সাধারণভাবে সংস্কৃতি হলো বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান। যার মধ্যে ভাষা, ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক আচার, সঙ্গীত এবং শিল্পকলা এই বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ অন ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকুইজিশন আরো এক কদম এগিয়ে গিয়ে সংস্কৃতির সংজ্ঞায় যা বলেছে- ‘সামাজিক আচরণ এবং মিথষ্ক্রিয়ার ধরণ, জ্ঞানীয় গঠন এবং সামাজিকী করনের মধ্য দিয়ে যে বুঝ অর্জিত হয় সেটাই সংস্কৃতি। সুতরাং সংস্কৃতিকে বলা যেতে পারে, অনন্য সামাজিক গড়নকে লালনের মধ্য দিয়ে বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর যে সামষ্টিক আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে তা।

লন্ডনের বার্নেট অ্যান্ড সাউথগেট কলেজের নৃবিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা ডে রসি লাইভ সায়েন্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘সংস্কৃতির আওতায় রয়েছে, ধর্ম, খাদ্য, পোশাক, পোশাক পরার ধরণ, ভাষা, বিয়ে, সঙ্গীত, আমরা যা কিছুকে ন্যায় বা অন্যায় বলে ভাবি, আমরা যেভাবে টেবিলে বসি, যেভাবে অতিথিকে অভিবাদন জানাই, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করি এবং দৈনন্দিন জীবন যাত্রার আরো অন্তত কয়েকলাখ বিষয়। ’

পশ্চিমা সংস্কৃতি
এই পরিভাষাটি দিয়ে মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর সংস্কৃতি এবং যেসব দেশে ইউরোপীয়রা অভিবাসী হয়েছেন যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশের সংস্কৃতিকে বুঝায়। পশ্চিমা সংস্কৃতির শেকড় প্রোথিত রয়েছে গ্রেকো-রোমান যুগের ধ্রুপদী যুগ এবং ১৪ শতকে খ্রিষ্ট ধর্মের উত্থান পর্বে।

পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্যান্য চালিকা শক্তির মধ্যে রয়েছে, ল্যাটিন, কেল্টিক, জার্মানিক এবং হেলেনিক নৃতাত্বিক এবং ভাষাতাত্বিক গোষ্ঠীগুলো। তবে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবদেশেই পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়।

প্রাচ্য সংস্কৃতি
প্রাচ্য সংস্কৃতি বলতে সাধারণত চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক রীতি-নীতিকে বুঝায়।

পশ্চিমের মতোই প্রাচ্যের সংস্কৃতিও গড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্ম দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তবে প্রাচ্য সংস্কৃতি ধান উৎপাদন ও ফসল সংগ্রহ দ্বারাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ডোরিয়ান কিউ ফুলারের লেখা ‘পাথওয়েস টু এশিয়ান সিভিলাইজেশন: ট্রেসিং দ্য অরিজিনস অ্যান্ড স্প্রেড অফ রাইস অ্যান্ড রাইস কালচারস’-এ।

আর প্রাচ্য সংস্কৃতিতে সেক্যুলার সমাজ ও ধর্মীয় দর্শনের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। যেমনটা পশ্চিমে ধর্মীয় ও সেক্যুলার জীবন দর্শনের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে।

ল্যাটিন সংস্কৃতি
স্প্যানিশ ভাষা-ভাষী জাতিগুলোর অনেকেই ল্যাটিন সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মজার বিষয় হচ্ছে ল্যাটিন ভাষাভাষী হওয়ার কারণে মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মেক্সিকোকে ল্যাটিন আমেরিকা বলা হয়, যেখানে মূলত স্পানিশ বা পর্তুগিজ ভাষাভাষী মানু্ষের সংখ্যাই বেশি।

উৎপত্তিগতভাবে ‘ল্যাটিন আমেরিকা’ টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেছেন ফরাসি ভূতাত্বিকরা, মূলত ইঙ্গ এবং রোমান (ল্যাটিন-ভিত্তিক) ভাষাগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝানোর জন্য। স্পেন ও পর্তুগাল ল্যাটিন সংস্কৃতিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যীয় সংস্কৃতি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর (২০টি দেশ) সব বিষয়ে না হলেও অন্তত বেশ কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি সাধারণ বিষয় হলো আরবী ভাষা। এছাড়া দেশগুলোর ধর্মও এক। আর এই মধ্যপ্রাচ্যই ইহুদী ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম এবং ইসলামের জন্মস্থান।

আফ্রিকান সংস্কৃতি
বিশ্বের সব সংস্কৃতিরই গোড়া আফ্রিকায়। আদিতে এই মহাদেশেই মনুষ্য প্রাণ বা মানব প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। এবং ৬০ হাজার বছর আগে মানুষেরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামে তেমনটাই বলা হয়। তবে অন্যান্য গবেষকদে মতে, যেমন তারতুর এস্তোনিয়ান বায়োসেন্টারের মতে আফ্রিকা থেকে মানুষেরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া শুরু করে আগে, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগে।

আফ্রিকার ৫৪টি দেশে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক গোত্র, নৃতাত্বিক এবং সামাজিক গোষ্ঠী। শুধু নাইজেরিয়াতেই রয়েছে ৩০০ গোত্র।

বর্তমানে আফ্রিকা দুটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত: উত্তরি আফ্রিকা এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা। উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মিল রয়েছে অনেক। কিন্তু সাব সাহারান আফ্রিকার সংস্কৃতি একদমই আলাদা। সাব-সাহারান আফ্রিকার সংস্কৃতি গড়ে ওঠার পেছনে এর রুক্ষ প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি ভুমিকা রয়েছে।

প্রতিনিয়ত পরিবর্তন
স্বরুপ যাই হোক না কেন প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। আমাদের বর্তমান পরস্পরসংযুক্ত দুনিয়ায় সংস্কৃতি একটি প্রধান বিষয়। কারণ এই দুনিয়া গড়ে উঠেছে নৃতাত্বিকভাবে বিচিত্র অসংখ্য সমাজের সমন্বয়ে। তবে এই দুনিয়া আবার ধর্ম, নৃতাত্বিক পরিচয়, নৈতিক বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক উপাদানের ভিন্নতার কারণেও সংঘাতে জর্জরিত’।

সংস্কৃতি এখন আর স্থির নয়। এটি এখন তরল এবং প্রতিনিয়ত বহমান। আর এ কারণেই কোনো সংস্কৃতিকে এখন আর একাট্টাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তবে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন UNESCO বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য একটি সনদ প্রনয়ন করে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

সুস্থ সংস্কৃতির, সচ্ছ ব্যবহার।

প্রকাশিত ও প্রচারেঃFuturebd24.Com
Plz Visit Vai…

5 thoughts on "পৃথিবিতে সংস্কৃতি আসলে কী?"

  1. Mahbub Pathan Author says:
    সুন্দর একটি পোস্ট। এর আগে জানাবিডিতে পড়েছিলাম।
    1. M.Rubel Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ ভাই
  2. Rs Erfan Sadik Author says:
    mahbub pathan bro apnar fb link dwn plz
    1. Mahbub Pathan Author says:
      fb.com/WAMahbubPathan

Leave a Reply