বাংলার আকাশ-বাতাস থেকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক বিদায় নিয়েছে, সেই জায়গায় দখল করেছে নেটফ্লিক্স এর নতুন সিনেমা এক্সট্রাকশন কারণ এই সিনেমার গল্পের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে বাংলাদেশ, আছে ঢাকা শহর বাংলাদেশ দর্শকদের অভিযোগ বাংলাদেশকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই সিনেমায় এই অভিযোগকে আসলেই সত্যি?
ক্রিস হেমসওয়ার্থ যাকে আমরা এভেন্জার এর থর হিসেবে জানি তিনি ছিলেন এই সিনেমার নায়ক আসলে কেমন হলো এক্সট্রাকশন সিনেমাটা ২ ঘণ্টা সময় খরচ করে আসলেই কি দেখা উচিত এটা? সে সবই জানানোর চেষ্টা করবা আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে, তো বন্ধুরা পুরো পোস্ট টা না পড়লে কিন্তু অনেক বিনোদন থেকে বঞ্চিত হবেন আগেই বলে দিচ্ছি।
পঙ্কজ ত্রিপাঠী হচ্ছে ভারতের কুখ্যাত এক মাফিয়া লিডার তার ছেলেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে বাংলাদেশের এক মাফিয়া, সিনেমায় যার নাম আমির আসিফ, জেলখানা থেকে পঙ্কজ তার ডানহাত রণদীপ হুদা কে আদেশ দিলেন যেভাবেই হোক তার ছেলেকে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করে আনতে হবে রণদীপ হুদা শরণাপন্ন হলেন আমাদের থর ভাই ওরফে ক্রিস হেমসওয়ার্থ!
অভিনব সেই বাচ্চা ছেলেটা কে উদ্ধার করার জন্য তিনি চলে আসলেন ঢাকাতে, বাংলাদেশের মাফিয়া লিডার দের হাত থেকে উদ্ধার করবেন ওধিকে কিন্তু কাজটা কি এতই সোজা? ছেলেটাকে জীবিত উদ্ধার করা যাবে তো? স্পয়লার দিতে চাচ্ছি না তবুও বলি সিনেমাটাই একটা স্পয়লার, আপনার জীবন থেকে দুই ঘন্টা নষ্ট করতে চাইলে বসতে পারেন এক্সট্রাকশন নামে এই সিনেমা দেখার জন্য।
পরিচিত ঢাকার এক অন্য রকম চেহারা যদি দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে এক্সট্রাকশন দেখতে পারেন, সিনেমায় ঢাকা শহর দেখে মনে হবে এই ঢাকা আসলে পৃথিবীর ঢাকা নয়, প্যারালাল ইউনিভার্সে অন্য একটা ঢাকা শহর আছে সেখানেই বুঝি জন্ম নিয়েছে গল্পটা।
ঢাকা শহর টা দেখানো হয়েছে এমন প্রায় প্রতিটা শটেই সিএনজি আছেই শহরের ঘরে ঘরে হাই ভলিউমে ৯০ দশকের হিন্দি গান, মজার ব্যাপার হল ঢাকার এই সব দৃশ্য আসলে ঢাকায় করা হয়নি ঢাকার আদলে ভারত থাইল্যান্ড ঢাকা শহরের মত সেট বানিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হয়েছে, আর ফলাফল ভুল আর দৃষ্টিকটু সব বানানের পোস্টার ব্ল্যাক ক্যাট গাড়ির নাম দোকানের নাম বাংলাদেশী হিসেবে সিনেমা দেখতে বসলে বিরক্ত না হয়ে উপায় নেই।
এখানেই শেষ নয় এই সিনেমার দেখলে আপনি জানতে পারবেন বাংলাদেশের পুলিশ আর্মি সব ফোর্স আসলে একজন মাফিয়া গডফাদারকে সেলটা দেওয়ার জন্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের কোন ভুমিকা নেই, শুধু আমির আসিফ নামের সে মাফিয়াকে নিরাপত্তা দিতে পারলেই হলো তার বিপদে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের সবগুলো ফোর্স কিন্তু সবার নাকের ডগা থেকে ঠিকই আমির আসিফ এর পুঙ্গি বাজিয়ে অভিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান আমাদের আমাদের থর ভাই!
অবশ্য জেল অফ থেনওস কে মেরে এসেছে তার হাতে রেব পুলিশ মার খেলে অবাক হওয়ার কি আছে? এক্সট্রেকশন দেখলে আরো জানতে পারবেন বাংলাদেশের মানুষ আসলে বাংলায় কথায় বলতে পারেনা ঢাকাইয়া বলে একটা ভাষা যে ঢাকায় আছে কিংবা প্রমিত শুদ্ধ ভাষায় যে এখনকার মানুষ কথা বলতে পারে সেটা পরিচালকরা ভুলে গিয়েছিলেন পরিচালক দোষ দিয়ে লাভ নেই। ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে এই সিনেমায় বাংলাদেশি এক অদৃশ্য অস্কার বিজয়ী কে রাখা হয়েছিল ওয়াহিদ ইবন রেজা নামের সেই লোক অদৃশ্য অস্কার জিতেছেন ঠিকই কিন্তু ঢাকাইয়া মানুষের ভাষা সম্পর্কে জানুন অতম ধারণাও নেই।
এ কারণেই এই সিনেমায় বাংলা ভাষাকে বলাৎকার করা হয়েছে ইচ্ছামত সিনেমার যেমন তেমন কিন্তু এরকম এক সেন্টার ভাষা হজম করা সম্ভব না কোনভাবেই যে বিষয়টা নুন্যতম জ্ঞান থাকলে পারফেক্ট করা যেত সেখানে বাংলাদেশি কেউ দায়িত্বে থেকেও এমন ফলাফল, হেই বোকাচোদা আমার মেশিন নিতে চাই, ছাড় ছাড় আমার বন্ধুরা তোকে গুলি মেরে উড়িয়ে দেবে, এই ওটা আমার মেশিন আমাকে দিয়ে দে, ওটা আমার মেশিন আমাকে দিবি , এরকম ভাষা সহ আরো কত কি দেখতে হয়েছে!
যেহেতু এটি ফিকশন অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা সে কারণে অনেক কিছু বাস্তবের মতো দেখানো হবে না এটাই স্বাভাবিক তারপরও বাবুবাজার ব্রিজের ওপাশে ভারত রাস্তায় ইন্ডিয়ান গাড়ি ফ্যাক্টরি বিষয়গুলো আমাদের জন্য বেশ দৃষ্টিকটু র্রেবের পোশাক পরা একজনের মনোগ্রাম এর লেখা আছে *পুলিশ* পোশাকের গায়ে লেখা আর্মি ফোর্স আর এক পাশে লেখা ELMIDE এটা দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছে কে জানে!
তবে ঢাকার বাচ্চাকাচ্চা ছেলেরা এ কে ফরটিসেভেন নিয়ে ঘুরছে রাস্তাঘাটে এসব বিষয়ে একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ আফ্রিকান কোন দেশ নয় এই বিষয়টা খুবই স্পর্শ কাতর আমাদের জন্য যেহেতু নেটফ্লিক্স এর মাধ্যমে সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে ক্ষণিকের জন্য এভাবে কল্পনা করবে।
এই সিনেমাটার নাম প্রথমে রাখা হয়েছিল ঢাকা শুটিংও ঢাকাতেই করার প্ল্যান ছিল পরে ভারতের চেন্নাইয়ে সেট বানিয়ে শুটিং করা হয়েছে, জাহাজে করে ঢাকা থেকে রিকশা ও সিএনজি নিয়ে যাওয়া হয়েছে তবে বাংলাদেশে মানে যে শুধু রিকশা সিএনজি নয় সেটা ভুলে গিয়েছিলেন নির্মাতারা। যদিও একজন ষ্টার ম্যান থেকে পরিচালক মানুষটার প্রথম সিনেমায় এসব আজগুবি বিষয় অবাক হওয়ার মতো না এটা তার লিমিটেশন ছাড়া কিছুই নয়!
প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বাজেটে এঈ সিনেমা দেখে আপনার আফসোস হবে এটার নাম ঢাকা রাখলে সবচেয়ে ভালো হতো ঢাকা যেমন শহর হিসেবে বসবাসের অনুপযুক্ত এক্সট্রাকশন তেমনই সিনেমা হিসেবে দেখার অনুপযুক্ত হলিউড সিনেমার পিছনে বিশাল বাজার থাকে শত শত মানুষের অনেকদিনের নিরলস পরিশ্রম থাকে কিন্তু একটু ভালোভাবে রিচার্জ করে সিনেমাটা বানালে যে সেটা গবরে পরিণত হয়, তার একটা বড় উদাহরণ এক্সট্রাকশন সিনেমায় ক্যামেরা কাজ দারুন একশন দুর্দান্ত তবুও দিনশেষে সিনেমাটা একটা ফালতু ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
আমির আসিফ চরিত্রের যেকোনো বাংলাদেশী অভিনেতা নেওয়া যেত ইজিলি , আমাদের অভিনেতারা ভালো অভিনয় জানুক আর না জানুক অন্তত বাংলা তো বলতে পারতো, অন্তত এতোটুকু তো ধরিয়ে দিতে পারতো কোনটা ঢাকার ভাষা আর কোনটা কলকাতার, অন্তত বাংলাদেশি কেউ ঢাকার এই অদ্ভুত জগা ক্ষেত্র মেনে নিতে পারবে না। তাতে সিনেমার একশন যতই দুর্দান্ত ত হোক না কেন থর থাকুক আর যতগুলো স্টার ই থাকুক না কেন।
নেটফ্লিক্স এর ব্যানারে বাংলাদেশকে উপযোগ্য করে এত বড় সিনেমা আনন্দর খবরই তো বটে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে অনুরোধ থাকবে ভবিষ্যতে আরো রিসার্চ করে এরপর কাজে নামেন, একই সাথে যারা বাংলাদেশী হিসেবে এসব প্রজেক্টে যুক্ত থাকেন তারা আরো সতর্ক হোন, এটা জাতীয়তাবাদ কিংবা দেশপ্রেমি হওয়ার মত কোন বিষয় না অন্তত একটা মান থাকবে না? আমার ভাষার আমার শহরের?
সিনেমাটা দেখতে চাইলে পাবেন নেটফ্লিক্সে এছাড়াও বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও সিনেমাটা এভেলেবেল আর যারা অলরেডি সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে জানান,
যে কোন ডলার কেনা বেচা করুন এই ফেসবুক পেজে!
সিয়াম সাধনার মাস চলছে করোনার এই দুর্যোগের সময় সাবধানে থাকুন নিজে ভালো থাকুন আর অন্যদের কেউ ভালো রাখুন ধন্যবাদ!
এই সিনেমাটিতে যা দেখানো হয়েছে তা বর্তমানের প্রেক্ষাপট আমি মনেকরি সিনেমাটিতে যা, যা দেখানো হয়েছে ৯৫% কে মিথ্যে বলার অবকাশ নেই বর্তমান বাংলাদেশের