আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !!
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম !
হে আলোর পথের যাত্রী , মুসলমান ও দ্বীনি ভাই , এমন সময় কি আপনার জীবনে কখনো ঘটেছে ? যখন আপনি বড় অসহায় সময় পার করছেন । সময় খুব খারাপ কাটছে , হাতে টাকা নাই , খাবারের জন্য কিছু নাই , দিনকাল খারাপ যাচ্ছে । আর সেই সময়ই আপনার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করে যেটা সত্যিই অনেকটা যাদুর মতো । আমাদের জীবনটাই বদলে দেয় । আলহামদুলিল্লাহ ! সবকিছুই আবার খুব সুন্দর ভাবে চলতে শুরু করে । কিন্তু এখানে সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমরা কখনোই আশা করিনি এভাবে সবকিছুই আবার ঠিক হয়ে যাবে । এমন ঘটনা আমার জীবনে অনেক ঘটেছে ।
আপনার জীবনে এমন ঘটনা কি কখনো ঘটেছে ? কমেন্টে জানাবেন । যদি ঘটে তাহলে আপনি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান মানুষ । আল্লাহর বিশেষ রহমতের দৃষ্টি আপনার উপর আছে ।
বিষয়টি পরিষ্কার বোঝার জন্য সংগৃহিত ঘটনা থেকে একটি ঘটনা লিখে তুলে ধরছি , মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে পড়বেন ।

……………………—->শুরু<—-………………………

সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাবীহার মনে পরে আজকের ক্লাসের এসাইনমেন্টটা করা হয় নি। উফ্ফ্! মনটাই খারাপ হয়ে গেলো! কার ভালো লাগে রোজার মাসে এত ক্লাস এসাইনমেন্ট!স্কুলের মত যদি ভার্সিটিও পুরো রোজা বন্ধ থাকতো কত ভালো হতো!সারারাত কোরআন তেলাওয়াত করে এখন তার চোখ ঘুমে ক্লান্ত।ভাগ্যিস, রুমমেটরা সবাই বাড়ি চলে গেছে।তাই তো রাত জেগে কোরআন তেলাওয়াত করতে পেরেছে।এসব ভাবতে ভাবতেই সাবীহা ফ্রেশ হয়ে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।এক ঘন্টার মধ্যে এসাইনমেন্ট শেষ করে রেডি হয়ে ক্লাসের জন্য বের হলো।রিকশা ডাকতে গিয়ে ভাবলো,”আচ্ছা আগে দেখি কত টাকা আছে।মাসের শেষের সময়টা এমনিতেই হাতখরচের টাকা কম থাকে।”ব্যাগ খুলে দেখলো এখন যে টাকা আছে তা দিয়ে রিকশা নিয়ে গেলে হেটে ফেরত আসতে হবে।আছরের পর হেটে ফিরতে ভালো লাগবে না।তার চেয়ে এখনই হেটে যাওয়া ভালো।

ক্লাস শেষে স্যার এক বস্তা শিট দিয়ে দিলো ফটোকপি করতে।মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো সাবীহার।কি দরকার ছিলো এত্তোগুলা শিট দেয়ার!শিটই যখন দিবে বই কেন কিনালো শুধু শুধু!এখন শিট ফটোকপি করলে হোস্টেলে আবার হেটে ফিরতে হবে আর ইফতার কিনার টাকাও তো থাকবে না!তাও শিট তো ফটোকপি করতেই হবে আর তো কোনো উপায়ও নেই।সারাদিন শুধু এএটাই ভাবলো হেটে নাহয় যাওয়াই যাবে কিন্তু ইফতার করবে কি!

সব ক্লাস শেষ করে সে হোস্টেলে ফিরলো।ফ্রেশ হতে যাবে এমন সময় তণুশ্রী এসে বললো,”আপু আজকে জিলাপি কিনসিলাম।তুমি পছন্দ করো তো তাই তোমার জন্য দু’টা রেখে দিসি।ইফতারে খেও।” ব্যাস! এতেই সাবীহা খুশি হয়ে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুনে গেলো।

বের হতে হলো হোস্টেলের খালার চিৎকারে।সে রেগে মেগে আগুন হয়ে বলছে,” কিতা হইসে হগলের! ইফতারের টেইম আই গেলো, অহনো কত্ত মাইয়া ইফতার নেয় নাই।”

মানে কি!

কি আজব! গত তিন বছর সাবীহা এই হোস্টেলে আছে, একবারও তো হোস্টেল থেকে ভুল করেও কাউকে একটা খেজুরও দেয়নি।আজ খালা কি বলে চিল্লাচ্ছে!কৌতুহল নিয়ে সে ডাইনিং হলে গেলো।সত্যিই তো সবাইকে ইফতার দেয়া হচ্ছে।এই সুযোগে হিন্দু মেয়েরাও প্লেট ভরে ইফতার নিয়া নিচ্ছে।সাবীহাও ইফতার নিতে নিতে খালা থেকে জেনে নিলো আজ নাকি হোস্টেলের মালিকের বাবার মৃত্যু বার্ষিকী, তাই উনি আজ সবাইকে ইফতার দিচ্ছেন।

আজানের আর মাত্র ৫/৭ মিনিট বাকি।

ইফতার সামনে নিয়ে সাবীহা অপেক্ষা করছে। সারাদিন সে ভেবেছে আজ বুঝি শুধু পানি দিয়েই ইফতার করতে হবে অথচ আর সামনে এখন কত্ত কি! ৪ পিস জিলাপি, ১টা কলা, ২ পিস আম, ২ পিস কাঠাল, ছোলা, ২টা পেয়াজু, ২টা বেগুনী, ১টা পাকোড়া, ১গ্লাস লেবুর সরবত।

আর এভাবে বসে থাকতে পারলো না সাবীহা।দো’আ করতে দু’হাত তুললো।বললো,”আমার রব, মালিক!আমার কোনো সন্দেহ নেই, তুমিই রাহমান।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ! তোমার কাছে আজ শুধু এইটুকুই চাই,যেন তোমার গোলামি করে আমি মরতে পারি।আমিন।”

দূর থেকে মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে…

————

গল্পটা কাল্পনিক।

তবুও একবার নিজের সাথে মিলিয়ে দেখেন তো। আপনার জীবনে কখনই সত্যিই এমন হয়নি যে,কোন কিছুর আশা আপনি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন অথচ সেটা আপনাকে এতোটা অবাক করে দিয়ে হয়েছে যা হয়ত আপনি ভাবেনই।একটু তো কৃতজ্ঞ হোন।

“শয়তান তোমাদের দারিদ্র‍্যের ভয় দেখায় ও অশ্লীল কাজ করার আদেশ করে, অথচ আল্লাহ্‌ তার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে ক্ষমা ও দানের প্রতিশুতি দিয়েছেন”(০২:২৬৮)

“আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হোন।”(০৭:১৪৪)

“আর যখন মানুষকে কোন মুসিবত (বিপদ) পেয়ে বসে তখন সে শুয়ে বসে ও দাঁড়ানো অবস্থায় আমার নিকট আকুল আবেদন করে, কিন্তু আমি যখন তার থেকে মুসিবত দূর করে দেই তখন সে এমনভাবে চলে যেন সে কখনও তার উপর আপতিত মুসিবতের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করেনি!”(১০:১২)

এই তিনটি আয়াত একটু ভেবে দেখুন।

সর্বদা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন । পরিস্থিতি যেমনি হোক আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন , সবসময়ই একমাত্র আল্লাহর ই শুকরিয়া আদায় করবেন ।
" বিপদ তো আল্লাহর পরীক্ষা , আর তা থেকে উদ্ধার আল্লাহরই অসিলা !"
-#রিফাত
বিপদে ফেলার মালিক ও আল্লাহ আবার তা থেকে উদ্ধার করার মালিক ও আল্লাহ ! মাঝখানে যেটা হবে সেটা আপনার ইমানের পরীক্ষা !
আল্লাহর হেদায়েত আপনার সাথেই আছে । এজন্যই তিনি আপনাকে ইসলামিক এই পোস্টটি পড়ালেন । আর হেদায়েত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয় ।

ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, এটাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি । দোয়া করবেন । আল্লাহ ভরসা ।
আলহামদুলিল্লাহ ।
সুবহানাল্লাহ ।
আল্লাহ হাফিজ !

2 thoughts on "আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় , জরুরি মুহূর্তে কিংবা দুঃসময়ের যখন আল্লাহর সাহায্য আসে , তখন ঘটতে থাকা সবকিছুই খুবই অপ্রত্যাশিত লাগে । ( একটি ঘটনার মাধ্যমে কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা )"

  1. J3H4D Contributor says:
    ভালো লাগলো,,, শিক্ষামূলক পোস্ট
    1. Rifat Author Post Creator says:
      অসংখ্য ধন্যবাদ ??

Leave a Reply