আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।

বিপন্ন মানবতা: মুক্তির উপায় কি?

বিপন্ন মানবতা: মুক্তির উপায় কি?
আপনি কখনো লক্ষ্য করেছেন কি, আপনার পাশেই অসংখ্য বুভুক্ষ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে? কখনো কি তাদের আহাজারি আপনার কর্নকুহরে প্রবেশাধিকার পেয়েছে?

অবহেলা না করে দিলের চোখ-কান খোলা রাখুন, দেখবেন এ সমস্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বর্ধিত হয়ে চলছে। তাদের আহাজারি আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

আজ এ বসুন্ধরায় আর্ত-পীড়িত জনতার কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে হাজারো সংগঠন-সংস্থা আছে। তবুও কেন মানবতার এই চরম অধ:পতন? এত আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সেবক সংগঠন থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার মধ্যে বাস করে?

২০০৩ ইং সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যানুসারে শুধু বাংলাদেশেই দরিদ্রের শতকরা হার ৪৯.৮০ শতাংশ। (অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক)। তবে কি এই সমস্ত সংস্থা-সংগঠন আর্ত-পীড়িতের আহাজারি দূরীকরণে ব্যর্থ? সে সবে কি কোন অপূর্ণাঙ্গতা রয়ে গেছে?

১৯৯৭ইং সালে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এই পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক দূরাবস্থা নিরসনের নিমিত্তে গঠিত হয় বিমসটেক (BIMSTEC)।

২২টি দেশের সমন্বয়ে এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক দূরবস্থা নিরসনের নিমিত্তে গঠিত হয় অর্থনৈতিক জোট ‘এপেক’ (APEC)।বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংরক্ষনকল্পে ১৯৬১ ইং সনে গঠিত হয় ‘অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল’।

কিন্তু এতো সংস্থা, এতো সংগঠন সব কিছুকে হার মানিয়ে দরিদ্রতা যেন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তবে কি কোন কালেই কোন নীতি দরিদ্র মানুষকে মুক্তি দিতে পারে নি? পারেনি তাদেরকে সভ্য জীবন-যাপনের মৌলিক অধিকারটুকু দিতে?

ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলেই আমরা এর সঠিক উত্তর পেয়ে যাব।

ইতিহাসের পাঠক মাত্রই জানেন- হযরত ওমর রা. এর যুগে যাকাত গ্রহণের জন্য মানুষ সারা অর্ধজাহানে একজন খুঁজে পাওয়া যেত না। হযরত ওমর রা. বলতেন: ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি অনাহারে মৃত্যুবরণ করে, তবে আমি কিয়ামত দিবসে তার জবাবদিহির আশংকা করি।

সম্মানিত পাঠক! একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করুন। কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ‘একজন মানুষের অনাহারে মৃত্যুর কথা’ স্মরণ না করে ‘একটি কুকুরের অনাহারে মৃত্যুর কথা স্মরণ হতে পারে? ভাবার বিষয় হযরত ওমর রা.কিভাবে এমন একটি দারিদ্রমুক্ত রাষ্ট্র ইতিহাসকে উপহার দিতে পেরেছিলেন?

আমরা একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে দেখতে পাব তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি সম্পূর্ণভাবে ইসলামি নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। একথাটি একান্তই আমার নিজের মতামত নয় বরং ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত।

সুতরাং আমরা একমত হতে পারি ‘দুনিয়ার ইতিহাসে অন্য কোন নীতি দরিদ্র মানব-সন্তানকে মুক্তি দিতে না পারলেও একমাত্র ইসলামই পারে মনুষ্য জাতিকে দারিদ্র মুক্ত সমাজ উপহার দিতে।

তাহলে আসুন, এখন আমরা ইসলামী দিক-নির্দেশনা মোতাবেক বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য নিরসনে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা করি। আমরা যদি একটু লক্ষ করি তবে দেখতে পাব বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্রের অন্যতম একটি কারণ হল, দরিদ্র শ্রেণীর সিংহভাগই কর্মবিমুখ ও ভিক্ষাবৃত্তির দিকে বেশ ঝোকা।

অথচ দারিদ্র দূরীকরণ ও অর্থনেতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল কর্ম-সংস্কৃতি। শ্রম বিমুখ অলস জীবনকে ও ভিক্ষাবৃত্তিকে ইসলাম অত্যন্ত ঘৃণাভরে তিরস্কার করেছে। ইসলাম স্বশ্রম হালাল উপার্জন করা বাধ্যতামূলক করেছে।

মহানবী সা.ইরশাদ করেছেন:

অন্যান্য ফরযের মধ্যে হালাল উপার্জনও একটি ফরয। (বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান)।

এমনকি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নামায শেষ হওয়ার পর রিযিকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে বলেছেন।

পবিত্র কোরআনে তাই বিঘোষিত হয়েছে:

যখন নামায সমাপ্ত হয়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো ও আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো। (সূরা জুমুয়া-১০)

পাঠকবৃন্দ! আরো লক্ষ্য করুন, নবীজি সা. ভিক্ষাবৃত্তি পরিত্যাগ করে শ্রম সংস্কৃতির অনুপম শিক্ষা দান করেছেন। তিনি বলেছেন:

তোমাদের কারো পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রয় করা, কারো কাছে ভিক্ষা চাওয়া, যা দিতেও পারে নাও দিতে পারে, তার চাইতে উত্তম।’ (বুখারী, মুসলিম)।

সুতরাং আমরা কোরআন-হাদীসের এ মহান শিক্ষাকে সামনে রেখে সমাধানে আসতে পারি যে, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিককেই কর্মতৎপর-কর্মচঞ্চল, পরিশ্রমী হতে হবে। তাহলে দরিদ্রতা নিরসন সম্ভব হবে।

কিন্তু পাঠকবন্ধুরা ! আবার লক্ষ্য করুন, হযরত ওমর রা. যে সোনালী সমাজ গড়েছিলেন তার আসল সোপান কী ছিল?

তিনি যাকাত ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে রক্ষা করেছিলেন। নবীজির সা. ইন্তেকালের পর, কেউ যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানালে খলিফা আবু বকর রা. ঘোষণা করেছিলেন: আল্লাহর কসম! রাসূলের জামানায় যেই উটের রশিটি দেওয়া হত এখন যদি কেউ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’

এতটা কড়াকড়ি ছিল যাকাতের ব্যাপারে। এবং এ নীতি হযরত ওমর রা. এর যুগেও বহাল ছিল। আর এ কারণেই তিনি দারিদ্রমুক্ত, সোনালী যুগের রূপকার হিসেবে ইতিহাসে আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আমাদের যুগেও রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তা এতটা ধরাধরি-কড়াকড়ি পর্যায়ে না। আর এ জন্যই আমরা এত সংস্থা-সংগঠন থাকা সত্ত্বেও সফলতার সোনালী সূর্যের দেখা পাচ্ছি না।

আজো যদি আমরা যাকাত ব্যবস্থার যথাযথ বিধান করতে পারি তবে আমাদের সমাজেও হযরত ওমর রা. এর যুগের শান্তি নেমে আসবে। কারণ যাকাতের মাধ্যমে ধনী -গরীবের সম্পদের বৈষম্য দূর হয়। ধন-সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। আর দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে ধন-সম্পদের সুষম বণ্টন।

সুতরাং আমরা দাবী রাখতে পারি রাষ্ট্রীয়ভাবে কড়াকড়ি করে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হোক। আর তবেই সমাজ থেকে দরিদ্রতা বিদূরিত হবে। নিরন্ন, আর্ত, পীড়িতদের আহাজারি আর এভাবে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হবে না।

সামনে রমযান মাস। রমযানে কেউ একটি ফরয আদায় করলে ৭০টি ফরয আদায়ের সাওয়াব পায় এবং একটি নফল আদায় করলে একটি ফরয আদায়ের সাওয়াব পায়। তাই আসুন, রমযান থেকেই আমরা যাকাত সদকা আদায়ে যত্নবান হই।

আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি দারিদ্র নিরসনে ইসলাম যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেই সমস্ত নীতি আমাদের সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন:

১.দেশের সকল নাগরিককে কর্মঠ করে তোলা ও ভিক্ষা-বৃত্তির অবসান ঘটানো।

২. যাকাত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা

৩.সুদপ্রথাকে নির্মূল করা। বর্তমানে দেশে সুদভিত্তিক অনেক এন.জি.ও. আছে। এতে দরিদ্ররা সাময়িক উপকৃত হলেও বস্তুত এক পর্যায়ে তারা তাদের ভিটা-বাড়ি পর্যন্ত হারাচ্ছে। মূলত: সুদ কোন কালেই উপকারী বিষয় নয়। ইসলাম তাই সুদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই মহাপাপী ঘোষণা করেছে।

৪.সর্বোপরি সকলের মাঝে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির উন্মেষ ঘটানো। নবী সা. ইরশাদ করেন: ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয় যে, ‘উদরপূর্তি করে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী অভূক্ত থাকে।’ (বায়হাকী)।

প্রিয় পাঠকবন্ধুরা! সমাজে এই নীতিগুলো চালু করতে হলে আমাদের প্রত্যেককেই স্বেচ্ছায় এর প্রতি দায়িত্বশীল, যত্মশীল হতে হবে। কারণ এক একটি মানুষ নিয়েই সমাজ গঠিত।

সুতরাং আমরা এ নীতিগুলো পালন করা মানেই সমাজে পালিত হওয়া। তাই আমাদের এ দায়িত্ব যদি আমরা নিজেরা সেচ্ছায় পালন করি তবে অচিরেই সমাজ দারিদ্রমুক্ত হয়ে শান্তির নীড়ে পরিণত হবে।

সুতরাং আসুন, এগিয়ে আসুন, এ দায়িত্ব নিজের মনে করে কাধে তুলে নিন। আজকের বিশ্বের বিপন্ন জনতার আহাজারি আপনাকেই খুজে । মানবতার এ ক্রান্তিলগ্নে আপনি এগিয়ে আসুন। আপনার এ আত্মত্যাগের কথা মানুষ জানুক বা না জানুক সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞ দয়াময় আল্লাহ অবশ্যই জানবেন।

হে আল্লাহ! সমাজ থেকে দরিদ্রতা দূর করে খোলাফায়ে রাশেদার শান্তি প্রতিষ্ঠার তাওফীক আমাদের দাও। আমীন! ছুম্মা আমীন!!

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।

সূত্র: islamientertainment.com

4 thoughts on "বিপন্ন মানবতা: মুক্তির উপায় কি? না দেখলে মিস করবেন"

  1. tanvirtheboss Subscriber says:
    ইসলাম মুক্তি না বাal পারে এই জন্যেই তো ইসলামীক দেশগুলোর এমন দুরাবস্থা । পৃথিবীর সবচেয়ে মূর্খ, গরিব আর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলো ইসলামিক । নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করে মরতেছে । আর লেখাপড়া শিখে মানুষজনও তাই শান্তির দেশ বলে পরিচিত ইউরোপের ও আমেরিকায় ছুটছে ।
    1. MD Shakib Hasan Contributor Post Creator says:
      .
    2. Abrar Fahim Contributor says:
      মালয়েশিয়া,ওমান,তুর্কি,ব্রুনাই,বাহারাইন,সৌদি আরব, আরব আমিরাত,ইরান,লিবিয়া, কুয়েত এর কথা মনে হয় দাদা ভুলে গেছেন।
    3. নীরব Contributor says:
      এই জন্য ই তো দাদারা মধ্যপ্রাচ্য এর দেশ গুলো তে কামলা দিতে যায়..

Leave a Reply