আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন।
আজকের এই পোস্ট এ আমি চেষ্টা করব আপনাদের সামনে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, সময় ও দোয়া নিয়ে আলোচনা করার।
শুরুতেই আপনাদের নিকট আমার আবেদনঃ আমার জ্ঞান সীমিত, তাই যদি এই পোস্টের কোথাও তথ্যগত কোন ভুল থাকে, দয়া করে জানাবেন।
আমি এই কন্টেন্ট এর তেমন কিছুই নিজে লিখিনি, বরং এই সকল তথ্য নানান জায়গা থেকে সংগ্রহ করে আপনাদের সামনে তুলেধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
তাহাজ্জুদ নামাজ কিঃ
তাহাজ্জুদ অর্থাৎ রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত, এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী।
তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পর্কে আল কুরআনের সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে “আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।”
হজরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাযের সময়ঃ
তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বলতে মূলত রাত ২ টা থেকে শুরু করে ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত সময়কে বোঝায়।
তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে। তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়তঃ
নিয়ত মনের ব্যাপার। তাই মনে মনে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যায়। নির্দিষ্ট শব্দগুচ্ছ উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে আরবিতে এভাবে করা যায়- نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر ‘নাওয়াইতুয়ান উছাল্লিয়া রাকআতিত্তাহাজ্জুদি আল্লাহু আকবর।’ অথবা বাংলায়- দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়মঃ
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুই রাকাত দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। এ নামাজের রাকাত সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায ৮ রাকাত পড়তেন এবং এর পর বিতরের নামায পরে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন।
কোনো ব্যক্তি যদি মাত্র দুই রাকাত নামাজও আদায় করে তাহলেও তার তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে যেহেতু এই নামাজ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর সন্তুষ্টির জন্য, তাই আমাদের উচিত হচ্ছে আট রাকাত আদায় করা।
নিয়মঃ
–প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
– তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
– অতঃপর ছানা পড়া।
– সুরা ফাতেহা পড়া।
– সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়াঃ
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। সম্ভব হলে এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে। তবে এটা পড়া আবশ্যক মনে করা যাবে না বা এটা না পড়লে তাহাজ্জুদ নামাজ হবে না এমন ভাবা যাবে না।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন, তখন দোয়া পড়তেন-
আরবি :
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ،
وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ،
وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা।’ (বুখারি)
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের নুর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য। (পরকালে) আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার জান্নাত সত্য। আপনার জাহান্নাম সত্য। আপনার (প্রেরিত) নবিগণ সত্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, কেয়ামত সত্য।
হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার ওপর ঈমান আনলাম, আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম, আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ/অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই।’
এই পোস্ট সহ যেকোনো প্রয়োজনে আমার সাথে যোগাযোগ করতেঃ
Facebook এ আমি: https://www.facebook.com/Official.Sobhan762426
Free তে Premium Accounts/ Lisence Keys পেতে ঘুরে আসতে পারেন আমার Facebook Page থেকে।
Post টি ভালো লাগলে একবার ঘুরে আসতে পারেন আমার Site TrickWebBD থেকে হইত আপনার কাজের আরও অনেক কিছু পেতে পারেন।
3 thoughts on "তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত"