আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সকলে ভালোই আছেন।  আজকের আর্টিকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,  সবাই একবার হলেও সম্পূর্ণটা পড়ে নেবেন।

ভুমিকম্প কিঃ
ভুমি অর্থ হচ্ছে মাটি,স্হান বা জায়গা, এবং কম্পন অর্থ হচ্ছে কাঁপুনি বা কেঁপে ওঠা, অতএব ভুমিকম্প হচ্ছে ভুমিতে সৃষ্ট কম্পন  বা ভুমির কম্পন।


ভুমিকম্পের সৃষ্টির রহস্যঃ
ভুমিকম্প কয়েক ভাবে সৃষ্টি হতে পারে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ভূ-অভ্যন্তরে অবস্হিত শিলা(পাথর), যেটির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে টেকটোনিক প্লেট।  ভূ-অভ্যন্তরের গ্যাস যদি কোনো কারণে হঠাৎ কোনো গভীর আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়।  অতপর ভূপৃষ্ঠ থেকে কিছু গ্যাসীয় পদার্থ গিয়ে সেই জায়গাটা পূরন করে দেয়, এর ফলে সেই জায়গার ভারসাম্য বাজায় থাকেনা বা কিছু সময়ের জন্য তার ভারসাম্য হারিয়ে ফলে।  তখন সেখানে কম্পনের সৃষ্টি হয়।  মুহুর্তেই কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা বা শহর,(বৈজ্ঞানিক ভাষায় টেকটনিক প্লেটের অবস্হান পরিবর্তনের সময় যে কম্পনের সৃষ্টি হয় সেটাই হলো ভুমিকম্প)।  ভুকম্পন এলাকার আওতায় যতটুকু থাকাবে ততটুকুই কাঁপতে থাকবে,

প্রধান কিছু কারনঃ

সচরাচর তিনটি কারণে ভুমিকম্প সংগঠিত হয়ে থাকে,

১. ভূগর্ভস্হ চাপঃ (ভূগর্ভের চাপ কোনোকারণে কম বা বেশি হয়ে গেলে তখন সেখানে ভুমিকম্প হয়)

২. ভূগর্ভস্হ বাষ্পঃ  অত্যাধিক তাপের কারণে পৃথিবীর অভ্যন্তরে বাষ্প সৃষ্টি হয়, বাষ্পটি ভূত্বকের নিম্নভাগে প্রবল ভাবে ধাক্কা দেয়, তখনই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়)
৩. আগ্নেয়গিরিঃ (অনেক সময় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে যে বিকট শব্দ ও চাপ সৃষ্টি হয়, সেই চাপটি সরাসরি গিয়ে ভূগর্ভের টেকটোনিক প্লেটে ধাক্কা দেয় তখন সেখানে ভুমিকম্প হয়।
[এই ৩ টি কারণ ব্যতিত আরো অনেক ক্ষেত্রে ভুমিকম্প হতে পারে]

ভুমিকম্প সচরাচর ৫/১০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত স্হায়ী হয় এবং এর থেকে বেশিও হতে পারে। ভুমিকম্প যদিও অতি অল্প সময়ের জন্য হয় তবে কয়েক সেকেন্ডে এটা পুরো একটা এলাকা’কে ধ্বংস করে/ তচনচ করে ফেলতে সক্ষম। ভুমিকম্প হলে ঘর-বাড়ি, উঁচু দালান, আসবাপত্র’সহ এমন কিছু বাকি থাকেনা যা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়নি। ভূমিকম্পের সময় উঁচু দালান ভেঙে পড়তে পারে, তাই সেসময় কোনো মানুষ যদি ঘরে থাকে, সেক্ষেত্রে তার প্রাণহানি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

ভূমিকম্পের ধরনঃ
আবার উৎপত্তিগত দিক থেকে এই ভূক্ম্পন ৩ প্রকারের হয় যেমনঃ অগভীর, মাঝারি, গভীর।
ভুমিকম্প উৎপত্তির কেন্দ্রস্হল ভূপৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটা হবে অগভীর,
ভুমিকম্প উৎপত্তির কেন্দ্রস্হল ভূপৃষ্ঠের ৭০-৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটা হবে মাঝারী,
ভুমিকম্প উৎপত্তির কেন্দ্রস্হল ভূপৃষ্ঠের ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে সেটা হবে গভীর,

ভূমিকম্পের পরিমাপ করাঃ
কত মাত্রার ভূমিকম্প হলো সেটা নির্ণয় করার জন্য রিখটার স্কেল ব্যবহার করা হয়।  রিখটার স্কেলে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত একক রয়েছে।  কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ থেকে বেশি হলে সেটাকে ভয়াবহ কোনো দূর্যোগের আশঙ্কা হিসেবে ধরা হয়।

আরেকভাবে আপনাদেরকে বোঝাই চলুন, আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে।  রিখটার স্কেলে পরিমাপের সময় যদি কম্পনের মাত্রা ৫ থেকে ৫.৯৯ হয় তখন সেটা মাঝারি, যদি কম্পনের মাত্রা ৬ থেকে ৬.৯৯ হয় তখন সেটা তীব্র , যদি কম্পনের মাত্রা ৭ থেকে ৭.৯৯ হয় তখন সেটা ভয়াভহ, এবং মাত্রা ৮ এর বেশি হলে সেটা অত্যন্ত ভয়াভহ।

ভুমিকম্পের তান্ডব থেকে বাঁচতে যা যা করবেনঃ
১. প্রথমত, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হওয়া যাবেনা, নিজেকে শান্ত রাখুন,
২. বিছানায় থাকলে মাথা ঢেকে ফেলুন বালিশ দিয়ে,
৩. ঘরের ভেতর থাকলে শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নীচে আশ্রয় নিতে হবে,
৪. গ্যাসের চুলায় রান্না করতে বসলে চুলা বন্ধ করে বাইরে চলে আসুন,
৫. দালানের ২-৩ তলায় থাকলে শক্ত কোনো পিলার বা বিম আগলে ধরে থাকুন।

৬. রাস্তায় বা মাঠে থাকলে গাছের নীচে আশ্রয় নিন এবং বৈদ্যুতিক পিলার থেকে দূরে থাকুন।

একটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নিনঃ

২০০৪ সালে সুমাত্রার কাছে ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিলো, এর অবস্হান ছিলো সমুদ্রের ৩০ কিলোমিটার নিচে । একই সাথে ভারত,শ্রীলঙ্কা,ইন্দোনেশিয়া,থাইলেন্ড এবং আফ্রিকার উপকূল এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিলো।  এই ভূমিকম্পে ৩০ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় এবং এই ঢেউয়ে পতিত হয়ে ২ লাখের বেশি মানুষ তখন মারা গিয়েছিলো।

ভূমিকম্পের সময় সতর্ক থাকুন, খোলা জায়গায় অবস্থান নিন, নিজে বাঁচুন।
আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply