বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে মানুষ সহজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো, গ্রহণ করা, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, অনলাইন কেনাকাটা এবং আরও অনেক আর্থিক লেনদেন করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছেও ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে। এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের সেরা ২০টি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যাতে নতুন ব্যবহারকারীরাও সহজে বুঝতে পারে কোন সার্ভিস তাদের জন্য উপযোগী।

১. বিকাশ (bKash)

পরিচিতি: বিকাশ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, যা ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।

মূল ফিচার: টাকা পাঠানো, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, মুভি টিকিট কেনা, অনলাইন পেমেন্ট, ই-কমার্স পেমেন্ট, সেভিংস ও লোন সুবিধা।

অ্যাপ রেটিং: Google Play Store-এ ৪.৫+ রেটিং।

কার জন্য উপযোগী: সাধারণ ব্যবহারকারী, ছাত্রছাত্রী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আদর্শ।

২. নগদ (Nagad)

পরিচিতি: নগদ হলো বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্স সেবা।

মূল ফিচার: দ্রুত টাকা ট্রান্সফার, ফ্রি ক্যাশ ইন, বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, লোন সুবিধা, কিউআর কোডে পেমেন্ট।

অ্যাপ রেটিং: ৪.৪+ রেটিং।

উপযোগী ব্যবহারকারী: যারা ট্রান্সফার চার্জ কম চান, এবং বেশি অফার পেতে চান।

৩. রকেট (Rocket)

পরিচিতি: ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস।

মূল ফিচার: অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংকে ও ব্যাংক থেকে মোবাইলে টাকা স্থানান্তর, বিল পেমেন্ট, সরকারি ফি প্রদান, স্কলারশিপ গ্রহণ।

রেটিং: ৪.২+

উপযোগী ব্যবহারকারী: যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করে নিরাপদ লেনদেন করতে চান।

৪. উপায় (Upay)

পরিচিতি: ইউসিবি ব্যাংকের ডিজিটাল মোবাইল মানি সার্ভিস।

মূল ফিচার: অ্যাপ ভিত্তিক QR পেমেন্ট, টাকা পাঠানো, মার্চেন্ট পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, সরকারি ফি প্রদান।

রেটিং: ৪.৩+

উপযোগী ব্যবহারকারী: যারা স্মার্টফোনে সুন্দর ইন্টারফেসে পেমেন্ট করতে চান।

৫. এমক্যাশ (mCash)

পরিচিতি: মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যান্স সেবা।

ফিচার: ব্যাংক লিঙ্কড পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন।

বিশেষত্ব: যারা নিরাপদ ও সীমিত ব্যাংকিং চান।

৬. ট্যাপ (TAP)

পরিচিতি: ট্যাপ হলো একটি উদ্ভাবনী ফিনটেক প্রতিষ্ঠান।

ফিচার: QR পেমেন্ট, ইউটিলিটি বিল, কিস্তি পরিশোধ, ক্যাশ আউট, মার্চেন্ট পেমেন্ট।

উপযোগী ব্যবহারকারী: যারা সহজ ডিজাইন ও নতুন অফার পছন্দ করেন।

৭. মোবিক্যাশ (MobiCash)

পরিচিতি: বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের একটি উদ্যোগ।

ফিচার: সীমিত সেবা — মোবাইল রিচার্জ, ফান্ড ট্রান্সফার, ব্যালেন্স চেক।

উপযোগী: যারা কম্প্যাক্ট সেবা চান।

৮. ওয়ালেটম্যাক্স (WalletMax)

পরিচিতি: আধুনিক ডিজিটাল ওয়ালেট।

ফিচার: কার্ড লিংক করে পেমেন্ট, কিউআর কোড, বিল পেমেন্ট, ক্যাশব্যাক।

রেটিং: ৪.১+

৯. শিওরক্যাশ (SureCash)

পরিচিতি: বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লিঙ্কড সার্ভিস।

ফিচার: স্কুল/কলেজ ফি, সরকারি ভাতা গ্রহণ, পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ।

১০. আই-পেমেন্ট (iPay)

পরিচিতি: প্রিমিয়াম ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে।

ফিচার: ই-কমার্স পেমেন্ট, রিকুয়েস্ট পেমেন্ট, কার্ড লিঙ্কিং।

উপযোগী ব্যবহারকারী: অনলাইন শপারদের জন্য কার্যকর।

১১. এজি পে (AG Pay)

পরিচিতি: অগ্রণী ব্যাংকের সার্ভিস।

ফিচার: টাকা ট্রান্সফার, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স, বিল পেমেন্ট।

১২. ইসলামী মোবাইল ব্যাংকিং (Islami Bank mCash)

পরিচিতি: ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ ভিত্তিক এমএফএস।

ফিচার: হিসাব ট্রান্সফার, সাপ্লায়ার পেমেন্ট, দান বা জাকাত প্রদান।

১৩. ট্রাস্ট মোবাইল মানি (Trust Mobile Money)

পরিচিতি: ট্রাস্ট ব্যাংকের ডিজিটাল ফাইন্যান্স সার্ভিস।

ফিচার: মোবাইল পেমেন্ট, অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার।

১৪. এমওয়ালেট (mWallet)

পরিচিতি: ই-কমার্স ফোকাসড পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম।

ফিচার: সিম্পল ইউজার ইন্টারফেস, কুইক চেকআউট, ক্যাশব্যাক।

১৫. এক্সপে (Xpay)

পরিচিতি: নতুন ডিজিটাল ফিনটেক ব্র্যান্ড।

ফিচার: QR পেমেন্ট, অ্যাপ টু অ্যাপ ট্রান্সফার, স্মার্ট বিল পেমেন্ট।

১৬. ক্যাশবক্স (Cashbox)

পরিচিতি: অ্যাপ-ভিত্তিক এমএফএস।

ফিচার: ওয়ালেট লোড, QR পেমেন্ট, কিস্তি পরিশোধ।

১৭. ইউ-পে (uPay)

পরিচিতি: ইউসিবি ব্যাংকের আরেকটি মোবাইল মানি সার্ভিস।

ফিচার: লাইটওয়েট অ্যাপ, সহজ ইন্টারফেস, মার্চেন্ট পেমেন্ট।

১৮. এম-সার্ভ (mServe)

পরিচিতি: এন্টারপ্রাইজ লেভেল মানি ম্যানেজমেন্ট টুল।

ফিচার: কর্পোরেট পেমেন্ট, সাপ্লায়ার বিল, রিপোর্টিং সিস্টেম।

১৯. লেনদেন (LendN)

পরিচিতি: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও দোকানদারদের জন্য ডিজাইন করা অ্যাপ।

ফিচার: কিস্তি প্রদান, পেমেন্ট ট্র্যাকিং, ইনভয়েস তৈরি।

২০. জয়েন্টপে (JointPay)

পরিচিতি: পারিবারিক ও গ্রুপ একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট টুল।

ফিচার: একাউন্ট শেয়ারিং, ব্যয় হিসাব, গ্রুপ বাজেটিং।

উপসংহার

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা দিন দিন আরও উন্নত ও জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্যে এই সব সার্ভিস মানুষকে সময়, খরচ ও ঝামেলা থেকে মুক্তি দিচ্ছে। প্রতিটি সার্ভিসের আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকায়, ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো একটি বা একাধিক সার্ভিস বেছে নিতে পারেন। সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং হতে পারে নিরাপদ ও লাভজনক।

বিশেষ টিপস: যেকোনো সার্ভিস ব্যবহারের আগে তাদের অফিসিয়াল অ্যাপ ডাউনলোড করুন, প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র (NID, ছবি) ঠিকভাবে দিন এবং সর্বদা OTP ও পাসওয়ার্ড গোপন রাখুন।

তুমি যদি নতুন হও, তবে bKash বা Nagad দিয়ে শুরু করাই সবচেয়ে সহজ এবং সুবিধাজনক। পরে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অন্যান্য সার্ভিস ট্রাই করতে পারো।

2 thoughts on "বাংলাদেশের সেরা ২০টি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস"

  1. Avatar photo Rejuan Hosain Contributor says:
    cellfin nai ze list e?

Leave a Reply