ট্রিকবিডি ভিউয়ার্সদের স্বাগতম
আপনারা সবাই কেমন আছেন?? …আশা করি ভাল আছেন। ট্রিকবিডির লাইফস্টাইল বিভাগকে সচল রাখতে আমি মনস্থির করেছি অন্তত 10 টির মতো ছোট ছোট রহস্য,থ্রিলার সমৃদ্ধ কনটেন্ট শেয়ার করব। এরই ধারাবাহিকতাই এই পোস্টটি
৪ এপ্রিল, ১৯২২
জার্মানির মিউনিখ শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তরের ছোট্ট একটা খামার বাড়ি হিন্টারকাইফেক। প্রায় চারদিন ধরেই এই হিন্টারকাইফেক খামার বাড়ির গ্রুবার পরিবারের কোনো সদস্যকেই বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখে না গ্রামবাসীরা। এদিকে গ্রুবার পরিবারের ছোট সদস্য ক্যাজিলিয়াকে প্রায় বেশ ক’দিন ক্লাসে অনুপস্থিত দেখে ক্লাসশিক্ষক গ্রুবার ফ্যামিলির মেইলবক্সে চিঠি পাঠান। কিন্তু তাতেও কোনো সাড়াশব্দ মেলে না। প্রতিবেশীদের মনে বেশ অদ্ভুতই ঠেকে এই ব্যাপারটা। তো, স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয় তারা।
.
খবর পেয়ে পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করে। একে একে উদ্ধার করে খামার বাড়িতে থাকা ৬ জন মানুষের বীভৎস সব লাশ। ইনভেস্টিগেট করে পুলিশ দেখতে পায় যে, পুরো পরিবারের সবাইকেই খুন করা হয়েছে একটামাত্র কুড়ালের আঘাতে।
.
কিন্তু, কিভাবে খুন করা হলো গ্রুবার পরিবারের সদস্যদের?
এই ব্যাপারটা জানতে হলে আমাদের কিছু সময় পেছনে ফিরে যেতে হবে।
.
৩১ মার্চ।
হিন্টারকাইফেকে নতুন পরিচারিকা হিসেবে যোগ দেয় মারিয়া। কে জানত, এই দিনটাই হবে তার কাজের প্রথম আর শেষদিন! তবে কিভাবে তাদের সবাইকে খুন করা হয়েছিল বা খুনী আর ভিকটিমের মধ্যে কি ইন্টারোগেশন হয়েছিল সেটা হুবহু ইলাস্ট্রেট করা সম্ভব না, যেহেতু সেদিন উপস্থিত সবাইকেই খুন করা হয়েছিল। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের পর অবশ্য বেশকিছু ব্যাপার ক্লিয়ার হয়ে যায়।
.
ইনভেস্টিগেটর হোর্হে রেইনগ্রুবারের মতে, সেদিন রাতেই ভিক্টোরিয়া গ্যাব্রিয়াল, তার সাত বছরের মেয়ে ক্যাজিলিয়া, ভিক্টোরিয়ার বাবা আন্দ্রেস গ্রুবার আর মা ক্যাজিলিয়া গ্রুবারকে হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় শস্যাগার। তারপর গুদামঘরে রাখা একটা কুড়াল দিয়েই সবাইকে হত্যা করা হয়। সবচাইতে ভয়ংকর ব্যাপারটা হল, প্রত্যেকের মাথার স্কালে ভয়ংকর রকমের কিছু জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়, যেটা প্রমাণ করে যে তাদের সবাইকেই ওই কুড়ালটা দিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত করা হয়েছিল।
.
তারপর শস্যাগার থেকে বেরিয়ে ওই রক্তাক্ত কুড়ালটা নিয়েই লিভিং প্লেসের দিকে এগিয়ে যায় খুনী৷ সেখানে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা পরিচারিকা মারিয়া আর গ্রুবার ফ্যামিলির সবচেয়ে ছোট সদস্য জোসেফকে ওই কুড়াল দিয়েই কুপিয়ে খুন করে সে। সেসময়টায় জোসেফের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর।
খুনের ব্যাপারস্যাপার মোটামুটি এতটুকুই। কিন্তু, ইনভেস্টিগেশনের এই পর্যায়ে এসেই মূলত আসল রহস্যের শুরু!
.
কে খুন করেছিল গ্রুবার পরিবারের সদস্যদের?
আর কেনই বা খুন করেছিল? মোটিভটাই বা কি ছিল?
.
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের আরো একটু পেছাতে হবে। খুনের বেশকিছুদিন আগে, হয়তো সপ্তাহখানেক আগের ব্যাপার৷ আন্দ্রেস গ্রুবার একদিন তার খামারের বাইরে কাজ করছিলো। কাজ করার একপর্যায়ে সে খেয়াল করলো যে, দুটো পায়ের ছাপ। খামারবাড়ির ঠিক পেছনের বন থেকে এই ছাপ দুটো শুরু হয়ে সোজা চলে গেছে তার বাড়ির শস্যাগার পর্যন্ত! হতেই পারে যে কারো পায়ের ছাপ৷ কিন্তু ব্যাপারটা আপনি আমি যেরকম ভাবছি ঠিক সেরকম না৷ এই পায়ের ছাপদুটো ঠিক স্বাভাবিক কোনো পায়ের ছাপ ছিল না, অন্তত আন্দ্রেস গ্রুবারের মতে। বেশ অদ্ভুতই ঠেকে এই ব্যাপারটা তার কাছে।
.
পায়ের ছাপগুলো অনুসরণ করতে শুরু করল গ্রুবার। তখন আচমকা এই পায়ের ছাপগুলোয় একটা নতুন ব্যাপার লক্ষ্য করে সে। দেখল, পায়ের ছাপগুলো সব একই দিকেই মুখ করা। মানে পায়ের ছাপগুলো সোজা শস্যাগারের দিকে চলে গেছে। কিন্তু, বিপরীতমুখী কোনো পায়ের ছাপই নেই। গ্রুবার দৌড়ে শস্যাগারে যায়। তন্নতন্ন করে পুরো গুদামটা সার্চ করে। কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না। ব্যাপারটা নিয়ে ততটা মাথাও ঘামায় না গ্রুবার। সে ভাবে, হয়ত বাতাসে মুছেও যেতে পারে ছাপগুলো। পরবর্তীতে অবশ্য আশপাশের প্রতিবেশীদের এ সম্পর্কে জানায় সে। কিন্তু তারাও তেমন পাত্তা দেয় না।
.
এই ব্যাপারটার রেশ কাটতে না কাটতেই গ্রুবার ফ্যামিলির বাসার একটা চাবি হারিয়ে যায়। ঠিক একইসময় পরিবারের সদস্যরা গোঁফওয়ালা একজন মানুষকে বাড়ির আশপাশে হাটাচলা করতে দেখে। এসময়ই পরপর কয়েকদিন গভীর রাতে কারো পায়ের শব্দে গ্রুবার ফ্যামিলির ঘুম ভেঙে যেতে থাকে। পায়ের শব্দ শুনে আন্দ্রেস গ্রুবার যতবারই বের হয়ে খোঁজ করত কোথাও কারো চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পেত না!
.
এতসব ব্যাপার ঘটতে থাকার পরও গ্রুবার ফ্যামিলি কখনোই এই ব্যাপারগুলো নিয়ে পুলিশের কাছে কোনোরকম অভিযোগ জানায় নি। হ্যাঁ, গ্রুবার এই ব্যাপারগুলো আশপাশের মানুষদের জানাত৷ কিন্তু কেউই এই ব্যাপারগুলোকে ততটা সিরিয়াসলি নিত না।
.
প্রথমত পুলিশ এই ব্যাপারটাকে ডাকাতি বলে ধরে নেয়। কিন্তু হিন্টারকাইফেক তল্লাশি করে দেখা যায় যে পুরো বাড়ির একটা সোনাদানা টাকা পয়সাও খোয়া যায়নি। দ্যাট মিনস এই খুনের পেছনে কোনো ডাকাতের হাত থাকতে পারে না!
.
ওভার দ্য ডিকেডস পুলিশ প্রায় ১০০ জন সাসপেক্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সঠিক কোনো আলামত আজ পর্যন্ত পুলিশ জোগাড় করতে পারে নি। জার্মানির ইতিহাসের সবচাইতে পুরোতন অমীমাংসিত মার্ডার কেসগুলোর মধ্যে একটি এই হিন্টারকাইফেক মার্ডারস কেস!
.
এবার এই মার্ডার কেসের ব্যাপারে সবচাইতে ইন্টারেস্টিং ব্যাপারগুলো বলি৷
হিন্টারকাইফেকে নতুন পরিচারিকা মারিয়া যোগদানেরও প্রায় ৬ মাস আগে গ্রুবার ফ্যামিলিতে আরো একজন পরিচারিকা কাজ করতো। কোনো একদিন ওই পরিচারিকা কাউকে কিছু না জানিয়েই হিন্টারকাইফেক ছেড়ে আসে। ইনভেস্টিগেশনের সময় পুলিশ ওই পরিচারিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
.
তখন ওই পরিচারিকা বলে, “The whole place is cursed! Haunted! They won’t let to live anyone there!”
.
আরো একটা অদ্ভুদ ব্যাপার হলো, ৩১ মার্চ – ৪ এপ্রিল এই চারদিন পর্যন্ত গ্রুবার ফ্যামিলির চিমনি থেকে প্রতিদিনই ধোঁয়া উড়তে দেখেছিল আশপাশের গ্রামবাসীরা। পুলিশ যখন লাশগুলো উদ্ধার করে তখনও পর্যন্ত খামারে বেঁধে রাখা পশুগুলোর সামনে নতুন শস্যদানা দেখতে পাওয়া যায়! তার মানে, যে বার যারাই খুন করুক না কেন, খুনের পরও ওই খুনী বা খুনীরা সেখানেই অবস্থান করছিলো!
.
উপরে আমি দুটো প্রশ্ন করেছিলাম, লেখার শেষ পর্যায়ে এসেও এই উত্তরহীন এই প্রশ্নগুলো আমাকে রেখে যেতে হচ্ছে,
.
কে খুন করেছিল আসলে গ্রুবার ফ্যামিলিকে?
আর খুনের মোটিভটাই বা কি ছিল?
…..
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
[ I do not own copyright of this post.This content credit goes to respected owner]
….
keep going