আসসালামু আলাইকুম। 

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালোই আছে। প্রতিদিনের মতো করে আজকেও আপনাদের জন্য নতুন আরেক টি পোস্ট নিয়ে হাঁজির হয়েছি। আশা করি পোস্ট টি সম্পর্ন্ন পড়লে আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। তো বেশী কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
আজকের পোস্টটি একটু ব্যতিক্রম ধর্মী। আজকের পোস্টে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করবো। আলোচনা টি প্রথা ভেঙ্গে একটু অন্য রকম ভাবে করার চেষ্টা করছি। তো চলুন মূল পোস্টে চলে যাওয়া যাক।
ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক ধারণা ব্যান্ডিং সম্পর্কে। (Basics of Freelancing: Branding), বিস্তারিত পোস্টে।
বিস্তারিত পোস্টঃ
প্রথমেই আমরা মার্কা (Branding) সম্পর্কে আলোচনা করবো।

মার্কা (Branding)

মার্কা সম্পর্কে ধারণাঃ  মার্কা (Brand) হচ্ছে একটি নাম, একটি পরিচিতিজ্ঞাপক শব্দগুচ্ছ (Term), একটি স্মারকচিহ্ন (Sign), একটি প্রতীক (Symbol) এবং নকশা (Design) পরিকল্পনা, কিংবা এসবগুলোর একটি সুসমন্বিত রূপ, যা কোনো বিক্রেতা বা বিক্রেতাগোষ্ঠীর পণ্য ও সেবার নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তোলে এবং প্রতিযোগীদের চেয়ে নিজেদেরকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে। মূলত একটি মার্কা হচ্ছে কোনো বিক্রেতার ধারাবাহিকভাবে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পণ্য ও সেবা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। তবে একটি সেরা মার্কা হতে হলে অবশ্যই পণ্য বা সেবার গুণমানের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। ব্যবসায়, বাজারজাতকরণ এবং বিপণন সংক্রান্ত কার্যাবলিতে মার্কার বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়।
হিসাববিজ্ঞান অনুসারে মার্কাকে ‘অলীক সম্পত্তি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেটি অনেকক্ষেত্রে একটি কোম্পানির উদ্বৃত্তপত্রের খুব মূল্যবান সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃত। মার্কা মূল্যায়ন (Brand valuation) অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থাপকীয় কৌশল, যার মাধ্যমে কোনো মার্কার আর্থিক মূল্য নিরূপণ করা হয়। এটি শেয়ারগ্রাহকদের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিপণনসংক্রান্ত বিনিয়োগ সঠিকভাবে পরিচালনায় সাহায্য করে।
মার্কার ইতিহাসঃ  মার্কা শব্দটির ইংরেজি অনুবাদ Brand-এর উৎপত্তি ঘটেছে ‘Brandr’ শব্দটি থেকে, যার অর্থ হচ্ছে ‘পোড়ানো’ । প্রাথমিক পর্যায়ে, গবাদি পশুর মালিকগণ তাদের নিজ নিজ পশুকে অন্যান্য মালিকের পশুর চাইতে আলাদাভাবে শনাক্ত করার সুবিধার্থে খাঁজকাট ধাতব বস্তু পুড়িয়ে তা দিয়ে পশুর শরীরে একটি মার্ক বা চিহ্ন বসিয়ে দিতেন।
প্রাচীনতম মার্কার উদাহরণটি খুঁজে পাওয়া যায় ভারতে বৈদিক যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ সন হতে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ সন), যেটি ছিলো ‘চয়নপ্রাস’ নামক একটি ভেষজ বাটা। ১৩শ শতাব্দীতে ইতালীয়রা কাগজের ওপর জলছাপ আঁকার মাধ্যমে মার্কা ব্যবহার শুরু করে। প্যাকেটজাত পণ্য এবং শিল্পায়নের প্রভাবে বিপণন খাতে মার্কার ব্যবহার শুরু হয় উনিশ শতকে। এ সময় বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থাকে বড় বড় কেন্দ্রে স্থানান্তর করে ফেলা হয়।
“Bass & Company’ নামক একটি ব্রিটিশ কোম্পানি দাবি করে তাদের লাল এবং ত্রিভুজাকৃতির মার্কাটিই বিশ্বের প্রথম নিবন্ধীকৃত ব্যবসায়িক মার্কা বা ট্রেডমার্ক। ‘Tate & Lyel’-ও নিজেদের মার্কাকে বিশ্বের প্রথম ট্রেডমার্ক হিসেবে দাবি করেছে, যেটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃক স্বীকৃত।
ধারণাসমূহঃ  মার্কাকরণ কৌশলকে সফল হতে হলে এবং মার্কার মূল্য সৃষ্টি করতে হলে ভোক্তাদেরকে অবশ্যই বুঝাতে হবে যে, বিভিন্ন ধরনের মার্কার পণ্য ও সেবার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পার্থক্য বিদ্যমান। মার্কাসমূহের মধ্যকার পার্থক্যটি অনেক সময় পণ্যের বিবিধ বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতার ওপর নির্ভর করে। জিলেট, থ্রি-এম, মার্ক এবং অন্যান্য অনেক মার্কা প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ পণ্যখাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে। প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ হয়েছে। এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ভোক্তার উৎসাহটি কোথায় তা বুঝতে পারা এবং পণ্যের ভেতরে কেউ উৎসাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি অবয়ব বা ইমেজ সৃষ্টি করা।
মার্কার উপাদানঃ একটি মার্কা সাধারণত অনেকগুলো উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে নাম ঃ যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দ্বারা কোম্পানি, পণ্য, সেবা ইত্যাদিকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
  • লোগোঃ যে ট্রেডমার্কটি দিয়ে মার্কাকে চিহ্নিত করা হয়।
  • ট্যাগলাইনঃ একটি শব্দগুচ্ছ, যা মার্কাটি কী বা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ক্রেতা বা ভোক্তাকে ধারণা প্রদান করে এবং ক্রয় করতে উৎসাহ প্রদান করে। 
  • গ্রাফিক্স/অলংকরণ : একটি মনকাড়া গ্রাফিক্স বা অলংকরণ সহজেই মার্কাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
  • রংঃ উদাহরণ— কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের বিজ্ঞাপনে, পণ্যের মোড়কে অনন্য একটি রঙ ব্যবহার করে যথা গ্রামীণ ফোনের নীল রং, বাংলালিংকের কমলা বর্ণ। 
  • শব্দ/সুর ঃ মার্কাকে পরিচিত করানোর জন্য মনে করিয়ে দেবার। সময় একটি নির্দিষ্ট সুর ও সংগীত ব্যবহৃত হয়।
  • গন্ধ
  • স্বাদ
  • ক্রেতার সাথে সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। 

মার্কা সচেতনতাঃ  মার্কা সচেতনতা (Brand awareness) হলো একজন ক্রেতা বা ভোক্তার পক্ষে মার্কাটিকে মনে করতে পারার বা চিনতে পারার ক্ষমতা এবং সেই মার্কার নাম, লোগো, সুর প্রভৃতি দেখা বা শোনামাত্রই মস্তিষ্কে কোনো একটি বিশেষ অনুভূতির সঞ্চার ঘটা। এটি ক্রেতাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, মার্কাটি ঠিক কোন ধরনের পণ্যের ক্যাটাগরিতে পড়ে। এর মাধ্যমে ভোক্তা এও বুঝতে পারে যে, মার্কাটি তার কোন প্রয়োজনীয়তাটি মেটাবে এবং কী ধরনের সেবা প্রদান করবে।

মার্কার চলকসমূহঃ

মার্কা নামঃ “মার্কা নাম” (Brand name) প্রায়শই “মার্কা” শব্দের বিকল্পে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যদিও “মার্কা নাম” হলো কোনো একটি মার্কার লিখিত বা কথ্য রূপ। মার্কা নাম একটি ট্রেডমার্ক হিসেবেও কাজ করে, যেহেতু এটি কোনো পণ্য বা সেবাকে নির্দিষ্ট একজন উৎপাদনকারীর বা মালিকের স্বত্বাধীন হিসেবে পরিচিত করায়।
মার্কা পরিচয়ঃ কোনো একটি মার্কার পরিচয় (Brand identity) হচ্ছে সেই মার্কার বাহ্যিক প্রকাশসমূহ, যার মধ্যে রয়েছে- নাম, লোগো, ডিজাইন, ট্রেডমার্ক, চাকচিক্য। 
মার্কা প্যারিটিঃ একজন ক্রেতা যখন উপলব্ধি করে কিছু মার্কা আসলে সমপর্যায়ের বা একই প্রকারের তখন তাকে বলা হয় মার্কা প্যারিটি। মার্কা প্যারিটি যখন বিদ্যমান হয়, ক্রেতারা তখন পণ্যের গুণগত মানকে প্রাধান্য দেয় না। কারণ তারা মনে করে এ পণ্য সমমানসম্পন্ন বা একই ধরনের সেবা প্রদান করবে।
মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্য : মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্য (Brand equity) হলো একটি মার্কার পণ্য ও সেবাসমূহের কার্যকারিতা, পছন্দনীয়তা ও সুনামের ওপর ভিত্তি করে যে মূল্যটি নির্দিষ্ট করা হয়। ‘ক্রেতানির্ভর মার্কা স্বত্বাধিকার মূল্য’ (Customer-based Brand Equity) হলো একজন ক্রেতা মার্কার ব্যাপারে জ্ঞান থাকার সুবাদে ওই মার্কার বিপণনে তার সাড়া কতখানি পরিবর্তিত হয় সেটি।

নিজস্ব মার্কার গুরুত্ব ( Importance of personal branding)

পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং-এর গুরুত্ব নিয়ে বর্ণনা সহকারে প্রদান করা হলোঃ


(1) ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে পরিচিত করেঃ 
শুরুতেই আমরা যেটি দেখলাম, ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে স্বকীয় অবস্থান দেয়। এতে মানুষ আপনার ব্র্যান্ডটির সাথে পরিচিত হয় এবং এর সম্বন্ধে ধারণা পায়। একজন নির্দিষ্ট মানুষের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে তার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, তার কিছু স্বভাব থাকে, তার পছন্দ-অপছন্দ, জামাকাপড়ের ধরন, বন্ধুবান্ধব, কাজ ইত্যাদি থাকে, যার মাধ্যমে তার একটি স্বকীয় পরিচিতি তৈরি হয়। ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যাপারটাও তাই।
(ii) ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা অবস্থান দেয়ঃ
মানুষের সাথে একটা বিশেষ পণ্যের যতটা না সম্পর্ক তৈরি হয়, তার থেকে বরং একটি ব্র্যান্ডের সাথে তার বুঝাপড়া হয় বেশি। ধরুন, কেউ একজন ‘বাটা’র জুতো পরে অভ্যস্ত। অনেকগুলো ব্র্যান্ডের জুতোর মাঝে তাকে নিয়ে গেলে দেখবেন সে আগে বাটা-র জুতোগুলোই দেখছে। এভাবে অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে আলাদা করবে আপনার ব্র্যান্ডিং।
(iii) ব্র্যান্ডিং আপনার ক্রেতার সাথে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের আবেগময় সম্পর্ক তৈরি করেঃ
 শুনতে অদ্ভূত শোনালেও এটাই সত্যি! আগের উদাহরণে যেমন বললাম, ঐ ক্রেতার সাথে বাটা প্রতিষ্ঠানের একটা বিশ্বস্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আপনি যখন আপনার ক্রেতাদের মাঝে ব্র্যান্ডিং করবেন, তখন তার বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন। এতে করে আপনার ক্রেতা বার বার আপনার পণ্যের কাছেই ফিরে আসবে।
(iv) ব্র্যান্ডিংয়ে আপনার পণ্যের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হলে ক্রেতার কাছে আপনার পণ্যটি বেছে নেওয়া সহজ হয়ঃ
 ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের গুণাগুণ তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পরিষ্কার হয় তিনি আসলে কী চাচ্ছেন। একই সাথে আপনার পণ্যের প্রতিশ্রুতি তাকে পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। আপনি 417 পণ্যের মান ও গুণাগুণ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বজায় রাখতে পারেন, তবেই একটি বিশ্বস্ত ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরি করা সম্ভব।
(v) প্রতিষ্ঠানে ভালো কর্মী আকৃষ্ট করতেও আপনাকে সহায়তা করে ব্র্যান্ডিংঃ
 ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সামাজিক মূল্য তৈরি করে। আপনার ব্র্যান্ডিং যত ভালো হবে, আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি তত মেধাবী ও সৃজনশীল কর্মীরা আকৃষ্ট হবে। এর ফলাফল সুদূরপ্রসারী, কারণ তখন আপনি একটি দক্ষকর্মীদলের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট বা গুগলের কথা চিন্তা করুন। বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও মেধাবী কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের স্বপ্ন থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সফল ব্র্যান্ডিং তাদের যেমন বিশাল বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনি এ রকম দক্ষকর্মীদের কাছেও পরিণত করেছে আকাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে।
মোটকথা, আপনার ব্যবসায়িক খাতে সাফল্য লাভের একটি বড় ও অপরিহার্য অংশ হলো ব্র্যান্ডিং ।
তো আজ এই পর্যন্তই। আমি পোস্টের শুরুতেই বলেছিলাম আকজের পোস্টটি প্রথাগত ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক ধারণার মতো পোস্ট না। আচ্ছা, যাইহোক, পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। 

উপরোক্ত পোস্টটি উৎসর্গ করা হয়েছেঃ মোঃ কামরুল হাসান কে।
তো সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।

 ধন্যবাদ।




One thought on "ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক ধারণা ব্যান্ডিং সম্পর্কে। (Basics of Freelancing: Branding), বিস্তারিত পোস্টে।"

Leave a Reply