আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !
সুপ্রিয় পাঠক,
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন মানুষকে দুনিয়াতে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। কাউকে রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন দিয়ে। আবার কাউকে সম্পদের প্রাচুর্য, বিলাস বহুল জীবন ও সুখ-সমৃদ্ধি দান করে। দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ যেমন আল্লাহর পরীক্ষা তেমনি সুখ-শান্তি ও তেমনি একটি পরীক্ষা । প্রতিটি পরিস্থিতিতে বান্দা কতটুকু আল্লাহর স্মরণ করছে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার পরীক্ষা ।

কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তোমরা আমার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর , তাহলে আমি অধিক পরিমাণে প্রদান করব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে জেনে রেখ আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন’ (ইবরাহীম-৭)।

সুতরাং মানুষকে পূর্বের অবস্থা স্মরণ রেখে আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। অন্যথা অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে দুনিয়াতেই আল্লাহ শাস্তি দিতে পারেন। এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছি প্রণিধানযোগ্য :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ)-কে তিনি বলতে শুনেছেন যে, বনী ইসরাঈলের মাঝে তিনজন ব্যক্তি ছিল; কুষ্ঠরোগী, টেকো ও অন্ধ। মহান আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন এবং তাদের নিকট একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

 

অতঃপর কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে তিনি বললেন, তোমার সবচেয়ে পসন্দের জিনিস কোনটি?
সে বলল, সুন্দর চামড়া এবং সেই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ, লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে।
ফেরেশতা তার শরীর মুছে দিলেন। এতে তার রোগ দূর হ’ল এবং তাকে সুন্দর বর্ণ দান করা হ’ল। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমার নিকট কোন সম্পদ সবচেয়ে বেশী পসন্দনীয়? সে বলল, উট ।

তাকে তখন দশ মাসের গর্ভবতী একটি উটনী দেয়া হ’ল। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দিন।

 

 

তারপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, তোমার সবচেয়ে পসন্দের জিনিস কোনটি?

সে বলল, সুন্দর চুল এবং এই টাক হ’তে মুক্তি, লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে।
তিনি তার মাথা মুছে দিলেন। এতে তার টাক ভাল হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা হ’ল।
তিনি প্রশ্ন করলেন, কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে বলল, গরু।
তখন তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হ’ল। তিনি বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন।

 

 

তারপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে এসে প্রশ্ন করলেন, তোমার অধিক পছন্দের জিনিস কি?
সে বলল, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন, আমি যাতে মানুষকে দেখতে পারি।
ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করলেন। এতে তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়?

সে বলল, ছাগল। তাকে তখন এমন ছাগী দেয়া হ’ল, যা অধিক সংখ্যক বাচ্চা দেয়।

 

 

তারপর উট, গাভী ও ছাগলের বাচ্চা হ’ল এবং উট দিয়ে একটি ময়দান, গরু দিয়ে আরেকটি ময়দান এবং ছাগল দিয়ে অন্য একটি ময়দান ভরে গেল।

তারপর ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে বললেন, আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে।

আজ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছতে পারি, তারপর তোমার সহায়তায়।
যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দর বর্ণ, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, সে আল্লাহর নামে তোমার নিকট আমি একটা উট চাচ্ছি, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। সে বলল, আমার উপর অনেকের অধিকার রয়েছে।

তিনি বললেন, তোমাকে বোধহয় আমি চিনি। তুমি কুষ্ঠরোগী ছিলে না? লোকেরা তোমাকে কি ঘৃণা করত না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? আল্লাহ তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন। সে বলল, এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও তাহ’লে তোমাকে যেন আল্লাহ আগের মতো করে দেন।

এরপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রথম রূপ ধারণ করে এসে অনুরূপ বললেন, প্রথম লোকটিকে যা বলেছিলেন এবং সে সেই উত্তরই দিল, যা পূর্বের লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন, তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পুনরায় আগের মতো করে দেন।

এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তাঁর আগের রূপ ধারণ করে এসে বললেন, আমি একজন মিসকীন ও পথিক। আমার সবকিছু সফরে নিঃশেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছতে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, তারপর তোমার সহায়তায়। সেই আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল সাহায্য চাচ্ছি, যিনি তোমাকে তোমার চোখ ফেরত দিয়েছেন।

লোকটি বলল, আমি অন্ধ ছিলাম। আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি আল্লাহ ফেরত দিয়েছেন। কাজেই তোমার যত ইচ্ছা মাল তুমি নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহর ওয়াস্তে আজ তুমি যা কিছু নিবে তাতে আমি তোমাকে বাঁধা প্রদান করব না।
ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তোমার কাছেই রাখ।

তোমাদেরকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দু’জন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন (বুখারী হা/৩৪৬৪; মুসলিম হা/২৯৬৪)

আল্লাহ যে মানুষকে পরীক্ষা করেন উপরোক্ত হাদীছ তার বাস্তব প্রমাণ। সুতরাং দুনিয়ার মোহ-মায়ায় ও এর প্রাচুর্যে আবিষ্ট হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে গেলে চলবে না , আখিরাতকে ভুলে গেলে চলবে না , কেবল মাত্র নিজের স্বার্থ দেখলে হবে না , সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললে হবে না । আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যা যা দিয়েছেন সে সব কিছুর জন্য ই সুকরিয়া আদায় করতে হবে । ধন সম্পদ যেহেতু আল্লাহর দান । সেহেতু বেশি বেশি করে দান সদকা করতে হবে ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক । সঠিক পথে পরিচালনা করুন । সবসময় আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো , সুকরিয়া আদায় করবো ।
আমিন ।
আল্লাহাফেজ !

4 thoughts on "একটি সুন্দর ইসলামিক গল্পঃ আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং আল্লাহর পরীক্ষা ।"

  1. MD Shakib Hasan Contributor says:
    পোস্ট আছে এই বিষয় নিয়ে
  2. Rifat Author Post Creator says:
    তাই নাকি ?
    তার মানে ট্রিকবিডিতে যতো পোস্ট আছে সবগুলো আমাকে পড়ে দেখতে হবে । তার পর পোস্ট করার কথা ভাবতে হবে ।
    1. imriyad Contributor says:
      obossoi na. kintu ontoto ja niye post korben ta niye valo vabe search kore nite hobe
  3. Rifat Author Post Creator says:
    Amio atai sunte chaisilam

Leave a Reply