৪]
“হুকুম তো কেবল আল্লাহরই।” [আল-আন‘আম: ৫৭]।
এছাড়া আল্লাহই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক এবং একমাত্র আইনদাতা ও বিধানদাতা। এটা তাকে রব হিসাবে মেনে নেয়ারই অন্যতম অর্থ। আমাদের সমাজে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তখনই ফিরে আসতে পারে যখন এ আকীদার প্রতি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃঢ় প্রত্যয় থাকবে। মূলত মানব রচিত আইন দিয়ে কোনো মুসলিম সমাজেই শান্তি, শৃংখলা ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে না। সম্ভবত বাস্তবতাই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ও সাক্ষী।।
(৫) অপসংস্কৃতি রোধে সঠিক আকীদার গুরুত্ব:বিজাতীয় ভিনদেশী ও ভিন্ন ধর্মের অনুকরণে আমাদের বাংলাদেশী সমাজে সংস্কৃতির নামে বর্তমানে যে সব কিছুর চর্চা হচ্ছে, তাকে অপসংস্কৃতি নামে অভিহিত করলে বোধকরি কোনো অত্যুক্তি হবে না। কেননা এসব সংস্কৃতি যেমনি আমাদের দেশীয় চিন্তা-চেতনা ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে না, তেমনি তা মুসলিম আকীদার সাথে বহুলাংশেই সাংঘর্ষিক। স্মরণ রাখতে হবে আমাদের এ দেশটি মুসলিম প্রধান দেশ। তাই যদি আমরা আমাদের সকল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানকে সঠিক ইসলামী আকীদার আলোকে বিন্যস্ত করি, তাহলেই দেশ উপহার পেতে পারে একটি সুন্দর, রুচিশীল, শালীন ও সুস্থ-সংস্কৃতি।।
(৬) চিন্তার ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তি এবং শির্ক ও বেদ‘আত থেকে সমাজকে মুক্ত করার ব্যাপারে সঠিক আকীদার গুরুত্ব: সঠিক ইসলামী আকীদার জ্ঞানই পারে সমাজের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর চিন্তা জগতকে আলোকিত করতে যা দিয়ে তারা জাতিকে দিতে পারবেন সত্য পথের দিশা। আজ একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবিদের চিন্তার ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তি আমরা লক্ষ্য করছি, মুসলিম নামধারী হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের বিরুদ্ধে তারা যে কলমযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তার সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ এই যে, ইসলামকে তারা বিকৃতভাবে জেনেছেন, সঠিক ইসলামী আকীদা অর্জনের সৌভাগ্য তাদের হয় নি। একই কথা প্রযোজ্য সে সকল শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মুসলিমদের ক্ষেত্রেও যারা ইবাদাত মনে করে শির্ক ও বেদ‘আতের মধ্যে নিমজ্জিত। কুরআন ও সুন্নার আলোকে তারা শির্ক ও বেদ‘আতের পরিচয় পায় নি। শির্ক ও বেদ‘আতকে চেনার যে সকল মূলনীতি রয়েছে তারা সেসব সম্পর্কে সম্পূর্ণ গাফেল। সঠিক আকীদার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আকীদার জ্ঞান অর্জনই নিশ্চয়তা দিতে পারে এসব বিভ্রান্তি এবং শির্ক ও বেদ‘আত থেকে সমাজের সবাইকে মুক্ত করার।।
অতএব সহীহ ইসলামী আকীদার জ্ঞান অর্জনই আল্লাহর প্রকৃত মু’মিন ও মুসলিম বান্দা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার একমাত্র পন্থা। অনুরূপভাবে একটি সমাজকে পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ রূপে গড়ে তুলতে চাইলে সমাজের সকলকে সহীহ আকীদার জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইসলামী সংগঠনগুলোকে গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসলামী শরীয়াহ ও স্টাডিজের উপর যারা দক্ষ তারা সহীহ আকিদা বিষয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করে এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় লিখিত বইয়ের যে অপ্রতুলতা রয়েছে তা দূর করতে পারেন। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম, খতিব ও মাদরাসা শিক্ষকদের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে। অবশ্য তার আগে তাদেরকে সহীহ আকিদার জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। সহীহ আকিদা প্রসারের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এভাবে আমাদের সমাজ গড়ে ওঠতে পারে শির্ক ও বেদ‘আতমুক্ত একটি সুন্দর সুশীল সমাজ হিসাবে।।
আমাদের ফেসবুক group এ জয়েন হতে পারেন এখানে প্রতিদিন ইসলামিক সম্পর্কে পোষ্ট করা হয় কোরআনের আলো