আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্বে বড় বড় প্রায় 10 টি আলামত ঘটবে। তার আগ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না যেটা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করে ছিলেন। যেটা আমরা সরাসরি হাদিস এবং কোরআন এর মাধ্যমে স্পষ্ট প্রমাণ পাই।

যে বড় 10 টি আলামত ঘটবে তার ভেতরে আমরা বড় বড় চারটি আলামত নিয়ে আলোচনা করব এই আর্টিকেলে।যদি আর্টিকেলটি পড়ার ইচ্ছুক থাকেন তাহলে একটু মন দিয়ে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। কারণ প্রত্যেক মুসলমানেরই এ সম্পর্কে সর্বদা জ্ঞান থাকা উচিত।

এক নম্বর বড় আলামতঃ


খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাই সাল্লাম এর আগমন: আমাদের নবী বলেছেন কেয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের হাতে কোন ক্ষমতা থাকবে না। বিধর্মীদের হাতে ক্ষমতা থাকবে এবং তারাই পৃথিবী শাসন করবে। আল্লাহর দ্বীনকে সবাই ভুলে যেতে থাকবে এবং দ্বীন সম্পর্কে অনেক ধরনের ভুল চিন্তা চেতনা থাকবে।এ কারণে আল্লাহ রব্বুল আলামীন পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন খলিফাকে পৃথিবীতে পাঠাবেন।

এবং তারপর থেকে মুসলমানদের এবং বিধর্মীদের বিশাল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংগঠন হবে। এমন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ এখনো পর্যন্ত কেউ দেখেনি। এবং আল্লাহর হুকুমে তখন মুসলমানরা যুদ্ধে বিজয়ী হবে। এবং তারপর থেকে মুসলমানরা পৃথিবী শাসন করবে। খলীফাতুল্লাহ আল মাহদী আলাইহিস সাল্লাম তিনি আমাদের মত সাধারন মানুষ হবেন।

খলীফাতুল্লাহ আল মাহদী আলাইহিস সাল্লাম এর পরিচয়: খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর বংশ থেকে জন্মগ্রহণ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তার নাম হবে আমার নামে মিল রেখে। অর্থাৎ আমার নাম মোহাম্মদ তার নাম হবে মোহাম্মদ।

এমনকি খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাই সাল্লাম এর বাবার নাম হবে আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আমার বাবার নামে মিল রেখেই। খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাই সাল্লাম কোন মাদ্রাসায় বা স্কুল কলেজে পড়ালেখা করবেন না। যেমনটা আমাদের নবী ছিলেন ঠিক তেমনই খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিল পাওয়া যাবে।

খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসার পূর্বে অনেক ভন্ড দাবিদার বের হবে।এমনকি খলীফাতুল্লাহ আল মাহাদী আলাই সাল্লাম তিনি নিজেও জানেন না তিনি আল্লাহর খলিফা।যখন তিনি পৃথিবীতে প্রকাশ পাবেন তখন জানতে পারবেন তিনি আল্লাহর খলিফা।

দ্বিতীয় নম্বর বড় আলামতঃ


দাজ্জালের আগমন: কিয়ামতের পূর্বে মিথ্যুক দাজ্জালের আগমন ঘটবে। সে নিজেকে নবী এবং পরবর্তীতে খোদা দাবিদার করবে। এমনকি তার কাছে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে যেটা সাধারণ মানুষের থাকবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর এত ক্ষমতা দিবেন যে দাজ্জাল যা বলবে তাই হবে।

দাজ্জালের আগমন ঘটবে ঈমানদারকে পরীক্ষা করার জন্য। খলীফাতুল্লাহ আল মাহদী আলাইহিস সাল্লাম এর যুগে দাজ্জালের আগমন ঘটবে। দাজ্জাল সারাবিশ্বে ঈমানদার কে পরীক্ষা করার জন্য নানারকম অলৌকিক জাদু দেখাবে। তার কাজকর্ম কথাবাত্রা শুনে অনেকেই তাকে খোদা দাবী করবে নাউজুবিল্লাহ।একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্ব ক্ষমতার মালিক পৃথিবীর নিচে এবং উপরে সর্ব কিছুই একমাত্র তাঁরই।

অনেকেই দাজ্জালের কথা শুনে দাজ্জাল কে বলবে তুমি যদি খোদা হও তাহলে মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখাও। অথবা আমার বাবা 500 বছর আগে মারা গেছে তাকে জীবিত করে দেখাও। একথা শুনে দাজ্জাল সাথে সাথে তার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখাবে সাধারণ মানুষের কাছে। এগুলো দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হবে এবং তাকে খোদা হিসেবে মেনে নেবে।

দাজ্জালের পরিচয়: দাজ্জাল দেখতে সাধারণ মানুষের মত নয়। দাজ্জাল দেখতে বেটে এবং তার গায়ের রং লালচে হবে। হাদিস থেকে জানা যায় তার কোন এক চোখ বন্ধ থাকবে।এমনকি হাদিস থেকে এটাও জানা যায় সেটা হলো তার কপালে কাফ, ফা, র‌ অর্থাৎ কাফের লেখা থাকবে। যেটা সাধারণ মানুষ দেখতে পাবে অথবা ঈমানদাররা দেখতে পাবে।

সর্বোপরি দাজ্জাল একজন আমাদের মত মানুষ। সে হাঁটাচলা খাওয়া-দাওয়া প্রসাব-পায়খানা সবকিছুই করবে। শুধুমাত্র তার অনেক অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে যেটা সাধারণ মানুষের থাকবে না। দাজ্জাল কিছুদিনের ভিতরেই সারা বিশ্ব সফর করবে এবং ঈমানদারকে বেইমান বানানোর চেষ্টা করবে।

তিন নম্বর বড় আলামতঃ


হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন: হযরত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন আল্লাহর প্রেরিত নবী। আমাদের নবীর আগমনের পূর্বে ঈসা আলাইহিস সাল্লাম এর আগমন হয়েছিল। তবে আল্লাহর হুকুমে তিনি আকাশের উপরে চলে এসেছিলেন।

এবং এখনো পর্যন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করেন নি।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্বে ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়াতে পাঠাবেন। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য এবং মুসলমানকে চূড়ান্ত বিজয় করার জন্য আগমন করবেন। তিনি আসার পূর্বে মুসলমানরা প্রায় অন্ধকারে ডুবে যাবে।

অনেক ভালো ভালো ঈমানদাররা কাফের হয়ে যাবে মুনাফিক হয়ে যাবে বেঈমান হয়ে যাবে। ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর আবার ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংগঠন হবে। তারপর চূড়ান্ত বিজয় হবে মুসলমানদের । তারপর তিনি পৃথিবী শাসন করবেন। তাছাড়া আরও হাদিস থেকে জানা যায় হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম 40 বছর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন।

ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম পৃথিবীতে আগমন করার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যেমন তিনি অন্ধ মানুষের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে অন্ধ লোক ভালো হয়ে যেত। তাছাড়া তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন। তাছাড়া আরো অন্যান্য ক্ষমতার কোথাও হাদিস এবং কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি।

এমনকি তিনি কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আগমন করলেও তাকে আল্লাহ রব্বুল আলামিন আবার অলৌকিক ক্ষমতা দিবেন। তবে এই ক্ষমতা তিনি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাধারণ মানুষের কাছে দেখাবে। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম অ্যাডমিশন হবে দাজ্জালকে হত্যা করা । এবং মানুষের ভুল ভ্রান্তি বাতিল করে ও সঠিক এলেম গুলো প্রচার করা।

চার নম্বর বড় আলামতঃ

ইয়াজুস মাজুস এর আগমন: পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্বে ইয়াজুস মাজুস নামক প্রাণীর আগমন ঘটবে। সেটা সাধারণত ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে। ইয়াজুস মাজুস সাধারণত কোন এক গুহায় আঁটকে রয়েছে। এবং প্রতিদিন পৃথিবীতে আগমন করার জন্য নানারকম কলাকৌশল ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইয়াজুস মাজুস পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী সবকিছু তছনছ করতে থাকবে। এমনকি সেকেন্ডের ভিতর নদীর পানি তারা পান করতে থাকবে। খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে সেই মুহূর্তে। এমনকি তারা পৃথিবীর সবকিছু যেখানে যা আছে ভাঙচুর করে ধ্বংস করতে থাকবে। যেহেতু ইয়াজুজ মাজুজের আগমন ঘটবে ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে।সেহেতু সেই সময়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রার্থনা করবেন।

ইয়াজুস মাজুস এর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সেই যুগে হবে যেটা এখনো পর্যন্ত কেউ কল্পনা করতে পারিনি। একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই ভাল জানেন সেই যুগের পরিস্থিতি কেমন হবে। অতঃপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া কবুল করবেন।

এবং ইয়াজূজ এবং মাজুস প্রাণীগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের সংখ্যা ব্যাপক পরিমাণে। এমনকি মানুষের সংখ্যা থেকেও তাদের সংখ্যা আরো অনেকগুণ বেশি হবে।ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইয়াজুস মাজুস প্রাণী গুলোকে ধ্বংস করবেন। এবং কোন এক বৃষ্টি পৃথিবীতে দিয়ে তাদের পরিষ্কার করে দিবেন এবং দুনিয়াতে আবার ফিরে আসবে।

ইয়াজুস মাজুস সাধারন কোন প্রাণী নয়। ইয়াজুস মাজুস পৃথিবীতে আগমন করার সাথে সাথে আকাশে তীর ছুড়তে থাকবে। এবং তারা ভাববে উপরে যা কিছু আছে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তারপর পৃথিবীর এদিকে-সেদিকে সবকিছু নিজেরা কন্ট্রোল করবে এবং ইচ্ছা অনুযায়ী কার্যক্রম করবে।

আর্টিকেল এর শেষ কথা


সম্মানিত পাঠক গনেরা আজকের এই ছোট্ট আর্টিকেল থেকে আমরা কিয়ামতের বড় বড় চারটি আলামত নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি মনদিয়ে আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে, এ বিষয়ে অবশ্য স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আরও ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর আলামত দেখা দিবে।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যতক্ষণ না পৃথিবীতে এগুলো সংঘটিত হবে ততক্ষণ কেয়ামত সংগঠন করা হবে না।যদি কিয়ামতের আর একদিন ও বাকি থাকে তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবশ্যই এই ঘটনাগুলো পৃথিবীতে একদিনেই ঘটিয়ে কিয়ামত সংগঠন করবে।

আমরা যে বিষয়গুলো এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের চেয়ে মহান রাব্বুল আলামিনই ভাল জানেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের এলেম সঠিক বুঝ দান করুন আমীন। পরিশেষে বন্ধুরা আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই একটি লাইক দিবেন।

আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো মতামতও অথবা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। এরকম আরও আর্টিকেল পেতে এখনই আমাদের কমেন্ট করে জানান। আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছি সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন। আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

Leave a Reply