আসসালামু আলাইকুম।
সামনে শাবান মাস।
এখন এটা জানা জরুরি হয়ে পড়েছে মধ্য শাবানে (১৫ শাবান) কি রোযা রাখা যাবে; এ সংক্রান্ত হাদিসটি দুর্বল নাকি এসব বানোয়াট? ফেতনা থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে। [যেহেতু আজকের এই লেখা টি আমার ব্লগ (Readme2Know) এবং ওয়েবসাইটে পূর্বপ্রকাশিত সেজন্য কেউ কপি করিয়া বোকামি করিবেন না ]
((এক ভাই এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন ))
যার প্রশ্নটি ছিল এরকম::
হাদিস শরীফের একটি দুর্বল বর্ণনায় পাওয়া যায় “অর্ধ শাবানের রাত্রিতে তোমরা কিয়ামুল লাইল পালন কর এবং দিনে রোযা রাখ”
উক্ত হাদিস যয়ীফ (দুর্বল) জানার পরেও আমলের ফযিলতের বিবেচনা থেকে সে হাদিস গ্রহণ করা কি আমাদের জন্য জায়েয হবে? উল্লেখ্য, সে নফল রোযাটি আল্লাহ্র জন্য ইবাদত হিসেবে পালিত হয়; যেমনিভাবে কিয়ামুল লাইলও ইবাদত হিসেবে পালিত হয়। আর এটি তো জাল নয়, জয়ীফ মাত্র হতেও তো পারে যে হাদিসটা সঠিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। এর সম্ভাবনা তো রয়েছে।
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে, বর্তমান বিশ্বের প্রখ্যাত আলেমগণ দুইভাবে উত্তরটা দিয়েছেন। আলিমগণ বলেন:
এ বিষয় উত্তরে প্রথম কথা:
মধ্যবর্তী শাবানে নামায পড়া, রোযা রাখা ও ইবাদত করার ব্যাপারে যে হাদিসগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো যয়ীফ (দুর্বল) শ্রেণীর হাদিস নয়; বরং মাওযু (বানোয়াট) ও বাতিল শ্রেণীয় হাদিস,এ বিষয়ে আপনাকে পড়াশোনা করে জানতে হবে যে কোন হাদিস কিভাবে আসলো । এমন হাদিস গ্রহণ করা ও এর উপর আমল করা জায়েয নয়; সেটা ফযিলতের হোক কিংবা অন্য ক্ষেত্রে হোক। জয়ীফ হলেও সেটা আমলে নিয়ে আসা আলোচনা সাপেক্ষ। কিন্তু বানোয়াট / মাউজু পর্যায়ের হাদীসগুলো নিঃসংকোচে পরিত্যাজ্য।
এ বিষয়ে উদ্ধৃত রেওয়ায়েতগুলো বাতিল হওয়ার ব্যাপারে বহু আলেম তাদের মতামত তাদের লিখিত গ্রন্থের ব্যক্ত করেছেন এবং বলে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইবনুল জাওযি তাঁর রচিত ‘আল-মাওযুআত’ গ্রন্থে (২/৪৪০-৪৪৫), ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর রচিত ‘আল-মানার আল-মুনিফ’ গ্রন্থে (১৭৪ নং থেকে ১৭৭), আবু শামা আস-শাফেয়ি তাঁর রচিত ‘আল-বায়িছ আলা ইনকারিল বিদা ওয়াল হাওয়াদিছ’ গ্রন্থে (১২৪-১৩৭), আল-ইরাক্বি তাঁর রচিত ‘তাখরিজু ইহইয়ায়ি উলুমিদ দ্বীন’ গ্রন্থে (নং-৫৮২) এবং শাইখুল ইসলাম ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ গ্রন্থে (২৮/১৩৮) এ বর্ণনাগুলো বাতিল হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের ঐক্যমত উদ্ধৃত করেছেন।
তাছাড়া আপনি আরও লক্ষ্য করুন,
শাইখ বিন বায (রহঃ) মধ্য শাবানের রাত্রি (শবে বরাত) উদযাপনের হুকুম সম্পর্কে বলেন: নামায কিংবা অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে মধ্য শাবানের রাত্রি উদযাপন করা এবং ঐ দিনে বিশেষ রোযা রাখা: অধিকাংশ আলেমের নিকট গর্হিত কাজ এবং নব্য আবিষ্কৃত একটা আমল অর্থাৎ এক কথায় যাকে বলে বিদাআত। পবিত্র শরিয়তে এর পক্ষে কোন দলিল নেই।
উপরোক্ত আলেম আরও বলেন: মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত) এর ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই। এ বিষয়ে উদ্ধৃত সকল হাদিস মাওযু (বানোয়াট) ও যয়ীফ (দুর্বল); যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
ইসলামী শরীয়াতে এই রাত্রির কোন বিশেষত্ব নেই; এ রাতকে কেন্দ্র করেই / এ রাত্রে উপলক্ষে তেলাওয়াত, বা বিশেষ কোন নামায,বা সমাবেশ। হ্যাঁ, কোন কোন আলেম যে বিশেষত্বের কথা বলেছেন সেটা দুর্বল অভিমত। আর আপনি দলিল-প্রমাণ পাওয়ার পর অধিকাংশ আলেমের মতামত উপেক্ষা করে, গুটিকয়েক মতামত এবং দলিল ছাড়া মতামতের প্রতি কেন আপনি একমত হবেন?
অতএব, এ রাতে বিশেষ কোন ইবাদত করা জায়েয নয়। এটাই সঠিক। আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/৫১১)]
এ বিষয় উত্তরে দ্বিতীয় কথা::
যদি আমরা মেনেও নিই যে, এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো মাওযু (বানোয়াট) নয়; হাদীসটি আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী যয়ীফ (দুর্বল):
তাহলে এ বিষয়ে আলেমগণের বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে যয়ীফ (দুর্বল) হাদিসের উপর সাধারণভাবে আমল না করা; এমনকি যদি সেটা আমলের ফযিলতের ক্ষেত্রে হয় কিংবা উৎসাহপ্রদান ও নিরুৎসাহিত করণের ক্ষেত্রে হয় তবুও। সহিহ হাদিসে যা পাওয়া যায় সেটা গ্রহণ করাই একজন মুসলিমের জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া এ রাতকে ও দিনকে বিশেষত্ব প্রদান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেমন জানা যায় না; তাঁর সাহাবীবর্গ থেকেও জানা যায় না।
আল্লামা আহমাদ শাকির (রহঃ) বলেন: “… রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা সাব্যস্ত হয়েছে; ‘সহিহ হাদিস’ হিসেবে কিংবা ‘হাসান হাদিস’ হিসেবে; সেটা ছাড়া যা সহিহ সাব্যস্ত হয়নি সেটা দিয়ে কারো দলিল দেয়ার অধিকার নেই।[আল-বায়িছ আল-হাছিছ (১/২৭৮)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
উক্ত ২ মত মিলে আমার মতামত:
আমরা সব সময় সহিহ হাদিসের নাই, সুন্নাত নয় এমন বিষয় আমল করতে , ও তা প্রচার করতে যতটা চেষ্টা করি, এর তুলনায়
যা সহীহ হাদীসে রয়েছে, বা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, তাহা আমল করতে বা প্রচার করতে সিকি ভাগও আমরা চেষ্টা করি না। অথচ এটা করলেই ভালো হতো।
(প্রিয় পাঠক, আজকের ব্লগ সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করুন ও কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য যুক্ত করুন।)
যেহেতু আজকের এই লেখা টি আমার ব্লগ (Readme2Know Link) এবং ওয়েবসাইটে পূর্বপ্রকাশিত সেজন্য কেউ কপি করিয়া বোকামি করিবেন না -- ওয়েবসাইট থেকে কোনো কিছু কপি করলে ওয়েবসাইট অটোমেটিক্যালি আপনার পোষ্টের রিপোর্ট করবে যার ফলে ইউটিউব এর মত অটোমেটিক্যালি কপিরাইট স্ট্রাইক বা কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে আমি দায়ী নই। তবে কেউ ট্রিকবিডি থেকে এই পোষ্টের লিংক শেয়ার করতে পারেন বা আমার ব্লগের লিংক আপনারা আপনাদের ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন সে বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই. আল্লাহ আপনাদের সবাইকে ভালো রাখুন সুস্থ রাখুন সেই দোয়া রেখে আজকের মত বিদায়. ইনশাল্লাহ পরবর্তীতে কোন টিউটোরিয়াল বা ব্লগে আবারও দেখা হবে .
12 thoughts on "মধ্য শাবানে (১৫ শাবান) কি রোযা রাখা বা কোন আমল সম্পর্কে ইসলামের সঠিক বক্তব্য কি? এ সংক্রান্ত হাদিসটি দুর্বল নাকি এসব সাধারণ মানুষের বানানো?"