ক্রিস্টোফার নোলান মানেই ভিন্ন কিছু আর নোলান মানেই মাথা নষ্ট করা মুভির কারিগর.. যিনি মাত্র ছয় হাজার ডলার দিয়ে শুরু করেছিলেন সিনেমা নির্মাণে নিজের পথচলা; আর এখন প্রায় দুই দশক পেরিয়ে ক্রিস্টোফার নোলান সিনেমাজগতের অন্যতম সমীহ করার মতো নাম।
ধরুন, যদি কোন নতুন মুভি বের হয় তাহলে আমরা প্রায়ই সেই মুভিটিকে মনে রাখার জন্য বা পরিচিতি দেবার জন্য ওমুক নায়েকর মুভি উমুক নাইকার মুভি এভাবে বলি , তবে ক্রিস্টফার নোলান ভক্তদের মনে এমন এক ধরনের স্থান জায়গা করেছেন যে, সিনেমা প্রেমিরা এখন তার পরিচালিত মুভিগুলোকে নায়ক নাইকাদের চেয়ে এটা নোলানের মুভি এভাবেই বেশি পরিচিতি দেয়..
আজ লিখবো সেই মাথা নষ্ট করা মুভির কারিগর বা পরিচালক যাই বলেন তার মুভিগুলো নিয়ে কিছু কথা ..
পুরো নাম ক্রিস্টোফার জোনাথান জেমস নোলান
১৯৭০ সালের ৩০ জুলাই ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিস্টোফার নোলান মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই তার বাবার সুপার এইট ক্যামেরা দিয়ে শর্ট মুভি বানানো শুরু করলেও। বড় পর্দায় তার প্রথম মুভি বের হয় ১৯৯৮ এ Following (1998) নামের মাত্র ৬০০০ ডলার বাজেটের সাধাকালো মুভি দিয়ে … স্বল্পবাজেট হলেও প্রথম মুভিতেই নোলান তার অরৈখিক কাহিনী আর কনসেপ্ট তৈরির মেধার পরিচয় ভালোভাবেই দিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই ফলোয়িং মুভির মাধ্যমে ক্রিস্টোফার নোলান পরিচিতি তবে পরবর্তীতে যে মুভিগুলো তিনি তৈরি করেন তা দর্শকমহল রা অবাক হয়ে যায়, তার ক্যারিয়ারে (দ্বিতীয়)
এবং আজকের লিস্টের ১ম যে মুভিটির কথা বলবো তার নাম,
Memento
 
 

 

 
2000 সালের এই মুভি ক্রিস্টোফার নোলানকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়, নোলান যথেষ্ট সম্মান অর্জন করে মেমেন্তো মুভি দিয়ে। বলিউডে গাজনি মুভির কথা তো সবার মনেই আছে , আর গাজনি মুভিটা কিন্ত এই মেমেন্টো মুভি থেকেই ইন্সপায়ার্ড হয়ে বানানো হয়েছে.. তবে নোলান মানেই ভিন্ন কিছু so তার এই memento মুভিতে দেখতে পেয়েছিলাম আসলেই ভিন্ন কিছু । একটা কাহিনীর সমপুর্ন অংশ কেটে কেটে আলাদা করে, সেটা আগে পরে করে দেখানোর মধ্য দিয়েই এই মুভিটা মুলত বানানো হয়েছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলিঃ- মুভির শুরুর যে দৃশ্য শুরুতে দেখানোর কথা ছিলো তা দেখানো হয় মুভি চলাকালিন সময়ের মাঝে। আর মাঝের দৃশ্য দেখানো হয় শেষে। আর শেষের দৃশ্য দেখানো হয় সবার শুরুতে। কি মাথার উপ্রে দিয়া যাচ্ছে? ওয়েল এমন অজস্র মুভিলাভার আছে যারা মুভিটা দেখেই মাথার উপ্রে দিয়া গেছে আর আমি ত শুধু অল্প একটু বলছি মাত্র..
 
এছাড়াও মুভিটি  অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব সহ আরো অনেক আওয়ার্ড শো তে নোমিনেশন পায়।
যাই হোক লিস্টের পরের আর আমার সবচেয়ে প্রিয় যে মুভিটির কথা বলবো তার নাম
Inception
 

 

 
এটা সম্ভবত নোলানের সবথেকে জনপ্রিয় মুভি।
শুধু Mind blowing প্লটের জন্যই নয়, মুভির ভিন্ন ধর্মি প্লট এর পাশাপাশি চোখ ধাধানো Action Sequence, VFX এবং লিও দ্যা ক্যাপ্রিও সহ টম হার্ডির অভিনয় মুভিটিকে পোছে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রায় যা এটাকে আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা মুভির লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়েল মুভির স্টোরি সম্পর্কে যদি বলি –
স্বপ্নের ভিতর স্বপ্ন,তার ভিতর স্বপ্ন,তার ভেতর আরেকটা স্বপ্ন। এমনি স্বপ্ন আর বাস্তব দুই জগত নিয়ে মুলত মুভিটি তবে মুভিতে এতোবার করে স্বপ্নের জগত দেখানো হয়েছে যে স্বপ্ন ও রিয়েলিটির মধ্যে কনফিউজ করে ফেলবে। আর একটা কথা না বললেই নয় যে.. মুভিটি যখন সুটিং করা হয় মুভির লিড রোলে থাকা লিও দ্যা কাপ্রিও নিজেও বোকা হয়ে গিয়েছিলো সে নিজেও বুঝতে পারছিলোনা যে সে আসলে কোন দৃশ্যটা কখন করতেছে রিয়েলিটি জগতের নাকি স্বপ্নের জগত .. পুরাই মাথা নষ্ট করা একটা মুভি ..
লিস্টের ৩ এ যে মুভির কথা বলবো নাম- –  
Intersteller
সর্বকালের সেরা ৫ টা সাইফাই মুভির নাম বললে ইন্টারস্টেলারের নাম না আসা, ট্রাজেডি ছাড়া আর কিছুই না!! আসলে মুভিটা দেখার সময় অসংখ্য মুভিলাভার রা বলতে বাধ্য হয়েছে যে এটা কি বানালেন নোলান!! আর হ্যা মুভি সম্পর্কে একটা স্টোরি বলি, নোলান এই ইন্টারস্টেলার বানানোর জন্য প্রায় ৫০০ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন! যাতে মুভিটি রিয়েলিস্টিক লাগে তাই!!! বুঝতে পারতেছেন রিয়েলেস্টিক দেখানোর জন্য ৫০০ একর জমিতে ভুট্টা চাষ..
What a director! ওয়েল ভিজ্যুয়াল ইফেক্টে অস্কার জেতা এই ফিল্মটিতে অত্যাশ্চার্য ভিএফএক্স এর সঙ্গে একঝাক ভালো অভিনয়, মাইন্ড ওয়ার্পিং সব থিওরী ও হৃদয়স্পর্শী কাহিনী কেড়ে নেবে আপনার মন। এক কথায় Masterpiece.
লিস্টের ৪ এ যে মুভির কথা বলবো নাম-
 
 
The Prestige(2006):
Genre: Thriller, Mystery 
 

 

 
সত্যি বলতে কি, নোলানের এই থ্রিলারের রিভিউ হয়না ! এক্টিং এ আছেন ক্রিস্টিয়ান বেল, হিউ জ্যাকম্যান, স্কার্লেট জোহানসন, মাইকেল কেইন এর মত এক্টর-একট্রেসরা ! মুভিতে উনিশ শতকের দুই ম্যাজিশিয়ান অ্যালফ্রেড ও রবার্টের জাদুকর হিসেবে একে অপরের ছাড়িয়ে যাবার প্রবল ইচ্ছা তাদের সব সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত করে তোলে। কোন জাদুকরের জাদু সবচেয়ে চমৎকার হয় শেষমেশ সেটাই দেখার বিষয়। ফিল্মটিতে হিউ জ্যাকম্যান ও ক্রিশ্চান বেলের একে অপরকে পাল্লা দিয়ে অভিনয় এবং উষ্ণ যুদ্ধ…. দেখার মতো ছিলো ! সিনেমাটিতে নোলানের ছোট ছেলে ওলিভারের ক্যামিও রোল রয়েছে। আর মুভিটির শেষের টুইষ্টটা সবাইকেই নাড়িয়ে দিতে বাধ্য! সংগে মনোযোগ সহকারে দেখলেই আসল মজাটা পাবেন কেননা নোলান মানেই ভিন্ন কিছু নোলান মানেই মাথা নষ্ট করা।
লিস্টের ৫ এ যে মুভির কথা বলবো নাম-
 
The Dark Knight Trilogy
 

 

 

 
গত কিছু ব্যাটমেন নিয়ে নির্মিত ফিল্মগুলো ফ্লপ হলেও নোলানের ব্যাটম্যান ট্রিলজি কিন্ত ২ বিলিয়নের অধিক কামিয়ে বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিলো।
এই মুভি নিয়ে আর কি বলবো।এমন কেউ নেই যে কিনা এটা দেখে নি। একঝাক ভালো অভিনেতা আর নোলান মিলে বানিয়েছেন মুভি ৩টা। 2005, 2008, 2012 সালের ৩টা মুভি মিলিয়ে The Dark Knight trilogy… ওয়েল নোলানের ব্যাটম্যান ট্রিলজির সবচাইতে হিট মুভি The Dark Knight…যার নাম আলাদা করে না বললেই নয়! এই মুভির সবথেকে বড় প্রাপ্তি জোকার। দ্বিতীয় কিস্তি দ্যা ডার্ক নাইটের ভিলেন জোকার যেকোন হিরোর দর্শকপ্রিয়তাকেও হার মানায় ।
নোলান সম্পর্কে আরও যদি বলি..
তার মুভির সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপাদান মাইন্ড বেন্ডিং ফ্যাক্টর এবং টুইষ্ট। কমবেশী সব মুভি লাভাররাই চায় কোন ফিল্ম দেখে তারা অবাক হোক, টুইষ্ট দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খাক ! ত তিনি এমনভাবে সিনেমা বানান যাতে সেগুলো পুরোপুরি বুঝতে হলে সেই মুভি সম্পর্কে দর্শকদের তারই লেভেলের চিন্তা-ধারাতে যেতে হবে ! তিনি এমন কিছু দেখাতে চান যা কেউ আগে কখনো দেখেনি।
এরকম উপাদানগুলোই কিন্ত তার ফিল্মগুলোকে স্পেশাল করে তোলে এবং দর্শকমহল প্রাণভরে সেগুলোকে সাদর সম্ভাষণ জানায়।
আর এদিকে সব ঠিকঠাক থাকলে খুব শীঘ্রই রিলিজ হবে নোলানের পরবর্তী ফিল্ম ‘টেনেট‘ এবং আশা করা যায় নোলান বরাবরের মতো এই মুভিকেও অন্য মাত্রা দিয়েছেন ! যা ইতিমধ্যে ট্রেইলার দেখে যতেষ্ট বুঝা হয়ে গিয়েছে..
ওআমি কিন্ত একটা কথা খেয়াল করেছি.. সেটা হলো নোল্যানের একটা প্যাটার্ন আছে যা হচ্ছে সে প্রতি ১০ বছর পর এমন একটা ছবি বানায় যা শুধু ব্যাতিক্রম হবে বললে ভুল হবে “মহা ব্যাতিক্রম” বলতে হয়
যেমন ২০০০সালে মেমেন্টো ২০১০ সালে ইন্সেপসন আর এবার ২০২০ এ আসতেছে টেনেট.. আপনার কি মনে হয় কতটা ভিন্ন কিছু আমাদের উপহার দিতে পারে এবার আমাদের নোলান সাহেব..? কমেন্টে যানাতে পারেন ..
যাই হোক লেখার মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি পেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এন্ড হ্যাপি ওয়াচিং মুভিজ..

9 thoughts on "ক্রিস্টোফার নোলানের সেরা ৫মুভির শর্ট রিভিউ + ডাউনলোড লিংক। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য মাস্টওয়াচ"

  1. Random Contributor says:
    ধন্যবাদ ।
    1. Najmul Author Post Creator says:
      🙂
  2. hacker Contributor says:
    ধন্যবাদ এইরকম পোষ্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
    1. Najmul Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ, ভাই।
  3. SOYEB Author says:
    লেখাটা জোস হইছে।
    1. Najmul Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
    1. Najmul Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
  4. Najmul Author Post Creator says:

Leave a Reply