আফগানিস্তানের আদালতে এক
ঐতিহাসিক রায় হয়ে গেলো। ডিএনএ
টেস্টে এক পিতার অপরাধ প্রমাণিত
হলো। মিডিয়ার কল্যাণে আরেক
নরপশুকে দেখলো বিশ্ববাসী। ওই
লোকটি তার মেয়েকে ১০ বছরেরও
বেশি সময় ধরে ধর্ষণ করেছেন।
কোলজুড়ে দুটো সন্তানও এসেছে তার।
এতদিন পর ঘটনাটি প্রকাশ পেয়ে
আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। খবর
বিবিসি।
অন্যান্য দেশের মতো
আফগানিস্তানেও নারীর প্রতি
সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়ন অপরাধ।
তবে সেখানে এ ঘটনায় অপরাধীকে
‘নৈতিকভাবে অপরাধী’ হিসেবে জেল
দেওয়া হয়।
মেয়েটির বয়স এখনো বিশের কোঠা
পেরোয়নি। গত বছর বাবার বিরুদ্ধে
আদালতে অভিযোগ জানালে বিচারক
ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন।
মেয়েটির অভিযোগের শুনানিতে
স্তব্ধ হয়ে পড়ে বিচারালয়। একে
‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার বিচার বলে
মন্তব্য করেছেন বিচারক। ধর্ষণের
কারণে গর্ভবতী হয়েছেন তিনি। পিতা
ও কন্যার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
চোখের পানি মুছতে মুছতে মেয়েটি
বলেন, ‘কোলের বাচ্চাটি আমার মেয়ে
এবং আমার বাবারও মেয়ে। আমাকে
আমার বাবা ধর্ষণ করেছেন। মেয়েটি
তারই ফসল। আমি ওর মা এবং একই
সাথে ওর বোন’।

আফগান কোর্টে গত গ্রীষ্মে এই
হতভাগা তরুণী তার বাবার যৌন
নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। বাবা
বিদেশে ছিলেন ৮ বছর। একদিন বাড়ি
ফেরেন। তখন মেয়েটির বয়স ১২ বছর।
আর তখন থেকেই পিতার লালসার
শিকার হন।
‘বাবা ফিরে আসাতে আমি আনন্দে
আত্মহারা হয়ে যাই’, বলতে থাকেন
মেয়েটি। ‘আমার চাচা বা মামা তার
মেয়েকে যেমন আগলে রাখতেন, আদর
করতেন, আমি ভেবেছিলাম বাবাও
আমাকে বুকে আগলে রাখবেন। কিন্তু
বাবা প্রথমে এমন কিছু করলেন যে
আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি’।
‘পরে এ অস্বস্তির কথা আমি দাদিকে
বললেও তিনি আমাকে বকাঝকা
করেন’, জানান তিনি। ‘কিন্তু এক রাতে
বাবা আমাকে ধর্ষণ করলেন। ওই দিন
ভয়ে আমি সারা রাত রুমের এক
কোণায় পড়ে রইলাম’।
প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হলে ওই
নরপশু মেয়েকে অন্য প্রদেশে নিয়ে
যান। সেখানেই জন্ম নেয় প্রথম সন্তান।
শিশুটিকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়
লোকটি। ‘ওই সন্তানের দেখা আজও
পাইনি’, বলেন হতভাগা মেয়েটি।
এভাবে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে
মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেন পাষণ্ড
বাবা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার
মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং
প্রতিবারই গর্ভপাত ঘটানো হয়।
নিরাপত্তার জন্যে তাকে
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলও খাওয়াতেন বাবা।
আদালতে অভিযোগ ওঠামাত্র সব
অস্বীকার করে লোকটি। বরং মেয়ের
নামে উল্টো অভিযোগ তোলেন। বলেন,
মেয়েটি চরিত্রহীন এবং নানা
মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে।
কিন্তু অবশেষে ডিএনএ টেস্টে সত্য
প্রমাণিত হলো। পিতা, মেয়ে এবং
শিশুর রক্ত ও স্যালিভা সংগ্রহ করে
তা পাঠানো হয় আমেরিকায়।
ফলাফলে যদি মেয়েটির অভিযোগ
প্রমাণিত না হতো, তবে আইন অনুযায়ী
মেয়েটির বিচার হতো। এসব জানালেন
মেয়েটির আইনজীবী রুহুলা।
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে মেয়েটির
চিন্তার শেষ নেই। তার মনে একটিই
প্রশ্ন, ‘বড় হলে ওরা যখন ওদের বাবার
পরিচয় জানতে চাইবে, তখন আমি কি
বলবো?’
আফগানিস্তানে এর আগে কখনো
কোনো বিচারকার্যে ডিএনএ টেস্ট
করার প্রয়োজন পড়েনি। তাই এটিকে
ইতিহাসের সবচেয়ে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’
কেস বলে মত দিয়েছেন অনেকে।
পিতার বিরুদ্ধে মেয়ের অভিযোগের
সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। পাষণ্ড
বাবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিজ্ঞ
আদালত।

সৌজন্যঃ
ট্রিকপ্রিয় ডট কম

Leave a Reply