আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন…..? আশা করি সবাই ভালো আছেন । আমি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি ।আসলে কেউ ভালো না থাকলে TrickBD তে ভিজিট করেনা ।তাই আপনাকে TrickBD তে আসার জন্য ধন্যবাদ ।ভালো কিছু জানতে সবাই TrickBD এর সাথেই থাকুন ।
সূরা ইউসুফের ৫টি শিক্ষা যা আপনার জীবনের জন্য প্রয়োজন
সূরা ইউসুফের ৫টি শিক্ষা যা আপনার জীবনের জন্য প্রয়োজন
আল্লাহ তায়লা কুরআন নাযিল করেছেন মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য। হেদায়েতের আলো অন্তরে দেয়ার জন্য। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য উপদেশ, আদেশ, বিধি-বিধান ইত্যাদি প্রদান করেছেন। এসব অনুসরণের দ্বারা দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হয় তেমনি সুন্দর হয় আখিরাতের জীবন।
কুরআনে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। প্রতিটি সূরার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা। সেই শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা হয়তো কোন ঘটনার মধ্যমে দিয়েছেন অথবা কোন উদাহরণের মাধ্যমে দিয়েছেন। তাই আজকে আমরা এই কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা- আল ইউসুফের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করবো।
১. শত কষ্টেও আল্লাহর অবাধ্য হওয়া যাবে না
আল্লাহ তায়লা বলেন,
ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।– আয়াত : ৩৩
হযরত ইউসুফ আঃ এর বাল্যকাল শুরু হয় দুঃখ আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে। পিতা থাকা স্বত্বেও তিনি পিতার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। বাল্যকালেই তাঁর ভাইয়েরা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাকে কূপের মধ্যে ফেলে দেয়। সেখান থেকে আবার তাকে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
যুবক বয়সেও তাঁর দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি যোগ হয়েছে অনেক কঠিন কঠিন পরীক্ষা। জুলেখা তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে বন্দি করে।
কিন্তু এতকিছুর পরেও তিনি আল্লাহর অবাধ্য হননি। আল্লাহর ইবাদত করা বন্ধ করেন নি। উক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহর উপর হযরত ইউসুফ আঃ এর আনুগত্যের কথাই ফুটে উঠেছে। পাপের পথ বেঁছে না নিয়ে, তিনি কারাগারের অন্ধকারের জীবন কাটানোকে বেছে নিয়েছেন।
২. হিংসা করা যাবে না
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তিনি বললেন: বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।– আয়াত : ৫
হিংসা একটি সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে। একটি পরিবারের মধ্যে তৈরি করে বিশৃঙ্খলা। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত হল হযরত ইউসুফ আঃ ও তাঁর হিংসুটে ভাইয়েরা।
হযরত ইউসুফ আঃ রাতে একটি স্বপ্ন দেখেন এবং পরবর্তীতে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব আঃ এর নিকট বর্ণনা করেন। হযরত ইয়াকুব আঃ এই স্বপ্নের কথা ভাইদের নিকট বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তাঁর ভাইয়েরা তাঁর হিতাকাঙ্খী ছিলেন না। তাঁর ভাইয়েরা সর্বদা তাকে নিয়ে হিংসা করতো।
তাই একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের উচিত হিংসা পরিহার করা। অপর ভাইয়ের সফলতা দেখে খুশি হওয়া উচিত। অন্যের সফলতা দেখে সর্বদা “মাশাআল্লাহ” বলা উচিত।
৩. আল্লাহর উপর ভরসা হারানো যাবে না
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।– আয়াত : ৮৭
হযরত ইয়াকুব আঃ তাঁর সন্তান হযরত ইউসুফ আঃ কে হারানোর পরেও আল্লাহর উপর বিন্দুমাত্র আস্থা হারাননি। তিনি পুত্র বিয়োগের শোকে অন্ধ হয়ে যান কিন্তু সর্বদা এক আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি আর অনুশোচনা করতেন। হযরত ইউসুফ আঃ এর ভাইয়েরা এসে যখন বলেছিল ইউসুফ আঃ কে বাঘে নিয়ে গেছে। তখন ইয়াকুব আঃ তাদের কে বলেন তারা যেন ইউসুফ আঃকে খোঁজা বন্ধ না করে।
একটু চিন্তা করুন হযরত ইয়াকুব আঃ তাঁর সন্তানকে সেই বাল্যকালে হারান। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও আল্লাহর উপর তাঁর আস্থা বিন্দু মাত্র কমেনি। তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দোয়া কবুল করবেন এবং তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা তাই করেছেন, আল্লাহ তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে দেন।
আমাদেরও উচিত সব ধরনের বিপদ আপদে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখা।
৪. সকল অবস্থায় ধর্য্য ধারণ করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তিনি বললেন: কিছুই না, তোমরা মনগড়া একটি কথা নিয়েই এসেছ। এখন ধৈর্য্যধারণই উত্তম। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের সবাইকে একসঙ্গে আমার কাছে নিয়ে আসবেন তিনি সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।– আয়াত : ৮৩
একবার চিন্তা করুন হযরত ইউসুফ আঃ জীবনের কত কঠিন পর্যায় পার করেছেন। আর এসব কঠিন পর্যায়ে তিনি কি পরিমাণ ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিয়েছেন। ধৈর্য্য ধারণ করার কারণে তিনি অসাধারণ অনেক কিছুই পেয়েছেন।
দুনিয়ার সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় ক্ষণস্থায়ী। আসল চিন্তা পরকালের হওয়া উচিত। সেখানকার সুখ-শান্তি কিংবা কষ্ট চিরস্থায়ী তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দুনিয়ার জীবনের বিপদ আপদে ধর্য্য ধারণ করা।
৫. ক্ষমা করা
আল্লাহর বানি-
বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তিনি সব মেহেরবানদের চাইতে অধিক মেহেরবান।– আয়াত : ৯২
হযরত ইউসুফ আঃ যখন জীবনের শেষ পর্যায়ে আসেন তখন তিনি অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁর জীবনের শেষ সময়টি হল প্রত্যেক মানুষের জন্য অসাধারণ শিক্ষা। হযরত ইউসুফ আঃ ভাইদের ষড়যন্ত্রে দীর্ঘকাল ধরে যেসব বিপদাপদ ভোগ করেছিলেন, এ সময় সেগুলোর কথা মোটেই উল্লেখ করেননি, বরং আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ রাজির কথাই উল্লেখ করেছেন।
তিনি তাঁর ভাইদের ক্ষমা করে দেন এবং তাঁর পিতা ও পরিবারকে তাঁর কাছে নিয়ে আনেন। এর থেকে আমাদেরও অনেক কিছু শিখার আছে। বলা হয়ে থাকা ক্ষমা মহৎ গুন। আর একজন মুসলমান হিসাবে এই মহৎ গুন প্রত্যেক মুসলমানের অর্জন করা উচিত।
শেষ কথা
এই সামান্য লেখায় হয়তো সম্পূর্ণ সূরার শিক্ষা তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে সবচেয়ে ভাল হয় আল কুরআনের এই গুরুত্বপূর্ণ সূরাটি বার বার পাঠ করা। হযরত ইউসুফ আঃ এর সম্পূর্ণ জীবনী একজন মানুষের জন্য বিশাল শিক্ষা। আর প্রতিটি শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন। উত্তম চরিত্র গঠনের জন্য উক্ত সূরা অন্যতম দৃষ্টান্ত।
দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।