আসসালামু আলাইকুম।

সবাই কেমন আছেন?

আজকে অনেকদিন পর আবার নতুন দুই পর্বে বিভক্ত পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। গত কালকে আমি X-ray সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম।আজ আমি আলো সম্পর্কে আলোচনা করবো কারণ X-ray সাথে আলোর ব্যাপারটি মূলভাবে জড়ীত।আজ আমার পোস্টের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আলো এত দ্রুত গতিবেগে চলে কিভাবে? এবং সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। যেহেতু এই আলোর বিষয়টি অনেক বড় তাই আমি আলোর বিষয়ে এই পোস্টগুলোকে দুই খন্ডে বিভক্ত করেছি।আজকে তার প্রথম পাঠ বা প্রথম পর্ব। তো চলুন সরাসরি মূল কথায় চলে যায়।

বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপারম্যান যেভাবে বুলেটের চেয়ে দ্রুতবেগে পেছন থেকে ছুটে গিয়ে বুলেটকে থামিয়ে দেয় সেটিকে আমরা নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞান বলতে পারি। কিন্তু ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার যে বিশেষ তত্ত্ব নিয়ে আসেন তার একটি স্বীকার্য ছিল, শূন্যস্থানে এবং বায়ুমাধ্যমে সকল পর্যবেক্ষকের কাছে আলোর বেগ সমান। আলোর উৎস এবং পর্যবেক্ষকের বেগ আলোর বেগকে প্রভাবিত করতে পারে না। অন্যকথায় আলোর চেয়ে দ্রুত বেগ অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই বলতে হয় আলোর চেয়ে দ্রুত বেগে ছুটে আলোর ফোটন কণিকাকে ধাওয়া করে সেটিকে ধরে ফেলা সুপারম্যানের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন আলোর চেয়ে দ্রুত বেগে ছোটা সম্ভব নয়?

যখন আলোর চেয়ে দ্রুতবেগ অর্জন করার ঘোষণা এসেছিলঃ

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান্টোনিও এরিডিটাটো (Antonio Ereditato) আলোর চেয়ে দ্রুত বেগ অর্জন করা গেছে এমন একটি ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞানী মহলে হৈচৈ ফেলে দেন। অপেরা প্রকল্পে ১৬০ জনের বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউরোপের সার্নের(CERN) সাথে এক যৌথ পরীক্ষার পর জানায় তারা দেখতে পেয়েছেন নিউট্রিনো কণিকা আলোর চেয়েও দ্রুত বেগে চলতে পারে।

আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে এমনটি হওয়ার কথা নয় আর এরকম হলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের অনেক ধারণাই বদলে যেতে বাধ্য, পদার্থবিজ্ঞানেরও অনেক কিছু নতুন করে লিখতে হয়। পরে দেখা যায় বিজ্ঞানীদের এ পর্যবেক্ষণে ত্রুটি ছিল।

অবশ্য অ্যান্টোনিও এরিডিটাটো (Antonio Ereditato) এবং তার দলের বিজ্ঞানীরা কখনোই দাবি করেননি যে তাদের পর্যবেক্ষণ শতভাগ নিখুঁত। তারা বরং অন্যান্য গবেষকদের তাদের এ পর্যবেক্ষণ যাচাই করে দেখতে বলেছিলেন।

আসলে যা হয়েছিলঃ

নিউট্রিনো কণিকার পরিভ্রমণে কতটা সময় লেগেছিল তা যে সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করত সেটি আবার অত্যন্ত নিখুঁত জিপিএস (Global Positioning System) এর সাহায্য নিত। পার্টিকেল এক্সিলারেটর বা কণা ত্বরকে কেবলের সংযোগে ত্রুটি থাকায় নিউট্রিনোর ভ্রমণের সময় ৭৩ ন্যানোসেকেন্ড কম মনে হয়েছিল। মাসের পর মাস বার বার পরীক্ষা করেও বিজ্ঞানীরা একই রকম তথ্য পাচ্ছিলেন। পার্টিকেল এক্সিলারেটরের মত জটিল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে চালানো পরীক্ষায় এ ধরনের ভুল অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এ ঘটনার পর অ্যান্টোনিও এরিডিটাটো (Antonio Ereditato) ইস্তফা দিয়েছিলেন।

আলোর বেগঃ

শূন্যমাধ্যমে আলোর বেগ সেকেন্ডে ২,৯৯,৭৯২.৪৫৮ কিলোমিটার। যেটিকে সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটারও (300,000km/s) বলা যায়। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার (150 million km) আর এ দূরত্ব অতিক্রমে আলোর ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় লেগে যায়। যার অর্থ হচ্ছে আমরা ৮ মিনিটেরও বেশি সময় আগের সূর্যকে দেখি।

আলোর বেগ অর্জনঃ

আমাদের নিজেদের তৈরি কোন মহাকাশযানই আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে পৌঁছাতে পারেনি। যে কয়েকটি যান এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বেগ অর্জন করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্পেস হরাইজন। এটি ২০১৫ সালে প্লুটো এবং প্লুটোর উপগ্রহ ক্যারনকে পৃথিবীর সাপেক্ষে সেকেন্ডে ১৬ কিলোমিটার (16km/s) বেগে অতিক্রম করে যা আলোর বেগের চেয়ে অনেক কম।

আলোর বেগ অর্জনে বিকল্প চেষ্টাঃ

পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র যেসব কণিকা (যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন) রয়েছে সেগুলো অনেক দ্রুত বেগে ছুটতে পারে। ১৯৬০ সালে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রনকে দ্রুত থেকে দ্রুততর বেগে চালিত করার চেষ্টা করেন। সমধর্মী চার্জ বা আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জগ্রস্ত, তাই অন্য কোন ঋণাত্মক চার্জগ্রস্ত বস্তু কাছাকাছি রাখলে সেটি ইলেকট্রনকে বিকর্ষণ করবে। কাজেই চার্জের মাত্রা যত বাড়ানো হবে ইলেকট্রনকে তত দ্রুতবেগে ধাবিত করা যাবে। এজন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়।

কাজেই প্রযুক্ত শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে ইলেকট্রনের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আলোর বেগের কাছাকাছি পৌঁছানো গেলেও কখনোই আলোর বেগ অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

যে কারণে ইলেকট্রন ফোটনের বেগে বা আলোর বেগে ছুটতে পারেনিঃ

আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে কোন কিছুর বেগ বাড়ার সাথে সাথে ভরও বেড়ে যায়। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেও তাই হয়। ইলেকট্রনের বেগ বাড়ার সাথে সাথে ভর বাড়তে থাকে আর তখন তাকে আরও দ্রুত বেগে ধাবিত করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ফোটন কণিকার ভর নেই, তাই ইলেকট্রনের মত সমস্যাও ফোটনের নেই। ফোটনের ভর থাকলে সেটির পক্ষেও আলোর বেগে ছোটা সম্ভব হত না।

তো আজ এই পর্যন্তই। এই পোস্টের দ্বিতীয় পর্ব খুব শিঘ্রই আপনাদের মাঝে আলোচনা করবো। ততক্ষণ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর ট্রিকবিডির সাথেই থাকবেন। এই পোস্টা আপনাদের কেমন লাগল? জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।



Leave a Reply