আসসালামু আলাইকুম,
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রিকবিডিতে এটি একটি পরিচিত বিষয়। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে এই কারেন্সির সাথে পরিচিত হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ অনলাইনে ইনকাম করতে যেয়ে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে পরিচিত হয়েছেন।
যারা জানেন না, তাদের জন্যঃ
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক প্রকার ভার্চুয়াল মুদ্রা যা সারা বিশ্বের প্রায় ৮০+ রাষ্ট্র সমর্থন করে।
এটির কোনো কেন্দ্রিয় প্রতিষ্ঠান নেই। এর দাম নির্ধারিত হয় প্রধানত বাজারে চাহিদা দ্বারা।
বিটকয়েন হল ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রথম ভার্চুয়াল মুদ্রা। সাতোসি নাকামোতো এই বিটকয়েনের উদ্ভাবক বলে পরিচিত।বর্তমানে ৩০০০+ ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রিপ্টো বাজারে বিদ্যমান। এটির সফলতার অন্যতম কারন হলো এর গোপনীয়তা।
যাই হোক, আরো বিস্তারিত জানতে হলে উইকিপিডিয়ায় সার্চ করুন।
ট্রানজেকশন টেকনোলোজি :
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন টেকনোলজির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ব্লকচেইন হলো একাধিক ব্লক বা বাক্স যা পরস্পর পরস্পরের সাথে কানেক্টেড। এ ব্লক গুলো ডেটা বহন করে। প্রতিটি ব্লক একটি হ্যাস কোড দ্বারা সিকিউরড থাকে। এবং এই হ্যাস কোড রিভার্সএবল না।
বিষয়টা বোঝার জন্য নিচের উদাহরণ দেয়া যাক,
মনেকরুন,
আমার কাছে “ABCD” একটি ডেটা। আমি কোনো ব্লকের মাধ্যমে ডেটাটি এক যায়গা থেকে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করতেছি।
কেউ যদি চায় তাহলে সে হ্যাস কোড দেখতে পারবে কিন্তু সে এই হ্যাস কোড দিয়া ডেটা রিকভার করতে পারবে না। অর্থাৎ 1234 দিয়ে সে ABCD. এই ডেটাকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। যার কারনে আমি কি ডেটা সেন্ড করেছি তা সিকিউরড থাকলো।
এভাবে এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে ডেটা ট্রান্সফার হয়। প্রায় প্রতি ১০ মিনিটে একেকটি ব্লক তৈরি হয়। এবং প্রত্যেকটি ব্লক তার পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাস কোড দ্বারা ভেরিফাইড থাকে।
ব্লক সংখ্যা ট্রানজেকশন সংখ্যার ওপর নির্ভর করে।
আর এই ব্লক তৈরী করে যে ডেটা গুলো ট্রান্সফারে সহায়তা করে তাকে বলা হয় মাইনার। সম্পূর্ণ প্রসেস কে বলা হয় মাইনিং। এই কাজের জন্য মাইনার কে সামান্য পরিমাণ রিওয়ার্ড দেয়া হয়।
এটা হলো ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যাবহার করে ডেটা ট্রান্সফার পদ্বতি।
ট্রানজেকশন পদ্বতিঃ
মনেকরুন,
Mr X এর কাছে 10 টি বিটকয়েন আছে। সে তার বন্ধু Mr Y কে 2 বিটকয়েন সেন্ড করলো। এখানে Mr X এবং Y এর মধ্যে ট্রানজেকশন হিস্টোরি নিয়ে একটি ব্লক তৈরি হলো। Mr Y আবার Mr Z কে ১ টি বিটকয়েন সেন্ড করলো। এখানে আরেকটি ব্লক তৈরী হলো, এবং এই ব্লকটি পূর্ববর্তী ব্লকের সাথে চেইন আকারে যুক্ত হলো। এরকমভাবে প্রতিটি ট্রানজেকশন হিস্টোরি গুলো ব্লক আকারে যুক্ত হয়ে বিশাল চেইন গঠন করে। যেহেতু প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ ট্রানজেকশন তৈরি হয় তাই লক্ষ লক্ষ ব্লক চেইন আকারে সৃষ্টি হয়ে একটা বিশাল তথ্যভাণ্ডার তৈরী করে। কেউ যদি এই তথ্যভাণ্ডার কে অকেজো করে দেয় তাহলে সম্পূর্ণ ব্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এটা অসম্ভব। কারন প্রতিটি মাইনার যিনি মাইনিং করেন তাকে পূর্ববর্তী সকল ট্রানজেকশনের ব্লকচেইন ডেটা কে আগে স্টোর করতে হয়। যেহেতু পৃথিবীতে মাইনার সংখ্যা লক্ষ লক্ষ, তাই কেউ এই ব্যাবস্থা ধ্বংস করতে চাইলে সকল মাইনারের কম্পিউটারের ব্লকের ডেটা ধ্বংস করতে হবে। যা অসম্ভব।
সিকিউরিটিঃ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লকচেইন সিকিউরিটির দিক থেকে খুবই উন্নত। এবং হ্যাক প্রায় অসম্ভব। কারন কেউ যদি কোনো ব্লকের তথ্য হ্যাক করে চেঞ্জ করে দেয় তখন ব্লকটির হ্যাস কোডের সাথে পরবর্তী ব্লকের হ্যাস কোডের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। কারন প্রতিটি ডেটার জন্য হ্যাস কোড আলাদা ও নির্দিষ্ট।
তো কেউ ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করলে ডেটা ট্রান্সফার বন্ধ হয়ে যায়।
তাই বলা যায় হ্যাকিং থেকে ১০০ % এর মধ্যে ব্লকচেইন প্রায় ৯৫% ই নিরাপদ।
ব্যাবহারঃ
১ঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি: ব্লকচেইনের পরিচিতি লাভ মূলত বিটকয়েন নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়েই। ভার্চুয়াল লেনদেনে ব্লকচেইনের ব্যাবহার সবচেয়ে বেশি।
২ঃ গোপন ডেটা আদানপ্রদানঃ সামরিক ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ীক গোপন তথ্য এই ব্লকচেইন ব্যাবহার করে আদানপ্রদান করা হয়।
৩ঃ ভোটিংঃ অনেক কান্ট্রিতে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় ব্লকচেইন টেকনোলজি ইউজ করে। কারন প্রতিটি ব্লক সাম্প্রতিক ডেটা আদানপ্রদান তথ্যাবলি সংরক্ষন করে রাখে। কেউ চাইলে জাল ভোট দিতে পারবে না। কারন তার ভোট প্রক্রিয়ার তথ্য আগেই ব্লকে সংরক্ষীত আছে।
এরকম আরো অনেক সেক্টর তৈরি হচ্ছে যেখানে ব্লকচেইন ব্যাবহার করে সর্বোচ্চ ভাল ফলাফল তৈরী করা যায়।
লক্ষণীয়ঃ
বিটকয়েন ব্লকচেইন টেকনোলোজির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিটকয়েন বলতেই শুধু ব্লকচেইন বোঝানো হয় না। ব্লকচেইন একটি বিস্তৃত টেকনোলজি। শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি তেই ব্লকচেইন ব্যাবহার করা হয় না।
আজ এখানেই শেষ।
আমার লেখায় কোনো ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। পরবর্তী কোনো পর্বে আবার আসবো আপনাদের সামনে। আল্লাহ হাফেজ।
6 thoughts on "ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি, আলোচনা পর্ব-১"