ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙ এবার বৈশাখী থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে গ্রামবাংলার সৌভাগ্যের প্রতীক শখের হাঁড়ি। শখের হাঁড়ির নকশা ও মোটিফ দিয়ে তৈরি হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, শিশুপোশাক, ব্যাগ, গয়না, উত্তরীয় ইত্যাদি। ফেব্রিকস হিসেবে সুতির প্রাধান্য থাকলেও উৎসবের জমকালো ভাব ফুটিয়ে তুলতে সিল্কও সঙ্গী হয়েছে বৈশাখী যাত্রায়।

এ বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘বৈশাখের পোশাক পরিকল্পনায় দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিই। বৈশাখী মোটিফ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারের বৈশাখ আমরা রাঙিয়েছি শখের হাঁড়ির অলংকরণকে উপজীব্য করে। শখের হাঁড়ির অলংকরণে শিল্পীদের নিজস্বতা ও তাঁদের শিল্পরূপকে নানা ভঙ্গিমায় প্রকাশ করেছি বৈশাখী পোশাকে। নকশার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, প্যাচওয়ার্ক ও রংতুলির ছোঁয়া।’

বেশ ব্যতিক্রমী আর মজার থিম বেছে নিয়েছে বিবিয়ানা। তাসের দেশ স্লোগান নিয়ে এবারের বৈশাখ সাজিয়েছে তারা। রুইতন, হরতন, ইস্কাপন, টেক্কা, সাহেব, বিবি আর তাদের বিভিন্ন নকশায় ডিজাইন হয়েছে বৈশাখী পোশাক। তাসের চরিত্র, আকার ও নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কখনো আবার সরাসরি তাসের নকশা সরাসরি ব্যবহার না করে তার অনুপ্রেরণা নিয়ে নকশা করেছেন। বিবিয়ানার ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘তাসের দেশ নিয়েই এবার আমাদের বৈশাখী পসরা। তাস খেলা নয়, বরং তাসের দেশের শিল্পরূপকে নানা ভঙ্গিমায় প্রকাশের চেষ্টা করেছি। তাসের বৈচিত্র্যময় রং আর নকশা নিয়ে একটু ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রয়াস। আলাদাভাবে সব ধরনের পোশাক তো থাকছেই। উৎসবের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পাবেন যুগল ও পারিবারিক পোশাক। দুই বছরের শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের সবার জন্য একই নকশার পোশাকের আয়োজন রেখেছি আমরা।’

নির্দিষ্ট একটি নয়, কয়েকটি ক্যাটাগরিতে আলাদা মোটিফে বৈশাখ ডিজাইন করেছে ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফট। আলপনা, লক্ষ্মীর সরা, নকশিকাঁথা, টাইডাই, সাঁওতাল পেইন্টিংসহ বেশ কিছু মোটিফ উঠে এসেছে পোশাক ডিজাইনে। ব্লক, স্ক্রিন, হ্যান্ড ও মেশিন এমব্রয়ডারিতে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গরমকে মাথায় রেখে সুতি কাপড় বেছে নিয়েছে তারা। ডিজাইনার নাদিরা ফেরদৌসী বলেন, ‘নির্দিষ্ট থিম নিয়ে একটা সিরিজ হিসেবে পোশাক ডিজাইন হয়েছে। যেমন সাঁওতাল পেইন্ট। আদিবাসী সাঁওতালরা তাদের ঘরদোর, হাঁড়ি-বাসন বা নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীতে এক ধরনের নকশা বা ডিজাইন করে। এই ডিজাইনকে থিম করে ছেলেমেয়ে, শিশু ও বয়স্কদের জন্য সিরিজ বা পারিবারিক পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে। চাইলে আলাদা করে একটা পোশাকও নেওয়া যাবে। সাঁওতাল পেইন্টের মতোই আলপনা বা লক্ষ্মীর সরা মোটিফ নিয়ে এমন সিরিজ ডিজাইন বা নকশা থাকছে এবারের বৈশাখে। তবে পহেলা বৈশাখে শাড়ির আবেদন বিবেচনায় পোশাক ডিজাইনে শাড়িকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি।’

প্রায় সব কটি ফ্যাশন হাউস এবার থিমভিত্তিক ডিজাইনের পাশাপাশি পারিবারিক পোশাকে গুরুত্ব দিয়েছে। একই নকশা থাকছে শিশু, টিন, মা-বাবা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের পোশাকে। শিশু ও টিনএজারদের জন্য আলাদা মনোযোগ দিয়েছেন ডিজাইনাররা। তাঁদের পোশাকে থিমও নির্বাচন হয়েছে বয়স বিবেচনায় রেখে। এক নজরে ফ্যাশন হাউসের থিম জেনে নিই

পানির নিচের জীববৈচিত্র্যকে পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছে ফ্যাশন .
নকশায় থাকছে এমব্রয়ডারি, স্ক্রিনপ্রিন্ট, হাতের কাজ, কারচুপি, প্যাটার্ন।

পোশাকের কাটিংয়ে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা হয়েছে। পালাজ্জোতে লেয়ার কাট বা ড্রাপ ব্যবহার করে নতুনত্ব আনা হয়েছে। জলজগতের নকশা নিয়ে ডিজাইনার মাসিয়াত জাহান জানান, সমুদ্রের ঢেউ, সি-হর্স, শামুক, ঝিনুক, শৈবাল-প্রবাল, কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজীব থেকে থিমের অনুপ্রেরণা নির্বাচন করা হয়েছে। কখনো সরাসরি সামুদ্রিক জীব আবার কখনো তাদের নকশা বা রং ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সামুদ্রিক শৈবাল বা গাছের আকৃতিও থাকছে নকশায়।

‘মুমু মারিয়া’র ডিজাইনার মারিয়া মুমু জানান, ‘বৈশাখের থিম নির্বাচনে আমি পুরো গ্রীষ্মকালকে মাথায় রাখি। এই সময় ফ্লোরাল মোটিফ আমার পছন্দ। এবার বৈশাখেও ফুল-লতা-পাতা নিয়েই কাজ করেছি। তবে গ্রীষ্মের হালকা রঙের পাশাপাশি বেশ কিছু গাঢ় রং যোগ করে বৈশাখী আমেজ তুলে ধরেছি। সুতির সঙ্গে হাফসিল্ক ফেব্রিকস ব্যবহার করেছি। পুরো গরমের সময়টা মাথায় রেখে স্লিভলেস ডিজাইন প্রাধান্য দিয়েছি। তবে সবার চাহিদা মাথায় রেখেই আলাদা করে স্লিভের অপশন রয়েছে।’

নীল-সাদা রং নিয়ে কাজ করেন ‘ইন্ডিগো’র ডিজাইনার শৈবাল সাহা। বৈশাখ নিয়ে তাঁর ভাবনা জানালেন—‘ বৈশাখে সাধারণত সাদাকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করি। নীল রং তো থাকছেই। সঙ্গে অন্য সব রংই পাবেন সীমিত পরিসরে। তবে এ সময় ডিজাইনের পাশাপাশি আরামের বিষয়টি মাথায় রেখেছি। সুতি কাপড়ের বাইরে আর কিছুই ব্যবহার করিনি।’

রিকশা পেইন্টের সঙ্গে জ্যামিতিক ফর্মের সমন্বয়ে বৈশাখ ডিজাইন করেছেন ‘অঞ্জন’স’-এর ডিজাইনার শাহীন আহমেদ। জানালেন, ‘লাল-সাদায় বৈশাখের চিরায়িত রূপটি ধরে রাখতে চেয়েছি। রিকশা পেইন্ট আর জ্যামিতিক নকশার অনুপ্রেরণার প্রতিফলন ঘটেছে ডিজাইনে। মাধ্যম হিসেবে স্ক্রিনপ্রিন্ট আর এমব্রয়ডারি করেছি। এক দিনের উৎসব মাথায় রেখেই পোশাকের নকশা আর দাম ঠিক করা হয়েছে।
আমার সাইট এ ঘুরে গেলে খুশি হতাম । সাথে ছবি সহ পোষ্ট ফ্রি!

Leave a Reply