আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

এক নির্ভীক স্কুল ছাত্রীর পর্দার বিধান পালনের গল্প

স্কুল থেকে ফিরে ফারীহার মন ভীষণ খারাপ। মায়াবী দু’চোখ জুড়ে দুশ্চিন্তার ছাপ। পেলবতায় ভরা মুখটাও কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। ফারীহার মা হৃদয়ের দর্পণে মেয়ের চেহারা দেখে নিলেন। তিনি মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ফারীহা বলল, ‘আম্মু! তানযীলা ম্যাডাম বোরক্বা পরার কারণে প্রতিদিন আমাকে বকা দেয়, আমাকে বোরক্বা খুলে ক্লাস করতে বলে। আর আজ বলে দিয়েছেন, আগামীকাল থেকে যদি আবার বোরক্বা পরে স্কুলে যাই, তাহ’লে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিবেন।

সব শুনে কিছুটা থমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত গলায় মা বললেন, ‘আম্মু! যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহই তোমার জন্য পর্দা ফরয করেছেন, তোমাকে বোরক্বা পরতে বলেছেন। তাই তুমি তাঁর ইচ্ছাতেই বোরক্বা পরেছ। তোমার ম্যাডামের ইচ্ছাতে নয়। তোমার ম্যাডাম তো তোমার মতই আল্লাহর সৃষ্টি, যিনি তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন না। এখন তুমিই সিদ্ধান্ত নাও যে, তুমি আল্লাহর আনুগত্য করবে নাকি তোমার ম্যাডামের আনুগত্য করবে? ফারীহা নির্ভীকভাবে বলে ওঠে, অবশ্যই আমি আল্লাহর আনুগত্য করব মা!

পরের দিন ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙ্গল ফারীহার। প্রতিদিনের মত আজকেও মায়ের সাথে ফজরের ছালাত শেষে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত করে পড়তে বসল। তারপর পড়াশোনা শেষ করে বোরক্বা পরেই স্কুলে গেল এবং ক্লাস শুরু করল।

নির্দিষ্ট সময়ে তানযীলা ম্যাডাম ক্লাস রুমে প্রবেশ করলেন। আজও দেখলেন বোরক্বা পরিহিত ফারীহাকে। রেগে অগ্নীশর্মা হয়ে গেলেন। বোরক্বাকে ভৎর্সনা করে এত কঠিন ভাষায় বকা-ঝকা করলেন যে, ফারীহা তা সহ্য করতে পারল না। দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। কিছুটা শান্ত হওয়ার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ম্যাডাম! আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আমাকে ও আপনাকে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর আপনি আমাকে তা থেকে নিষেধ করছেন! এখন আমাকে বলুন, আমি আল্লাহর আনুগত্য করব নাকি আপনার আনুগত্য করব?

ম্যাডাম! শিক্ষিকা ও গুরুজন হিসাবে আপনাকে আমি সম্মান করি। তাই বলে আল্লাহর অবাধ্যতা করে আপনি আপনার আদেশ মানতে কি আমাকে বাধ্য করবেন? দয়া করে আমাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে বলবেন না। আপনি নির্দেশ দিলে আমি এ স্কুল ত্যাগ করতে পারি। কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এ ফরয বিধান পরিত্যাগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ- আল্লাহকে ভয় করুন! কেবল আমার জন্য নয়, আল্লাহ আপনার প্রতিও পর্দা ফরয করেছেন। আপনিও বোরক্বা পরে ক্লাসে আসা শুরু করুন। এতে আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করে চিরস্থায়ী আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না।

ক্লাসের সবাই ফারীহার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নির্ভীক চিত্তে বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে ফেলল ফারীহা।

সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেয়েটির আল্লাহভীরুতা, দ্বীনের প্রতি অবিচলতা ও বলিষ্ঠ বাক্যবাণে তানযীলা ম্যাডাম একদম চুপসে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলেন না। কেবল মাথা নীচু করে রইলেন। কিছুক্ষণ পর ফারীহাকে বললেন, আগামীকাল তোমার আম্মুকে আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে বলবে। তারপর আর কিছু না বলে কপালে ভাবনার ছাপ নিয়ে শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন।

পরদিন ফারীহার মা মেয়েকে সাথে নিয়ে স্কুলে আসলেন এবং অফিসে গিয়ে তানযীলা ম্যাডামের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। ফারীহার মাকে দেখে ম্যাডাম দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, ‘গতকাল আপনার মেয়ে আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছে, এ জীবনে কারও কাছে আমি এমন শিক্ষা পাইনি। আপনি আপনার মেয়েকে কতই না উত্তমরূপে গড়ে তুলেছেন। এই বয়সে আল্লাহর বিধান মানার ব্যাপারে তার দৃঢ়তা, অবিচলতা ও নির্ভীকতা দেখে আমি যার পর নেই বিস্মিত হয়েছি। আপনার মেয়ের প্রত্যেকটি কথা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। সে আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে, আমি স্কুল থেকে ফিরে এক মুহূর্তের জন্য স্থির হ’তে পারিনি। নিজের পাপের কথা চিন্তা করে ভীত-কম্পিত হয়েছি। নিজেকে মহা অপরাধী মনে হচ্ছে। ছালাত শেষে আমি তওবা-ইস্তেগফার পাঠ করে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছি। প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আমি এখন থেকে শরী‘আতের সকল বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণভাবে মেনে চলব। সাথে সাথে আপনার সন্তানের মত অন্যকেও মেনে চলার পরামর্শ দিব। কথাগুলো বলতে বলতে তানযীলা ম্যাডামের চোখ দু’টো অশ্রুসজল হয়ে গেল। ফারীহার চোখেও আনন্দাশ্রু চিক চিক করতে লাগল।

এরপর থেকে তানযীলা ম্যাডাম যেন ভিন্ন মানুষে পরিণত হ’লেন। নিজে পূর্ণ পর্দার সাথে বোরক্বা পরে স্কুলে আসেন। অন্য ছাত্রীদেরকেও উৎসাহিত করেন। দ্বীনের বিধি-বিধান পালনে সবসময় সবার চেয়ে যেন একধাপ এগিয়ে থাকেন।

শিক্ষা :

১. পরিবারই সন্তানদের সুশিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং পিতা-মাতা সন্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাই শৈশব থেকেই সন্তানের মধ্যে তাক্বওয়া ও দ্বীনী জ্ঞানের বীজ বপন করা আবশ্যক। তাহ’লে ভবিষ্যতে সেই বীজের চারা অঙ্কুরোদগম হয়ে এমন বৃক্ষে পরিণত হবে, যার শীতল ছায়ায় পরিবার, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

২. দ্বীনদার সন্তান গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতাকেও দ্বীনদার  হওয়া যরূরী।

৩. দ্বীনের বিধান পালনে সকল বাধাকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবনের বাঁক-বাঁকে সবসময় দাওয়াতী মেজায নিয়ে চলতে হবে। দ্বীনের বিধান জানানোর ক্ষেত্রে নির্ভীক হ’তে হবে। সামান্য একটু হেদায়াতের বাণীই হয়তো কারো জান্নাতের পথ সুগম করে দিতে পারে। জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচাতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!

সূত্র: I-Onlinemedia.Net

12 thoughts on "এক নির্ভীক স্কুল ছাত্রীর পর্দার বিধান পালনের গল্প। না দেখলে মিস করবেন"

    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
      Thanks
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
      Thanks
  1. The Matrix Contributor says:
    Educative post…keep sharing more❤
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
  2. Walker #28000 Author says:
    Very good post ?
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
  3. MD Ashraful Islam Author says:
    পুরোটা পড়লাম, অসাধারন পোষ্ট, শেয়ার করছি |
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
      Thanks

Leave a Reply