আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
মিসওয়াক করার গুরুত্ব, ফযিলত ও পদ্ধতি
ইসলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। অবাক করা ব্যাপার হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও ইবাদাতের একটি বিশেষ অংশ এবং ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে মুখ এবং দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। মুখ পরিষ্কারের ব্যাপারে রাসূল সা: বলেন, “তোমারা মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখ ।” [১]
মিসওয়াক করার গুরুত্ব
মুখ পরিষ্কার রাখার বড় মাধ্যম ও পন্থা হল দাঁত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা । যদি দাঁত পরিষ্কার না থাকে বা দাঁতে কোন প্রকার রোগ-ব্যাধি থাকে তবে তা দেখতে যেমন বিশ্রী তেমনি দুর্গন্ধও বের হয়।
ফলে অন্যের ইবাদাতের পাশাপাশি নিজের ইবাদাত নষ্ট হয়। আর দাঁতের সুরক্ষার নববী এবং সুন্নত হল মিসওয়াক করা। আজকের এই লেখায় মিসওয়াক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
মিসওয়াক কি
মিসওয়াক শব্দটি ‘সিওয়াক’ ধাতু থেকে নির্গত যার অর্থ মাজা, ঘষা। মূলত গাছের ডাল বা শিকড়কে তথা যা দিয়ে দাঁত মাজা হয় তাকে মিসওয়াক বলে।
মিসওয়াক করার গুরুত্ব
মিসওয়াকের গুরুত্ব বর্ণনা করে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
আমি তোমাদেরকে বেশী বেশী মিসওয়াক করার নির্দেশ দিচ্ছি।” [২]
হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা-কারী এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। [৩]
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যদি আমার এরূপ ধারনা না হত যে, এই বিষয়টি আমার উম্মতের উপর (অথবা বলেছেন যে লোকদের উপর) কঠিন হয়ে যাবে তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রত্যেক নামাযের জন্য (অজুর সাথে) মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম। [৪]
উপরে উল্লেখিত ৩টি হাদিসের মধ্যমে সহজেই মিসওয়াকের গুরুত্ব অনুমেয়। মিসওয়াক করার ব্যাপারে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার বার এবং অনেক বেশী বেশী তাকীদ করেছেন। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিগত আমল ছিল মিসওয়াক করা যেমন:
হযরত সুরাইহ ইবনে হানী (রা:) বলেন,
আমি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি কাজ করতেন? তিনি জওয়াব দিলেন, সর্বপ্রথম তিনি মিসওয়াক করতেন। [৫]
এছাড়া হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিবেলা সালাত আদায় করতে উঠলে মিসওয়াক দ্বারা আপন দাঁত মাজতেন। [৬]
মিসওয়াকের ফজিলত
★মিসওয়াকের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। [৬]
★মিসওয়াকের মাধ্যমে মুখের পবিত্রতা অর্জিত হয়। [৬]
★মিসওয়াক করা সকল নবীদের সুন্নত। [৭]
★মিসওয়াক করে সালাত আদায় করলে ৭০ গুন বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। [৮]
★মাথার ব্যথা ও কাশি দূর হয়।
দাঁত মজবুত হয় ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
★পাকস্থলী এবং শরীর শক্তিশালী হয়।
এছাড়া মিসওয়াক করার আরও অসংখ্য ফজিলত এবং উপকার রয়েছে যার সবগুলো এখানে দেয়া সম্ভব নয়।
মিসওয়াক নির্বাচন ও ধরণ
যেসব গাছের ডাল তিতা সেসব ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। মিসওয়াক নরম, হাতের আঙ্গুলের মত মোটা হওয়া এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। যায়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। [৯]
মিসওয়াক করার নিয়ম
মিসওয়াকের নিচে ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল আর মিসওয়াকের উপরে মধ্যমা ও তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা এর মাথার নিচ ভালভাবে ধরা এভাবে মিসওয়াক করা
হযরত ইব্ন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে। মিসওয়াক করার পূর্বে মিসওয়াক পানিতে ভিজিয়ে নেয়া জরুরি এবং উত্তম। মিসওয়াক করার সঠিক নিয়ম হল, মুখের ডানদিক থেকে শুরু করা এবং দাঁতের প্রস্থের দিক থেকে মিসওয়াক করা, দৈর্ঘ্যের দিক থেকে নয়।
প্রথমত উপরের দাঁতের ডান দিক তারপর উপরের দাঁতের বাম দিক। উপরের দাঁত মিসওয়াক করার পর নীচের দাঁতের ডান দিকে তারপর নিচের দাঁতের বাম দিকে। এবং শেষে দাঁতের ভিতরের দিকে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে মাজতে হবে।
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি কাজ তিনবার করে করা উত্তম। প্রত্যেক বার মাজার পূর্বে মিসওয়াক ধুয়ে নেয়া মোস্তাহাব। [৯]
শুয়ে থাকা অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ তাই তা পরিহার করা উচিত। মিসওয়াক করা শেষ হলে তা ধুয়ে দাড় করিয়ে রাখা উচিত।
মিসওয়াক না পাওয়া গেলে আঙ্গুল, শুকনো কাপড় দ্বারা মিসওয়াক করাও জায়িয এবং এতে মিসওয়াকের ফযিলত লাভ হবে।[৯]
মিসওয়াক কখন করতে হয়
অনেক উলামায়ে কেরাম অযুতে কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করার কথা বলেছেন তবে আবার কেউ কেউ বলেছেন অজুর পূর্বে মিসওয়াক করার কথা। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর। ঘুমাতে যাওয়ার আগে। নামাযের আগে। মজলিসে যাওয়ার পূর্বে এবং কুরআন ও হাদিস তিলাওয়াত করার পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
শেষ কথা
মিসওয়াক ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এই আমল প্রত্যেকের করা জরুরি। প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিত সন্তানকে ছোট অবস্থায় মিসওয়াক করার উপকারিতা বর্ণনা করে মিসওয়াক করাতে অভ্যস্ত করা।
এছাড়া একজন আরেক জনকে মিসওয়াক হাদিয়া তথা উপহার হিসাবে দেয়া উচিত এতে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা বৃদ্ধির পাশাপাশি সওয়াব এবং ইসলামের দাওয়াত হয়ে যায়।
সূত্র:
১. বাযযার
২. বুখারী শরীফ
৩.নাসায়ী
৪. বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ
৫. রিয়াযুস সালেহীন
৬. সুনানে আন-নাসায়ী পবিত্রতা
৭. তিরমিযী হা/১০৮০, ১/২০৬
৮. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৯, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৬১-৬২; হাকেম হা/৫১৫; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৮৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯, ২/৭৬ পৃঃ।
৯. দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।
2 thoughts on "মিসওয়াক করার গুরুত্ব, ফযিলত ও পদ্ধতি। সবাই জেনে নিন জীবনে অনেক কাজে লাগেবে"