দেশের মার্কেটে Vivo নিয়ে আসলো তাদের Y সিরিজের নতুন একটি ফোন Vivo Y22S ! বেশ কিছুদিন ধরে থাকা এই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে আমাদের কাছে কেমন লেগেছে তার সবকিছুই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

এবং তার পাশাপাশি এই এই স্মার্ট ফোনটি কাদের জন্য কেনা উচিত হবে ,আর কাদের জন্য কেনা উচিত হবে না সেই বিষয়গুলো নিয়েও আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো।

মোমোবাইলটির বক্স কনটেন্টে যেগুলি রয়েছে-


ইউজার মেনুয়াল।
সিম ট্রে ইজেকটর।
সফ্ট প্লাস্টিক ব্যাক কভার।
টাইপ সি- ইউ এস বি চার্জিং কেবল।
১৮ ওয়ার্ডের ফার্স্ট চার্জার।
এবং ভিভো ওয়াই ২২ এস মোবাইলটি।

ডিজাইন এবং আউটলুকের কথা বলতে গেলে-


পলিকার্বনেট এর তৈরি এই মোবাইলটি সম্পূর্ণ ফ্লাগশেপে এসেছে, যার কারনে ডিভাইসটি হাতে নিয়ে অনেকটাই প্রিমিয়াম প্রিমিয়াম ফিল পাওয়া যায়।

এছাড়াও এই মোবাইলটিতে IP5X অর্থাৎ ডাস্ট রেজিস্ট্যান্ট IPX4 ওয়াটার রেসিস্টান্ট এর সার্টিফিকেশন রয়েছে।

এছাড়াও 6.55 INCH ডিসপ্লে সাথে মোবাইলটি থিকনেস হল 8.38MM এবং ওয়েট হলো ১৯২ গ্রাম।

ওভারঅল স্ট্যান্ডার সাইজের মোবাইল হওয়ার কারণে খুব ইজিলি সিঙ্গেল হান্ডে ক্যারি করে ইউজ করা যায়, এবং হাতে নিয়েও সুন্দরভাবে ফোনটি গ্রিপ করা যাচ্ছিল।

বাংলাদেশে ফোনটির দুইটি কালার ভেরিয়েন্ট এসেছে- CYAN & STARLIT BLUE

বাটন এবং স্পোর্টস এর কথা বলতে গেলে-


রাইট সাইডে রয়েছে ভলিউম লকার এবং পাওয়ার বাটন এবং এই পাওয়ার বাটন সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার হিসেবে কাজ করে।

মোবাইলটির লেফট সাইটে কিছুই নেই। মোবাইলটির উপরের অংশে রয়েছে সিম কার্ড ট্রে যেটিতে দুটি সিম কার্ড ইউজ করার পাশাপাশি রয়েছে এক্সটার্নাল মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা।

মোবাইলটি নিচের অংশে রয়েছে!


মেইন স্পিকার।
প্রাইমারি মাইক।
ইউএসবি টাইপ সি- চার্জিং পোর্ট।
এবং সবশেষে 3.5 mm headphone jack পোর্ট।

এই মোবাইলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের কথা বলতে গেলে- ফিঙ্গারপ্রিন্ট পোজিশন আমার কাছে একদম ঠিকঠাক মনে হয়েছে, এবং সেই সাথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যথেষ্ট ফাস্ট ছিল।
এবং মোবাইলে আরও থাকা ফেস আনলকিং ফিচারটিও যথেষ্ট একুরেট এবং ফার্স্ট ছিল আর তার পাশাপাশি মোবাইলটিতে ইম্পরট্যান্ট প্রায় সব সেন্সরই ছিল।

মোবাইলটির স্পিকার পারফরমেন্সের কথা বলতে গেলে- সাউন্ড এর বেস এবং লাউডনেস আমার কাছে ঠিকঠাকই লেগেছে, সেই সাথে এই ফোনে যখন আমরা হান্ডেট পার্সেন্ট ভলিউম দিয়ে গান শুনেছি খুব একটা প্রবলেম বা ডিস্ট্রাকশন এর দেখা পায়নি। তাই ওভারাল প্রাইজ বিবেচনায় স্পিকার ঠিকঠাক আছে।

অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মোবাইলটিতে রয়েছে- অ্যান্ড্রয়েড ১২ ভার্সন এবং সেই সাথে ইউ আই হিসেবেও রয়েছে- ফান্টাস ওএস ১২ আরো রয়েছে আপ টু ২ জিবি ভার্চুয়াল র‍্যাম।

মাল্টি টাস্ক এর পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালোই স্মুত ছিল, র্যাম হ্যান্ডেলিং ঠিকঠাক হওয়ার কারণে আমরা বেশি রাফ ইউজে ও ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছি। কোন প্রকার ল্যাগিং এর দেখা পাইনি। এবং তার পাশাপাশি অনেকগুলো অ্যাপ আমরা মোবাইলের ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ব্যবহার করেছি, কোন প্রবলেমের দেখা পায়নি।

এই মোবাইলটিতে রয়েছে ৬.৫৫ ইঞ্চি সাইজের আইপিএস এলসিডি প্যানেল এর ডিসপ্লে যার রেজুলেশন হলো- ১৬০০ বাই ৭২০ পিক্সেল। ডিসপ্লের পিক্সেল ডেনসিটি হল ২৭০ পিটিআই।
আউটডোরে সানলাইট কন্ডিশনে আমরা ওভারঅল বেশ কমফোর্টেবল ভাবেই ফোনটি ব্যবহার করতে পেরেছি ইভেন ডিরেক্ট সানলাইট এর উপরেও ফোনটি ভালোভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি।

এই ফোনের রিয়ার প্যানেলে ছিল ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ- যার মেইন ক্যামেরাটি হল F/1.8 APERTURE ৫০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা এবং আরেকটি ক্যামেরা হল ২ মেগাপিক্সেলের F/2.4 APERTURE MACRO CAMERA

মেইন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় অবজেক্ট খুব ইজিলি ফোকাস করা যাচ্ছিল এবং খুব সুন্দর কালার প্রডিউস করছিল সেই সাথে ছবি ডিটেলস ও অভারল বেশ ভালোভাবে ধরে রাখতে পারছিল। তার পাশাপাশি জুম করে ছবি দিল ইমেজ ডিটেলস বেশ ভাল পাওয়া যায়।

ছবির এক্সাম্পল নিচে দেখে নিন।




এই মোবাইলটি দিয়ে- 1080p/30FPS এ ভিডিও শুট করা যায়- তবে 720p/30FPS এ ভিডিও শুট করার এক্সট্রা সুবিধা রয়েছে।

ভিডিও শুট করে ভিডিওর পারফরম্যান্স আমাদের কাছে খুব বেশি যে ভালো লেগেছে সেটি বলবো না, ভিডিওতে কেন জানি ক্যামেরা ভালো পরিমান সেকি সেকি ফিল পাওয়া গিয়েছে।
তো এগুলোর পাশাপাশি মোবাইলটিতে আরো রয়েছে স্লো মোশন এর ভিডিও শুট করার সুবিধা।

এই মোবাইলটিতে রয়েছিল- ৮ মেগাপিক্সেলের F/2.4 APERTURE এর সেলফি ক্যামেরা ওভারঅল আউটডোর কন্ডিশনে বেশ ভালোই ছবি উঠে মোবাইলটি সেলফি ক্যামেরা থেকে! কালার টোনটা বেশ ক্রিসপি ছিল এবং ডায়নামিক রেঞ্জও বেশ ভালো ছিল।

মোবাইলটিতে আরেকটা স্পেশাল ফিচার হলো- আপনারা চাইলে গুগলের ক্যামেরা App ব্যবহার করতে পারবেন।

vivo y22 এস , এই মোবাইলটিতে রয়েছে ৫০০০ হাজার মিলি আম্পিয়ারের ব্যাটারি এবং সাথে রয়েছে ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার। এই মোবাইলটি আমাদের ফুল চার্জ করতে সময় লেগে গিয়েছে প্রায় দুই ঘণ্টা প্লাস।

তবে একবার চার্জ করার পর হালকা পাতলা ডে টুডে ইউজে অর্থাৎ বেসিক ইউজ করে আমরা প্রায় ১.৫ দিন ব্যাটারি ব্যাকআপ পাইছি, অপরদিকে আমরা হেব্বি গেমিং এ স্ক্রিন অন টাইম ৬ ঘন্টা পেয়েছি।

এই মোবাইলটিতে প্রসেসর সেকশনে রয়েছে- কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ এটি একটি অক্টোকর প্রসেসর, যার ট্রানজেকশন সাইজ হলো ৬ নেনোমিটার। জিপিইউ হিসেবে মোবাইলটিতে রয়েছিল অ্যাড্রিনা-৬১০

বাংলাদেশ মার্কেটে এই ফোনটি মাত্র একটি ভেরিয়ান্ট এ এসেছে সেটি হলো- ৬ গিগাবাইট র্যাম এবং ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ! যার র্যাম এর টাইপ LPDDR4X এবং স্টোরেজ টাইপ হল- UFS 2.2 এবং এই ফোনটির অফিসিয়াল প্রাইজ হলো ২১,৯৯৯ টাকা, অর্থাৎ ২২ হাজার টাকা।

মোবাইলটির আনটুটু স্কোর পেয়েছি- ২৮৫৮১৪ GEEKBENCH SCORE সিঙ্গেল করএ ৩৭৬ এবং মাল্টি করএ ১৫৬৪

স্টোরিস স্পিড চেক করতে গিয়ে পেয়েছি-


Read: 663 MB/s
Write: 869 MB/s

এই মোবাইলটিতে আমরা পাবজি মোবাইল গেমটি খেলেছি- pubg গেম যদিও অনেকে হেব্বি গ্রাফিক্স সেটিং এ সাপোর্ট করে না ,ব্যালেন্স গ্রাফিক্সে মিডিয়াম ফ্রেম রেটে আমরা খেলতে পেরেছি।
তো ওভারঅল গেমিং পারফরমেন্স এই গ্রাফিক্সের মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল তবে আর একটু কমিয়ে খেললে আরো ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে।
তবে পাবজি গেম টি লং টাইম খেলে ফোনটা একটু হিট হয়ে যায় ক্যামেরার পাশে।

তবে মোবাইলটিতে আমরা ফ্রি ফায়ার গেম খেলেছি-সেখানে কোন প্রকার লেগিং বা ফ্রেম ড্রপের দেখা পায়নি মোটামুটি ভালো গ্রাফিক্স সেটিং এই লং টাইম খেলতে পেরেছি।
তো সবকিছু মিলিয়ে এই মোবাইলটিতে গেমিং করা যায় ! একেবারেই গেমিং করা যাবে না এরকম কোন ব্যাপার না।
এই স্মার্টফোনের হিটিং ইস্যুর ব্যাপারে বলতে গেলে- এই ফোনে তেমন কোন হিটিং ইস্যু নেই তবে লং টাইম গেমিং করলে স্পেশালি পাবজির মত গেমস খেলতে গেলে ফোনে রিয়ার প্যানেলে কিছুটা হিট হয়ে যায় এটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক কারণ এটি সব ফোনেই দেখা যায়।

Network & Connectivity


4G Network (Both Sim)
Wifi 2.4Ghz and 5Ghz

এবং সেই সাথে মোবাইলটিতে এফএম রেডিও সাপোর্টেড সহ ব্যবহার করা যায় ১ টেরাবাইট পর্যন্ত এক্সটার্নাল মেমোরি।

তো এবার চলুন জেনে নিই ফোনটির কি কি দুর্বল পয়েন্ট রয়েছে।


১। এইচডি প্লাস রেজুলেশন ডিসপ্লে এবং তার পাশাপাশি আইপিএস এলসিডি প্যানেল ! ২২ হাজার টাকা হিসাবে এমুলেট ডিসপ্লে এবং সেই সাথে ফুল এইচডি প্লাস রেজুলেশনের ডিসপ্লে হলে ভালো হতো।
২। ডিসপ্লেতে যে সেলফি ক্যামেরাটা রয়েছে সেটি হলো ওয়াটার ড্রপ ক্যামেরা! তো এখানে আই থিঙ্ক পানশাল ক্যামেরা হওয়া উচিত ছিল।
৩। ফোনটিতে কোন নয়েজ ক্যালকুলেশন মাইক নেই, একটা নয়েজ ক্যালকুলেশন মাইক থাকলে পারফরমেন্স আরো ভালো পাওয়া যেত।
৪। এই ফোনটিতে যে প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ এটা গেমিং এর জন্য মোটেও একটি মানানসই প্রসেসর নয়।

এবার চলুন জেনে নেই ফোনটির ভালো দিকগুলো।


১। এই ফোনটির যে ডিসপ্লে টি রয়েছে ৬.৫৫ ইঞ্চি সাইজের ডিসপ্লে ,এটা ঠিক যে আইপিএস এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে বাট স্টিল ডিসপ্লের যে কালার প্রডিউস করে আমার কাছে যথেষ্ট ক্রিসপি কালারফুল মনে হয়েছে।
২। ফোনটিতে যে প্রসেসর রয়েছে সেটি তেমন একটা গেমিং এর জন্য না হলেও, ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক ভালো পাওয়া যায়
৩। আমরা অনেকক্ষণ ধরে মাল্টিটাস্কিং করার পরও কোন ধরনের লেগিং লক্ষ্য করিনি যেটা অনেক ভালো একটা ব্যাপার।
৪। মোবাইলটি বাজেট অনুযায়ী স্পিকার কোয়ালিটি অনেক জোস ছিল যেটা প্রশংসার দাবি রাখে।
৫। ভিভো এর এই ফোনে একটা সুবিধা হল ইউ আই অপটিমাইজেশন খুবই ভালো তাই কনফিগারেশন একটু লো কোয়ালিটির হলেও পারফরম্যান্স বেস্ট পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেই ফোনটি কাদের জন্য কেনা উচিত হবে।
যারা ফোন নিয়ে খুব একটা গেমিং এবং ফটোগ্রাফি করেন না কিন্তু ফোনে লং টাইম কথা বলেন এবং ডে টু ডে মাল্টিটাস্কিং করেন।
এবং অনেকদিন ধরে শান্তিতে একটা স্টেবল পারফরম্যান্স চান আইমিন সোজা কথাই বলতে গেলে লং টাইম ব্যবহার করার জন্য কোন একটা ফোন কিনতে চাচ্ছেন তাদের জন্য * ভিভো ওয়াই ২২ এস * পারফেক্ট

আরো পড়ুন-
Runner Dayang 50 বাইক কিনুন মাত্র ১০ হাজার টাকায়

2 thoughts on "ভিভো Y22 বাংলা রিভিউ | সুন্দর একটা ফোন।"

  1. ጠđ Ⱥł Ⱥmin Author says:
    ২০২৩ এ ১৮ ওয়াট কে ফাস্ট চার্জিং বলবেন? দাম ১৭-১৮ হাজার হলে ভালো হতো। ?
  2. দামের তুলনায় ফোনটি উপযুক্ত নয়।

Leave a Reply